টুইটার জাপান সরকারের সমালোচকদের থামিয়ে দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে

"Checking the Prime Minister's Pancakes for Poison" (パンケーキを毒見する)

“বিষের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্যানকেকগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে” (パンケーキを毒見する)। ফ্লিকার থেকে নেওয়া অজয়_সুরেশের প্যানকেকের ছবি রিমিক্স করেছেন নেভিন থম্পসন (সিসি বাই ২.০)।

জাপান সরকার কোভিড-১৯ বৃদ্ধি, অসম টিকাদান কার্যক্রম এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের আগে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছে অনুভূত সম্মানের জন্যে সমালোচনার মুখোমুখি। বিশিষ্ট ভাষ্যকাররা দাবি করেছেন যে জাপানের টুইটারের ব্যবসায়িক ইউনিট টুইটার জাপান প্রধানমন্ত্রী সুনা ইয়োশিহিদে এবং জাপান সরকারকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে। এই মন্তব্যকারীরা তাদের অ্যাকাউন্টগুলি স্থগিত এবং তারপরে জনগণ হৈচৈ করার পরে পুনরায় সক্রিয় হতে দেখেছে – যার জন্যে টুইটার জাপান কোন কারণ ব্যাখ্যা করেনি। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে জাপানের সরকারের সমালোচনা করার পরে ব্যবহারকারীর টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত হয়েছে।

স্থগিত অ্যাকাউন্টগুলির মধ্যে নাট্যমঞ্চে প্রধানমন্ত্রী সুনা ইয়োশিহিদেকে ক্রমাগতভাবে বিদ্রূপ করা অ্যানিমেটেড ব্যঙ্গের আসন্ন মুক্তি প্রচারকারী “বিষের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্যানকেকগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে” (パンケーキを毒見する) অন্যতম।  টুইটার অ্যাকাউন্টটির শিরোনাম এবং এর প্রচার করা আসন্ন চলচ্চিত্রটি হলো জাপানের প্রধানমন্ত্রীর প্যানকেকের প্রতি ভালবাসার মতো একটি উপাদান ব্যবহার করে তার নিজের একটি প্রকাশ্য ছবি গড়ে তোলার প্রচেষ্টার একটি উল্লেখ।

আমাদের আসন্ন চলচ্চিত্র “বিষের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্যানকেকগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে” (パンケーキを毒見する) এর আগে, আমরা একদম বর্তমানে জাপানের বিভিন্ন জিনিস সত্যিকারভাবে তুলে ধরার জন্যে পাঁচটি স্বল্পদৈর্ঘ অ্যানিমেটেড ক্লিপ প্রকাশ করছি।

আপনি বেনপি নেকো (“কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা বিড়াল”) এর প্যানপ্যাকা প্যান্টস অ্যানিমেটেড ধারাবাহিকের মতো অ্যানিমেশনের ধারা চিনতে পারবেন

জনগণ হৈ চৈ করার পরে ২৪ জুন তারিখে আসন্ন চলচ্চিত্র সম্পর্কে টুইট করার পরে টুইটার জাপানের স্থগিত করা “বিষের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্যানকেকগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে” এখন পুনর্বহাল করা হয়েছে।

টুইটার জাপান স্থগিতাদেশ বা অ্যাকাউন্ট পুনর্বহালের জন্যে কোন প্রকার ব্যাখ্যা দেয়নি।

এদিকে “টোকিও অলিম্পিক বাতিল করো” (#東京五輪の開催中止を求めます) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি টুইটার ধারাবাহিক প্রকাশের ফলে জুনের শেষদিকে টুইটার জাপান বিশিষ্ট অলঙ্করণশিল্পী, ভাষ্যকার এবং জাপান সরকারের সরব সমালোচক নোমাচি মিনেকোকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার পর তাকে আবার পুনর্বহাল করা হয়েছে।

সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন বুনশুনে নোমাচি মিনেকোর ৮ জুলাইয়ের কলামের একটি পর্দাছবি টুইট করে “বিষের জন্যে প্রধানমন্ত্রীর প্যানকেকগুলি পরীক্ষা করা হচ্ছে” এর পরিচালক উচিয়ামা ইয়ুতো উল্লেখ করেছেন যে টুইটার জাপান উভয় অ্যাকাউন্টই একই সময়ে স্থগিত করেছিল।

উচিয়ামা আরো উল্লেখ করেছেন যে নোমাচি তার কলামে যুক্তি দেখিয়েছেন যে টুইটার জাপান স্বয়ংক্রিয়ভাবেই জাপানি সরকারের সমালোচনাকারী অ্যাকাউন্টগুলিকে স্থগিত করে দেয়।

বুনশুনের ৮ জুলাই সংখ্যায় নোমাচি মিনকো টুইটার কর্তৃক তার স্থগিত অ্যাকাউন্টটিকে ঘিরে বিস্ময়কর ঘটনাবলীর একটি ধারাবাহিক তুলে ধরেছেন। আমাদের “প্যানকেক” অ্যাকাউন্ট স্থগিত হওয়ার হওয়ার ঠিক দু'দিন আগে তার অ্যাকাউন্টটি স্থগিত হয়েছিল!

এবং আমরা দুজনেই টুইটার থেকে ঠিক একই স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম!

নোমাচি তার নিষেধাজ্ঞার যুক্তি করেছেন [যে সরকারের সমালোচনা করায় টুইটার কর্তৃক স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার অ্যাকাউন্টটি লক হয়ে যায়] এর গভীর একটা অর্থ রয়েছে।

[জাপানি অ্যাকাউন্টগুলি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে টুইটারের নীতি] সম্পর্কে প্রচুর প্রকাশ্য প্রশ্ন রয়েছে।

এই স্থগিতাদেশটি নিয়ে নোমাচির সমর্থকরা টুইটারে হাজার হাজারবার টুইট করে প্রতিক্রিয়া জানানোর পরে কোন প্রকার মন্তব্য না করেই টুইটার জাপান তার অ্যাকাউন্টটি পূনর্বহাল করে দেয়।

অন্যান্যরা অ্যাকাউন্ট স্থগিত ও পুনরুদ্ধার করার বিষয়ে টুইটার জাপানকে অন্যায্য ও অস্বচ্ছ বলে অভিযুক্ত করেছে।

২০২১ সালের শুরুর দিকে অন্য একটি ঘটনায়, টুইটার জাপান প্রকৃতপক্ষে কোভিড-১৯ সম্পর্কে মিথ্যাতথ্য ছড়িয়ে দেওয়া অ্যাকাউন্টগুলিকে নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে মিথ্যাতথ্য উন্মোচন করে দেওয়া একটি অ্যাকাউন্ট স্থগিত করেছে

মহামারীটির শুরুতে পিসিআর পরীক্ষা কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণের নির্ভরযোগ্য কোন উপায় নয় বলে জাপানের স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এই বিতর্কিত দাবির পরে এই টুইটার ব্যবহারকারীকে নিষিদ্ধ করা হয়।

অলিম্পিক এবং কোভিড-১৯ মহামারীর বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে টুইটার জাপানের নিষেধাজ্ঞা এবং স্থগিতাদেশগুলি রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্য প্রণোদিত, অন্যায় বা অসঙ্গত বলে মনে হয়েছে।

আরেকটি উদাহরণে চলমান এবং অমীমাংসিত দুর্নীতি কেলেঙ্কারির মূল একটি গোপন নথি প্রকাশের জন্যে টইটার জাপান একটি অ্যাকাউন্ট স্থগিত করায় একজন সরকারি আমলা কথিত মিথ্যা নথিতে ফেঁসে গিয়ে আত্মহত্যা করেন। স্থগিত অ্যাকাউন্টটি ছিল মৃত রাজনীতিবিদের স্ত্রীর এবং গোপন ফাইলগুলি তাকে অভযোগ থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করে।

অপর একটি ঘটনায়, আঞ্চলিক রাজনীতিবিদের একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট আপাতভাবে কোন কারণ ছাড়াই তিন মাসের জন্যে স্থগিত করা হয়। তবে “কিউশু ফ্যাসিবাদি দল” এর প্রধান তোয়ামা কৈচি সামাজিক মিডিয়া মঞ্চটির টোকিও সদর দপ্তরে অঘোষিত সফর করার পর টুইটার জাপান তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাকাউন্টটি পুনর্বহাল করে

জাপানে টুইটারে বিষয়বস্তু পরিবর্তন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে। জাপানের কেন্দ্রীয় সরকার অনলাইনে ঘৃণাত্মক বক্তব্য রোধের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে আইন প্রণয়ন করার সময় এই বিধিগুলি কার্যকর করার বিষয়টি পৌরসরকার এবং আঞ্চলিক বিচার ব্যবস্থার হাতে রেখে দেয়।

অনলাইনে বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ অথবা সাধারণভাবে ঘৃণাত্মক বক্তব্য রোধ করতে আদালতগুলি কখনো কখনো জাপানের তুলনামূলকভাবে কঠোর দোষারোপ ও মানহানির আইনগুলি ব্যবহার করে থাকে। ২০২২ সালে কার্যকর হতে যাওয়া জাপানি মানহানি আইনের সংশোধনীগুলিও সমালোচকদের চুপ করিয়ে দিতে সরকারকে সাহায্য করতে পারে।

জাপানের সংবিধান বাকস্বাধীনতাসহ ব্যক্তিস্বাধীনতাকে তর্কসাপেক্ষভাবে সুরক্ষা দিলেও সংবাদমাধ্যমকে সূক্ষ্ম এবং ততটা সূক্ষ্ম নয় এমন সব নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার জন্যে দেশটি নিয়মিতভাবেই সমালোচিত হয়ে থাকে।

টুইটার জাপান যে জাপান সরকারের সমালোচনাকারী প্রগতিশীল কণ্ঠস্বরগুলিকে শাস্তি দেয় – এই ধারণাটি নতুন নয়।

২০১৮ সালের এর একটি নিবন্ধে সংবাদ সাইট লিটেরা অভিযোগ করেছে যে টুইটার জাপান এই মঞ্চে জাপান সরকারের সমালোচনাকারী প্রগতিবাদীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে বলে খুব প্রচলিত একটি ধারণা রয়েছে।

নিবন্ধটিতে লিটেরা আরো জানিয়েছে যে টুইটার জাপান সম্পূর্ণ বর্ণবাদী টুইটগুলিকে উপেক্ষা করে সামাজিক মিডিয়া মঞ্চে বর্ণ বৈষম্যকে সমালোচনাকারীদের অ্যাকাউন্টগুলিকে স্থগিত করতে শুরু করেছে।

নিবন্ধটিতে টুইটার জাপান এবং জাপানের ক্ষমতাসীন প্রগতিশীল গপণতান্ত্রিক পার্টির (এলডিপি) মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১৭ সালে লিটেরা জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি কীভাবে তাদের লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার জন্যে সামাজিক মিডিয়া মঞ্চটি ব্যবহার করতে পারে তার জন্যে টুইটার জাপানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইউ সাসামাতোকে এলডিপির সাথে কথা বলতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল (টুইটারの現在と政治での活用)।

টুইটার জাপান বিরোধী দলগুলিকেও এ জাতীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছিল কিনা সেটা স্পষ্ট না হলেও ২০১২ সাল থেকে জাপান শাসন করে আসা এলডিপি ইতোমধ্যে ২০১৩ সালের প্রথম দিক থেকেই অনলাইন সমালোচকদের পর্যবেক্ষণ এবং আগ্রাসীভাবে অনুসরনের কাজ শুরু করে। সেই সময় ২০১৩ সালে নিক্কির একটি সংবাদ কাহিনী অনুসারে, এলডিপি সামাজিক মিডিয়া পর্যবেক্ষণ করতে এবং “অপবাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে” (誹謗中傷への対応) একটি অভ্যন্তরীণ “ট্রুথ টিম” (জাপানি ভাষায় “টি২”) চালু করে:

チームは自民党のネットメディア局の議員約20人のほか、選挙スタッフやITベンダーのスタッフらで構成する。顧問弁護士2人も参加し、誹謗中傷の書き込みを発見した場合は、速やかに法的手段を取ったり削除要請をしたりするかを協議し、決断できるようにする。立候補者らがアカウントを持つFacebookやTwitter、ブログのほか、2ちゃんねるなど一般の掲示板も分析、監視の対象にする。

এই দলটি এলডিপির নির্বাচনী কর্মী এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিক্রেতাদের কর্মীসহ ইন্টারনেট মিডিয়া ব্যুরোর প্রায় ২০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। অপবাদমূলক লেখা আবিষ্কারের সাথে সাথেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বা মুছে ফেলার অনুরোধ করা হবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার জন্যে দু'জন আইনি পরামর্শকও অংশ নেয়। ফেসবুক, টুইটার এবং ব্লগ ছাড়াও ২চ্যানের মতো সাধারণ বুলেটিন বোর্ড – যেখানে বিবেচ্যদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে সেগুলিও বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করা হয়।

জাপানি সরকার এবং টুইটার জাপানের মধ্যে সরাসরি সংযোগগুলি প্রমাণ করা কঠিন হলেও সরকা্রি সমালোচকদের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব করা সামাজিক মিডিয়া মঞ্চগুলির ক্ষেত্রে জাপানি-ভাষা জ্ঞানের অভাবও একটা কারণ হতে পারে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আসাহি শিম্বুনের সাথে জাপানি ভাষায় একটি সাক্ষাৎকারে কর্নেল টেকের গবেষক মোর নামান বলেছেন যে টুইটারের নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা ইংরেজি ভাষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। নামানের দলের সংগৃহীত ও বিশ্লেষিত উপাত্ত অনুসারে, টুইটার মঞ্চে খুব কম সংস্থান থাকায় জাপানির মতো অন্যান্য ভাষায় নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার ফল বেশ বিভ্রান্তিকর হতে পারে।

এই মঞ্চে মিথ্যাতথ্য ছড়িয়ে যাওয়ার প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে নামান বলেন যে টুইটার মূলত (মিথ্যা তথ্য ছড়ানো) ইংরেজিভাষী অ্যাকাউন্টগুলিকে নিষিদ্ধ করে থাকে এবং অন্যান্য ভাষায় মিথ্যাতথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন পদক্ষেপ নেয় বলে মনে হয় না।

জাপানে টুইটারকে জাপানি সরকারের সমালোচনাকারী অ্যাকাউন্ট স্থগিত বন্ধ করতে অনুরোধ করা একটি অনলাইন আবেদন এপর্যন্ত ৩৬ হাজারের বেশি স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। পরিবর্তে এই আবেদনটি টুইটার জাপানকে তার মঞ্চে ঘৃণাত্মক বক্তব্য মোকাবেলা এবং জাপানি ভাষার অ্যাকাউন্টগুলির ক্ষেত্রে তাদের নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার উপর একটি নিরীক্ষণ পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়েছে।

এখনো পর্যন্ত টুইটার জাপান এই আবেদনে সাড়া দেয়নি।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .