- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চীন শীতকালীন অলিম্পিকের আগে ওমিক্রন নিশ্চিহ্ন করতে চায়

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, চীন, খেলাধুলা, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি, সরকার, স্বাস্থ্য, অলিম্পিকস, কোভিড ১৯

শীতকালীন অলিম্পিকের আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অলিম্পিক ভেন্যু পরিদর্শন করেছেন এবং স্বাস্থ্য প্রোটোকল ও প্রত্যাশা সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়েছেন। দক্ষিণ চীন মর্নিং পোস্টের ইউটিউব [1] চ্যানেলের পর্দাছবি।

আগামী মাসে ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিক গেমস শুরু হতে চলেছে। আগামী সপ্তাহে অলিম্পিকের সাথে যুক্ত প্রায় ২৭,০০০ লোক দেশে প্রবেশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

চীনা কর্তৃপক্ষ একটি বদ্ধ ক্যাম্পাস বা কথিত “অলিম্পিক বুদ্বুদ [2]” তৈরি করছে যাতে সংক্রামক কোভিড-১৯ এর ভেরিয়েন্টগুলি বেইজিংয়ে ছড়িয়ে না পড়ে। তবে সম্প্রতি দেশে ডেল্টা এবং ওমিক্রন ভেরিয়েন্টের কেস শনাক্তের কারণে এই পরিকল্পনাটি জটিল হয়েছে। এতে বেইজিং কীভাবে গেমসের আগে প্রাদুর্ভাব রোধ করতে পারবে তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

গত সপ্তাহে বেইজিং থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরবর্তী শহর তিয়ানজিনে দুটি স্থানীয় ওমিক্রন কেস পাওয়া গেছে। একটি ব্যাপক পরীক্ষামূলক প্রচারাভিযান চালু করে ৯ জানুয়ারি তারিখে আরো ১৮টি কেস [3] যার মধ্যে ১০টি উপসর্গযুক্ত এবং ১১টি [4] উপসর্গবিহীন কেস পাওয়া যায় ১০ জানুয়ারি তারিখে।

তিয়ানজিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও দূরীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে [5] শহরটি তৃতীয়-প্রজন্মের সংক্রমণ বিস্তারের মুখে, যার মানে হলো ১৪ – ২১ দিন ধরে শনাক্ত না হওয়া ঘটনাগুলি ছড়িয়ে পড়ছে এবং কর্তৃপক্ষ এখনো সংক্রমণের উৎস সনাক্ত করতে পারেনি।

ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা

শীতকালীন অলিম্পিক ঘনিয়ে আ্সার সাথে সাথে বন্দর নগরীটিকে লাল সতর্কতায় রাখা হয়েছে। বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে শহরটির ১ কোটি ৪০ লক্ষ জনগণ কোভিড-১৯ নিউক্লিয়িক এসিড পরীক্ষার জন্যে লাইনে দাঁড়াতে যাচ্ছে [6]

ওয়েইবোর বেশ কয়েকটি সাক্ষ্য অনুসারে, অন্যান্য শহরে ওমিক্রনের বিস্তার রোধের জন্যে তিয়ানজিনের বাসিন্দাদের তাদের আবাসিক জেলা ছেড়ে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

তবে অনেকে মনে করেন যে সংক্রামক ওমিক্রন ভেরিয়েন্টটি ইতোমধ্যে বেইজিং পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যেহেতু তিয়ানজিনের লুকানো সংক্রমণ হেনান প্রদেশের আনিয়াং শহরে চলে গেছে [7]। টুইটারে জুয়ানঝুও৮৫ (@xuanzhuo85) জানিয়েছেন যে তিয়ানজিনবাসীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য হলো রাজধানী শহর:

আমার মতে ইতোমধ্যেই বেইজিং ওমিক্রন আক্রান্ত হওয়ার খুবই সম্ভাবনা রয়েছে।

বেইজিং হলো তিয়ানজিন থেকে আসা ভ্রমণকারীদের এক নম্বর ভ্রমণ গন্তব্য। তিয়ানজিন ছেড়ে আসা ১৫% এরও বেশি মানুষ বেইজিংয়ের দিকে যাচ্ছে। সেই তুলনায় আনিয়াং যাওয়া লোকের সংখ্যা মাত্র ০.৫% এরও কম। তবুও তারা ইতোমধ্যে (আক্রান্ত)

একথা মাথায় রেখেই বেইজিং কর্তৃপক্ষ খুব সতর্কতা অবলম্বন করেছে:

” বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলি তাদের ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিলে সমস্ত কোচিং সেন্টার, ডে কেয়ার সেন্টার এবং বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়।”

“সিল বন্ধ” = “ঢালাই বন্ধ”? #বেইজিং২০২২ #কোভিড #ওমিক্রন

চীনের শূন্য-কোভিড কৌশল এখন পর্যন্ত দেশের ভেতরকার কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে সফল হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের উৎপত্তিস্থল উহান রাস্তা অবরোধ, গণপরিবহন পরিষেবা স্থগিত, ব্যাপক হোম কোয়ারেন্টাইন, কঠোর শাস্তি, ব্যক্তিগত চলাচল সীমাবদ্ধকারী  স্বাস্থ্য ও যোগাযোগ ট্র্যাকিং ব্যবস্থা এবং আরও অনেক ধরনের কর্তৃপক্ষীয় সীমাবদ্ধকরণ ব্যবস্থা [15] গ্রহণের কারণে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হলেও চার মাসের মধ্যে ভাইরাসটিকে কার্যত নির্মূল করেছে।

এবং আরো সাম্প্রতিককালে শানসি প্রদেশের একটি শহর জিয়ানে ২৩ ডিসেম্বর থেকে তিন সপ্তাহের লকডাউন ডেল্টা ভেরিয়েন্টের বিস্তারকে কমবেশি থামিয়ে দিয়েছে। জিয়ানে নতুন স্থানীয় সংক্রমণ ২৯ ডিসেম্বর তারিখের ১৫৫ [16] থেকে কমিয়ে ১০ জানুয়ারি তারিখে ১৩ [4] টিতে নামিয়ে এনেছে।

কোভিড প্রোটোকল নিয়ে নাগরিকদের হতাশা

তবুও কর্তৃত্বমূলক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সামাজিক ও রাজনৈতিক মূল্যও বিশাল। জিয়ানে লকডাউন চলাকালে খাদ্য ঘাটতি এবং গর্ভবতী মহিলা ও হৃদরোগাক্রান্ত বয়স্ক ব্যক্তিদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগণের প্রতি অপর্যাপ্ত যত্নের সাক্ষীদের বয়ানে স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা নিয়ে হতাশা [17] সামাজিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

এদিকে কর্তৃপক্ষ ক্ষমা প্রার্থনা করে সম্প্রদায়ের হতাশাকে প্রশমিত করেছে:

জিয়ানের নগর সরকারের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এই ঘটনাটি “সমাজে ব্যাপক উদ্বেগ এবং একটি গুরুতর সামাজিক প্রভাব সৃষ্টি করেছে।”

এবং সেইসাথে দমনও চলছে:

উত্তর চীনের শহর জিয়ানের কর্তৃপক্ষ শহরের ১ কোটি ৩০ লক্ষ বাসিন্দার জন্যে নতুন কোভিড-১৯ লকডাউন নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন পোস্ট নিষিদ্ধ করার পরে পুলিশ কয়েক ডজন লোককে অনলাইনে “গুজব” ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে।

এখন ওমিক্রন চীনে পৌঁছে যাওয়ার ফলে তার শূন্য-কোভিড কৌশলে স্ফটিক হিসাবে দেশের নিয়ন্ত্রণ মডেলটি একটি গুরুতর পরীক্ষার মুখোমুখি হবে – রাজনৈতিক অর্থনীতির অধ্যাপক শার্লি জে ইউ যেমন উল্লেখ করেছেন:

তিয়ানজিনে #ওমিক্রন দেখা গেছে। এটা চীনের শূন্য-কোভিড নীতির জন্য সবচেয়ে গুরুতর পরীক্ষা হবে, কারণ স্ট্রেনটির প্রকৃতির কারণে সামাজিক ব্যয় অবশ্যই আগের চেয়ে আরো অনেক বেশি হবে। শীতকালীন অলিম্পিকের আগে ৩০ দিনেরও কম সময় রয়েছে। চীন কি এর মধ্যে ওমিক্রনকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে?