সাম্প্রতিক দাবানল সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া থেকে শুরু করে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত গুজব কেলেঙ্কারি, দক্ষিণ এশিয়া চেক গ্রুপ সক্রিয়ভাবে নেপালে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানায়।
আনুষ্ঠানিকভাবে ৯ ই সেপ্টেম্বর ২০১৫ তে চালু হওয়া এই গোষ্ঠীটি একটি স্বতন্ত্র, নিরপেক্ষ, অলাভজনক উদ্যোগ যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলিতে ভুয়া তথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গ্লোবাল ভয়েসেসের সাথে একটি সাক্ষাতকারে, দক্ষিণ এশিয়া চেক সম্পাদক দীপক অধিকারী তথ্য-পরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন:
সর্বাধিক পাওয়া তথ্যগুলির নির্দিষ্ট প্রবণতা রয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট এজেন্ডা অনুসারে তাদের উপস্থাপন করার প্রবণতা রয়েছে। রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী নেতা,সরকারি বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্যরা অসমাপ্ত ও মিথ্যা দাবি করার ঝোঁক রাখেন। তারা প্রায়শই মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সুতরাং, আমাদের কাজ হল জনগণের কাছে সঠিক তথ্য উপস্থাপন করা। আমরা জনস্বার্থে সাংবাদিকতা অনুশীলন করি। মিথ্যা ও মিথ্যাচারের ক্ষেত্রে সঠিক এবং প্রমাণ-ভিত্তিক তথ্য পেতে লোকদের সহায়তা করার জন্য ফ্যাক্ট-চেক করা দরকার।
এই দলটি সম্প্রতি নেপাল জুড়ে হওয়া দাবানলের ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলির সত্যতা উন্মোচন করায় তাদের এই ভূমিকাটি একদম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু, ২০২১ সালের মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে দূষণের মাত্রা অভূতপূর্ব বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা দূষণের বর্ধনের কারণ হিসেবে অরণ্যের দাবানল ছড়িয়ে পড়া এবং তার থেকে উদ্ভূত ধোঁয়াকে দায়ী করেছেন।
লোকেদের সোশ্যাল চ্যানেলগুলিতে আগুনের খবর, তথ্য, চিত্র এবং ভিডিওর বন্যা বয়ে গেছে।কিছু লোক পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য অন্যান্য দেশের পুরানো ছবিগুলি শেয়ার করেছে। দক্ষিণ এশিয়া চেক ছবিগুলির সত্যতা-যাচাই করেছে এবং তারা খুঁজে পেয়েছে যে ছবিগুলো বিভ্রান্তিকর এবং তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট, কানাডা এবং ইন্দোনেশিয়ার বনের আগুনের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রস্তাবিত সুরক্ষা স্তরের ২০ গুণ বেশি ,২৬শে মার্চ এয়ার কোয়ালিটির সূচক (একিউআই) ৬০০ ছাড়িয়েছে। বছরের এই সময়ে সর্বাধিক দূষিত দুপুরেও একিউআই ও ১৫০ এর নিচে ছিল।
একিউআইয়ের উচ্চ স্তরের কারণে নেপাল জুড়ে কয়েকশ বনে আগুন জ্বলছে, যা লোকালয়ে ধোঁয়া এবং ছাই ছড়িয়েছিল। জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ১৫% সাধারণ বৃষ্টিপাতের সাথে একটি অস্বাভাবিক শুষ্ক শীত মার্চ মাসে দাবানলের পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছিল যা ৭০০ হেক্টরের বেশি বন ধ্বংস করেছিল।
Wild Fire all over #Nepal #AQI is going to be bad for days. pic.twitter.com/MujRWy0Vfs
— Pawan Adh (@KathWatch) March 26, 2021
সমস্ত #নেপাল জুড়ে বন্য আগুন এর কারণে বাতাসের মান কয়েক দিন ধরে খারাপ হতে চলেছে। – পবন আধ (@ ক্যাথওয়াচ)
সাউথ এশিয়া চেক উল্লেখ করেছে যে নেপালিরা দাবানলের আগুনের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে টুইটার এবং ফেসবুকের আশ্রয় নিয়েছিল। নেপালে বেশ কয়েকটি দিন টুইটারে #প্রেফরনেপাল (#PrayforNepal) হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড হয়েছিল, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা দাবানলের কিছু ছবি বিভ্রান্তিকর এবং ভুল ছিল।
এই প্রথম নয় যে দক্ষিণ এশিয়া চেক একটি বড় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রচার চালিয়েছে। ২০২০ সালটি সেই দলের জন্য উল্লেখযোগ্য ছিল যা সক্রিয়ভাবে করোনভাইরাস মহামারী সম্পর্কিত মিথ্যা তথ্য এবং “ভুয়া সংবাদ” উন্মোচন করেছে।
“ভাইরাসের বিস্তারটি ভুল তথ্যের বন্যার দ্বার উন্মুক্ত করেছিল,” দীপক অধিকারী বলেছেন। “এবং এটা আশ্চর্যজনক নয়, কারণ ষড়যন্ত্রতত্ব এবং মিথ্যা তথ্য অনিশ্চয়তার পরিবেশে সাফল্য লাভ করে।”
শুরুতে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ভুল তথ্যকে কেন্দ্র করে তারা বিশ্ব ডক্টর অ্যালায়েন্সের ভিডিও, স্নাপ কারফিউ সম্পর্কিত একটি উদ্দেশ্যযুক্ত সরকারী পাঠ্য বার্তা,কোভিড -১৯ টেস্ট কিটস মহামারীটির পূর্বাভাস দিয়েছে সংক্রান্ত দাবি, নেপালি প্রধানমন্ত্রীর কোভিড -১৯ এ মৃত্যুর যাচাইকরণ নিয়ে ডব্লুএইচও এর গাইডলাইন সম্পর্কিত দাবি, নেপালের করোনা ভাইরাস হাসপাতালের ছবি হিসাবে প্রচলিত ভারতের একটি পুরনো টয়লেটের ছবির ব্যবহার এবং ডাব্লুএইচও অন্যদের সাথে নেপালের জন্যও করোনভাইরাস ঝুঁকির স্তরকে সংশোধন করেছে মর্মের দাবির সংবাদের সত্যতা উন্মোচন করেছে।
নেপালে, জাতীয় দণ্ড (কোড) আইন ২০১৭ গুজব ছড়াতে নিষেধ করেছে এবং যে কোনও ব্যক্তির পক্ষে এটি করা বা প্রতিপালন করা হচ্ছে তাকে এক বছরের বেশি বা অনধিক দশ হাজার নেপালি রুপি (৮৫.২ মার্কিন ডলার) জরিমানা হতে পারে বা উভয় সাজা এবং জরিমানা হতে পারে।
কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ভুল তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় নেপাল পুলিশ সদর দফতর জনগণকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত ভুয়া সংবাদ না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।
নেপাল ফ্যাক্ট চেক আরেকটি উদ্যোগ যা ২০২০ সালের ২ এপ্রিল চালু হয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়া চেক এবং নেপাল ফ্যাক্ট চেক উভয়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্য-পরীক্ষার পাশাপাশি নেপালের মিডিয়াতে প্রকাশিত সংবাদও পরীক্ষা করে।
তবে একা ফ্যাক্ট-চেকাররা অনলাইনে প্রচারিত সমস্ত তথ্য পরীক্ষা করতে পারবেন না। পাঠকরাও বিষয়গুলি পছন্দ বা পুনঃটুইট করার আগে এবং তাদের ভাইরাল হতে সহায়তা করার আগে সংবাদ এবং চিত্রগুলির সত্যতা নিশ্চিত করার জন্য সহজ কৌশলগুলি ব্যবহার করতে পারেন।
Happy International Fact-Checking Day! Check out our new series of short videos explaining simple fact-checking techniques, starting with reverse image search #FactcheckingDay pic.twitter.com/nPyrIDT7lB
— AFP Fact Check ? (@AFPFactCheck) April 2, 2021
শুভ আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট-চেকিং দিবস! বিপরীত চিত্র অনুসন্ধানের সাথে শুরু করে সাধারণ ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের কৌশলগুলি ব্যাখ্যা করে আমাদের নতুন সিরিজটির ছোট ছোট ভিডিওগুলি দেখুন: #ফ্যাক্টচেকিংডে – এএফপি ফ্যাক্ট চেক