- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ফ্রান্সে কে পিতামাতা হতে পারে?

বিষয়বস্তু: ফ্রান্স, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন)

দেওয়াল চিত্রটিতে সবার পিএমএ (‘চিকিৎসা সহায়তাযুক্ত প্রজনন’) পাওয়ার জন্যে আহ্বান জানানো হয়েছে, প্যারিস, ২০১৮। ছবি ইটমোস্ট, ফ্লিকার (সিসি বাই ২.০) [1]

“ঐতিহ্যবাহী” জন্মগতলিঙ্গের বহুকামী ছাঁচে না পড়লে পরিবারগুলি দশকের পর দশক ধরে অস্তিত্বশীল থেকে [2] ফরাসি সমাজে ক্রমান্বয়ে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করলে [3]ও আত্মীয়তার স্বীকৃতি এবং প্রজনন চিকিৎসার সুবিধা এখনো আইনি নিশ্চয়তাযুক্ত হয়নি। এই পরিস্থিতিটি পরিবার শুরু করার সময় অসমতার [4] কথা তুলে ধরে।

ফরাসি রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রঁ তার ২০১৭ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের প্রচেষ্টা হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসূচক আইভিএফ এবং একক নারী ও লেসবিয়ান দম্পতিদের কৃত্রিম গর্ভধারণের সুযোগকে বৈধতা দেওয়ার জন্যে “২০২১ সালের গ্রীষ্মকালের মধ্যে” একটি খসড়া আইন পাসের চেষ্টা করছেন। কিন্তু দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অনেক সক্রিয় কর্মীকে হতাশ করে [5] এই মূল সংস্কারটি সম্প্রতি উচ্চকক্ষে প্রত্যাখ্যাত হয় [6]। খসড়া আইনটি শেষ পর্যন্ত নিন্মকক্ষে গৃহীত হবে বলে কেউ কেউ আশা করছেন [7]

তবুও বিতর্কটা প্রগতিশীল শক্তির বিরুদ্ধে একটি অনমনীয় রাষ্ট্রের যুদ্ধের গল্পের চেয়ে গভীরতর।

ফরাসি কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকটাই পরিষ্কার: সবাই বাবা-মা হওয়ার সমান দাবিদার নয়। প্রথমত, উচ্চকক্ষের কিছু কিছু আইন প্রণেতাদের কাছে অবিবাহিত নারীরা “ঝুঁকিপূর্ণ [8]” হিসেবে যোগ্য, যেখানে এলজিবিটি+ বৈষম্য নিয়ে দেশের জাতীয় পরিকল্পনা [9]য় কদাচিৎ বিবেচনা করা লিঙ্গপরিবর্তিতদের বিবেচনা না করার কথা বলাই বাহুল্য। প্রজনন সহায়তাকে কিছু কিছু লোকের অবৈধ রাখার ইচ্ছার কারণে এখনো পর্যন্ত স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত [10] বলে ফ্রান্স সহায়তাযুক্ত প্রজনন প্রযুক্তি (এআরটি) চালু করার সিদ্ধান্ত না নেওয়া পর্যন্ত একক নারী এবং এলজিবিটিকিউআই+ লোকদের বিদেশে যেতে বাধ্য করছে।

খসড়া আইনটির বিরোধিতাকারী লা মানিফ পুর  তুসের (সার্বজনীন ধর্মঘট) মতো গোষ্ঠীর কাছে লেসবিয়ান দম্পতি অথবা অবিবাহিত নারীদের “প্রকৃত ঔরস পরিচয় না জানানো” পিতৃত্বহীন [11] সন্তান একটি সমস্যার বিষয়। শিশুদের ভবিষ্যৎ কল্যাণের জন্যে নারীদের এআরটি সুযোগ বঞ্চিত না করে তাদের কাছে নির্দিষ্ট শর্তাধীন দাতা সম্পর্কিত তথ্যাবলী প্রকাশের মাধ্যমে অর্ধ-বেনামীভাবে শুক্রাণু দানের প্রস্তাবের মাধ্যমে সহজেই এই ধরনের উদ্বেগের সমাধান করা যেতে পারে।

আসল আপত্তিটি সমাজে পুরুষদের জায়গা হারানোর আশঙ্কার সাথে জড়িত। খসড়া আইনটির বিরোধীরা শুক্রাণু দাতা ছাড়া কোন পুরুষকে জড়িত না করেই প্রজননে নারীদের সুযোগ প্রদানকে প্রায়শই “বর্জনযোগ্য পিতৃত্বে [12]”র অনুমোদন দানের সমতুল্য বলে উল্লেখ করে  থাকে। দ্বি-লিঙ্গ ব্যবস্থায় এটাকে একটি সমাজের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি [13] বলে মনে হচ্ছে।

এছাড়াও লা মানিফ পুর তুসের দৃষ্টিভঙ্গিটি প্রজনন ও শিশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে নারীদের উপর আগে থেকেই চেপে থাকা মানসিক বোঝাকে এড়িয়ে যায়। ফরাসি চিকিৎসা পেশাজীবি বাপ্তিস্তে বোলিউ তার একটি টুইটে [14] উল্লেখ করেছেন যে “এখানে (টুইটারে) সমস্ত নারীর জন্যেই শুধু এআরটি’র উল্লেখ পাওয়া গেলেও আপনি বাস্তব জীবনে প্রায়শই অন্যদের উপর চাপিয়ে দেওয়া পিতৃত্বের প্রতি নিজেদের নিবেদন করার অধিকার সুরক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়া এক ঝাঁক পুরুষ দেখতে পাবেন,“  অথচ অনেক ক্ষেত্রেই নারীদেরই শিশুর বেশিরভাগ যত্ন নিতে দেখা যায়। তখন কেউ বানিয়ে বলার মতো করে প্রত্যুত্তর দিতে পারে: বহুকামী দম্পতিদের জন্যে সন্তান ধারণ করা কি স্বাস্থ্যকর? এই সিদ্ধান্তটা অবশ্যই আমাদের নয় – এই জাতীয় যুক্তি।

ফ্রান্সে দত্তক নেওয়ার চর্চার উপর একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় [15] দেখা গেছে, শিশুকে দত্তক নেওয়ার ক্ষেত্রে একজন “ভাল প্রার্থী” হতে হলে মূলত আর্থিকভাবে স্থিতিশীল, দৃঢ় এবং বাঞ্ছনীয়ভাবে ভিন্ন ভিন্ন লিঙ্গের দম্পতির পাশাপাশি শ্বেতাঙ্গ এবং প্রতিবন্ধকতাহীন হওয়ার উপর অনেকটাই নির্ভরশীল। শিশুটির জন্যে “সর্বোত্তম [15]” বিবেচনার ধারণার ভিত্তিতে সমাজকর্মীরা কাজটি করে্ন। আইনটির বাস্তবায়ন স্বতন্ত্র প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হয় যারা নাগরিকদের অন্তরঙ্গ জীবনকে প্রভাবিত করার মতো বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেন।

আমরা এখনো ভাবছি “ভাল পরিবার” কী এবং আরো মৌলিকভাবে বলতে গেলে এখানে আলোচিত সমস্যাগুলিতে প্রভাবিত না হওয়া কিছু নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ফরাসি সরকারের দৃষ্টিতে যারা একটি পরিবার হিসেবে গণ্য।

কীভাবে একটি “পরিবার” গঠিত হয়?

নীতি হিসেবে জৈবিক প্রাধান্য [16] ধরে রেখে ফরাসি আইন এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট রক্ষণশীল। বিশেষতঃ এই আইনটি সন্তানটি ধারণের ক্ষেত্রে জেনেটিক উপাদানে বাবা-মা হিসেবে এই দুই ব্যক্তির অবদান রাখার কথা ধরে নেওয়া হয়, অর্থাৎ যে ব্যক্তি জন্ম দিয়েছে (মা) এবং যে ব্যক্তি তার (মায়ের) সাথে বিবাহিত বা বাবা হিসেবে নিবন্ধিত হতে এগিয়ে এসে থাকে। সহ-পিতামাতা [17] এবংমিশ্রিত পরিবার [18] থেকে শুরু করে এলজিবিটিকিউ+ পিতামাতা [19]সহ অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে সাধারণত একটি দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া জড়িত, যা কিছুটা আইনি ঝালাই-মেরামত দিয়ে সমাধান করতে হয়।

স্পষ্টভাবে এর অর্থ হলো সহ-অভিভাবকত্বের সিদ্ধান্ত তিন বা চারজন লোক নিলেও এদের মধ্যে কেবল দুইজনকে প্রাথমিকভাবে আইনগত পিতামাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং দত্তক নেওয়ার কাগজপত্র দায়ের না হওয়া পর্যন্ত অন্যরা দৃশ্যপটের পুরোপুরি বাইরে থাকে [20]।  লেসবিয়ান দম্পতিরাও একই ধরনের ধাঁধাঁর মুখোমুখি হচ্ছে যেহেতু শুধু জন্মদাত্রী মায়ের নামই সনদে লেখা যাবে। এই পরিস্থিতিতে, দত্তক গ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার আগে কোন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে বাবা-মায়ের কোন একজন সন্তানের জীবন থেকে পুরোপুরি বাদ যেতে পারে [21]

বর্তমানে “ভিন্নধর্মী” পরিবারগুলি আরো বেশি বেশি দৃশ্যমান [22] এবং স্পষ্টবাদী [23] হয়ে ওঠায় পরিবারের ধারণাটি একটি সামাজিক পুনঃসংজ্ঞায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সরেজমিন ধারণার রূপটি প্রসারিত হলেও বৈধ অভিভাবকত্ব সরে যাওয়ার সীমানা নির্ধারণ করে বিচারক ও আইন প্রণেতারা এখনো এটিকে সঙ্কুচিত করার ক্ষমতা রাখে। এমনকি সরকারের দরবারে ধীরে ধীরে এগুতে থাকা খসড়া আইনটি শেষ পর্যন্ত গৃহীত হলেও বর্তমানকালের ফরাসি পরিবারগুলির সব ধরনের বৈচিত্র্যকে পুরোপুরি ধারণ করতে আরো অনেক কিছু করার আছে এবং এই ঝুঁকিটি আইনি কূটকৌশলের চেয়েও বেশি কিছু।

পিতামাতা হওয়াকে আইন নির্ধারিত কঠোর রীতিনীতির বাইরে এনে স্বাভাবিক করতে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। যতক্ষণ কোন চিকিৎসা সহায়তা বা অন্তত দাতার হস্তক্ষেপ ছাড়া পিতামাতা হওয়া সম্ভব নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত ধর্মীয় নেতা থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ পর্যন্ত সবাই কিছু না কিছু বলবেই। এই বিতর্কের বস্তুগত ও মানসিক প্রতিবন্ধকতাগুলি দুঃখের সাথে হলেও কিছু পিতামাতাকে তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে দু’বার ভাবতে বলে। তারপরও যারা শেষ পর্যন্ত সন্তান নেওয়ার জন্যে ক্লান্তিকর প্রশাসনিক প্রক্রিয়াতে যাওয়ার সাহস করে,  তারা যে আইনটি এড়িয়ে চলছে এটা মাথায় নিয়ে সাবধানতার সাথে পরিকল্পনা ও বিবেচনা করার পরেই করে থাকে।

সংসদ সমস্যাটি কোথায় নিয়ে শেষ করবে তা নির্ধারণ করা কঠিন হলেও একটি বিষয়ে আমরা নিশ্চিত: সমস্যাটির দু’দিকের কোন পক্ষের নেতাকর্মীরাই ছেড়ে কথা বলবে না।