ভারতে প্রতিবাদী ‘টুলকিট’-এর প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ আন্দোলন কর্মী দিশা রাভি গ্রেপ্তার

Disha Ravi in a protest. Screenshot from YouTube Video by Mojo Story. Fair use.

প্রতিবাদরত দিশা রাভি। মোজো গল্পের ইউটিউব ভিডিও থেকে নেওয়া পর্দাছবি।

“প্রতিবাদী টুলকিট” এর সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে দিল্লিতে ২২ বছর বয়সী ভারতীয় জলবায়ু কর্মী দিশা রাভি গ্রেপ্তার হওয়ায় ভারত এবং বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।

বেঙ্গালুরুর মাউন্ট কারমেল কলেজের শিক্ষার্থী রাভি সুইডিশ সক্রিয় কর্মী গ্রেটা থানবার্গের শুরু করা জলবায়ু আন্দোলন ভবিষ্যতের জন্যে শুক্রবার এর ভারতীয় শাখার প্রতিষ্ঠাতা।

১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে কয়েক মাস ধরে চলা ভারতের কৃষক বিক্ষোভ সমর্থনে সক্রিয় কর্মী ও সহানুভূতিশীলদের সংস্থান তালিকাভুক্ত করা একটি ভাইরাল অনলাইন ডকুমেন্টের জন্যে রাভিকে গ্রেপ্তার করা হয়। সক্রিয় এই কর্মীকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

২০২০ সালের অক্টোবর থেকে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় কৃষক কৃষি উদারীকরণ সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাদের সম্ভাব্য সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে দমনাভিযান পরিচালনা করেছে। সাংবাদিকসহ অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মাসের শুরুতে সরকারের অনুরোধে টুইটার কৃষকদের প্রতি সমর্থন প্রকাশের কথিত অভিযোগে ২৫০টিরও বেশি অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ করেছে।

৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে আরো অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বসহ থানবার্গ  ভারতীয় কৃষকদের সমর্থনে টুইট করেছেন। এরপরে এই সুইডিশ কর্মী তথাকথিত “প্রতিবাদী টুলকিট” ভাগাভাগি করেন (তার মূল টুইটটি মুছে ফেলা হয়েছে)।

বেনামি টুলকিটটি বিক্ষোভ সম্পর্কিত তথ্য এবং কৃষকদের আন্দোলনকে সংগঠিত বা সমর্থন করার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ সম্বলিত একটি মুক্ত টেক্সট ফাইল। নথিটি প্রতিবাদগুলি কী সে সম্পর্কে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা, ভারতীয় রাজনীতিবিদদের প্রাসঙ্গিক হ্যাশট্যাগ ও টুইটার ব্যবহার তালিকাভুক্ত এবং আবেদনের জন্যে বিভিন্ন লিংক সরবরাহ করে। নথিটির লেখনীতে সহিংস পদক্ষেপ নেওয়ার কোন আহ্বান নেই।

থানবার্গের টুইটের পরে দিল্লি পুলিশ নথিটি তদন্তের জন্যে একটি প্রাথমিক তথ্য প্রতিবেদন দাখিল করেছে। পরের দিন দিল্লির জনতা “আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ” এর বিরুদ্ধে লেখা একটি ব্যানার নিয়ে  কৃষকদের বিক্ষোভ নিয়ে টুইট করা থানবার্গ ও পপস্টার রিহানার কিছু ছবিতে অগ্নি সংযোগ করে।

এই সপ্তাহে পুলিশ রাভি নথিটির লেখকদের একজন বলে অভিযোগ করে জানায় যে এই তরুণ কর্মী এই লেখাটিতে অন্যদের অবদান রাখার জন্যে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে তিনি নিজেই থানবার্গের সাথে এই লেখাটি ভাগাভাগি ভাগ করেছিলেন। বুধবার আদালতে রাভি অন্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করলেও তিনি নথিটির দুটি লাইনের লেখা সম্পাদনার কথা স্বীকার করেছেন।

অর্ধশতাধিক শিক্ষাবিদ, শিল্পী ও সক্রিয় কর্মী একটি যৌথ বিবৃতিতে রাভির গ্রেপ্তারকে “বিরক্তিকর,” “অবৈধ প্রকৃতির” এবং “রাষ্ট্রের অতি-প্রতিক্রিয়া” বলে অভিহিত করেছেন। এই সপ্তাহান্তে #ভারতকে_চুপ_করিয়ে_দেওয়া হ্যাশট্যাগটি টুইটারে চাউর হয়েছে।

দ্য ওয়্যার-এর সম্পাদক সিদ্ধার্থ ভারদারাজনের মতো অনেকেই পুলিশের সমালোচনা করতে সামাজিক গণমাধ্যমের আশ্রয় নিয়েছেন:

#দিশারাভিকে গ্রেপ্তার করার জন্যে @দিল্লিপুলিশ প্রধানের এবং টুলকিট নিয়ে হিস্টিরিয়ায় অবদান রাখার জন্যে @ড.এসজয়শঙ্কর ও তার সহকর্মীদের মাথা লজ্জায় নুয়ে পড়া উচিত। এই চালাক লোকগুলি এতে রাষ্ট্রদ্রোহ দেখতে পেলে গণতন্ত্রে তাদের কেউই সরকারি পদে বসার উপযুক্ত নয়।

লেখক দানিশ হোসেনও বলেছেন:

এদেশে কৃষকদের সমর্থনে গুগল নথি সম্পাদনা করা এখন রাষ্ট্রদ্রোহের কাজ #গণতন্ত্র_দীর্ঘজীবি_হোক #দিশা_রাভি

ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় কবি রুপী কৌর বলেছেন:

#কৃষক_বিক্ষোভের সমর্থনে পোস্ট করা একটি টুলকিট @গ্রেটা_থানবার্গের সাথে ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্যে দিশা রাভি নামে ২১ বছর বয়সী এক জলবায়ু কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে দিল্লি পুলিশ।

দিশার গ্রেপ্তারের বিষয়টি উদ্বেগজনক এবং বিশ্বকে নজর দেওয়া দরকার। #দিশা_রাভিকে_মুক্ত_কর

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এবং আম আদমি পার্টির জাতীয় আহ্বায়ক অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মতো বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন:

২১ বছর বয়সী দিশা রাভির গ্রেপ্তার গণতন্ত্রের উপর একটি অভূতপূর্ব আক্রমণ। আমাদের কৃষকদের সমর্থন করা কোন অপরাধ নয়।

সরকার সমর্থক একাধিক রাজনীতিবিদ পুলিশের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে। বিজেপি সাংসদ এবং হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল ভিজ টুইট করেছেন যে “দেশবিরোদিতার বীজ … ধ্বংস করা উচিত …সেটা দিশা রাভি বা অন্য যে কেউ হোক।” টুইটার টুইটটি মুছে ফেলার পর চরম বক্তৃতার বিধি লঙ্ঘন না করায় তা আবার পুনঃস্থাপন করে।

এদিকে “টুলকিট” তৈরি ও ভাগাভাগি করে নেওয়ার বিষয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে সক্রিয় কর্মী-আইনজীবি নিকিতা জ্যাকবের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য একটি সমন জারি করা হয়েছে

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .