ই-বাণিজ্য ও মানবাধিকারের উপর এর সম্ভাব্য প্রতিকূল প্রভাব সম্পর্কে বেশ কিছু অংশীজন উদ্বেগ প্রকাশ করা স্বত্ত্বেও ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে প্রধানমন্ত্রী হুন সেন কম্বোডিয়ার জাতীয় ইন্টারনেট গেটওয়ে (এনআইজি উপ-আদেশ) প্রতিষ্ঠার উপ-আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন।
উপ-আদেশটি ২০২০ সালের জুলাই মাসে খসড়া করা হয়েছিল এবং আগস্ট মাসে টেলিযোগাযোগ অপারেটরদের সাথে এটা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এতে রাজস্ব আদায় এবং পরিষেবাদি বাড়ানোর সুবিধার্থে ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে একটি একক গেটওয়েতে পুন:পরিচালনা প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে এশিয়া ইন্টারনেট জোট উপ-আদেশটির কয়েকটি বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনলাইনের বিষয়বস্তু অবরুদ্ধ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
উপ-আদেশটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরে সুশীল সমাজের ৪৫টি গোষ্ঠী এটি নজরদারি এবং গোপনীয়তা লঙ্ঘন তীব্র করতে পারে বলে সতর্ক করে একটি স্বাক্ষরিত বিবৃতি জারি করে। তারা “নিরাপত্তা, জাতীয় রাজস্ব, সামাজিক শৃঙ্খলা, মর্যাদা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং রীতিনীতিকে প্রভাবিত” করতে পারে এমন মনে হলে অনলাইন সংযোগ বা বিষয়বস্তু অবরুদ্ধ করার অনুমোদন দেওয়া এনআইজি-এর উপ-আদেশটির ৬ ধারা উদ্ধৃত করেছে। বিবৃতিটি পূণর্ব্যক্ত করেছে যে:
…সরকারি নজরদারি স্ব-সেন্সরের প্রণোদনা তৈরি এবং সরাসরি সাংবাদিক ও মানবাধিকার সুরক্ষকদের কাজ করার সক্ষমতা ক্ষুন্ন করে ভয়ের একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে।
বিষয়বস্তু সেন্সরের জন্যে অত্যন্ত বিষয়গত এবং অসংজ্ঞায়িত কারণের এই তালিকাটি এনআইজিকে দেশের সমস্ত ডেটা এক্সচেঞ্জগুলি বাধাহীন প্রবেশাধিকার এবং নিয়ন্ত্রণ প্রদানের মাধ্যমে [কম্বোডিয়ার রাজকীয় সরকার] আরজিসি-এর পুলিশকে অনলাইন বিষয়বস্তু সেন্সর করার ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান করে।
উপ-আদেশটি প্রযুক্তি সংস্থাগুলির উপর অতিরিক্ত বিধি-বিধান আরোপের মাধ্যমে ই-বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠী:
এই উপ-আদেশটি প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্যে একটি বাধা এবং বিনিয়োগকারীরা কম্বোডিয়ার অনলাইন খাতে বিনিয়োগ না করার বা ছেড়ে চলে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে বলে আমরা উদ্বিগ্ন।
কম্বোডীয় মানবাধিকার কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক, চাক সোফিপ উল্লেখ করেছেন, সরকার যখন অনলাইন সমালোচকদের নিশ্চুপ করা এবং বিরোধীদলীয় নেতাদের উপর নির্যাতন চালানোর দায়ে অভিযুক্ত তখন এই নির্দেশটি পাস করা হয়েছে।
The timing of this NIG is particularly concerning as the last few years have seen a sharp increase in the number of citizens being threatened, harassed and even prosecuted for their use of the internet and for exercising their right to free speech on online platforms. pic.twitter.com/ehUBp2cC5w
— Sopheap Chak (@sopheapfocus) February 17, 2021
গত কয়েক বছর ধরে ইন্টারনেট ব্যবহার এবং অনলাইন মঞ্চে তাদের বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্যে নাগরিকদের প্রতি হুমকি, হয়রানি এবং এমনকি তাদের বিরুদ্ধে বিচারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে দেখা যাওয়ায় এই এনআইজি-র সময়কালটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষক মহামারী চলাকালে হুন সেন সরকার আরোপিত নিবর্তনমূলক নীতিমালার সাথে এই উপ-আদেশটিকে সংযুক্ত করেছে:
কম্বোডিয়ার জাতীয় ইন্টারনেট গেটওয়েটি হলো অনলাইন নিপীড়ন চালানোর জন্যে সরকারের টুলবক্সে না থাকা সেই হাতিয়ার। দেশজুড়ে ভিন্নমতাবলম্বী মিডিয়া বন্ধ করার পরে এখন যে হুন সেন সরকার ঠিক জাতীয়ভাবে সংগঠিত ২০২২ সালের কমিউন নির্বাচনের প্রাক্কালে অনলাইন সমালোচকদের দিকে মনোনিবেশ করেছে সেটা কোন কাকতালীয় ঘটনা নয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে যে দেশের “বিশৃঙ্খল” ইন্টারনেট দৃশ্যপট নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে উপ-আদেশটির প্রয়োজন রয়েছে। এটি মানবাধিকার সংস্থাগুলির বিবৃতিটিকে “ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অসত্য এবং উপ-আদেশটিতে বর্ণিত উদ্দেশ্যগুলির বিরোধাত্মক হিসেবেও বর্ণনা করেছে।”
মন্ত্রণালয়টি সরকারের চীনা ধাঁচের ইন্টারনেট ফায়ারওয়াল প্রবর্তনের উদ্দেশ্য বা এটি যে নির্বিচারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করবে, সেটা অস্বীকার করেছে। বরং মন্ত্রণালয় আরো বলেছে যে উপ-আদেশটি কম্বোডীয়দের উপকার করবে:
এটি অনলাইন জুয়া, সাইবার হুমকি, পর্নোগ্রাফি এবং অনলাইন জালিয়াতিসহ সীমান্ত এলাকার অবৈধ নেটওয়ার্ক সংযোগগুলি রোধ করতে সহায়তা করবে।
কম্বোডিয়ার একটি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২০ সালের মে মাসে কম্বোডিয়ায় ১ কোটি ৪৮ লক্ষ মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক ছিল।
২০১৮ সালে মে মাসে কম্বোডীয় সরকার ওয়েবসাইট এবং সামাজিক গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের উপর আন্তঃমন্ত্রণালয় প্রকাশনা (ঘোষণাপত্র) গ্রহণ করেছে যা বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থাকে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সুরক্ষা, জনস্বার্থ ও সামাজিক শৃঙ্খলা ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে “উস্কানিমূলক, সংহতি বিনষ্টকারী, বৈষম্যমূলক এবং ইচ্ছাকৃতভাবে অশান্তি সৃষ্টিকারী” বলে বিবেচিত ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু অবরোধ করার মাধ্যমে ইন্টারনেট নজরদারি বিস্তৃত করেছে।