- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চলতি বছর এ পর্যন্ত আট সাংবাদিক খুন, সংকটে মেক্সিকো

বিষয়বস্তু: মেক্সিকো, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সরকার, জিভি এডভোকেসী
Trabajadores de los medios de comunicación se manifestaron ante la ola de violencia y ataques que persistente en todo el país. Foto de Ni Uno Menos Michoacán, colectivo surgido tras el asesinato de un periodista de aquel estado. https://www.facebook.com/niunomas.michoacan.3

গণমাধ্যম কর্মীরা দেশজুড়ে চলতে থাকা সহিংসতা ও হামলার ঢেউয়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। দেশটিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলার সময় ফেসবুকে [1] আবির্ভূত জোট নি উনো মেনোস মিকোওকোনের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

মেক্সিকোতে তিন মাসেরও কম সময়ে আটজন স্থানীয় সাংবাদিক খুন এবং যোগাযোগকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক আগ্রাসন নথিভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি সহিংসতার এই সঙ্কট সম্পর্কে কথা বলেছে [2] এবং সাংবাদিকরা মেক্সিকো সরকারের হত্যাকাণ্ডগুলোকে খাটো করে দেখার নিন্দা করেছে।

সাংবাদিকতা চর্চার জন্যে বর্তমানে রাশিয়ার সাথে যুদ্ধেরত ইউক্রেনসহ [3] মেক্সিকোকে সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশগুলোর অন্যতম [4] হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দুই মাসেরও কম সময়ে (১৬ জানুয়ারি থেকে ১৫ মার্চ) আটজন সাংবাদিক খুন হয়েছে, যার মানে প্রতি মাসে চারটি, প্রতি সপ্তাহে একটি। এগুলো সংখ্যা হলেও এই মুখগুলোর প্রত্যেকে একটি পরিবারের অংশ ছিলেন; তারা ছিলেন এক একজন বাবা, একজন মা, একজন ভাই, একজন বোন… এবং এটা তাই: রাষ্ট্র তাদের ব্যর্থ করেছে।

মেক্সিকোর বিভিন্ন রাজ্যের সাংবাদিকরা তাদের দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার হুমকির জন্যে আশঙ্কা প্রকাশ করে নিন্দা জানিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই তাদের সহকর্মীরা জন্যে যারা আর এখানে নেই এবং মৃত্যুর হুমকি ও অন্যান্য আগ্রাসনের লক্ষ্যবস্তু না হয়ে তাদের কাজ করার অধিকারের জন্যে আওয়াজ তুলেছে। এদিকে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডরের করা বিবৃতি গণমাধ্যম কর্মীদের সাহায্য করে না বলে সাংবাদিকরা এর নিন্দা করেছে।

এই বক্তব্য উদ্বেগজনক, আপত্তিকর এবং অপরাধমূলক; মধ্যমমানের হামবড়া একটি বক্তৃতা দিয়ে তিনি #মেক্সিকোতে #সাংবাদিকহত্যাকে @লোপেজওব্রাডর_ছোট করে দেখেছেন। তার বক্তব্যে প্রকাশিত হয়েছে যে আড়াই মাসে “প্রায় ৫ হাজার মেক্সিকোবাসী তাদের জীবন হারিয়েছে… এবং সেই ৫ হাজারের মধ্যে ৫ জন সাংবাদিক রয়েছে।”

সাংবাদিকতার জন্যে ঝুঁকির কারণে আজ সাংবাদিকদের বিক্ষোভের ৩টি প্রকাশ্য অনুষ্ঠান ছিল – লিনারেস হত্যার জন্যে মোরেলোস কংগ্রেসের সামনে; টেপিকে সরকারের সুরক্ষা ব্যবস্থার ফোরামে এবং মেক্সিকো সিটিতে [রাজনীতিবিদ, আলেজান্দ্রো] এনসিনাসের সামনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফোরামে।

বিবৃতিটিতে মিকোওকোনের সাংবাদিকরা আর্মান্দো লিনারেসের হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কিত হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ এবং প্রস্তুত। তারা কি আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে?

প্যাট্রিসিয়া মনরেয়াল মিকোওকোনের মোরেলিয়ার কংগ্রেসে মেক্সিকোতে এই বছরে নিহত অষ্টম সাংবাদিক আর্মান্দো লিনারেস হত্যার বিষয়ে কথা বলেছেন। ভিডিও: নি উনো মাস মিকোওকোন #আর_একটিও_নয় #ঝুঁকিপূর্ণ_সাংবাদিকতা #চুপ_থাকবো_না_ভুলেও_যাবো_না

২০২২ সালের ১৫ মার্চ তারিখে সাংবাদিক এবং ডিজিটাল গণমাধ্যম মনিটর মিকোওকোনের পরিচালক আরমান্দো লিনারেসকে তার সহকর্মী রবার্তো টলেডোর (যিনি জানুয়ারিতে নিহত) উপর হামলার নিন্দা জানানোর মাত্র দেড় মাস পরে একই বছরে গুলি করে হত্যা করা হয়। উভয়েই তাদের সম্প্রদায়ের রাজনীতি ও দুর্নীতির তদন্ত করছিলেন।

মিচের জিটাকুয়ারো মনিটরের পরিচালক আরমান্দো লিনারেস ৩১ জানুয়ারি তারিখে সবেমাত্র তার সহকর্মী রবার্তো টলেডোকে খুন হওয়া এবং তার হুমকি পাওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

আজ তাকে খুন করা হয়েছে। কেউ তাকে রক্ষা করেনি।

লিনারেসের হত্যার একদিন পর আর্টিকেল ১৯ সংগঠন এবং নরওয়ের দূতাবাস ফোরো লিবার্তাদে দে এক্সপ্রেসিওন (মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফোরাম) এর আয়োজন করে, যেখানে মেক্সিকোর সাংবাদিক মার্সেলা তুরাতি ব্যাখ্যা করেন যে সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীন কর্ম পরিবেশ, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং সংগঠিত অপরাধের কারণে নিজেদের ক্রসফায়ারের মধ্যে আবিষ্কার করছে। এছাড়াও তুরাতি দেশের কিছু কিছু এলাকায় নির্যাতনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের চুপ করিয়ে রাখার নিন্দা করেন।

একই ফোরামে একজন সরকারি প্রতিনিধি সাংবাদিকদের উপর হামলায় রাষ্ট্রীয় এজেন্টদের, প্রধানত পৌরপুলিশের, অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেন। তবে রাষ্ট্রপতি নিজের উপর দায়িত্ব নিয়ে বলেন যে সরকারি কর্মকর্তারা অপরাধের সাথে জড়িত নয়।

#সকালেরকথা|| “এই খুনগুলির কোনোটিতেই এমন কোনো উপাদান নেই যা সরকারি কর্মকর্তাদের দায়ী বলে নির্দেশ করে”: সাংবাদিক হত্যার বিষয়ে বলেন এএমএলও।

দৈনিক দেশব্যাপী সম্মেলনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি লোপেজ ওব্রাডর সাংবাদিকতার কাজের জন্যে বেশ কিছু প্রতিকূল বার্তা জারি করেছেন। সাম্প্রতিক বক্তৃতায় তিনি খুন হওয়া সাংবাদিকের সংখ্যা হালকাভাবে নিয়ে [25] বলেন যে এই সংখ্যাটি সাধারণভাবে গৃহস্থালী হত্যার সংখ্যার চেয়ে কম। সামাজিক গণমাধ্যমে এই বক্তব্যের সমালোচনা হয়।

তুলনাগুলি খুব খারাপ কিন্তু একটা সাধারণ অনুপাত না বোঝাটা আরো খারাপ।
🤦

ইনেগির মতে মেক্সিকোতে ৪৫ হাজার সাংবাদিক রয়েছে। ২০২২ সালে এখন পর্যন্ত ৫জন (সাংবাদিক) খুন হয়েছে, তাদের খুন মেক্সিকোর গড় হারের চেয়ে তিনগুণ।

সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে হামলা কয়েক দশক ধরে চললেও কোনো সরকারই এর প্রকৃত সমাধান দেয়নি। এল পাইস (দেশ) [28] পত্রিকার মতে, “পরিসংখ্যান প্রকাশ করে যে বর্তমান সরকারের আমলে সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়েছে, ২০১৮ সালের শেষ থেকে ৩১জন সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে।”

তুরাতির মতে, সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সরকারি বার্তাগুলো হলো সাংবাদিকতা কর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণার বার্তা। “অন্যান্যরা কাজ চালিয়ে গেলেও সহকর্মীরা খুব ভয় পায়, তারা আর অনুসন্ধান করতে চায় না, কলঙ্ক এবং হুমকি বেড়ে গেছে,” উল্লিখিত ফোরামে তার অংশগ্রহণের সময় তিনি বলেন। “একজন সাংবাদিককে হত্যা করা মানে তারা যে কারণ নিয়ে গবেষণা করছে সেটা থামিয়ে দেওয়া,” তিনি আরো বলেন।

দেশে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উদ্বেগজনক সংখ্যক হামলার আলোকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন মেক্সিকোকে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে তাদের পেশা চর্চার একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিক সমালোচনামূলক মতামত ভালোভাবে দেখে বা গ্রহণ করে না [29]

সাংবাদিক আরমান্দো লিনারেস লোপেজ হত্যার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় বিবৃতি

সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে মেক্সিকো কর্তৃপক্ষকে সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার এবং পেশাটির বিরুদ্ধে অপরাধকে প্রভাবিত করা দীর্ঘস্থায়ী দায়মুক্তির অবসান করার আহ্বান জানিয়ে সতর্কতা সঙ্কেত বাজিয়ে যাচ্ছে [33]। মেক্সিকোতে সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্যে একটি ব্যবস্থা (মেকানিজম দে প্রোতেক্সিওন দে পেরিওদিস্তাস [34]) থাকলেও এর ব্যবহারকারীরা এটিকে একটি অকেজো ব্যবস্থা বলে আখ্যায়িত করে এর নানাবিধ সীমাবদ্ধতা [35] তুলে ধরেছে।

আর্টিকেল ১৯, ২০০০ সাল থেকে তাদের সাংবাদিকতা কর্মের সাথে যুক্ত মেক্সিকোতে নিহত মোট ১৫২ সাংবাদিককে নথিভুক্ত [36] করেছে। এর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সুরক্ষা ব্যবস্থাটি এই অপরাধগুলিকে সংঘটিত হতে বাধা দেয়নি।

সাংবাদিকদের কে হত্যা, কেন এবং কিসের জন্যে করে? এটা স্পষ্ট করার জন্যে প্রসিকিউটরদের দপ্তরের উপর নির্ভর করে, কারণ তাদেরই সাংবাদিক প্রতিবেদনে প্রভাবিত হওয়া স্বার্থগুলি তদন্ত করা উচিত। গতানুগতিকভাবে যারা শুরু করেছে শুধু তাদের পিছু নিলেই হবে না; কারা হত্যার নির্দেশ দিয়েছে খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি দিন।

২০২২ সালের প্রথম মাসে সংঘটিত লিনারেস এবং টোলেডোর হত্যাকাণ্ডের পরে তাদের কর্মক্ষেত্র সংবাদপত্র মনিটর মিকোওকোন [38] চূড়ান্তভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

লক্ষ্য করুন

আর এভাবেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়, এভাবেই সত্যকে হত্যা করা হয়

মনিটর মিকোওকোনের পরিচালক আরমান্দো লিনারেসের মৃত্যুর পর গণমাধ্যমটি ঘোষণা করেছে যে সত্য বলার বিপদের কারণে তারা তাদের দরজাটি বন্ধ করে দেবে 😔💔

“সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) এর প্রতিনিধি জান-আলবার্ট হুটসেন বলেছেন [41], “আরমান্দো লিনারেসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ২০২২ সালে মেক্সিকোতে সাংবাদিক হত্যার সাংঘাতিক রেকর্ডের আঘাত শব্দ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব নয়।” “সাংবাদিকদের হত্যার উদ্বেগজনক সংখ্যার আলোকে এই আক্রমণগুলিকে ইন্ধন জোগানো মেক্সিকো কর্তৃপক্ষের দায়মুক্তি ও সহিংসতার বেপরোয়া চক্রকে স্বীকার করে নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”