লাও সামাজিক মিডিয়া টাস্কফোর্স: লক্ষ্য ‘মিথ্যা সংবাদ’ নাকি অনলাইন সমালোচনা সেন্সর?

লাওসের একজন কম্পিউটার ব্যবহারকারী। জনরলিন্সনের ফ্লিকার ছবি  (সিসি বাই ২.০)

লাওস সরকারের সামাজিক মিডিয়া মঞ্চ পর্যবেক্ষণ এবং ইন্টারনেট নিবন্ধন কার্যকর করার জন্যে সাম্প্রতিক নির্দেশনা প্রতিরোধের চেষ্টা করে যাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলি।

২০ মে তারিখে তথ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সকল প্রাদেশিক সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মঞ্চ, ওয়েবসাইট, অনলাইন সংবাদের উৎস এবং ফেসবুক পৃষ্ঠাগুলিতে প্রকাশিত তথ্য সম্পর্কে রেকর্ড সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত অস্পষ্টভাবে বর্ণিত একটি আদেশ জারি করেছে। পরের দিন জননিরাপত্তা মন্ত্রণালয় তারা “অবৈধ অনলাইন মিডিয়া” এবং কোভিড-১৯ সম্পর্কিত “মিথ্যা সংবাদ” বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ করার জন্যে একটি বিশেষ টাস্কফোর্স তৈরির ঘোষণা দেয়।

উভয় মন্ত্রণালয়ই বলেছে, মহামারী চলাকালীন ভুলতথ্য ছড়িয়ে দেওয়া রোধ করার উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করা হয়েছে।

একজন স্থানীয় কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা রেডিও মুক্তএশিয়াকে বলেছেন, যারা “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অপব্যবহার করে” সরকার তাদের  লক্ষ্য করে এটা করছে।

আমাদের কাজ হলো যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার করে তাদের জন্যে পরামর্শ প্রদান এবং নিয়ম ও শাস্তি প্রণয়ন করা। আমরা প্রথমবারের অপরাধীদের একটি সতর্কতা দেবো, তারপরে দ্বিতীয় অপরাধের জন্যে লোকদের জরিমানা করব। তৃতীয় অপরাধের জন্যে, আমরা তাদের কারাগারে নেবো।

লাওস সরকার ইন্টারনেটের উপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করে চলেছে। এটি ২০২০ সালের অক্টোবরে সামাজিক মিডিয়া মঞ্চ অপারেটরদেরকে তথ্য, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গণমাধ্যম বিভাগে নিবন্ধনের নির্দেশ দেয়। এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরাও এই নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত:

অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি, আইনি সত্তা, রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি খাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণকে তথ্য প্রকাশ এবং সরবরাহ অব্যাহত রাখলে তাদের বিরুদ্ধে লাও জনগণপ্রজাতন্ত্রের আইন অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০২১ সালের মার্চে নির্বাচিত লাওস রাষ্ট্রপতি থংলুন সিসুলিথ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের জাতিকে অস্থিতিশীল না করার জন্যে সতর্ক করেছেন:

উন্নত প্রযুক্তিগত এবং আধুনিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে পুলিশকে এখনই যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে দেশের মধ্যে অপরাধ সংঘটন, আমাদের দেশকে ধ্বংস এবং কোন ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি ও পরস্পরবিরোধী গোষ্ঠী তৈরি করে বিশৃঙ্খলা্র মাধ্যমে আমাদের ঐক্যকে ক্ষুন্ন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করতে হবে।

প্রতিক্রিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভিত্তিক নাগরিক সমাজ গোষ্ঠীগুলি আসিয়ান অঞ্চলের জোট গঠন করে #ডিজিটাল_স্বৈরশাসন_থামাও হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে একটি প্রচারণা শুরু করেছে। এছাড়াও তারা লাওসের ইন্টারনেট নির্দেশনাগুলির প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে একটি যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে:

সামাজিক মিডিয়া মঞ্চগুলির নিবন্ধন ও অনলাইন তথ্যের কঠোর নিয়ন্ত্রণ জোরদার লাওসে ডিজিটাল একনায়কতন্ত্রের আরেকটি প্রতিচ্ছবি, যা বিশেষভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্যে প্রবেশাধিকারের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো ব্যক্তির ডিজিটাল অধিকারগুলিকে লঙ্ঘন করে।

তারা বন্যা দুর্যোগের প্রতি লাওস সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করে ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করার জন্যে ২০১৯ সাল থেকে আটক থাকা মুয়ে নামে পরিচিত একজন পরিবেশকর্মী হোয়াহেউয়াং জায়াবুলির ঘটনাটির উদ্ধৃতি দিয়েছে। মুয়ে ছাড়াও স্থানীয় কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহারের বিষয়ে মন্তব্য করার জন্যে আরো কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারীকেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।

গোষ্ঠীগুলি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যে কোভিড-১৯ নিয়ে মিথ্যা তথ্য মোকাবেলা করার পরিবর্তে বাক স্বাধীনতার গলা চেপে ধরার জন্যে ইন্টারনেট টাস্কফোর্সকে প্রয়োগ  হতে পারে।

এখনই প্রবেশাধিকারের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতিবিষয়ক পরামর্শক ধেভি শিবপ্রকাশম উল্লেখ করেছেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা টাস্কফোর্সটির অংশ হবে নিরাপত্তা বাহিনীগুলি।

বাস্তবতা হলো এটাই যে স্বাধীন কোন ফ্যাক্ট-চেকার, সুশীল সমাজ বা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কবিহীন অন্য কোন অংশীজন ছাড়াই শুধু পুলিশ এবং রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাই হবে এর কর্মচারী – যা অপরাধী হিসেবে ভাবা যায় না এমন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও হয়রানির ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।

লাওসের টুইটার ব্যবহারকারীরা রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে মন্তব্য করতে #ຖ້າການເມອືງລາວດີ  (#লাও_রাজনীতি_যদি_ভাল_হতো) হ্যাশট্যাগ ব্যবহার শুরু করার পরে এই নতুন নির্দেশনা পাস করা হয়েছে। এই সময় লাও নাগরিকরা থাই গণতন্ত্র প্রতিবাদকারীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। কূটনৈতিক সংবাদ ওয়েবসাইটের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় সম্পাদক সেবাস্তিয়ান স্ট্র্যাঙ্গিও লিখেছেন যে অনলাইনে ভিন্ন মতাবলম্বী আন্দোলনের উত্থানকে দমন করা এই টাস্কফোর্সের লক্ষ্য হতে পারে:

ফেসবুক হয়তো সরকারবিরোধী এবং দলবিরোধী ভিন্নমতের সুতিকাগার হিসেবে কাজ করতে পারে – নতুন টাস্কফোর্সটি ক্ষমতাসীন এলপিআরপি’র এমন উদ্বেগেরই বহিঃপ্রকাশ।

২০২০ সালে লাওসে সক্রিয় সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩১ লক্ষ বা মোট জনসংখ্যার ৪৩ শতাংশ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .