- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের কন্টেন্ট সেন্সরশিপের নিন্দা করেছে বেশ কয়েকটি এনজিও

বিষয়বস্তু: মধ্যপ্রাচ্য ও উ. আ., প্যালেস্টাইন, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, রাজনীতি, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী

প্যালেস্টাইনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর বড় বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলি কর্তৃক ফিলিস্তিনের কণ্ঠস্বর বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে বেশ কয়েকটি এনজিও একটি আবেদন শুরু করেছে। এসএমইএক্স এর গ্রাফিএক্স। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

গত ১১ই মে বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ফিলিস্তিনিদের অনলাইনে কণ্ঠস্বর রোধ করা বন্ধ করতে আবেদন জানিয়ে একটি পিটিশন [1] চালু করেছে। দখলকৃত শহর জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক উসকানির (যা গত কয়েক বছর বেশ ক'টি ভয়াবহ সহিংসতার কারণ হয়েছে) আলোকে এ পিটিশন চালু করা হয়েছে।

ইসরায়েল ও গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ইসলামী আন্দোলন হামাসের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্রের বিনিময়ে কমপক্ষে ৪৯ জন ফিলিস্তিনি এবং ৬ ইসরায়েলী নিহত [2] হয়েছে। এসব শুরু হয় পুরোনো শহরে ফিলিস্তিনিদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইসরায়েলি ইহুদী বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ফিলিস্তিনিদের বাড়িঘর দখলের ফলে দুপক্ষের মুখোমুখি [3] বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল তার জের ধরে। ইসরায়েলি বাহিনীর সহিংসতার কারণে জেরুজালেমে কয়েক'শ ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী আহত হয়েছিল।

এস এম ই এক্স, আরব সেন্টার ফর সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডভান্সমেন্ট, আই এন এস এম, সামীর কাসির ফাউন্ডেশন, মাসার, টিম কমিউনিটি, জে ও এস এ এবং লেবানিজ সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসসহ স্বাক্ষরকারী এনজিওগুলির বিবৃতি অনুসারেঃ

গত সপ্তাহে জেরুজালেমের শেখ জাররাহ এলাকায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি পুলিশ বর্বরতার ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। ইসরায়েলি পুলিশ এবং ইসরায়েলি ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা সহিংসভাবে আক্রমণ করার সময় পাড়ার প্রতিবেশী পরিবারগুলি এখন তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদের আসন্ন হুমকির মুখোমুখি রয়েছে। জেরুজালেমের পুরোনো শহরে জুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় ইসরায়েলি বাহিনী আল-আকসা মসজিদটিকে শব্দ বোমা, টিয়ার গ্যাস এবং রাবারযুক্ত প্রলেপ দেয়া ইস্পাত বুলেটে দিয়ে আক্রমণ করে এবং এতে ৩০০ এরও বেশি ধর্মীয় উপাসক ও প্রতিবাদকারী আহত হয়।

এপ্রিল ১৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছিল ইসলাম ধর্মের পবিত্র মাস রমজান মাস। তখন থেকেই উত্তেজনা বেড়েছে। ইসরায়েলের দখলদার বাহিনী ফিলিস্তিনিদেরকে ওল্ড সিটির দামেস্ক গেটের কাছে প্রবেশ করতে ও রোজা খোলার পর জমায়েত হয়ে তাদের দীর্ঘকালীন ঐতিহ্য পালনে বাধা দিয়েছে। কাকতালীয়ভাবে একই সময়ে কয়েক দশকের দীর্ঘ আইনী প্রক্রিয়াকে সমাপ্ত করে শহরের পার্শ্ববর্তী শেখ জারারাহ এলাকায় বেশ কয়েকটি পরিবারের বাড়ি ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা দখলের অনুমোদন পায়।

ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীগণ সেভ শেখ জারাহ (#SaveSheikhJarrah) সহ বেশ কয়েকটি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করেছে, যেমনটি পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে:

ফিলিস্তিনের অভ্যন্তরে এবং বাইরের লোকেরা টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য, নথিপত্র এবং নিন্দা জানিয়ে প্রচার করেছে। সেভ শেখ জাররাহ (#SaveSheikhJarrah) হ্যাশট্যাগ এই মাধ্যমগুলির দ্বারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে দৃশ্যমান হচ্ছিল। এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, আমরা এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে ফিলিস্তিনি কন্টেন্টগুলির বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের [4] অগণিত খবর পেতে শুরু করি।

বেসরকারী এনজিও সংস্থাগুলির বিবৃতিটিকে “অসম্ভব ভুল” হিসাবে চিহ্নিত করেছে ফেসবুক এবং ৪৮ ঘন্টার মধ্যে দুটি “প্রযুক্তিগত সমস্যা” হয়েছে বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে যে ফিলিস্তিনি ব্যবহারকারীদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং জেরুজালেমের বাসিন্দাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের সাথে আপোষ করা হয়েছে কারণ তারা আল-আকসা এবং শেখ জারাহে ইসরায়েলি সহিংসতা ও নাশকতার কন্টেন্ট বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছে। ফেসবুক বিবৃতিতে প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলির তারিখ নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেনি।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে “সংকটপূর্ণ সময়ে এই প্রযুক্তিগত ত্রুটিগুলি পরপর ঘটা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নজরে না আসা অসম্ভব,আর অবিশ্বাস্যভাবে সেটাই হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের কন্টেন্ট সীমাবদ্ধ করা ও অপসারণের ব্যাখ্যা হিসাবে আমরা এই মিথ্যা অজুহাতকে অস্বীকার করি এবং মানিওনা”।

মধ্যপ্রাচ্যে ভিন্নমত দমন করতে ফেসবুক এবং টুইটার উভয় এর বিরুদ্ধেই বারংবার কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলির সাথে সহযোগিতার অভিযোগে [5] রয়েছে, আর এটি ঘটেছে এমন একটি অঞ্চলেই যেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলি প্রতিবাদ সংগঠিত করতে এবং যুব ও বিরোধীদের ক্ষমতায়নে মূল ভূমিকা পালন করেছে, বিশেষত আরব বসন্ত আন্দোলনের সময়।

বিবৃতিতে ফেসবুক এবং টুইটার অবিলম্বে ফিলিস্তিনিদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কন্টেন্ট সেন্সর বন্ধ করা, মুছে দেয়া পোস্ট এবং অ্যাকাউন্টগুলি পুনর্বহাল করা এবং এমন কয়েকটি পদক্ষেপের (সেন্সর সংক্রান্ত নীতি) তৈরির দাবি করেছে যা উভয় প্ল্যাটফর্ম অনুসরণ করবে। এছাড়াও বিবৃতিতে এই অ্যাকাউন্টগুলি ও কন্টেন্ট মুছে দেয়া “মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আন্তর্জাতিক মানের লঙ্ঘন” হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনি সম্পর্কিত বিষয়বস্তু সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্বচ্ছতা প্রকাশের দাবি করা হয়েছে।

এই দুটি ঘটনার তদন্ত অবিলম্বে উন্মুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। পিটিশনে বলা হয়েছে “সেন্সর করা কন্টেন্টগুলির প্রতিটি ক্ষেত্রে কোন কোন শব্দ কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড/নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে তা সংস্থাগুলিকে অবশ্যই দেখাতে হবে”।

ইস্রায়েলি সাইবার ইউনিট কর্তৃক অনুরোধের ফলে মুছে ফেলা কন্টেন্টের ক্যাটাগরি সম্পর্কিত বিবরণীর সাথে প্রাপ্ত অভিযোগের সংখ্যা, অপসারিত কন্টেন্ট, অ্যাকাউন্ট স্থগিতকরণ এবং অন্যান্য বিষয়বস্তুর নিষেধাজ্ঞাসহ সাইবার ইউনিট কর্তৃক জমা দেওয়া সমস্ত অনুরোধগুলিও প্রকাশের দাবি জানানো হয়েছিল পিটিশনে। এনজিওগুলির আরও দাবি হল ফেসবুক এবং টুইটারের কাছে ফিলিস্তিনের বিষয়বস্তুগুলিকে (কন্টেন্ট) লক্ষ্য করে স্বয়ংক্রিয় এবং এআই-ভিত্তিক মডারেশন বা পরিমিতাচার উভয় প্ল্যাটফর্মেরই বন্ধ করা উচিত।

সরকার ও আদালতের আদেশ প্রতিহত করা প্রকাশ্যে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন।বিশেষত ক্ষমতা দখলে ইস্রায়েলের উপর বাধ্যবাধকতা আরোপকারী “হেগ” আইনের ৪৩ অনুচ্ছেদ, “যদি দেশে প্রয়োগ করা আইন সম্পূর্ণরূপে প্রতিবাদী না হয় তবে সম্মান করো”।

বিবৃতিতে উভয় প্ল্যাটফর্মকে কন্টেন্ট মডারেশনে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা সম্পর্কিত “সান্তা ক্লারা নীতিমালা” দ্বারা বর্ণিত মূল নীতিমালা অনুসরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং আহ্বান জানানো হয়েছে ফেসবুকের নিজস্ব আইনসংগত মানবাধিকার নীতি মেনে চলার জন্য, যা ২০২১ সালের মার্চ মাসে চালু হয়েছিল। এতে সংস্থাটি ব্যবসা ও মানবাধিকার বিষয়ক ইউ এন এর গাইডিং নীতিমালা মেনে চলার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছিল।