১৬ জুন তারিখে ভারতে টুইটার নিজেকে সাধারণত ব্যবহারকারীদের তৈরি বিষয়বস্তুর বিরুদ্ধে আইনী সুরক্ষা লাভের অন্তর্বর্তী দায়বদ্ধতার বিধি প্রদত্ত ‘নিরাপদ আশ্রয়ের’ বাইরে মনে করছে। ভারতের আইন ও বিচার, ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগমন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ টুইটের একটি ধারাবাহিকের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন কোম্পানিটি কীভাবে ২০০০ সালের ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ২০২১ সালের তথ্যপ্রযুক্তি বিধিমালা মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে। জুনের শেষের দিকে এর জবাবে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা কুইন্ট এবং দি ওয়্যার এই বিধিগুলির সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন দায়ের করেছে।
Hearing update: Petitions filed by @TheQuint and @thewire_in challenging the validity of Information Technology (Intermediary Guidelines and Digital Media Ethics Code) Rules, 2021 are listed before the Delhi High Court. We will observe the proceedings and keep you updated. (1/n) pic.twitter.com/NP8krOES4J
— Internet Freedom Foundation (IFF) (@internetfreedom) June 28, 2021
শুনানির হালনাগাদ: তথ্য প্রযুক্তি (অন্তর্বর্তী নির্দেশিকা এবং ডিজিটাল মিডিয়া নৈতিকতার কোড) বিধিমালা, ২০২১ এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে @দি_কুইন্ট এবং @দি_ওয়্যার_ইন এর দায়ের করা পিটিশনগুলি দিল্লি উচ্চ আদালতে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। আমরা কার্যবিবরণী পর্যবেক্ষণ করে আপনাদের হালনাগাদ জানাবো।
টুইটারের কথিত ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি বিধিমালা অনুসরণ না করা নিয়ে প্রসাদ অত্যন্ত সোচ্চার হলেও অনেক বাক-স্বাধীনতা কর্মী এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বিধিগুলি নিজেরাই সমস্যা বলে মত দিয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গোপনীয়তা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ দূতবৃন্দ ১১ জুন তারিখে কীভাবে এই বিধিগুলি “গোপনীয়তার অধিকার এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োজনীয়তা এবং মানদণ্ডকে পূরণ করে না বলে মনে হচ্ছে” নির্দেশ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আরো পড়ুন: ভারতের নতুন ইন্টারনেট বিধি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন সংবাদ এবং ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে পরিবর্তন আনবে
ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের গাজিয়াবাদে পুলিশ পাঁচজন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ব্যক্তি মিলে ৭২ বছর বয়সী একজন মুসলমান ব্যক্তিকে নির্যাতনের একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরে প্রসাদ টুইটারের অবাধ্যতার কথা ঘোষণা করেন। অনেক টুইটার ব্যবহারকারী এই ঘটনাটি সম্পর্কে টুইট করায় শেষ পর্যন্ত টুইটার ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে এই ঘটনার সাথে সম্পর্কিত ৫০ জন ব্যবহারকারীর টুইট স্থগিত করে দেয়।
There are numerous queries arising as to whether Twitter is entitled to safe harbour provision. However, the simple fact of the matter is that Twitter has failed to comply with the Intermediary Guidelines that came into effect from the 26th of May.
— Ravi Shankar Prasad (@rsprasad) June 16, 2021
টুইটার নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ার অধিকারী কিনা তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। তবে, ঘটনার আসল সত্যটি হলো টুইটার ২৬ মে থেকে কার্যকর হওয়া অন্তর্বর্তী নির্দেশনাগুলি মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে।
টুইটারের কথিত তথ্যপ্রযুক্তি বিধিবিধান অমান্য করার অভিযোগের ঠিক পর পর এই ঘোষণাটি আসে। ভারত সরকার বারবার সরকারের সমালোচনামূলক টুইটগুলি নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছে। (সম্বিত) পাত্র এবং ভারতীয় জনতা পার্টি – বিজেপির সাথে যুক্ত আরো অনেকে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে ২০২১ সালে কোভিড -১৯ মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার জন্যে একটি ‘টুলকিট’ তৈরির অভিযোগ করে। তারপরে মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে ভারত সরকার টুইটারকে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রের টুইটের উপর থেকে ‘পরিবর্তিত মিডিয়া’ পতাকা সরিয়ে দেওয়ার জন্যে সতর্ক করে। পরে মে মাসের শেষের দিকে দিল্লি পুলিশ টুইটার দপ্তরে অভিযান চালায়।
স্বনামধন্য একটি ভারতীয় নীতি গবেষণা সংস্থা ইন্টারনেট ও সমাজ গবেষণা কেন্দ্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে সংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত বিষয়বস্তু অপসারণের ন্যায্যতা প্রতিপন্ন করার ক্ষেত্রে ভারত সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৯(ক) ধারা অপব্যবহার প্রদর্শন করে ভারতে অন্তর্বর্তী দায়বদ্ধতা সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করেছে। এই প্রতিবেদনের লেখকরা এই তথ্যপ্রযুক্তি আইনটি সামাজিক গণমাধ্যম সংস্থাগুলির তাদের মঞ্চে মানবাধিকার রক্ষার ক্ষমতাকে ক্ষুন্ন করছে বলে আশঙ্কা করছেন।
২৯ জুন তারিখে কুইন্টের ভারতীয় সাংবাদিক কাশীশ সিংহ হিন্দু জাতীয়তাবাদী জঙ্গি সংগঠন বজরং দল, বিজেপি এবং আধা-সামরিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) এর নেতৃত্বাধীন অন্যান্য আরো দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন নিয়ে গঠিত সংঘ পরিবারের ভারতীয় টুইটারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীশ মহেশ্বরীর বিরুদ্ধে একটি পুলিশী প্রতিবেদন দায়ের করার কথা দাবি করেছেন।
Twitter India Managing Director Manish Maheshwari has been booked under Section 505 (2) of IPC and Section 74 of IT (Amendment) Act 2008 for showing wrong map of India on its website, on complaint of a Bajrang Dal leader in Bulandshahr.#TwitterIndiaMap #TwitterIndia
— Kashish (@Kashish_singh2) June 28, 2021
বুলান্দশাহরের বজরঙ্গ দলের এক নেতা টুইটার ওয়েবসাইটে ভারতের ভুল মানচিত্র প্রদর্শনের অভিযোগে সংস্থাটির ভারতীয় ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনীশ মহেশ্বরীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি – আইপিসি’র ৫০৫ (২) এবং তথ্যপ্রযুক্তি (সংশোধন) আইন ২০০৮ এর ৭৪ ধারার অধীনে মামলা করেছেন। #টুইটার_ভারত_মানচিত্র #টুইটার_ভারত
ইন্টারনেটের মধ্যবর্তী প্লাটফর্ম
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যকর হওয়ার পরে মজিলার মতো শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজের অংশীজন এগুলি যে উন্মুক্ত ইন্টারনেটকে বিপন্ন করে তুলছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি বিধি সম্পর্কে তাদের গুরুতর নানা ধরনের উদ্বেগ ভাগাভাগি করেছে।
বিধিগুলিকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে, যার প্রথমটিতে নতুন নামে ডাকা “উল্লেখযোগ্য সামাজিক মিডিয়া মধ্যবর্তী প্লাটফর্ম” (এসএসএমআই, যেমন ফেসবুক এবং টুইটার) এর মতো আইনী শর্তাদি সংজ্ঞায়িত করা এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগে বাধ্যবাধকতা ও প্রয়োজনীয়তার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে (মেইটওয়াই) বার্তা-সম্পর্কিত মধ্যবর্তী প্লাটফর্ম যেমন হোয়াটসঅ্যাপ (ফেসবুকের মালিকানাধীন), ফেসবুক মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রাম এবং ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম (ফেসবুকের মালিকানাধীন) ও টুইটারের মতো মিডিয়া সম্পর্কিত মধ্যবর্তী প্লাটফর্মগুলির জন্যে নির্দেশনা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিধিমালার তৃতীয় ভাগের ডিজিটাল সংবাদ মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্য থাকলেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা অ্যামাজন প্রাইম, ডিজনি+হটস্টার এবং নেটফ্লিক্সসহ ওভার-দ্য টপ (ওটিটি) মঞ্চগুলি সম্পর্কে বিবরণ এখনো অস্পষ্ট। দিল্লি উচ্চ আদালতে দ্য কুইন্ট এবং দ্য ওয়্যার কর্তৃক দায়ের করা পিটিশনগুলি সম্ভবত এই বিধিগুলির সাংবিধানিকতা পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে।