ফিলিপাইনস এ সিম কার্ড নিবন্ধন আইন গোপনীয়তা ও অনলাইন প্রকাশকে ক্ষুন্ন করে

সিম কার্ড নিবন্ধন আইনের প্রতিবাদে ফিলিপাইনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সামনে বিভিন্ন গোষ্ঠী সমাবেশ করেছে। অল্টারমিডিয়ার টুইটার পোস্ট থেকে নেওয়া ছবি

এই নিবন্ধটি একটি অলাভজনক গণমাধ্যম, প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতি সংস্থা এনগেজমিডিয়া থেকে নেওয়া হয়েছে৷ গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে এটি এখানে সম্পাদিত ও পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

অধিকার গোষ্ঠী এবং গোপনীয়তার সমর্থকদের ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও ফিলিপাইনে সিম কার্ডের নিবন্ধন এবং সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলির জন্যে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক করে একটি আইন হতে চলেছে। “সিম কার্ড, ইন্টারনেট বা ইলেকট্রনিক যোগাযোগ-সহায়ক অপরাধের বিস্তার রোধ করার জন্যে” প্রবর্তিত এই পদক্ষেপটি গোপনীয়তা ও অবাধ মত প্রকাশের প্রতি যথেষ্ট হুমকি সৃষ্টি করে৷

সিম কার্ড নিবন্ধন আইন অনুসারে ফিলিপিনোদের সিম কার্ড কেনা এবং সক্রিয় করার আগে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। আইনটিতে সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্ট নিবন্ধনের একটি বিধানও রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে “সকল সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্ট প্রদানকারীদের অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় [একজন ব্যবহারকারীর] আসল নাম ও ফোন নম্বর প্রয়োজন হবে।”

ফিলিপাইন এখন একইধরনের আইন পাস করা দেশগুলির একটি ক্রমবর্ধমান তালিকায় যোগ দিয়েছে৷ অভিন্নভাবে অপরাধ দমন করা এই ধরনের পদক্ষেপের বিবৃত লক্ষ্য হলেও অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে। গোপনীয়তা আন্তর্জাতিক অনুসারে সিম কার্ড নিবন্ধন “ব্যয়বহুল, অনধিকারচর্চামূলক” এবং অপরাধ দমনে অকার্যকর প্রমাণিত। উপরন্তু, ডিজিটাল অধিকার প্রচারক এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের নির্দেশিত ত্রুটি অনুসারে এটা অপরাধীদের বিধিনিষেধ এড়ানো এবং কালো বাজার তৈরির সুবিধা প্রদান করে

উদ্দেশ্য থাকা সত্ত্বেও আইনটি নিরাপত্তা সংক্রান্ত সমস্যার বাস্তব সমাধান না দিয়ে বরং ডিজিটাল নিরাপত্তা, গোপনীয়তা এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্যে গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করে। ফিলিপাইনের বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং সক্রিয় কর্মী ও সুশীল সমাজ গোষ্ঠীর ক্রমাগত হয়রানির সাথে যুক্ত হয়ে সিম কার্ড নিবন্ধন আইনটি ফিলিপিনোদের গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে দেশে ইতোমধ্যেই সঙ্কুচিত নাগরিক স্থানগুলির আরো অবনমন ঘটাতে পারে।

কিভাবে সিম কার্ড নিবন্ধন আইন ডিজিটাল অধিকারের জন্যে হুমকি?

আইনটিতে সামাজিক গণমাধ্যম অ্যাকাউন্ট তৈরিতে আসল নাম এবং ফোন নম্বর ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তার বিধান রয়েছে। “কাল্পনিক পরিচয়” ব্যবহারকারীদের জরিমানা বা কারাদণ্ডাদেশ হতে পারে। এধরনের প্রয়োজনীয়তা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ফিলিপাইনে সুরক্ষিত বেনামী থাকার অধিকার প্রয়োগ করতে জনগণকে বাধা দেয়। নাম প্রকাশ না করার উপর বিধিনিষেধও সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশের উপর একটি শীতল প্রভাব ফেলে। বেনামীত্ব থেকে অতিরিক্ত নিরাপত্তা না পেলে পর্দাফাঁসকারী এবং মানবাধিকার সুরক্ষাকারীরা ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পার, বিশেষ করে যখন কর্তৃপক্ষের কাছে সমালোচনামূলক বিবেচিত কোন তথ্য প্রকাশ করা হয়। সাধারণ নাগরিকরা তাদের ব্যক্তিগত মতামত ও বিশ্বাস অনলাইনে প্রকাশ করতে অনিরাপদ বোধ করতে পারে। আইনটির ফলে কারাবাস এড়াতে এলজিবিটিকিউ+ সম্প্রদায়ের সদস্যদের তাদের “মৃত নাম”  ব্যবহারে বাধ্য হতে হয়।

উপরন্তু সিম কার্ড নিবন্ধন আইন অনুসারে সিম কার্ড ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ব্যক্তিগত তথ্য একটি কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংরক্ষিত হওয়ার ফলে তা সাইবার আক্রমণের লক্ষ্যেবস্তুতে পরিণত হওয়া সম্ভব। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন পুরো নাম, জন্ম তারিখ ও ঠিকানা) সম্বলিত এই “সিম কার্ড নিবন্ধক”টি গ্রাহক প্রক্রিয়াকরণ, সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় করতে শুধুমাত্র পাবলিক সরকারি টেলিযোগাযোগ সংস্থাগুলি ব্যবহার করতে পারে৷ তবে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা কোন কেন্দ্রীয় ডাটাবেসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার “নিশ্চয়তা প্রদান সম্ভব নয়” বলে সতর্ক করেছে।

এছাড়াও এর বিপুল পরিমাণ ডেটার কারণে সিম কার্ড নিবন্ধকটি গণ-নজরদারির একটি হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। যেকোনো ফিলিপিনো সিম কার্ড ব্যবহারকারী নজরদারির বিষয়বস্তু হতে পারেন যা সম্ভাব্য পর্দাফাঁসকারী ও সক্রিয় কর্মীদের বিপদে ফেলতে পারে। আইনটি প্রণয়নের আগেই  মানবাধিকার সুরক্ষকরা ইতোমধ্যে তাদের অনলাইন কার্যক্রমের উপর পুলিশী পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি করার অভিযোগ করেছে। অন্যান্য পদক্ষেপের সাথে যুক্ত হয়ে বিতর্কিত সন্ত্রাসবিরোধী আইনটির মতো কোন আইন যখন বাক-স্বাধীনতাকে সীমাবদ্ধ করে তখন তা “শুধু কর্তৃপক্ষীয় আক্রমণ ও নজরদারিকেই বৈধ করবে।”

কে কথা বলে উঠছে?

৪ মার্চ তারিখে এই পদক্ষেপটি আইনে পরিণত হওয়ার আগে বিভিন্ন ডিজিটাল অধিকার সমর্থক, কারিগরি গোষ্ঠী এবং সুশীল সমাজ সংস্থা আইনটির অস্পষ্ট বিধান এবং অপব্যবহারের উচ্চ সম্ভাবনার বিষয়ে সতর্কতার আওয়াজ তুলেছিল:

“এটি মানবাধিকার, বিশেষ করে গোপনীয়তা এবং স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারের জন্যে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করার কারণে” প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তেকে এই পদক্ষেপটির উপর ভেটো প্রদানের অনুরোধ জানিয়ে করা একটি পূর্ববর্তী আহ্বানে গণমাধ্যম বিকল্প ফাউন্ডেশন একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। পোস্ট করার সময় পর্যন্ত এনগেজমিডিয়াসহ ৪৫টি সংস্থা ও ব্যক্তি বিবৃতিটিতে সমর্থন জানিয়েছে৷

এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বিভিন্ন ইন্টারনেট এবং প্রযুক্তি কোম্পানির একটি শিল্প সংস্থা – এশিয়া ইন্টারনেট জোট আইনটির বিষয়ে নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার উদ্বেগ উত্থাপন করে সরকারের কাছে একটি চিঠি জমা দিয়েছে। জোটটি উল্লেখ করেছে যে এই পদক্ষেপটি দুর্বল গোষ্ঠীগুলিকে “তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়ে অনুসরণ ও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।”

কম্পিউটার পেশাজীবী ইউনিয়ন এই পদক্ষেপটির বিরুদ্ধে পরিবর্তন.অর্গ এর  একটি পিটিশন তৈরি করে বলেছে যে এর বিধানগুলি “এই সমস্যার কোন বাস্তব সমাধান দেয় না বরং তা আমাদের গোপনীয়তার অধিকারকে সীমিত করে এবং একটি কেন্দ্রীভূত সার্ভারে ব্যক্তিগতভাবে শনাক্তযোগ্য তথ্যগুলি একসাথে রাখায় আমাদের ঝুঁকির সম্মুখীন করে মাত্র।”

এলজিবিটিকিউ+ অধিকার গোষ্ঠী বাহাঘরিও এই পদক্ষেপ বিরোধিতার আহ্বানে যোগ দিয়েছে। বিশেষ করে বিশেষ ধরনের সম্প্রদায়ের উপর এর ক্ষতিকর প্রভাবের জন্যে প্রকৃত-নাম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তার নিন্দা করেছে:

নিষ্ঠুরভাবে সিম কার্ড নিবন্ধন আইনটি ট্রান্স ব্যক্তিদের এবং এলজিবিটিকিউ+সম্প্রদায়ের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যারা তাদের লিঙ্গ প্রকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে তাদের আইনি নামের পরিবর্তে একটি জীবিত (ব্যবহারিক) নাম বেছে নিয়েছে তাদেরকেও অপরাধী করবে।

ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠীগুলি ফিলিপাইনের আইনসভাকে এই আইনটি বাতিল বা সংশোধন করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এই পদক্ষেপটি যেহেতু ইতোমধ্যে আইনের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাওয়ায় আইনটির বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে:

এনগেজমিডিয়া এবং অন্যান্য নয়টি মানবাধিকার সংস্থাসহ জুরিদের আন্তর্জাতিক কমিশন (আইসিজে) ফিলিপাইনের আইনসভাকে “মারাত্মক ত্রুটিপূর্ণ” পদক্ষেপটির “গুরুতর ঝুঁকি” উল্লেখ করে আইনটি বাতিল বা ব্যাপকভাবে সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছে:

আমরা জালিয়াতি এবং অন্যান্য অপরাধ রোধ করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষকে আমরা তা এমনভাবে করার অনুরোধ করি তা যেন গোপনীয়তা, স্বাধীন মতপ্রকাশ ও তথ্য, সংগঠন এবং অ-বৈষম্যের অধিকারকে সম্মান ও নিশ্চিত করে।

ইন্টারনেট স্বাধীনতার পক্ষে ছাত্র এবং স্বেচ্ছাসেবকদের জোট – ইউপি ইন্টারনেট স্বাধীনতা নেটওয়ার্ক অন্যান্য সংস্থার সাথে এই পদক্ষেপটির বিরুদ্ধে প্রচারাভিযান চালিয়ে যেতে এবং গোপনীয়তার অধিকার সুরক্ষার জন্যে অন্যান্য উপায় অন্বেষণ করতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে৷

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .