- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

মালয়েশিয়ায় পুলিশী বর্বরতা দেখানো একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্যে শিল্পী ও চলচ্চিত্রকর্মীরা তদন্তের মুখোমুখি

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া, আইন, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, যুবা, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি, সরকার, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী
[1]

অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র “মরিচের গুঁড়া এবং থিনার” থেকে নির্যাতন দেখানো একটি দৃশ্য। সূত্র: ইউটিউব

স্বাধীনতা চলচ্চিত্র নেটওয়ার্ক (এফএফএন) পুলিশের হাতে কথিত গ্রেপ্তার ও মারধরের শিকার হওয়া আরো দু'জন ব্যক্তিসহ একজন ১৬ বছর বয়সী ছেলের সাক্ষ্য প্রদান করা একটি চার মিনিটের অ্যানিমেশন “মরিচের গুঁড়া এবং থিনার” প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলি মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষকে চলচ্চিত্রটি তৈরি করা শিল্পী-কর্মীদের হয়রানির পরিবর্তে পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ [2] করছে।

শিরোনামটি ছেলেটির বিরুদ্ধে ব্যবহৃত অত্যাচারের পদ্ধতি: শরীরে মরিচের গুঁড়া এবং থিনার প্রয়োগ বোঝায়। থিনার হলো রঙ পাতলা করার জন্যে ব্যবহৃত এক প্রকার তরল রাসায়নিক।

গত ২ জুলাই তারিখে পুলিশ এফএফএন চলচ্চিত্র নির্মাতা আনা হার এবং কার্টুনশিল্পী আমিন ল্যান্ডককে ছবিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশ এফএফএন অফিসের পাশাপাশি ল্যান্ডাকের বাড়িতেও অভিযান চালায়। মানহানির জন্যে দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায়, জন উদ্বেগ ও অশান্তি করার মতো বিবৃতি দেওয়ার জন্যে দণ্ডবিধির ৫০৫ (খ) ধারায় এবং নেটওয়ার্ক সুবিধা অপব্যবহারের জন্যে যোগাযোগ ও মাল্টিমিডিয়া আইনের ২৩৩ (১) (ক) ধারায় তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় পুলিশের বর্বরতা নিয়ে তথ্যচিত্র তৈরির মূল্য। একটি নিবর্তনমূলক আইনের অধীনে তদন্তের নামে আইন প্রয়োগকারীরা আপনার অফিস ও বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করবে। @স্বাধীনতাচলচ্চিত্রউৎসব

এই ভয় দেখানো বন্ধ কর! পুলিশ আজ @স্বাধীনতাচলচ্চিত্রউৎসব এর পেটালিং জায়াস্থ অফিস এবং কার্টুনশিল্পী আমিন ল্যান্ডাকের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে।

এই অভিযানটি তাদের এফএফএন-এর আনা হার এবং “মরিচের গুঁড়া এবং থিনার” চলচ্চিত্র মুক্তির বিষয়ে আমিনের উপর তদন্তের সাথে সম্পর্কিত।

নাগরিক সমাজের গোষ্ঠীগুলি পুলিশের এই পদক্ষেপের ব্যাপক নিন্দা করলেও সেটা পুলিশকে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটির কারণে ৬ জুলাই তারিখে মানবাধিকার সংস্থা সুয়ারা রাকিয়াত মালয়েশিয়া (সুয়ারাম) এবং মালয়েশিয়ার সক্রিয় কর্মীদের জোট এমআইএসআই: সংহতির চারজন কর্মীর উপর সমন জারি থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

এখন তারা ভেতরে যাচ্ছে

পুলিশী অভিযানের পরে স্বাধীনতা চলচ্চিত্র নেটওয়ার্ক (এফএফএন) একটি কঠোর বিবৃতি [1] প্রকাশ করেছে:

নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর অভিযোগ তদন্ত কর: যারা জানিয়ে দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে নয়!

সক্রিয় কর্মী, সাংবাদিক এবং শিল্পীদের বিরুদ্ধে চলমান এই হয়রানিগুলি আমাদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার এবং গত কয়েক মাস ধরে নিরাপত্তা হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে চলমান মামলাগুলি উপর থেকে জনগণের চাপ কমানোর উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

বিবৃতিটিতে এফএনসি পুলিশী দুর্ব্যবহার সংক্রান্ত অভিযোগের জন্যে একটি স্বাধীন কমিশন (আইপিসিএমসি) প্রতিষ্ঠাসহ পুলিশ সংস্কারের বিভিন্ন দাবি তালিকাভুক্ত করেছে।

বিগত ১৮ বছর ধরে আমরা পরিবর্তন প্রত্যাশী সাধারণ মানুষদের ভোগ করা অবিচারগুলি জানিয়ে মানবাধিকারের নানা গল্প বলে আসছি। “মরিচ গুঁড়ো এবং থিনার” অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের উপর তদন্ত এবং অভিযান আমাদেরকে উৎসাহিত করেছে।

একটি পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে [12] আনা হার বলেছেন [13], নির্যাতনের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েও শিল্পীদের নির্যাতন করা কর্তৃপক্ষের যথাযথ প্রতিক্রিয়া নয়।

আদর্শভাবে যা হতে পারতো তা হলো পুলিশ… মামলাটা নিজেরাই তদন্ত করে আসলে কী ঘটছে তা খুঁজে বের করতো। আর এরা সেটা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর জনসাধারণকে জানিয়ে দিলে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা জাগিয়ে তুলবে। (কিন্তু) এরকম কিছু করা … কেবল ভয় দেখানোর মতো দেখাচ্ছে।

একটি বিবৃতিতে এমআইএসআই সংহতি পুনর্ব্যক্ত করেছে [14] যে এফএফএন কোন ভুল করেনি:

আমরা সবাই হয়তো যা করতাম সেরকম –  অন্যায়ের প্রতি আলোকপাত – কিছু করার জন্যে আজকে আমাদের একজন প্রতিষ্ঠাতার উপর পুলিশ তদন্ত করেছে। আমরা যুবনেতৃত্বাধীন একটি সম্মিলন যারা অধিকারের জন্যে লড়াই করে যাচ্ছি। এই মর্মস্পর্শী বার্তাটিই আমরা আপনাদের সবাইকে জানাতে চাই।

মামলাটি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।স্ বাধীন সাংবাদিকতা কেন্দ্র এবং তাদের সহযোগীরা একটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে যে পুলিশের এসব পদক্ষেপ মালয়েশিয়ায় বাক স্বাধীনতার উপর ক্রমবর্ধমান দমন-নির্যাতনকে প্রতিফলিত [15] করে:

মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে মানবাধিকার সুরক্ষক, শিল্পী এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক তদন্ত মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং মালয়েশিয়ার পুলিশ কর্মকর্তাদের অসদাচরণের যেকোন ঘটনার জন্যে দায়বদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার গুরুতর প্রয়োজনকে প্রদর্শন করে।

একইভাবে স্বাধীনতার জন্যে আইনজীবী’র জায়েদ মালেক একটি প্রেস বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন [16] যে পুলিশ পরিচালিত অভিযান ও জিজ্ঞাসাবাদ চলচ্চিত্রটিতে করা অভিযোগগুলিরই সত্যতা নিশ্চিত করেছে:

জিজ্ঞাসাবাদ ও দমনাভিযানের সময় পুলিশী বর্বরতার উপর একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের প্রতি পুলিশের কঠোর প্রতিক্রিয়া স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি সত্যিকারের যে সমস্যাটির দিকে নজর দেওয়ার চেষ্টা করেছে তাকে খাটো করে দেখায়; সেটা দায়মুক্তি নিয়ে পুলিশ পরিচালিত বেআইনী আচরণগুলিরই উদাহরণ মাত্র।

সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখলে এতে পুলিশী তদন্তের উদ্রেক করার মতো কোন কিছুই পাওয়া যাবে না।

কয়েকটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন পুলিশের এই পদক্ষেপের সামাজিক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিনকে সম্বোধন করে একটি চিঠি [17] পাঠিয়েছে।

আমাদের সংস্থাগুলি তাদের অফিস এবং বাড়িতে অভিযান নিয়ে উদ্বিগ্ন, যা আমরা মনে করি যারা কর্তৃপক্ষের নির্যাতনকে প্রকাস করতে এগিয়ে আসতে চায় তাদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন এবং তাদের উপর শীতল প্রভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্য প্রণোদিত।

নির্যাতিত শিল্পীদের ও সক্রিয় কর্মীদের সমর্থনকারী গোষ্ঠীগুলি ১০ জুলাই তারিখে ব্যবহারকারীদের চলচ্চিত্রটি সম্পর্কে তাদের মতামত বা প্রতিক্রিয়া জানাতে উৎসাহিত করার জন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রচারণা আহ্বান করেছে।

“মরিচের গুঁড়া এবং থিনার” চলচ্চিত্রটি এখানে দেখুন: