মিয়ানমারের নৌবাহিনী ত্যাগকারীরা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলছে

আইয়ারওয়াদি নৌ অঞ্চল কমান্ডের দুই নাবিক। ইরাবতী থেকে নেওয়া ছবি, অনুমতিসহ ব্যবহৃত।

এই নিবন্ধটি প্রথমে মিয়ানমারের একটি স্বাধীন সংবাদ ওয়েবসাইট দ্য ইরাবতীতে প্রকাশিত হয়। পরে বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি চুক্তির অংশ হিসাবে এর একটি সম্পাদিত কপি গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছে।

মিয়ানমারের আইয়ারওয়াদি নৌ অঞ্চল কমান্ডের দুজন নাবিক সম্প্রতি ইয়াঙ্গুনের টুয়ান্ট শহরতলীস্থ গণপ্রতিরোধ বাহিনীর (পিডিএফ) সাথে যোগাযোগ করেছে, যাতে তারা ১ ফেব্রুয়ারির সামরিক অভ্যুত্থান প্রতিরোধে নাগরিক অবাধ্যতা আন্দোলনে (সিডিএম) যোগ দিতে পারে। শহরতলীর পিডিএফ সদস্যরা তাদের দু'জনকে একটি নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেছে।

নাবিক দু'জন তাদের সিডিএমে যোগদানের উদ্দেশ্য এবং বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তাদের মতামত নিয়ে ইরাবতীর সাথে কথা বলেছেন।

আপনারা কেন সিডিএম যোগ দিলেন?

আমরা সেনাবাহিনীকে জনগণকে হুমকি দিতে দেখছি। উদাহরণস্বরূপ, কোন কিছু ঘটলেই তারা আশেপাশের সব লোকজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তারপর কে এটা করেছে নিশ্চিত হতে না পারা পর্যন্ত সবাইকে মারধর করে। লোকজনকে এভাবে মার খেতে দেখে আমাদের খুব খারাপ লাগে। আমরা নির্যাতনে অংশ নিই না। আমরা মানুষকে মারিও না। কিন্তু আমরা যখন ইউনিফর্মে থাকি তখন জনগণ আমাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে। আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না। এজন্যেই আমরা সিডিএমে যোগ দিয়েছি।

অভ্যুত্থানটির বিষয়ে আপনাদের মতামত কী?

অভ্যুত্থানের দিন সকাল ৮টার পরে আমাদেরকে দখল নেওয়ার কথা জানানো হয়। তারা আমাদেরকে বলেছিল যে এই দখল কোন অভ্যুত্থান নয় এবং মর্যাদার স্বার্থেই আমরা এটা করেছি। কিন্তু তারা কীভাবে অভ্যুত্থান বিরোধিতাকারীদের মারধর ও নির্যাতন করছে আমরা সেটা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা এটা ন্যায্য মনে করি না। আর এটাই আমাদেরকে সিডিএমে যোগ দিতে বাধ্য করেছে।

বিপ্লব সম্পর্কে আপনারা কী বলতে চান?

নাগরিকের মানবাধিকার রয়েছে। তাদের মতামত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। কিন্তু সৈন্যরা কোন সংযম ছাড়াই তাদের নির্যাতন করছে। আর তারা কেবল নির্যাতনই করে না, তারা মানুষকে গুলি করে হত্যাও করে। এটা ঠিক নয়।

সেনা পরিস্থিতি (এখন) কেমন?

আমি যতদূর দেখতে পাচ্ছি, সেখানে [হত্যার] বিরোধিতাকারী সৈন্যরা থাকলেও তাদের পরিবারের সদস্যরা ব্যারাকের ভিতরেই বসবাস করে। সুতরাং তাদের বিকল্প কোন উপায় নেই। তাদের পরিবারের কিছু খারাপ কিছুর ঝুঁকির কারণে তারা ফাঁদে পড়েছে। তারা জানে [সেনাবাহিনী যা করছে] তা ন্যায্য নয়। কিন্তু তারা দলত্যাগ করতে পারছে না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও তারা আদেশ অস্বীকার করতে পারছে না। তাদের পরিবার ও সন্তান রয়েছে। তাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তারা কিছু করলে তাদের পরিবার ও শিশুরা সমস্যায় পড়বে।

তাহলে (বলছেন) চাপ ও ভীতিপ্রদর্শন রয়েছে। তাদেরকে কি কোন প্রণোদনা দেওয়া হয়?

