বেলারুশে নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত, বেলারুশীয় ফ্লাইটের জন্যে ইইউ'র আকাশসীমা নিষিদ্ধ

belarus border crossings map

বেলারুশ সীমান্ত পারাপারের মানচিত্র। গুগল মানচিত্র, প্রকাশ্য ডোমেন থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

আলেক্সান্দার লুকাশেঙ্কার বেলারুশীয় সরকার বেশিরভাগ নাগরিকের বিদেশ ভ্রমণ রোধের জন্যে সাময়িক বিধিনিষেধ জারি করেছে। ২০২০ সালের আগস্টে বিতর্কিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দেশে চলমান গণদমন-পীড়নের মাঝে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটি এসেছে।

২০২১ সালের মে মাসের শেষে প্রকাশিত নতুন বিধি অনুসারে রাষ্ট্রের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধের জন্যে পরিকল্পনা করার কারণে প্রয়োজনীয়ভাবেই সমস্ত স্থলসীমান্ত পারাপার অবরোধ করা হয়েছে।

বেলারুশীয় কবি ভালঝিনা মর্ট তার দেশে নাগরিক স্বাধীনতার  বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান দমনাভিযানের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

আমি কবিতা ভাগাভাগি করার জন্যে টুইটারে স্বাক্ষর করেছি। সেই থেকে দেশ আমাকে জিম্মি করেছে। আর এখন: বেলারুশ তার নাগরিকদের (যাদের কেউ রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা নয়) দেশত্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। আকাশে, রাস্তায়, বাড়িতে, জেলে বেলারুশ (এখন) জিম্মি।এখন অন্য রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা #বেলারুশীয় নাগরিকদেরই কেবল স্থলসীমান্ত ব্যবহার করে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই কর্তৃত্ববাদী সরকার বেলারুশীয় নাগরিকদেরকে জিম্মি এবং বেলারুশীয় প্রবাসীদের সাথে আন্তঃদেশীয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে

বেলারুশীয় গবেষক মেরিয়া রোহভাও এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করেছেন।

এখন অন্য রাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা #বেলারুশীয় নাগরিকদেরই কেবল স্থলসীমান্ত ব্যবহার করে দেশ ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এই কর্তৃত্ববাদী সরকার তার বেলারুশীয় নাগরিকদেরকে জিম্মি এবং বেলারুশীয় প্রবাসীদের সাথে আন্তঃদেশীয় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে

রাষ্ট্রের সীমান্ত কমিটি বলেছে যে বেলারুশীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রাতিষ্ঠানিক ভ্রমণ এবং রাষ্ট্রের পরিবহন কর্মীদেরসহ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটির ব্যতিক্রম রয়েছে। তবে অন্য কোন দেশে স্থায়ীভাবে বাসস্থান আছে এমন বিদেশি আবাসনের অনুমতিপ্রাপ্ত বেলারুশীয় নাগরিকরা কেবল দেশ ছাড়ার অনুমতি পাবেন। অস্থায়ী বসবাসের অনুমতিপ্রাপ্তদের স্থল ভ্রমণের মাধ্যমে বেলারুশ ত্যাগ নিষিদ্ধ।

ভ্রমণের নতুন নিয়মটি বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য: বেলারুশে অস্থায়ী বা স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি প্রাপ্তদের দেশত্যাগ নিষিদ্ধ। শুধু মহামারীজনিত স্বাস্থ্য বিধিনিষেধের অংশ হিসেবে ১০ দিনের স্বেচ্ছা-বিচ্ছিন্নতার পরে “লাল” তালিকাভুক্ত দেশগুলির ভ্রমণকারীরা চলে যেতে পারবে।

লিথুয়ানিয়ায় নির্বাসনে থাকা বিরোধীদলীয় নেতা শিয়াতোয়ানা শিখানাস্কাইয়ার বিদেশ বিষয়ক উপদেষ্টা ভ্যালেরি কাভালিয়াস্কি টুইটারে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটির সমালোচনা করেছেন।

লুকাশেঙ্কার শাসনামলে বেলারুশীয়দের ভ্রমণের অধিকার কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করার নিশ্চিত অর্থ হলো (বৈদেশিক আবাসনের মতো) কিছু কিছু কারণ বেলারুশ ত্যাগের জন্যে যথেষ্ট নয়। যদিও সংবিধানে এমন কোন শর্ত নেই। @জিপিকেসরকারের আইনটির পুরোপুরি লঙ্ঘন।

বেলারুশের আকাশসীমায় প্রায় পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি করার মাঝেই স্থলভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটি এসেছে রাষ্ট্রটির সামরিক বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান দিয়ে বিরোধীদলীয় এক সাংবাদিক রমন প্রাতাশিয়েভিচকে গ্রেপ্তার করার জন্যে মিনস্কে রায়ানা এয়ারের বিমান অবতরণে বাধ্য করার জন্যে আটকানোর পরে। তিনি বেলারুশীয় রাষ্ট্রীয় টিভিতে একটি স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন, যেটিকে শাসকগোষ্ঠীর সমালোচকরা “চাপের মুখে” দেওয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেইইউ প্রতিনিধি এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা পদক্ষেপটিকে আকাশ দস্যুবৃত্তি বলে নিন্দা করে ইউরোপীয় বিমান সংস্থাগুলিকে বেলারুশ অভিমুখী এবং এর উপর দিয়ে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জবাবে, রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনস বেলাভিয়া বেলারুশীয়দের বেশিরভাগের পালিয়ে যাওয়ার পথ বন্ধ করে ইইউমুখী সকল ফ্লাইট বাতিল করেছে।

লুকাশেঙ্কার সরকারকে আরো প্রয়োগ করার জন্যে ৫ জুন ইইউ আনুষ্ঠানিকভাবে বেলারুশীয় বিমানগুলিকে ইইউ এর আকাশসীমা বা ইউরোপীয় বিমানবন্দরে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা বেলারুশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ যার জন্যে সদস্য দেশগুলির “বেলারুশীয় বিমানবাহক পরিচালিত যে কোন বিমানের জন্যে তাদের অঞ্চলগুলিতে প্রবেশ, উড্ডয়ন, বা উপর দিয়ে উড়ে চলার অনুমতি অস্বীকার করা” প্রয়োজন।

এয়ারলাইন শিল্পের প্রতিনিধিরা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইএটিএ) মহাপরিচালক উইলি ওয়ালশ একে “বিমানের সুরক্ষার রাজনীতিকরণ” বলে অভিহিত করেছেন। যারা বেলারুশের রাষ্ট্রীয় চাপের মুখোমুখি তাদের পলায়নের পথকে আরো সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে এমন যুক্তিতে কিছু কিছু মানবাধিকার রক্ষাকারী এই উড়ান নিষেধাজ্ঞাটির সমালোচনা করেছেন। তবে স্বতন্ত্র সাংবাদিক হান্না লিউবাকোভা যুক্তি দিয়েছেন যে এই ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাটি দায় চূড়ান্তভাবে লুকাসেঙ্কার উপরই পড়ে।

জনগণ এই মুহূর্তে কীভাবে #বেলারুশ থেকে ভ্রমণ করছে? তারা এখনো মস্কো, পিটার্সবার্গ, তিবিলিসি বা ইস্তাম্বুলের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। পথ খোলা রয়েছে। জনগণের স্বৈরশাসন থেকে বাঁচার সব সুযোগ একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। নিষেধাজ্ঞার জন্যে ইইউ’কে নয়, #লুকাশেঙ্কোকে দায়ী করা উচিৎ।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .