২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে ভারত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন সংবাদ ওয়েবসাইট এবং স্ট্রিমিং মঞ্চগুলিতে বিস্তৃত নতুন বিধি প্রবর্তন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা ভারতীয় নাগরিকদের ইন্টারনেট অভিজ্ঞতা মারাত্মকভাবে পরিবর্তন করতে পারে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিধি ২০২১ অনুসারে আরো অন্যান্য বিষয়ের সাথে সাথে প্রকাশ্য যৌন বিষয়বস্তু সনাক্ত করতে সঙ্কেতায়িত বার্তাগুলির প্রবর্তককে চিহ্নিত করতে এর ব্যবহারকারীদের জন্যে একটি “স্বেচ্ছামূলক যাচাই ব্যবস্থা” প্রবর্তন করতে এবং ভারতীয় ব্যবহারকারী ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে সরকারের অভিযোগ এই দু’টির প্রতি সাড়া দিতে স্থানীয় বিভিন্ন দল ভাড়া করার জন্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মঞ্চগুলিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক প্রযুক্তি মোতায়েন করতে হবে। অর্ধ কোটির বেশি ব্যবহারকারীবিশিষ্ট মঞ্চগুলির জন্যে নিয়ন্ত্রণগুলি আরো কঠোর হবে।
এদিকে এখন থেকে স্ট্রিমিং পরিষেবা এবং ডিজিটাল সংবাদ সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করবে ভারতের ইলেক্ট্রনিক্স ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। বাস্তবে এর মানে হলো নেটফ্লিক্স ও অ্যামাজন প্রাইমের মতো পরিষেবাগুলিকে ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলির মতো একই নিয়ম মেনে চলতে হবে।
বিধিগুলি মানতে ব্যর্থ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মঞ্চগুলি ২০০০ সালের ভারতের তথ্য প্রযুক্তি আইনের মাধ্যমে পাওয়া অন্তর্বর্তীকালীন অব্যহতির সুবিধা হারাতে পারে এবং এর ব্যবহারকারীদের পোস্ট করা বিষয়বস্তুর জন্যে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। বিধিগুলি ভিডিও স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলিকে দায়মুক্তি, কার্ড সতর্কতা এবং এমনকি সেন্সরের বিষয়বস্তু সম্প্রচারে বাধ্য করতে সরকারকে ক্ষমতা প্রদান করে।
নতুন নিয়মগুলি এসেছে কয়েক মাসব্যাপী দেশজুড়ে কৃষকদের বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে যেখান থেকে অনলাইনে যারা কিছু পোস্ট করেছে তাদেরসহ শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে টুইটারকে ভারত সরকার একটা অনুরোধ করেছিল মঞ্চটির সাথে অস্থায়ীভাবে সংকলিত #মোদিরকৃষকগণহত্যাপরিকল্পনা হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা অ্যাকাউন্টগুলি স্থগিত করতে।
ভারতীয় ইন্টারনেট ডিজিটাল স্বাধীনতা সংস্থা ইন্টারনেট স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন (আইএফএফ) একটি ব্লগ পোস্টে এসব বিধি এবং ভারতীয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জীবনে এগুলোর সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধান তুলে ধরেছে। আমরা নতুন এই নির্দেশনাগুলি সম্পর্কে উদ্বেগের দুটি প্রধান দিক নীচে আলোকপাত করব।
আদ্যোপান্ত সংকেতায়নের অবসান
এই বিধানটি শুধু অর্ধ কোটির বেশি ব্যবহারকারীদের মঞ্চগুলির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাকে এই বিধিগুলি “উল্লেখযোগ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মধ্যস্থতাকারী” হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ এবং সিগন্যালের মতো আদ্যোপান্ত বার্তা আদান-প্রদান সংকেতায়নের প্রস্তাব দেওয়া মঞ্চগুলিকে আদালতের আদেশ বা কোন উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনে অবশ্যই বিষয়বস্তুটির প্রবর্তককে সনাক্ত করতে সক্ষম হতে হবে।
পূর্ববর্তী ২০০৯ সালের তথ্যপ্রযুক্তি বিধিতে সংজ্ঞায়িত যোগ্য কর্তৃপক্ষ হলো কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব অথবা রাজ্য স্তরের স্বরাষ্ট্র বিভাগের দায়িত্বে নিযুক্ত সচিব।
এই জাতীয় আদেশ কেবল গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রেই জারি করা হবে বলে বিধিগুলিতে স্পষ্ট করে দেওয়া হলেও ভারতে কিছু ধরনের অপরাধ একেবারেই উন্মুক্ত, আইএফএফ এর ব্লগে বলা হয়েছে।
“উদাহরণস্বরূপ, ‘জনশৃঙ্খলা’র ভিত্তি অপেক্ষাকৃত বিস্তৃত এবং অনেক দাবির জন্ম দিতে পারে,” সংগঠনটি বলেছে।
SSMIs must enable tracing originators of info in case of serious offences. See this graphic on why this IS an end-to-end encryption issue despite not being presented as such.
They must also deploy tech to identify sexual violence content, which leads to function creep.
7/n pic.twitter.com/Iyt86bYmy9— Internet Freedom Foundation (IFF) (@internetfreedom) February 27, 2021
গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে এসএসএমআইগুলিকে অবশ্যই তথ্যের উৎসগুলি সনাক্ত করতে পারতে হবে। এই গ্রাফিকটি দেখলে বোঝা যাবে এই আইএসটি এরকমভাবে উপস্থাপিত না হয়ে কেন আদ্যোপান্ত সংকেতায়নের একটা আলোচ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
তাদেরকে যৌন সহিংসতার বিষয়বস্তু সনাক্ত করার জন্য প্রযুক্তিও মোতায়েন করতে হবে যা গোপনীয়তা নিয়ে অনর্থক জটিলতা বাড়াবে।
প্রাক ইন্টারনেট যুগে ফিরে যাওয়া
বিধিগুলির একটি সম্পূর্ণ অংশ অনলাইন সংবাদ সংস্থা এবং ভিডিও স্ট্রিমিং মঞ্চগুলির সাথে সম্পর্কিত। এই পরিষেবাগুলি ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হবে বলে সেগুলি অনলাইনের বাইরে থাকা সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য একইধরনের নিয়মের অধীনে আসবে।
উদাহরণস্বরূপ স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলিকে তাদের বিষয়বস্তুতে ব্যবহারকারীদের জন্যে বয়স-শ্রেণিবদ্ধকরণ লেবেল প্রবর্তন করার পাশাপাশি তাদের একটি বয়স-যাচাইয়ের ব্যবস্থা চালু করতে হবে (অনেক স্ট্রিমিং পরিষেবাদিতে ইতোমধ্যে এই জাতীয় ব্যবস্থার পাশাপাশি বয়স-উপযুক্ত লেবেল রয়েছে)।
স্ট্রিমিং পরিষেবাদি এবং অনলাইন সংবাদ উভয়কেই নীতিমালার সাথে সংযুক্ত একটি নৈতিকতা মেনে চলতে হবে যা অন্যান্য আলোচ্যের মধ্যে জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির ক্রিয়াকলাপ চিত্রিত করার সময় তাদের “সাবধানতা ও বিচক্ষণতা অবলম্বন করা” উচিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আইএফএফ বলেছে, “এটি মত প্রকাশের উপর শীতল প্রভাব ফেলতে পারে কারণ এটি শৈল্পিক বিষয়বস্তু নিয়ে কিছু কিছু গোষ্ঠীর উদ্বেগকে আনুষ্ঠানিক বৈধতা দিতে পারে।”
অনলাইন সংবাদ যোগাযোগ মাধ্যমগুলির কথা বলতে গেলে আইএফএফ চিহ্নিত আরেকটি প্রধান উদ্বেগ হলো বিধিগুলি সামাজিক গণমযোগাযোগ মাধ্যমগুলির মধ্যস্থতাকারীদের মতো এদের আকারের প্রান্তিক কোন মান নির্দিষ্ট করে দেয় না। এই বিধিগুলি ভারতে প্রযোজ্য অনলাইন “সংবাদ এবং বর্তমান ঘটনাবলীর বিষয়বস্তু” প্রকাশের যেকোন কিছু এবং ব্যক্তির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
“মধ্যস্থতাকারী বিধিগুলি তর্কসাপেক্ষভাবে এমন একটি বিশাল সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে নিয়ন্ত্রিত করার চেষ্টা করবে যাদের খুব অল্পসংখ্যক অনুরূপ বিষয়বস্তু তৈরি করার ক্ষেত্রে জড়িত থাকে,” বলেছে আইএফএফ।
প্রতিক্রিয়া
বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন নতুন নিয়মগুলি গণতন্ত্রবিরোধী এবং অসাংবিধানিক। বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ক্রিস্টোফ জাফ্রিলোট বিধিগুলিকে ডিজিটাল সত্তাগুলির উপর নির্বাহী নিয়ন্ত্রণের একটি সম্প্রসারণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের একজন আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র নতুন নির্দেশনার নিন্দা করে বলেছেন যে আইনসভায় আলোচনা ছাড়াই এগুলি প্রকাশ করা হয়েছে।
স্বাধীন অনলাইন পোর্টাল দি ওয়্যার এবং নিউজমিনিট দিল্লির উচ্চ আদালতে ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম সম্পর্কিত বিধিগুলি চ্যালেঞ্জ করেছে।
Delhi High Court to hear a petition challenging the new IT Rules made by the Central Government to regulate intermediaries, OTT platform and digital news media.
The Petition has been filed by @thewire_in @dhanyarajendran and @mkvenu1
@GoI_MeitY@thenewsminute #ottguidelines pic.twitter.com/epZRIth7nl— Live Law (@LiveLawIndia) March 9, 2021
দিল্লি উচ্চ আদালত মধ্যস্থতাকারী, ওটিটি মঞ্চ এবং ডিজিটাল সংবাদ মাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি নতুন তথ্যপ্রযুক্তি বিধিগুলিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে করা একটি আবেদনের শুনানি করবে।
@দিওয়্যার_ইন @ধন্যরাজেন্দ্রন এবং @এমকেভেনু১ আবেদন দায়ের করেছে
১১ মার্চ তারিখে ভারতের কয়েকটি বৃহত্তম যোগাযোগ মাধ্যম সংস্থার একটি গোষ্ঠী ডিজিটাল সংবাদ প্রকাশনা সমিতি আগে থেকেই তারা কেবল টিভি নেটওয়ার্ক আইন এবং প্রেস কাউন্সিল আইনের প্রবিধানগুলি মেনে চলছে বলে তাদের কীভাবে ডিজিটাল সংবাদ সংস্থাগুলি থেকে আলাদা করে দেখা যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করার জন্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভাদেকারের সাথে সাক্ষাৎ করেছে।
To those wondering who the members of DNPA are:
India Today Group, Dainik Bhaskar, NDTV, Hindustan Times, Indian Express, Times of India, Amar Ujala, Dainik Jagran, Eenadu and Malayala Manorama. https://t.co/P3ACoI8IzK
— meghnad ? (@Memeghnad) March 11, 2021
ডিএনপিএর সদস্য কারা তা নিয়ে যারা ভাবছেন তাদের জন্যে:
ইন্ডিয়া টুডে গোষ্ঠী, দৈনিক ভাস্কর, এনডিটিভি, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আমার উজালা, দৈনিক জাগরণ, আইনাদু এবং মালায়ালা মনোরমা।
গুগল ও টুইটারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি নতুন নিয়মগুলি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন মন্তব্য করেনি।