নিউজিল্যান্ড সরকার ১৯৭০ এর দশকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের উপর পরিচালিত ভোরের অভিযানের জন্যে ক্ষমা চেয়েছে

সামোয়ার ঐতিহ্যবাহী একটি পোশাক পরে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন ১৯৭০ এর দশকে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের উপর পরিচালিত ভোরের অভিযানের জন্যে ক্ষমা চেয়েছেন। রেডিও সামোয়ার একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন ১৯৭০ এর দশকে সেদেশের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের উপর পুলিশ ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ভোরের অভিযান পরিচালনার জন্যে “আনুষ্ঠানিক এবং নিঃশর্ত ক্ষমা” প্রার্থনা করেছেন

১৯৭৪ সালের মার্চ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত দমনাভিযানগুলি চলেছিল। সেই সময় নিউজিল্যান্ড দেশে “অতিরিক্ত সময়” অবস্থান করা ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনের জন্যে রাত ১১টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যে শত শত অভিযান চালায়। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ আনা হয়।

নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দেশের উৎপাদন খাতকে প্রসারিত করতে সাহায্য করার জন্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোকে কর্মী পাঠাতে উৎসাহিত করেছিল। কিন্তু ১৯৭০ এর দশকের প্রথম দিকে মন্দা চলাকালীন বেকারত্ব বৃদ্ধি পেলে তারা অন্যায়ভাবে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ থেকে অভিবাসীদের আগমনকে দায়ী করে। তারপর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অভিবাসী এবং তাদের পরিবারগুলিকে লক্ষ্য করে যত্রতত্র দমনাভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদ পরিচালনা করে।

তার ক্ষমা প্রার্থনার সময় আর্ডার্ন বর্ণনা করেন কীভাবে সম্প্রদায়গুলির সদস্যদের “পরের দিন খালি পায়ে হোল্ডিং সেলে তাদেরকে দেওয়া পায়জামা অথবা জামাকাপড় পরে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়; অন্যান্যদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়।”

গত ১ আগস্ট অকল্যান্ডে একটি টাউনহল সভায় আর্ডার্ন ক্ষমা চান:

প্রায় ৫০ বছর আগে আপনাদের প্রতি অন্যায়কারী সেই রাজত্বের প্রতীক হিসাবে আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি।

আজকে আমি নিউজিল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৭০ এর দশকে অভিবাসন আইনের বৈষম্যমূলক প্রয়োগ করে ভোরের দমনাভিযানগুলি ঘটানোর জন্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সম্প্রদায়ের কাছে আনুষ্ঠানিক এবং নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্যে দাঁড়িয়েছি।

সরকার কোন একসময় উপযুক্ত বিবেচনা করা ভোরের দমনাভিযান এবং এলোমেলো পুলিশি তল্লাশির মতো এই পদক্ষেপগুলির জন্যে দুঃখ, অনুতাপ এবং অনুশোচনা প্রকাশ করছে।

টোঙ্গা সম্প্রদায়ের বংশোদ্ভূত সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রী কারমেল সেপুলোনি ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:

আজ আমাদের প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং নিউজিল্যান্ড ইতিহাসে একটি মর্মস্পর্শী মুহূর্ত। একটি নতুন ভোরের শুরু। ✨ আমি আশা করি আজকের ক্ষমা আমাদের জনগণ, পরিবার-পরিজনের বহন করা ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সামোয়াতে জন্মগ্রহণকারী প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণ মন্ত্রী অপিতো উইলিয়াম সিও ভোরের দমনাভিযানগুলিকে বর্ণবাদের সাথে যুক্ত বলে উল্লেখ করেন:

আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষের ক্ষতি করা অন্যায় ছিল।

আমরা এখন জানি যে এটা ছিল জঘন্য ধরনের বর্ণবাদ।

ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে আসা প্রচুর সংখ্যক অনুমোদনের চেয়ে বেশিদিন বসবাসকারীদেরকে ছোঁয়া পর্যন্ত হয়নি।

এটা তখন ভুল ছিল, আজও এটা ভুল, এটা সবসময়ের জন্যে ভুল – বর্ণবাদ, বৈষম্য, কুসংস্কার – এটা যাই হোক না কেন, তা অন্যায়।

টোঙ্গার রাজকুমারী মেল সিউইলিকুতাপু কালানিউভালু ফটোফিলি আর্ডার্নের ক্ষমা প্রার্থনা মেনে নিয়েছেন:

ভোরের দমনাভিযানের যুগে বিশেষ করে আমার সম্প্রদায়ের প্রতি চরম, অমানবিক, বর্ণবাদী এবং অন্যায় আচরণ করার জন্যে ক্ষমা চাওয়ার সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে আমি আপনার সরকারের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।

আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আমরা এই সত্যটি মেনে নিয়েছি যে সেই সময়ে আমাদের কিছু লোক আইনের ভুল প্রান্তে অবস্থান করছিল – ঠিক তাই।

আমাদের লোকদের উপর পুলিশের কুকুর লেলিয়ে দেওয়া, সকাল সকাল আমাদের বাড়িতে দমনাভিযান এবং সেই সময়ে আরো অনেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমোদন দেওয়াটা উচিত হয়নি।

টুইটারের অনেক প্রতিক্রিয়ায় এই ক্ষমা চাওয়ার ঐতিহাসিক গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়েছে:

আমি জানি ভোরের দমনাভিযানের জন্যে প্রশান্ত মহাসাগরীয় জনগণের কাছে নিউজিল্যান্ডের ক্ষমা প্রার্থনা কখনোই যথেষ্ট এবং ন্যায়বিচারের বিকল্প কিছু না। তবে আমি এটা দেখতে চাই যেহেতু আমি এখনো এমন একটি দেশে বসবাস করি যে দেশ তার ঔপনিবেশিক ইতিহাস স্বীকার করে না এবং এর শিক্ষাকে অবৈধ করার জন্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

দমনাভিযানে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নেটনাগরিকদের আত্মীয়-স্বজনরাও ছিল:

ভোরের দমনাভিযানের ক্ষমা প্রার্থনার জন্যে অনেক আবেগ অপেক্ষা করছে (আমার বাবা চাক থম্পসনকে নির্বাসিত করা হয়েছিল পরবর্তীতে যিনি জাতিগত সম্পর্ক দপ্তর এবং শিক্ষা বিভাগে কর্মরত ছিলেন)

কেউ কেউ টাউন হলের সভায় ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে সামোয়ার একটি অনুষ্ঠান ব্যবহারের প্রশংসা করেছে:

বাহ, এটা আমাকে ঠাণ্ডা করে দিয়েছে! একটি প্রকাশ্য ক্ষমা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ? প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডার্ন এবং নিউজিল্যান্ড সরকার সামোয়ার সংস্কৃতির একটি ‘ইফোগা’ উপস্থাপন করেছে। এই মুহূর্তটি আমাদের পলিনেশীয় জনগণের কাছে স্মরণীয় ?✨ #ভোরের_দমনাভিযানের_জন্যে_ক্ষমা_প্রার্থনা।

সাংবাদিক টিম মারফি অনুষ্ঠান চলাকালীন একটি আবেগময় মুহুর্ত ধারণ করেছেন:

কিন্তু এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিটি আর্ডার্ন এবং লাইভ স্ট্রীমে উঁচু করে দেখানো টোঙ্গার রাজকুমারী থেকে শুরু করে টাউন হলের সাধারণ মানুষের কান্নাকে কাভার করা ইফোগার দৃশ্যের চেয়ে বেশি কিছু – গান এবং হাসির মুহুর্তের চেয়ে বেশি, কিছু – আর সেটি হলো শুরুতে কয়েক মিনিট বাজানো গম্ভীর শব্দ।

একটি নীরব টাউনহলের দরজায় ধারাবাহিক সজোর ধাক্কা  – কড়া নাড়া, ধুমধাম, ভোঁতা আওয়াজ, কুকুরের ঘেউ ঘেউ, মৃদু সাইরেন, সন্ত্রস্ত মানুষ ও শিশুদের কান্নার শব্দ।

এগুলো হলো অন্যায়ের প্রতিভূ আওয়াজ!

আর্ডার্ন প্রশান্ত মহাসাগরীয় যুবকদের জন্যে ৩১ লক্ষ ডলারের (প্রায় সাড়ে ২৬ কোটি বাংলাদেশী টাকা) বেশি বৃত্তি এবং ফেলোশিপের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে ভোরের দমনাভিযানের ক্ষতিগ্রস্তদের উত্তরাধিকারদের সম্পর্কে জানানো জন্যে অতিরিক্ত সম্পদ নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছেন

1 টি মন্তব্য

  • JamunaTV

    সম্মানিত সম্পাদক, আপনার এই লিস্টটি খুবই ভালো। এই লিস্টটি অনেক উপকারী। কিন্তু একটা বিষয় দেখে হতাশ আপনার এই লিস্টে যমুনা নিউজ নেই। যমুনা নিউজ খুব উচ্চ মানের সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। তাই ব্যাক্তিগত ভাবে আমি আশা করব আপনার এই লিস্টে যমুনা নিউজ সংযুক্ত করেবেন।

আলোচনায় যোগ দিন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .