কোভিড-১৯ এর নতুন একটি ঢেউ মহামারী-সচেতন তাইওয়ানকে হতবিহ্বল করেছে

তাইপেই শহর এখন খালি। ইউটিউবের সিটিএস নিউজ থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

তাইওয়ানের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) অনুসারে, কোভিড-১৯ মহামারীতে কম আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে অন্যতম তাইওয়ান গত ১১ মে থেকে এই মাসে ৩,১৬১ টি পজিটিভ রিপোর্ট পেয়েছে। মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে মে মাসের আগ পর্যন্ত তাইওয়ানে মোট কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা ১,২০০টিরও কম ছিল।

১৬ মে তারিখে তাইওয়ানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেন শিহ-চুং সমস্ত প্রকাশ্য স্থানে বাধ্যতামূলক মুখোশ পরা এবং বাইরের সমাবেশ ১০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধতার মতো বিধিনিষেধসহ স্তর ৩, মৃদু সতর্কতামূলক লকডাউন জারি করেছেন।

নতুন তরঙ্গটি বৃহত্তর তাইপেই শহর অঞ্চলকে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করেছে। বিধিনিষেধের ফলে এর সবচেয়ে ধনী অঞ্চলগুলি গত কয়েকদিনে খালি হয়ে গেছে।

তাইওয়ানের সিডিসি দুটি বড় সংক্রমণের গুচ্ছ সনাক্ত করেছে – একটি চীনা বিমানসংস্থার ফ্লাইটের এবং অন্যটি অল্প বয়সী নারী পরিচারিকাদের সাধারণত বয়স্ক পুরুষদের অন্তরঙ্গ পরিবেশনের বিনোদন স্থান – একটি “সেক্সি চায়ের দোকান” এর সাথে যুক্ত।

সমালোচকরা এই গুচ্ছের জন্যে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাক্সিন না নেওয়া চীনা বিমান সংস্থার কর্মীদের জন্যে পৃথকীকরণের নিয়ম শিথিলকরণকে দুষছেন। ১১ মে পর্যন্ত পরীক্ষায় চীনা বিমানসংস্থার ১৩ জন বিমান চালকের কোভিড -১৯ সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছে এবং বিমানসংস্থার কর্মীদের যে হোটেলটিতে পৃথকীকরণের জন্যে রাখা হয়েছিল তার সাথে ৩০টি ঘরোয়া সংক্রমণের ঘটনা সংযুক্ত।

আন্তর্জাতিক লায়ন্স ক্লাবের স্থানীয় অধ্যায়ের প্রাক্তন সভাপতি কোভিডের মতো বিভিন্ন লক্ষণ থাকায় গত ১১ মে সনাক্তকরণ পরীক্ষায় পজিটিভ হন। যোগাযোগ অনুসরণ করে দেখা গেছে তিনি ৪ মে থেকে ১০ মে তারিখের মধ্যে তাইপেইয়ের ওয়াানহুয়া অঞ্চলের একটি সেক্সি চায়ের দোকানে গিয়েছিলেন।

ওয়ানহুয়া জেলায় ১০০টিরও বেশি সেক্সি চায়ের দোকান রয়েছে এবং এই সেক্টরে হাজার হাজার লোককে নিযুক্ত করে। ২০ মে পর্যন্ত ২৯৯টি কোভিড-১৯ সংক্রমণ পজিটিভের ঘটনা ওয়ানহুয়া জেলার সাথে সংযুক্ত হয়ে গেছে যার মানে হলো সংক্রমণের শৃঙ্খলটি আরো অনেক বেশি বিস্তৃত হতে পারে।

১ মে থেকে ২৪ মে, ২০২১ তারিখের মধ্যে তাইওয়ানে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা। তাইওয়ানের সিডিসি থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

মহামারী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ফাঁক-ফোকর

অনুসন্ধানী সংবাদ সংস্থা দ্য রিপোর্টার তাইওয়ানের মহামারী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় তিনটি ফাঁক সনাক্ত করেছে, যথা- যোগাযোগ অনুসরণের সক্ষমতা না থাকা, পিসিআর পরীক্ষার অভাব এবং চিকিৎসা কর্মীদের অভাব।

তাইপেইয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান হুয়াং শিয়ের-চিয়েগ দ্য রিপোর্টারকে বলেছেন নগরীর সংস্পর্শ অনুসন্ধানকারী দলে ১০ জনেরও কম লোক রয়েছে। বর্তমান প্রাদুর্ভাবের মাত্রা বিবেচনায় তাদের শুধু নিশ্চিত ঘটনাগুলোর সাথে যুক্তদের যোগাযোগ করার ক্ষমতা থাকলেও তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদের সাথে নয়। দ্য রিপোর্টার বলেছে সংস্পর্শ অনুসন্ধানকারী দল সংক্রমণ নিশ্চিতরা নিজেরাই পৃথক থেকেছে কিনা সেটাও অনুসরণ করতে পারেনি।

বর্তমানে তাইওয়ানের পিসিআর পরীক্ষার ক্ষমতা প্রতিদিন ১৬,০০০ এর নিচে। দ্য রিপোর্টার জানিয়েছে, বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থায় পজিটিভ সংক্রমণের সাথে সরাসরি সংস্পর্শে থাকাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি।

তাইওয়ানজুড়ে এক ডজন হাসপাতালের বেশ কিছু কর্মচারীর নিশ্চিত সংক্রমণসহ পরিস্থিতিটি তাইওয়ানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে হতবিহ্বল করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন প্রাদুর্ভাবের শুরুতে মহামারীটির মাত্রা সম্পর্কে জানার আগেই আক্রান্ত রোগীদের যত্ন নিয়েছিলেন।

নিজেদের কর্মীদের #কোভিড-১৯ আক্রান্ত সনাক্তের পর বৃহস্পতিবার তাইপেইয়ের ঝোংঝেং জেলার একটি হাসপাতাল পুরো বন্ধ এবং নতুন তাইপেইয়ের জিজি জেলার একটি অপর হাসপাতাল আংশিক বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

তাইওয়ান সরকার দ্রুত নতুন পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করলেও এই কেন্দ্রগুলিতে কটন সোয়াবের মতো চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব রয়েছে। পরীক্ষাগার কর্মীদের অভাবের মানে হলো ২৪ ঘণ্টা পিসিআর পরীক্ষা করাও অসম্ভব।

সংক্রমণের পরিমাণ বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার প্রথম সারিকে সাহায্য করার জন্যে আরো কর্মী প্রয়োজন বলে তাইপেই শহর অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসা পেশাজীবিদের নিয়োগ দিতে শুরু করেছে।

মহামারীটির আগে থেকেই তাইওয়ান কীভাবে হাসপাতালের কর্মীদের নিয়োগের জন্যে লড়াই করে চলেছে সেটা জনসমক্ষে এনেছে এই প্রকোপটি। শ্রমিক ন্যায়বিচার এবং রোগীদের সুরক্ষার  জন্যে চিকিৎসা জোট ২০১২ সাল থেকে এই আশঙ্কাটি নিয়ে কথা বলে আসছে। দলটি দাবি করেছে যে চিকিৎসা কর্মীরা কম বেতন পাচ্ছেন এবং তাদের দীর্ঘতর সময় কাজ করতে হয়।

গত বছর তাইওয়ান মৌলিক সেবিকা ইউনিয়ন সরকারকে এই খাতে কাজের অবস্থার উন্নতি করার আহ্বান জানালেও তারা বলেছে কর্তৃপক্ষ কোন সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সেবিকা ইউনিয়নটির প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং জিউ-মেই দ্যা রিপোর্টারকে বলেছেন যে পিসিআর সোয়াব সংগ্রহের জন্যে চিকিৎসার প্রাথমিক ব্যবস্থা স্থাপনের জন্যে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সংস্থান নেই বলে চিকিৎসা কর্মীরা বর্তমান প্রাদুর্ভাব নিয়ে অনেক চাপের মধ্যে রয়েছে।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .