
দখলের কারণে হুমকির মুখে থাকা কুচ্ছভেলি বিভাগীয় এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রাউন্ডভিউজ শ্রীলঙ্কার ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি।
প্রণিথ বীরসিংহের এই পোস্টটি মূলত শ্রীলঙ্কার একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত নাগরিক মিডিয়া ওয়েবসাইট গ্রাউন্ডভিউজ এ প্প্রকাশিত হয়েছিল। গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে বিষয়বস্তু ভাগাভাগি চুক্তির অংশ হিসেবে এর একটি সম্পাদিত সংস্করণ এখানে প্রকাশিত হয়েছে।
শ্রীলঙ্কার পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের ত্রিনকোমালি জেলায় বছরব্যাপী চলা আদমশুমারিগুলিতে এর বিভিন্ন সম্প্রদায়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘুদের মধ্যে সামান্য সংখ্যাগত পার্থক্য রয়েছে। তবুও এটি লক্ষণীয় যে ১৯৪০ সাল থেকে জেলাটিতে কোনো জাতিই ৫০ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল না। “এটি শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে জাতিধর্মী বহুত্ববাদী অংশ,” রাজনৈতিক ভাষ্যকার তিসারানি গুনাসেকারা তার একটি কলামে লিখেছেন। এটি শহরের পরিচয় ও চেতনার কথা বলে এবং প্রকৃতপক্ষে জেলাটি বহুমাত্রিক এবং বহুমুখী, প্রাণবন্ত। এটি সম্প্রদায়গুলির গঠনের সাথে কথা বলে যা এলাকাটিকে চিহ্নিত এবং এর সামাজিক-সাংস্কৃতিক বুনন তৈরি করে। তামিল, মুসলমান এবং সিংহলীদের আবাসস্থল হলেও এটি এমন একটি শহর যার পরিচয়ে শক্তিশালী তামিল এবং শৈব শেকড় রয়েছে।
অবশ্য এই পরিচয়টিকে মুছে ফেলা এবং অপ্রাসঙ্গিক কিছু একটা মনে করার পর এটাকে বিদেশী ও বহিরাগত বিষয়বস্তু হিসেবে পুনরায় ব্যাখ্যা করে শ্রীলঙ্কার কোনা কোনা থেকে খুঁটে খুঁটে আনা এক সহস্রাব্দের বৌদ্ধ মতবাদ দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। ২০০৫ সালে শহরের কেন্দ্রস্থলে (জঙ্গিবাদীভাবে একজন স্বল্প পরিচিত বৌদ্ধ সন্ন্যাসী গালাগোড়া অত্থে জ্ঞানসারা থেরো সমর্থনপুষ্ট হয়ে) স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক রাতে নির্মিত বুদ্ধ মূর্তির মতোই পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পর্কিত রাষ্ট্রপতির টাস্কফোর্সের সাহায্য নিয়ে ২০১৯ সালের পর থেকে রাজ্য গৃহীত পদক্ষেপগুলিতে প্রদেশটির মাত্রা, জনমিতি এবং পরিচয় পরিবর্তনের একটি সমন্বিত ও জোর প্রচেষ্টা দেখা গেছে।
প্রাচীন তামিলদের ভাষার সাথে একেবারে অপরিচিত কোন ঐতিহাসিকের নেতৃত্বে সুনির্দিষ্টভাবে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের ভেতরকার ঐতিহাসিকভাবে বৈচিত্র্যময় এবং সংবেদনশীল প্রদেশের মধ্যে শুধুমাত্র বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষগুলি নথিভুক্ত করার অভিপ্রায়ে গঠিত একটি টাস্ক ফোর্স অন্ততপক্ষে কৌতূহলের উদ্রেক ঘটায়। ২০২১ সালের শেষের দিকের পূর্ব পর্যন্ত টাস্ক ফোর্সটিতে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটির ৭০ শতাংশ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী তামিল এবং মুসলমান কোন প্রতিনিধিত্ব ছিলই না। এখন কমিটির ১৮ জন সদস্যের মধ্যে তাদের মাত্র দুইজন সদস্য রয়েছে।
সামরিক ব্যক্তিবর্গ এবং মিডিয়ার প্রভাবশালীরা প্রশ্নবিদ্ধ নিয়োগের জন্যে টাস্ক ফোর্সেটির সমালোচনা করলেও সরেজমিন কিনিয়া, কুচচাভেলিয়া বা কান্নেনিরিতে সম্প্রদায়গুলির কাছে প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো
রাষ্ট্রীয় টাস্ক ফোর্স নিযুক্ত ভেনের মতো ক্ষমতাশালী শক্তিগুলি। কুচ্ছভেলি বিভাগীয় এলাকাসহ অবৈধ ভূমিদখল এবং জোরপূর্বক বসতি স্থাপনের কেন্দ্রে রয়েছে আরিসিমালে বৌদ্ধ মন্দিরের প্রধান দায়িত্বরত পুরোহিত পানামুরে তিলকবংশ থেরো। ১৯৭০'র দশকের শেষের এবং ১৯৮০'র দশকের গোড়ার দিকে শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্বরত সিরিল ম্যাথিউ এই অঞ্চলে সিংহলী সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি বসতি স্থাপন এবং বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণের যে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল সেখানে ১৯৭৭ সালের বৌদ্ধ বসতির নিদর্শন চিহ্নিত করে আরিসিমালে বিহার এবং এর দায়িত্বরত প্রধান জমির উপর দাবি করেছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দার মতে, এই অঞ্চলে বৌদ্ধ ধ্বংসাবশেষের এমন আপাত পুনঃআবিষ্কারের ফলে পিচ্চামল বিহারকে আনুমানিক ৩২০ একর থেকে ৪০০ একরের মতো আরো অন্যান্য বিহার বা বৌদ্ধ মন্দিরকে জমি প্রদান করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আরো কিছু কিছু এলাকা ঘিরে রেখেছে। একটি অত্যন্ত বিশদ ও পেশাদার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই অঞ্চলটিতে তার ঐতিহাসিক দাবিগুলি প্রচার করে আরিসিমালে মন্দির এইভাবে তার দখল ও উপস্থিতি বিস্তার করেছে ৷
হাই-ডেফিনেশন অডিওভিজুয়াল বিষয়বস্তুর একটি সংকলিত বাছাই তীর্থস্থান পর্যটনের একটি ধারা প্রচলনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিংহলী বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে মন্দিরটির মহৎ উদ্দেশ্যে সমাবেশ লালন ও বাস্তবায়নের আহ্বানের একটি সুচিন্তিত কৌশল প্রকাশ করে।গ্রাউন্ডভিউজের নিচের ভিডিওটিতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের দুইজন সদস্য বর্ণনা করেছে পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ব্যবস্থাপনার টাস্ক ফোর্সের পদক্ষেপের ফলে তারা কীভাবে হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
সেই কারণে স্থানীয় পর্যটন ১৯ শতকের গোড়ার দিকে পূর্ব উপকূলরেখা বরাবর বসতি স্থাপনের পর থেকে অন্যান্য সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠিত সাংস্কৃতিক ছাপকে চ্যালেঞ্জ করতে প্রত্যাশার চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। ১৯৮০’র দশকের মাঝামাঝি শুরু হওয়া ৩০-বছরব্যাপী শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধজনিত শত্রুতার সময় তারা নিরাপদ এলাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে তাদের জমি দখল হয়ে গেছে দেখতে পায়। তাদের জমি সামরিক বাহিনী না হলেও বন দিয়ে বন বিভাগ একটি সংরক্ষিত এলাকা বানিয়ে ঘিরে রেখেছে। এসব কৌশলও অপর্যাপ্ত প্রমাণিত হলে এই জনবসতির অধীন এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নিদর্শন এবং ধ্বংসাবশেষের সম্ভাবনা নির্দিষ্ট কিছু পক্ষের কাছে আকর্ষণীয় বলে মনে হয়। এর জন্যে একটি টাস্কফোর্স তৈরি করা হয়। আদিম পূর্ব উপকূল থেকে সরে থাকা ভ্রমণের ব্লগগুলি পূর্ব দিকের স্বল্প পরিচিত বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করছে বলে প্রায়শই “বিদেশী চরমপন্থীদের” কথা উল্লেখ করে থাকে। কয়েক ডজন পাহারাদার রোডব্লক ও ঘাঁটির কথা বাদ দিলেও সম্মুখভাগে সেনাবাহিনীর হোটেল এবং বিমান বাহিনীর গলফ কোর্সের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী এই অঞ্চলে এখনো তার দখল বজায় রেখেছে এবং আরিসিমালে সমুদ্র সৈকত বা কুচ্ছভেলি পিচ্চামল রাজা মহাবিহারের মতো উল্লেখযোগ্য কিন্তু বিতর্কিত বিভিন্ন সাইটে এখনো উপস্থিতি রয়েছে যেখানে প্রবেশের জন্যে নৌবাহিনীর পূর্বানুমতি প্রয়োজন হয়।
এই এলাকার সম্প্রদায়গুলি পুলমোদ্দাই সড়ক বরাবর ভূমি এবং উপকূলরেখার কিছু অংশের বৌদ্ধ পরিচয়ের জন্যে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক মূল্য রয়েছে এবং এভাবে আইনের অধীনে সুরক্ষিত থাকা উচিৎ বলে স্বীকার করলেও খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে বিহার থেকে রুয়ানাওয়েলিসেয়া স্তূপে জুঁই ফুল দেওয়া হয়েছিল এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুই শতাব্দী ধরে সেখানে বসতি স্থাপনকারী বিদ্যমান সম্প্রদায়গুলিকে স্থানান্তরিত করে অন্য কাউকে জমি দিয়ে দেওয়ার মতো কোন ঘটনাবলীর অনুমতি দেওয়া উচিৎ নয়।
বৌদ্ধ দর্শন ঐতিহাসিক জমিজমাভিত্তিক নয়। গ্রাউন্ডভিউজের নিচের ভিডিওটিতে কুচ্ছাভেলির মুসলমান সম্প্রদায়ের আসিক মোহাম্মদ ইব্রাহিম ব্যাখ্যা করেছেন যে তার পূর্বপুরুষরা দুই শতাব্দী আগে সেখানে বসবাস শুরু করলেও এই জবরদখলের কারণে তারা হুমকির সম্মুখীন।
কুচ্ছভেলি বিভাগের মতো অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে মুসলমান জনবহুল একটি এলাকা হলেও মন্দিরগুলির জন্যে অধিক জমি বরাদ্দের কারণে মন্দিরগুলিতে উপাসনার জন্যে অধিকহারে ভক্তদের বসতি শুরু হওয়ায় বিদ্যমান সামাজিক বুনন পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে৷ বিভিন্ন এবং কখনো কখনো অযৌক্তিক কারণে বন বিভাগ, বন্যপ্রাণী ও সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং মহাবলী কর্তৃপক্ষ ব্যক্তিগত জমি ঘিরে ফেলা এবং সেখানে প্রবেশাধিকার অস্বীকার করা ছাড়াও এই কারণগুলি অতিরিক্ত।
শ্রীলঙ্কার বহুত্ববাদী এবং বহুসাংস্কৃতিক পরিচয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ত্রিনকোমালিকে এক জাতি, এক ধর্ম, এক জাতিসত্তার সমগোত্রীয় স্থান হিসেবে দাবিকে পুনরায় ব্যাখ্যা করা অব্যাহত থাকায় উত্তেজনা তুঙ্গে।