- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

গণমাধ্যমের সামনেই চলছে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবাল শুভ্রকরণ মহাযজ্ঞ

বিষয়বস্তু: ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, পরিবেশ, বিজ্ঞান, রাজনীতি
Great Barrier Reef faces another severe bleaching event [1]

এবিসি সংবাদের ভিডিওর একটি পর্দাছবি “গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ আরেকটি মারাত্মক শুভ্রকরণ যজ্ঞের মুখোমুখি”

ব্যস্ত সংবাদ চক্র তার ভিড়ে অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে ছয় বছরের মধ্যে চতুর্থ গণ প্রবাল শুভ্রকরণ [2]কে হারিয়ে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের সামুদ্রিক উদ্যান কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ২৫ মার্চ তারিখে তার প্রবাল প্রাচীরের স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে একথা নিশ্চিত করেছে:

এই ধরনের একটি ঘটনা সাধারণত মূলধারার অথবা সামাজিক গণমাধ্যামে স্থানীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে যে মনোযোগ আকর্ষণ করে এটা তা পায়নি। ইউক্রেন যুদ্ধ [3], অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলে বন্যা [4], মে মাসে একটি জাতীয় নির্বাচনের আগে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে বিতর্ক, বহুল প্রশংসিত ক্রিকেটার শেন ওয়ার্নে [5]র অপ্রত্যাশিত মৃত্যু এবং অন্যান্য বরেণ্য ব্যক্তিত্বের সংবাদ কেন্দ্রে এসে দাবিয়ে দিয়েছে।

প্রবাল প্রাচীর বিজ্ঞানী প্রফেসর টেরি হিউজ [6] শোক প্রকাশ করেছেন:

বিশ্বের প্রবাল প্রাচীরের চলমান বিপদের তুলনায় এই সপ্তাহে উইল স্মিথ তার খারাপ আচরণের জন্যে বেশি গণমাধ্যামের মনোযোগ পেয়েছেন।

এটা কতটা খারাপ?

এনপিআর-এর রেডিও কর্মসূচি “সকল জিনিস বিবেচনা করা” একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন [9] উপস্থাপন করেছে:

শুনুন: অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ একটি বিশাল শুভ্রকরণের ঘটনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, @এনপিআরএটিসি রিপোর্ট করেছে।

“আমাদের এই শুভ্রকরণের ঘটনা থেকে শিখতে হবে,” বলেছেন বন্যজীব সংরক্ষণ সমিতির @এমিলিসডার্লিং “আমাদের গতানুগতিক ব্যবসা পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের #জলবায়ু_পরিবর্তন বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।”

এতে বন্যজীব সংরক্ষণ সমিতির এমিলি ডার্লিংয়ের এই মন্তব্যটি ছিল:

আমি হঠাৎ করেই এই ঘটনাগুলির পরিমাণ খেয়াল করেছি। প্রবালগুলি পুনরুদ্ধারের কোন পথ খোলা নেই।

সামাজিক গণমাধ্যমের সবাই বোঝেনি:

আমার স্মরণশক্তি ঠিক হলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় ২০ বছর আগে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ এমন ছিল না।

মহাদেশের অন্য প্রান্তে কেন্দ্রীয় সংসদ সদস্য জোশ উইলসন তার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া রাজ্যে নিঙ্গালু প্রবাল প্রাচীরে [18]র অনুরূপ ক্ষতির প্রতি আরো প্রচার দরকার বলে উদ্বিগ্ন:

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের শুভ্রকরণ একটি বিশাল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয় হলেও পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া উপকূলে সামুদ্রিক তাপপ্রবাহগুলিও মারাত্মক পরিবেশগত এবং জীববৈচিত্র্যের পরিণতি।

শুভ্রকরণের ঘোষণার এক সপ্তাহ পরে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় বাজেটের বিষয় এসে পড়ে। কোষাধ্যক্ষ জোশ ফ্রাইডেনবার্গের বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের কথা মাত্র একবার উল্লেখ করা হয়। অনেকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অতিরিক্ত অর্থের অভাবের নিন্দা করেছে। জলবায়ু কাউন্সিল অর্থায়নের এই ব্যর্থতার জন্যে হাহুতাশ [21] করেছে:

২০২২ সালের কেন্দ্রীয় বাজেট অস্ট্রেলিয়ায় ক্রমবর্ধমান জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় কোনো অর্থপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

আজকের বাজেট আলোচনায় ব্যস্ত নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদ এবং ডেলয়েট অর্থনীতি এক্সেসের প্রাক্তন অংশীদার জলবায়ু কাউন্সিলর নিকি হাটলি হিসেব করে দেখেছেন যে ২০২১-২০২৪ মেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তনের উদ্যোগের জন্যে প্রতিশ্রুতি ছিল মোট ব্যয়ের মাত্র ০.৩%, ২০২৪-২০২৬ মেয়াদে এটি আরো কমে ০.২% হয়েছে।

জ্বালানী অর্থনীতি এবং অর্থায়ন বিশ্লেষণের জন্যে নবায়ণমুখী প্রতিষ্ঠান (আইইইএফএ) সংখ্যাটি দেখে বিমর্ষ হয়েছে:

তারা যুক্তি করেছে [22] যে: “কেন্দ্রীয় সরকার ২০২২-২০২৩ বাজেটে শক্তি এবং নির্গমন হ্রাস ব্যবস্থার জন্যে তহবিল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও জলবায়ুর উপর ব্যয় আগামী চার বছরে হ্রাস পাচ্ছে এবং এলএনজি, গ্যাস, কার্বন ধারণ ও সঞ্চিতির জন্যে ব্যয় করা হচ্ছে অথচ আবশ্যিকভাবে ‘পরিষ্কার’ ও ‘সবুজ’ হাইড্রোজেন বাড়ছে” না।

অস্ট্রেলিয়ার ২০২২-২৩ বাজেটে, জলবায়ুর উপর খরচ আগামী চার বছরে হ্রাস পাচ্ছে এবং এলএনজি, গ্যাস, কার্বন ধারণ ও সঞ্চিতির জন্যে ব্যয় করা হচ্ছে অথচ আবশ্যিকভাবে ‘পরিষ্কার’ ও ‘সবুজ’ হাইড্রোজেন বাড়ছে” না।

“কথোপকথন”-এ উত্তর কুইন্সল্যান্ডের জেমস কুক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা শুভ্রকরণের আরেকটি অস্বাভাবিক দিক তুলে [28] ধরেছে:

প্রাকৃতিক লা নিনা (ছোট্ট খুকি) আবহাওয়া ধাঁচের শীতল অবস্থার সময় এই প্রথমবার প্রবাল প্রাচীরটি সাদা হওয়া থেকে বোঝা যায় যে জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী উষ্ণায়নের প্রবণতা কতটা শক্তিশালী।

ঘটনাক্রমে প্রবাল প্রাচীরটিকে বিপদাপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের স্থান [29] হিসেবে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক মিশন [30] অস্ট্রেলিয়া সফর করছিল:

ইউনেস্কোর জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্র এবং আইইউসিএন (প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক ইউনিয়ন) ২০২২ সালের ২১ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের সংরক্ষণের অবস্থা এবং এর সুরক্ষার জন্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী টেকসই পরিকল্পনা মূল্যায়ন করার জন্যে একটি মিশন গ্রহণ করবে।

২০২১ সালের জুলাই মাসে পরিবেশ মন্ত্রী সুসান লে এই সম্ভাব্য বিব্রতকর ফলাফল এড়াতে [31]  সক্ষম হন।

পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার অন্য একটি অংশে সিডনির বিশ্ব-বিখ্যাত বন্ডি সৈকত জলবায়ু-সম্পর্কিত আরেকটি ঘটনার সম্মুখীন হয়:

দুঃখিত, অভূতপূর্ব হলেও এটাকে আর কাটিয়ে ওঠা যাবে না।

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সর্বশেষ আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে [35] “বৈশ্বিক উষ্ণতাকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখা অসম্ভব।”

যারা বিষয়টিকে জরুরি মনে করেন তাদের মধ্যে অবসরপ্রাপ্ত ফুটবল তারকা এবং মানবাধিকার কর্মী ক্রেগ ফস্টার অন্যতম:

‘শুধুমাত্র “এখন বা কখনই না” হিসেবে একটি নিম্ন কার্বন অর্থনীতি এবং সমাজের উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ব এখনো জলবায়ু ভাঙ্গনের সবচেয়ে খারাপ বিপর্যয় রোধ করার আশা করতে পারে… জলবায়ু সংক্রান্ত সরকারগুলির জন্যে এটি একটি চূড়ান্ত সতর্কতা।’

আর অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে পড়ছে।

এটা অপরাধমূলক।