না, কোন প্রণোদনা নেই। উচ্চপদস্থদের জন্যে কোন প্রণোদনা আছে কিনা আমি জানি। তবে নিম্নপদস্থ কর্মীদের জন্যে কেবল আদেশ রয়েছে। তারা জানে যে এটা ন্যায্য নয়। কর্মকর্তারা বেশিরভাগ শিক্ষিত। তারা জানে যে এটি ন্যায্য নয়। কিন্তু তারা তাদের পদ হারাতে নারাজ।

আমরা সেনাবাহিনীতে কঠোর নিয়ম চাপিয়ে দেওয়ার কথা শুনেছি। এটা কি সত্যি? সত্যি হলে, সেগুলো কী?

তারা এখনো আমাদেরকে বেতন দেয়। পাহারার দায়িত্ব ডিউটি ​​দুই-চার ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। আর অনুমতি ছাড়া সামরিক কর্মীদের ব্যারাক ছাড়তে দেওয়া হচ্ছে না।

চলমান লড়াই সম্পর্কে আপনারা কী বলেন?

বিপ্লবে আপনি একা লড়াই করতে পারবেন না। মিন্দাত-এর ক্ষেত্রে জনগণ একাই লড়াই করেছিল বলে উত্থান অবদমিত হয়েছিল। বিদ্রোহ করতে সব লোক একটি নির্দিষ্ট তারিখে জড়ো হলে ভাল হয়, যাতে সামরিক বাহিনী নির্দিষ্ট কোন শহরে তার সমস্ত বাহিনী ব্যবহার করতে না পারে। একা একা কোন শহর কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুললেও সামরিক বাহিনী এটা দমন করতে কেবল বৃহত্তর শক্তি ব্যবহার করবে। আর ঐ একটি্মাত্র শহরকে দমন করে তারা দেশের বাকি অংশকে নিরব করতে সক্ষম হবে। কোন নির্দিষ্ট তারিখটি বেছে নিয়ে সেই তারিখে পুরো দেশ এক সাথে জেগে উঠলে ভাল হয়। এখানে-সেখানে কেবল কয়েকটি জায়গায় প্রতিরোধ হলে, সামরিক বাহিনী তাদের পিষে ফেলবে এবং জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা কোন কাজ করবে, বরং জনগণের জন্যে ভোগান্তি বয়ে আনবে।

সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করা জনগণের শক্তি ও দুর্বলতাগুলি কী কী?

সামরিক বাহিনীর কাছে অস্ত্র রয়েছে এবং তারা প্রশিক্ষিত সৈনিক। আর তরুণ-বৃদ্ধ সকল জনগণেরই ইচ্ছে থাকলেও তারা কখনো কোন সামরিক প্রশিক্ষণ পায়নি। তাই তাদের কাছে অস্ত্র থাকলে বা সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই করলেও, সেটা খুব কার্যকর নয়।

আপনারা সামরিক পর্ষদকে কী বলতে চান?

যা ঘটছে তা হলো নিম্নপদের সামরিক কর্মীরা মদ্যপান এবং মাদক ব্যবহার করে। উচ্চপদস্থরা এই মামলাগুলি সামাল দিতে পারে না। মাদক সেবনের জন্যে গ্রেপ্তার নাগরিকের দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড হলেও মাদক ব্যবহারের জন্যে সেনাবাহিনীতে সৈন্যদের কেবল দুই সপ্তাহ আটক রাখা হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এমনকি মাদক অপব্যবহারের মামলাগুলিই পরিচালনা করতে পারে না। তাই তাদের দেশ পরিচালনা করতে পারার কোন প্রশ্নই আসে না।

আপনারা কেন সৈনিক হতে চেয়েছেন?

আমাদের ছোটবেলায় আমরা জনগণকে সৈন্যদের পছন্দ করতে দেখতাম। কিন্তু তারা এখন যা করছে তা আমার বিশ্বাস বা আমি যা হতে চাই তার ঠিক বিপরীত। আমরা সেটা মেনে নিতে পারি না। তাই জনগণের পাশে দাঁড়াতে আমরা সিডিএমে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আপনি সিডিএমে যোগ দিতে ইচ্ছুক কিন্তু পরিবারের কারণে সেটা করতে না পারা আপনার সহকর্মীদেরকে কী বলতে চান?

আমি তাদের সর্বদা নির্ভয়ে জনগণের পাশে দাঁড়াতে বলি। আমরা যদি ভয়ের কারণে ক্ষমতাসীনের থাবার নিচে থাকি তবে কিছুই পরিবর্তন হবে না। সামরিক বাহিনীর দায়িত্ব দেশকে রক্ষা করা। এটা একইসাথে দেশকে রক্ষা এবং শাসন করতে পারে না।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .