
ছবির কৃতজ্ঞতা: মিজোগুচি.কোজি (সিসি বাই ২.০)
মার্কিন প্রযুক্তিদানব সংস্থা অ্যাপল তাদের ব্যবহারকারীদের জন্যে গোপনীয়তার নতুন সরঞ্জাম উন্মুক্ত করলেও সেটা উপভোগ করতে না পারা কয়েকটি দেশগুলির মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তান।
২০২১ সালে অ্যাপলের মনযোগ হলো গোপনীয়তা। সংস্থাটি তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে যে “গোপনীয়তা একটি মৌলিক অধিকার।” তারপরও এই নীতিটি আসে কাউকে কাউকে বাদ দিয়ে।
চীন, বেলারুশ, কলম্বিয়া, মিশর, কাজাখস্তান, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুর্কমেনিস্তান, উগান্ডা এবং ফিলিপাইনের গ্রাহকরা নতুন “ব্যক্তিগত রিলে” বৈশিষ্ট্যটি পাবে না।
এই শরৎকালে নতুন অপারেটিং সিস্টেমের মুক্তির সাথে সাথে অর্থপ্রদানকারী গ্রাহকদের পাওয়া বৈশিষ্ট্যটি সবার কাছ থেকে ব্যবহারকারীদের ইন্টারনেট ক্রিয়াকলাপ লুকিয়ে রাখা একটি সংকেতায়িত যোগাযোগ চ্যানেলের মাধ্যমে আরো সুরক্ষিতভাবে ওয়েব ব্রাউজ করার সুযোগ করে দেবে। নতুন পরিষেবাটি মূলত একটি স্বত্বাধিকারী ভার্চুয়াল ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক (ভিপিএন)।

অ্যাপলের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া পর্দাছবি
“প্রাইভেট রিলে”র সাহায্যে অ্যাপল ব্যবহারকারীরা কোন ওয়েবে বিচরণ বা নির্দিষ্ট পরিষেবা ব্যবহার করার সময় সরবরাহকারী এবং তৃতীয় পক্ষকে কী ধরণের ডেটা দেয় এমন একটি অন্যতম সমস্যার সমাধান করে থাকে।
নতুন বৈশিষ্ট্যটি থেকে বাদ পড়া সবগুলি দেশেরই ইন্টারনেট সেন্সর এবং ব্যবহারকারীদের অনলাইন ক্রিয়াকলাপে নাক গলানোর দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম দক্ষিণ আফ্রিকা, যা ফ্রিডম হাউজের গত বছরের নেটের স্বাধীনতা প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে।
কাজাখস্তান বিশেষভাবে তালিকাগুলির নীচে অবস্থান করে। আরেকটি ব্যাপক গবেষণায় তুর্কমেনিস্তানে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইন্টারনেট প্রবেশাধিকারে বাধা এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘন পরিলক্ষিত হয়েছে।
কাজাখস্তান প্রত্যক্ষভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করে, ব্যবহারকারীদের ট্র্যাফিকে নাক গলায় এবং অনলাইনে মতামতের জন্যে তাদের জনগণকে শাস্তি দেয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়নের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি ব্যাংকে একটি নিন্দাজনক সামাজিক গণমাধ্যম হামলার পরে সরকার “মিথ্যা তথ্যের বিস্তার”কে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে একটি ডিক্রি জারি করেছে।
২০০৯ সালের আইন অনুসারে ওয়েবের সম্পদগুলিকে গণমাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করার কারণে কাজাখস্তান অনলাইনে প্রকাশিত যেকোন বিষয়েই কঠোরভাবে বিশ্বস্ততার বিধিমালা প্রয়োগ করে এর আইন মেনে চলতে ব্যর্থ যে কোন রিসোর্সে প্রবেশাধিকার আটকাতে প্রস্তুত থাকে। দেশের কর্তৃপক্ষ বারবার ব্যবহারকারীদেরকে সাধারণভাবে হ্যাকার ও নিরাপত্তা বাহিনীকে নজরদারি এবং মাঝখানে লুকিয়ে বসে থেকে হামলার জন্যে দরজা খুলে দেওয়ার মতো “সুরক্ষা সনদ” চালু করতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের জুলাই মাসের প্রচেষ্টাটিকে মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলি মূল সনদ অবরুদ্ধ করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অবাধ ওয়েব বিচরণ সুরক্ষিত রাখবে বলে ধমকে দিয়েছে।
তুর্কমেনিস্তানে আইনি ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলির বেষ্টনী-আবদ্ধ ন্যুনতম ইন্টারনেট স্বাধীনতা রয়েছে: বান্ডউইডথ কমিয়ে দেওয়ার কারণে ব্যাপক পরিমাণ ওয়েবসাইট এবং সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চ কার্যতঃ অবরুদ্ধ অথবা প্রবেশযোগ্য নয়।
মানবাধিকারের জন্যে আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব (আইপিএইচআর) মধ্যএশিয়া কেন্দ্রিক গবেষক রাচেল গ্যাসোস্কি গ্লোবাল ভয়েসেসকে বলেছেন যে কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তানে ইন্টারনেটের স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে রয়েছে।
কাজাখস্তানে ইন্টারনেটের স্বাধীনতা ব্যাহত, নিয়মিতভাবে সংবাদ সাইট এবং সামাজিক গণমাধ্যম এমনকি ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার অবরুদ্ধ করা সাধারণ ব্যাপার মাত্র। বৈশ্বিক মানের তুলনায় তুর্কমেনিস্তানে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার সীমিত, ধীরগতির ও ব্যয়বহুল এবং কর্তৃপক্ষ তাদের ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের নিরলস প্রচারণার অংশ হিসাবে ইন্টারনেট সেন্সর ব্যবহার করে।
ফেব্রুয়ারিতে জনগণের মধ্যে কভারেজ বাড়ানোর চেষ্টার অংশ হিসেবে তুর্কমেন সরকার ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারের জন্যে গ্রাহক চাঁদা কমিয়ে দিলেও ইন্টারনেটের দাম এখনো আঞ্চলিক গড়ের চেয়ে বেশি রয়েছে।
অ্যাপল স্বাভাবিকভাবেই, মধ্যএশিয়ায় ব্যবহৃত মুষ্টিমেয় কয়েকটি মোবাইল যন্ত্রের মধ্যে কেবল একটি হলেও এর গোপনীয়তাভিত্তিক প্রচারণাটিতে এই অঞ্চলের মাত্র অল্প কিছু গ্রাহক উপকৃত হবে।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল নির্বাচিত কয়েকটি দেশ বাদ পড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে।
Apple’s decision to not make its new “private relay” available in several countries including China, Saudi Arabia, & Kazakhstan, is yet another example of authoritarian & oppressive govts monitoring & restricting free speech by influencing technology companies & their products.
— Amnesty International (@amnesty) June 10, 2021
চীন, সৌদি আরব এবং কাজাখস্তানসহ বেশ কয়েকটি দেশে অ্যাপলের নতুন “ব্যক্তিগত রিলে” না পাওয়া যাওয়ার সিদ্ধান্ত, প্রযুক্তি সংস্থাগুলি এবং তাদের পণ্যগুলিকে প্রভাবিত করে স্বৈরাচারী ও নিপীড়নকারী সরকারগুলির নজরদারি এবং বাক স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার আরো একটি উদাহরণ।
কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের গ্রাহকদের জন্যে কেন এই ধরনের “মৌলিক মানবাধিকার” প্রযোজ্য হবে না সে বিষয়ে আমাদের প্রশ্নের জবাব দেয়নি অ্যাপলের সাংবাদিক দল।
“স্পষ্টভাবেই অ্যাপল কাজাখস্তান ও তুর্কমেনিস্তানের আইনি বিধি-নিষেধের সাথে সঙ্গতি বিধান করতে বাধ্য হয়েছে। অ্যাপলকে ব্যবহারকারীদের দেশ নির্বিশেষে তাদের সমস্ত ব্যবহারকারীর জন্যে সমানভাবে গোপনীয়তা এবং মানবাধিকার নীতি প্রয়োগ করতে হবে,” একটি ইমেলে গ্লোবাল ভয়েসেসকে লিখেছেন গ্যাভোস্কি।