ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালতে মেসিডোনিয়ায় মানহানির দায়ে দোষী সাব্যস্ত সাংবাদিকদের ন্যায়বিচার লাভ

স্ট্রাসবুর্গে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত। উইকিপিডিয়া ব্যবহারকারী চেরিএক্স এর ছবি, সিসি বাই-এসএ ৩.০

এই গল্পটি মেটা.এমকে-তে প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল। গ্লোবাল ভয়েসেস এবং মেটামরফোসিস ফাউন্ডেশনের মধ্যে একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির আওতায় এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত (ইসিএইচআর) দেশীয় বিচার বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে তদানীন্তন মেসিডোনিয়ার গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান সাসো মিজালকভ উত্থাপিত মানহানির মামলায় দোষী ঘোষণা করে তাদের অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছে বলে উত্তর মেসিডোনিয়ার এখন বন্ধ হয়ে যাওয়া দৈনিক সংবাদপত্র ফোকাসের দুই সাংবাদিকের পক্ষে রায় দিয়েছে।

২০১৪ এবং ২০১৫ সালে মানহানি এবং অপমানের জন্যে ফোকাস সংবাদপত্রের সম্পাদক জাদ্রাঙ্কা কস্তোভা এবং সাংবাদিক ভ্লাদো অ্যাপোস্টোলভকে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা মোকাবেলা (এএসসি) এর প্রাক্তন পরিচালক মিজালকোভকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একত্রে ইউরো ৯ হাজার এর বেশি দিতে হওয়া মেসিডোনিয়ার অভ্যন্তরীণ আদালতের রায়ের পরে স্ট্রাসবুর্গের এই রায়টি আসে।

স্ট্রাসবুর্গের ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত রায় অনুসারে, মেসিডোনিয়ার বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনের অনুচ্ছেদ ১০ অনুসারে মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছে এবং বাদী সম্পাদক কস্তোভাকে  ৩,০০০ ইউরো এবং সাংবাদিক অ্যাপোস্টোলভকে ১,২৫০ ইউরো অনার্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেসিডোনিয়ার সাংবাদিক সমিতি (এজেএম)।

ফোকাস ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক জাদরাঙ্কা কস্তোভা এবং সাংবাদিক ভ্লাডো অ্যাপোস্টোলভ মে ২০১৩ সালে আদালতের শুনানি থেকে বেরিয়ে আসছেন। এ১অন.এমকে এর একটি ভিডিওর পর্দাছবি।

দেশের সকল আদালত সাংবাদিকদেরকে সম্মিলিতভাবে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধনী ব্যক্তিদের একজন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিকোলা গ্রুয়েভস্কির চাচাতো ভাইকে ৯ হাজার ইউরোর বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করে দোষী সাব্যস্ত করার পর তাদের প্রতিনিধি স্কোপিয়ের মেদারস্কি আইন দপ্তর ২০১৬ সালে ইসিএই আর-এর কাছে আবেদনটি জমা দেয়।

প্রথম ডিগ্রি আদালত ২০১৪ সালের শুরুতে সাংবাদিকদের জন্যে জরিমানা নির্ধারণ করে, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আপিল আদালত সেই রায় নিশ্চিত করে এবং ২০১৫ সালের নভেম্বরে সাংবিধানিক আদালত সাংবাদিকদের আপিল প্রত্যাখ্যান করে।

ফোকাস দৈনিক পত্রিকায় চাপ প্রদানের জন্যে মিজালকভকে অভিযুক্ত করে সাবেক রাষ্ট্রদূত ইলিয়েভস্কির বিবৃতি। নোভাটিভি-এর ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

প্রকাশক নিকোলা ম্লাদেনভেcবিতর্কিত মৃত্যুর তিন মাস পরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে পাঠ্যগুলি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দৈনিক ফোকাসে প্রকাশিত হয়েছিল। নিবন্ধগুলিতে মিজালকভের চাপের কারণে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে পালিয়ে যাওয়ার দাবি করা চেক প্রজাতন্ত্রে নিযুক্ত মেসিডোনিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ইগর ইলিয়েভস্কির উদ্ধৃত বিবৃতি ছিল।

২০১৪ সালে এজেএম বলেছিল যে বিচারক লিদিয়া দিমচেভস্কা, স্তাঙ্কা জাফিরোভস্কা এবং এনভার বেক্সেতির সিদ্ধান্ত গুরুতরভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে লঙ্ঘন করে এবং সাংবাদিকদের ক্ষমতার সম্ভাব্য অপব্যবহার সম্পর্কে লিখতে নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি অনার্থিক ক্ষতির জন্যে জরিমানা খুব বেশি এবং অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তাদের ঘোষণায় তারা যুক্তি দেয়:

ЗНМ тогаш апелираше дека судот воведува неприфатлива пракса новинари да се осудат за клевета заради пренесена изјава. Ако новинарите ги проверуваат фактите на секоја изјава, како што бара судот, тогаш најголем дел од изјавите на јавни личности, не треба да се објавуваат.

এজেএম তখন আপিলে বলে যে আদালত একটি পাঠানো বিবৃতিতে মানহানির জন্যে সাংবাদিকদের দোষী সাব্যস্ত করার একটি অগ্রহণযোগ্য প্রথা চালু করছে। আদালতের প্রয়োজন অনুসারে কোন সাংবাদিককে প্রতিটি বিবৃতির সত্যতা যাচাই করতে হলে বেশিরভাগ প্রকাশ্য বিবৃতি প্রকাশিত হবে না।

২০১৪ সালে এজেএম ব্যক্তিগত অনুদানের মাধ্যমে ফি পূরণ করার সাহায্যার্থে অর্থ সংগ্রহের জন্যে একটি সংহতি পদক্ষেপ শুরু করে। মেসিডোনিয়ার হোমোফোবিয়া এবং ট্রান্সফোবিয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য নাগরিক সংগঠনগুলিও এই প্রচেষ্টায় যোগ দিয়ে স্কোপিয়ে পুরনো শহরে একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দশ দিনেরও কম সময়ের মধ্যে তারা অ-বস্তুগত ক্ষতিপূরণ জন্যে সাসো মিজালকভকে দেওয়া এবং আদালতের খরচ নির্বাহ করার জন্যে সাংবাদিকদের প্রয়োজনীয় ৯ হাজার ইউরোর বেশিরভাগ সংগ্রহ করতে পেরেছিল।

ফোকাস ম্যাগাজিনের ২০১৪ সালের ৩ অক্টোবর সংখ্যার  প্রথম পাতায় “সেন্সর করা হয়েছে” সীলমোহারাঙ্কিত সাশো মিজালকভের মুখমণ্ডল।

২০১৬ সালের নির্বাচনের পরে মিজালকভ এবং গ্রুয়েভস্কি উভয়ই তাদের জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ভিএমআরও-ডিপিএমএনই সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনে ব্যর্থ হওয়ার পরে ২০১৭ সালে শেষ হওয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের সময় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথে সম্পর্কিত অসংখ্য আদালতের মামলায় জড়িত ছিলেন।

গ্রুয়েভস্কি দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০১৮ সালে দেশ ছেড়ে পালান। তিনি বর্তমানে তাদের রাজনৈতিক মিত্র হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের সুরক্ষায় আইন থেকে পালিয়ে হাঙ্গেরিতে লুকিয়ে আছেন।

মিজালকভ বর্তমানে বিভিন্ন আদালতের মামলায় অভিযুক্ত পক্ষ। তিনি এখন পর্যন্ত ভল্ট সাংকেতিক নামের একটি মামলায় দুর্নীতির জন্যে দোষী সাব্যস্ত হয়ে আট বছরের  এবং লক্ষ্য ও দূর্গ মামলায় হাজার হাজার নাগরিকের উপর অবৈধ নজরদারির জন্যে ১২ বছরের সাজা পেয়েছেন। তিনি নিশ্চয়তা হিসেবে ১ কোটি ১০ লক্ষ ইউরো (প্রায় ১০৩ কোটি টাকা) জমা দিয়ে বর্তমানে জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .