- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

গ্রিনপিস প্রতিবেদনে ইউরোপীয় দেশগুলির তুরস্কে বর্জ্য ফেলার মাত্রা উঠে এসেছে

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., তুরস্ক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, নাগরিক মাধ্যম, পরিবেশ, ব্যবসা ও অর্থনীতি

তুরস্কের আদানায় বর্জ্যের একটি জ্বলন্ত গাদা। গ্রিনপিস প্রতিবেদন থেকে নেওয়া ছবি।

১৭ মে তারিখে গ্রিনপিসের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন – “বর্জিত: যুক্তরাজ্য এখনো যেভাবে বাকি বিশ্বে প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলছে [1],” থেকে প্রকাশ পেয়েছে যে যুক্তরাজ্য তার বর্জ্যের বেশিরভাগই তুরস্কে রফতানি করে। প্রতিবেদনটিতে তুরস্কের দক্ষিণ উপকূলস্থিত আদানা শহরের চারপাশের দশটি ডাম্পিং সাইটে কীভাবে ব্রিটেনের বর্জ্য পাওয়া গেছে তা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনটির দ্বিতীয় অংশটি শুধুমাত্র তুরস্কের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে উল্লেখ করেছে যে “যুক্তরাজ্য থেকে তুরস্কে প্লাস্টিকের বর্জ্য রফতানি ৪ বছরে ১৮ টি ফ্যাক্টরে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬ সালের ১,২০,০০০ টন থেকে বেড়ে ২০২০ সালে ২,১০,০০০ টন হয়েছে।” যুক্তরাজ্যের প্রায় ৪০ শতাংশ বর্জ্য শেষ হয় তুরস্কে এসে [2]

তুরস্কে পাওয়া কিছু কিছু বর্জ্য বেশ সাম্প্রতিক ধরনের। টেস্কো, আসদা, সেন্সবারির এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার এর মতো [3] মার্কিন ব্র্যান্ডের প্যাকেজিংয়ের পাশাপাশি তুরস্কের ডাম্পগুলিতে ব্যবহৃত কোভিড-১৯ অ্যান্টিজেন পরীক্ষার বিভিন্ন কিটও পাওয়া গেছে। যুক্তরাজ্য তুরস্কে আবর্জনা রপ্তানি করা একমাত্র ইউরোপীয় দেশ নয়: ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিজেই প্রতিদিন [4] তুরস্কে ২৪১ ট্রাক প্লাস্টিকের বোঝা পাঠায়।

তবে, বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের ক্ষেত্রে তুরস্কের অবকাঠামো সাংঘাতিকভাবে অপর্যাপ্ত; অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা – ওইসিডি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সর্বনিন্ম পুনর্ব্যবহারের হার [5], মাত্র ১২ শতাংশ।

ভূ-মধ্যসাগরীয় গ্রিনপিসের জৈববৈচিত্র্য প্রকল্পের প্রধান নিহাজ তেমিজ আতাশ যুক্তরাজ্যের ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকাকে বলেছেন যে “যুক্তরাজ্য থেকে তুরস্কে আসা প্লাস্টিকের বর্জ্য একটি পরিবেশগত হুমকি, অর্থনৈতিক কোন সুযোগ নয়।“ আতাশের মতে, “প্লাস্টিক বর্জ্যের অনিয়ন্ত্রিত আমদানি তুরস্কের নিজস্ব পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যাগুলিকে বাড়িয়ে তোলা ছাড়া আর কিছুই করে না।” ইন্টারপোল বর্জ্যজনিত আগুন অনিয়ন্ত্রিত মাটি ভরাটকে অবৈধ এবং মানুষের জন্যে বিপদ বলে মনে করে [6]

প্রতিবেদনটিতে উল্লিখিত আরেকটি দেশ হলো জার্মানি। গ্রিনপিসের অনুসন্ধান অনুসারে ইউরোপীয় এই দেশটি তুরস্কে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার টন প্লাস্টিকের বর্জ্য রপ্তানি করেছে এবং পুনর্ব্যবহৃত হয়েছে বলে দাবি করার পরেও তার ১৬ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য বিদেশে পাঠানোর দায়ে দুষ্ট। গ্রিনপিস জার্মানির রসায়নবিদ ম্যানফ্রেড সানটেন বলেছেন [7] যে:

তুরস্কের বিভিন্ন রাস্তার পার্শ্বে গাদা গাদা আমাদের প্লাস্টিক জ্বলতে দেখা খুবই দুঃখজনক। আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের প্লাস্টিকের বর্জ্য অন্য দেশে বর্জন করা বন্ধ করতে হবে। সমস্যার মূল হচ্ছে অতিরিক্ত উৎপাদন। সরকারগুলোর নিজেদের প্লাস্টিক সমস্যা নিজেদেরই নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। তাদের প্লাস্টিক বর্জ্য রফতানি নিষিদ্ধ করা এবং প্লাস্টিকের একক ব্যবহারের কমানো উচিত। জার্মানির বর্জ্য জার্মানিতেি প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। সাম্প্রতিক সংবাদগুলোতে তুরস্কের বন্দরগুলোতে জার্মানির গৃহস্থালি প্লাস্টিক বর্জ্যপূর্ণ ১৪০টি কন্টেইনার অপেক্ষা করা সম্পর্কে কথা হচ্ছে। অবিলম্বে আমাদের সরকারকে এগুলো ফিরিয়ে নিতে হবে।

এই প্রতিবেদনটি প্রকাশের পরে তুরস্ক তাদের পলিমার আমদানির তালিকা থেকে  শপিং ব্যাগ, শ্যাম্পুর বোতল এবং বিভিন্ন ধরনের মোড়কে ব্যবহৃত পলিথিন প্লাস্টিক সরিয়ে ফেলেছে [8]। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্য থেকে আনা ১লক্ষ ৯৮ হাজার টন আবর্জনার মধ্যে পলিথিন পাওয়া গেছে [9]

তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঘোষিত এই সিদ্ধান্তটি ২০২১ সালের ৩ জুলাই তারিখ থেকে কার্যকর হবে।  এর প্রয়োগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও নগরায়ণ মন্ত্রী মুরাত কুরুম বলেছেন [10] যে “নিষেধাজ্ঞাটি বাস্তবায়নের জন্যে শুল্ক বিভাগ নিয়মিত তদারকি করবে, এরপরে হবে মিশ্র প্লাস্টিক আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা।”