মালয়েশীয় শিল্পী ফাহমি রেজা ব্যঙ্গাত্মক পোস্টারের জন্যে পুলিশি তদন্ত ও অভিযোগের মুখোমুখি

বাকস্বাধীনতা প্রচারকরা ফাহমি রেজার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। স্বাধীন সাংবাদিকতা কেন্দ্রের একটি টুইটার পোস্ট থেকে নেওয়া ছবি। অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

সামাজিক গণমাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে উপহাস করে পোস্টার প্রকাশ করার জন্যে গত ২২ জানুয়ারি তারিখে পুলিশ মালয়েশীয় গ্রাফিক শিল্পী ফাহমি রেজাকে তলব করে এই মাসে তার উপর দুটি অভিযোগে এনেছে। ফাহমি ইতোমধ্যে এই বছর জামিনের জন্যে ৮,০০০ রিঙ্গিত (প্রায় ১,৬৫,০০০ টাকা) পরিশোধ করেছেন ৷ মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো পুলিশি তদন্ত এবং ফাহমির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরকে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্থান সঙ্কোচনের প্রতিফলন হিসেবে নিন্দা করেছে।

পুলিশ ২৫ জানুয়ারি তারিখে ফাহমিকে ডেকে পাঠিয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মারাত্মকভাবে বন্যাক্রান্ত মালয়েশিয়ার পাহাং রাজ্যের বীরত্বের প্রতীক পরিবর্তন করা একটি পোস্টারের জন্যে করা অভিযোগের বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে বলা হয়। রাজ্যে ব্যাপকভাবে গাছ কাটার জন্যে আকস্মিক বন্যাকে দায়ী করা হলে ফাহমির তার পোস্টারে দুটি কুড়ালসহ একটি গাছ এঁকে তাতে “বালাকের বাড়ি” লেখা একটি শিলালিপি জুড়ে দেন। মালয় ভাষায় বালাক মানে গাছের কাণ্ড বা কাঠ।

১০ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফাহমিকে ২০২১ সালে দেশের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকা একটি পোস্টারের জন্যে যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া আইনের (সিএমএ) ২৩৩ নং ধারার আওতায় অভিযুক্ত করা হয়। পোস্টারটিতে সরকারি সফরে বিদেশ থেকে ফিরে আসা মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীদের জন্যে মন্ত্রীর কোভিড-১৯ কোয়ারেন্টাইনের মেয়াদ কমানোর সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করা হয়েছিল।

সিএমএ-র ধারা ২৩৩ “বেনামী যোগাযোগসহ অন্য কোন ব্যক্তিকে বিরক্ত, গালাগাল, হুমকি বা হয়রানির উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানকে অপরাধী করে।”

১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখে ফাহমিকে কোভিড-১৯ লকডাউন চলাকালীন শুধু “প্রয়োজনীয় পরিষেবাদি” চালু রাখার অনুমোদন থাকলেও ২০২১ সালের জুনে অ্যালকোহল উৎপাদনের অনুমতি দেওয়ার জন্যে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের আদেশকে উপহাস করা ভিন্ন একটি পোস্টারের জন্যে একই আইনে আরেকটি অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মালয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা মুসলমান।

এই বছর দ্বিতীয়বার জামিন পাওয়ার পর ফাহমি একটি প্রতিবাদী টুইট করেন:

আমি জামিনে আছি! আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের জন্যে দাঁড়াতে ভয় পাওয়া উচিত নয় কারণ এটি আপনার সাথে দাঁড়ানোর জন্য অন্যদের সাহস জোগায়। তারা একজন বিদ্রোহীকে জেলে দিতে পারে, কিন্তু তারা গোটা বিদ্রোহটিকে জেলে পাঠাতে পারে না।

আর্টিকেল ১৯ এর মালয়েশীয় জ্যেষ্ঠ্য কর্মসুচি কর্মকর্তা নলিনী ইলুমালাই তার বর্ণনা মতে ফাহমির বিরুদ্ধে “ডাইনি শিকার” বন্ধ করার জন্যে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন:

ফাহমি রেজাকে ভয় দেখানোর প্রয়াসে সরকার প্রতিশোধমূলক ফৌজদারি অভিযোগের ব্যবহার করে শুধু তার বিরুদ্ধে তাদের বিদ্বেষপূর্ণ ডাইনি-শিকার করতে সক্ষম হয়েছে। তাদেরকে অবশ্যই হয়রানি এবং মতপ্রকাশ অপরাধীকরণের অভিযান বন্ধ করতে হবে।

স্বাধীন সাংবাদিকতা কেন্দ্র (সিআইজে) কর্তৃপক্ষকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ মতপ্রকাশের একটি সুরক্ষিত রূপ:

সরকারি নেতাদের অবশ্যই জনসমালোচনা ও ভিন্নমত হজম করা শিখতে এবং ব্যঙ্গ করার কারণে #ফাহমি_রেজার মতো সমালোচকদের পেছনে ছোটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখুন!

আর্টিকেল ১৯ এবং সিআইজে সিএমএ-র মতো “কঠোর” আইনগুলির পর্যালোচনা এবং বাতিলের জন্যে চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম।

বিরোধীদলীয় আইন প্রণেতা লিম গুয়ান ইং নতুন সরকারের আমলে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর ক্রমবর্ধমান আক্রমণ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়ার জন্যে ফাহমির ঘটনাটি উল্লেখ করেন:

চোখের সামনেই জনগণের সমালোচনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার স্থান গণতন্ত্র ও দুর্নীতির বিপদের প্রতি ভ্রূক্ষেপহীন একটি চরমপন্থী শাসকগোষ্ঠী আমলে ধীরে ধীরে এবং নিশ্চিতভাবে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে যেখানে নেই।

অনলাইন কাজের জন্যে ফাহমির হয়রানির শিকার হওয়া এটিই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে থাকা দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে উপহাস করে ক্লাউন মেমে পোস্ট করার জন্যে কর্তৃপক্ষ তাকে হুমকি দিয়েছিল। এছাড়াও ২০২১ সালের ২৩ এপ্রিল তারিখে পুলিশ মালয়েশিয়ার রানী আজিজাহ আমিনাহ মায়মুনাহ ইস্কান্দারিয়াকে উপহাস করে একটি ব্যঙ্গাত্মক স্পটিফাই প্লেলিস্টের অভিযোগ পাওয়ার পরে তাকে একদিনের জন্যে আটক করে রাখা হয়েছিল।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .