- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

উত্তর মেসেডোনিয়ার নাগরিকরা অনলাইন যৌন শিকারীদের দায়মুক্তির প্রতিবাদ করছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব ও মধ্য ইউরোপ, ম্যাসেডোনিয়া, সার্বিয়া, নজরদারী, নাগরিক মাধ্যম, প্রতিবাদ, প্রযুক্তি, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, লিঙ্গ ও নারী
[1]

৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে যৌন শিকারীদের দায়মুক্তির প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ” ইয়াভনা সোবা (প্রকাশ্য স্থান) একটি অপরাধ” লেখা ব্যানার। ভাঙ্কো জ্যাম্বাস্কির ছবি [2], সিসি বাই-এনসি-এসএ।

অনলাইনে হয়রানির জন্যে প্রতিশোধমূলক যৌনতা বিনিময় এবং মহিলাদের ব্যক্তিগত ডেটা অপব্যবহারের সুবিধার্থে অনলাইন নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী যৌন শিকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার প্রতিবাদ করতে কয়েক শত মানুষ ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে স্কোপিয়ের রাজপথে নেমেছিল। একই লোকদের মধ্যে কেউ কেউ আবার উত্তর ম্যাসাডোনিয়াতে শিশু পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়া এবং আরো অন্যান্য অপরাধমূলক আচরণের জন্যেও সন্দেহভাজন।

২৭ জানুয়ারি, ২০২১ তারিখে দেশটির দক্ষিণের একটি ছোট্ট শহর কাভাদার্সির অল্প বয়স্ক এক নারী আনা কোলাভা ইনস্টাগ্রামে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন [3]। ভিডিওটিতে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে তার ছবিটি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে চুরি করে কীভাবে সেটা তার ফোন নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যসহ টেলিগ্রাম গ্রুপে যৌন শিকারীদের জন্যে ভাগাভাগি করা হয়েছিল।

পতিতালয়ের প্রতিশব্দ “প্রকাশ্য গৃহ” শব্দের অনুরূপ ইয়াভনা সোবা (প্রকাশ্য স্থান) নামে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট একটি কেলেঙ্কারী প্রকাশের বার্ষিকীতে গণঅসন্তুষ্টি বিস্ফোরিত হয়। অস্তিত্ব পুরো এক বছর জুড়ে ব্যাপক পরিচিত লাভে [4]র পরে এখনো পর্যন্ত স্বাধীনভাবে এধরনের গ্রুপগুলির অবাধে কাজ করতে পারার ব্যাপারটি ১৬টি নারী অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার গোষ্ঠী এবং তাদের অসংখ্য কর্মীদের সংগঠিত করা ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখের বিক্ষোভে [5]র রূপ পরিগ্রহ করে।

বিক্ষোভকারীরা [6] নারীদের বিরুদ্ধে অনলাইন এবং অফলাইন সহিংসতাসহ অপরাধমূলক আচরণের দায়মুক্তির নিন্দা করেছে। সাইবার অপরাধের মামলা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত দুটি প্রতিষ্ঠান – স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (এমওআই) থেকে প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস থেকে “প্রকাশ্য_স্থান একটি অপরাধ” ব্যানার নিয়ে তারা পায়ে হেঁটে কেন্দ্রীয় স্কোপিয়ের সড়কগুলিতে মিছিল করে। আইনি পদ্ধতি অনুসারে, এই জাতীয় অপরাধের কথা জানানোর পর এমওআই সেই অনুরোধটা প্রসিকিউটরকে পাঠালে তিনি পুলিশকে তদন্ত শুরু করে মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।

[7]

প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারী ব্যানারগুলিতে লেখা রয়েছে – “সহিংসতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে,” “নিষ্ক্রিয়তার মানে হলো দুষ্কর্মের সহযোগিতা,” “যে রাষ্ট্র আইন আইন প্রয়োগ করে না সেই রাষ্ট্রই ধর্ষণ করে,” “পুলিশরা যখন ঘুমায় তখন ধর্ষণকারীরা দলে দলে জাগ্রত।” ভাঙ্কো জ্যাম্বাস্কির ছবি [8], সিসি বাই-এনসি-এসএ।

বিক্ষোভকারীরা নিচের দাবিগুলি [9] করেছে:

Бараме од Јавното обвинителство неодложно и темелно да го расчисти случајот „Јавна соба“, кој претставува кривично дело во кое голем број жени се жртви на родово засновано насилство.
Бараме соодветни казни за администраторите на групите, како и сите членови кои праќале и се уште праќаат фотографии и пишуваат лични податоци на девојки и жени.
Бараме и инсистираме сексуалното вознемирување преку интернет посебно да се регулира и во Кривичниот законик.
Бараме соодветна грижа за жртвите од надлежните институции.

আমরা অবিলম্বে পাবলিক প্রসিকিউটর দপ্তরের প্রকাশ্য_স্থান মামলার পরিপূর্ণ সমাধান দাবি করি। এটা বিপুল সংখ্যক নারীর বিরুদ্ধে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা উস্কে দেওয়া একটা ফৌজদারি অপরাধ।
আমরা মেয়ে শিশু এবং নারীদের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য ভাগাভাগি করা এবং সেটা অব্যহত রাখা সমস্ত সদস্যসহ [টেলিগ্রাম] গ্রুপের পরিচালকদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত নিষেধাজ্ঞা দাবি করি।
আমরা দাবি করি এবং জোর দিয়ে বলতে চাই যে অনলাইন যৌন হয়রানি ফৌজদারি বিধিতে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হোক।
আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের দক্ষ ও যোগ্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপযুক্ত সেবা-যত্ন দাবি করি।

[10]

যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের উদ্দেশ্যে “দোষ আপনার নয়” লেখা ব্যানার। ভাঙ্কো জ্যাম্বাস্কির ছবি [11], সিসি বাই-এনসি-এসএ।

একই দিন একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে মন্ত্রণালয় বিক্ষোভটির প্রতি সমর্থন জানায় [12]। তারা দাবি করেছে যে সাম্প্রতিককালে অভিযোগকৃত অনলাইন যৌন নির্যাতনের ঘটনাবলীর বিষয়ে ফোন বাজেয়াপ্ত এবং পরীক্ষা করা ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং সেগুলি প্রমাণ হিসাবে পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে প্রেরণ করাসহ তাদের ক্ষমতার মধ্যে থাকা সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মানবাধিকার সুরক্ষাকারীরা প্রকাশ্য_স্থানকে “গোপণীয়তার অধিকারকে সম্মান না করে বস্তু হিসেবে নারীদেহকে দেখা একদল যৌন শিকারী” [13] হিসেবে অভিহিত করেছে।

সেসময় পুলিশ টেলিগ্রাম গ্রুপের অভিযুক্ত প্রশাসক এবং মডারেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে কয়েক সপ্তাহ সময় [14] নিলেও তাদের কারাগারে বন্দি করেনি। তদন্ত পূর্ববর্তী পদ্ধতির অংশে টেলিগ্রামের তার গ্রুপের সদস্যদের ডেটা ভাগাভাগি না করার নীতি ছিল বলে তৎকালীন মন্ত্রী তাদের বেশি কিছু করতে না পারার কারণ হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন [15]। ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রসিকিউটর আদালতে মামলা শুরু করা তো দূরের কথা, সরকারি তদন্তের আদেশ পর্যন্ত দেননি [16]

[17]

২০২০ জানুয়া্রি থেকে টেলিগ্রাম গ্রুপ ইয়াভনা সোবা (প্রকাশ্য_স্থান) এবং এসম্পর্কিত গ্রুপ হুম…. এর পর্দাছবি। মেটা.এমকে এর ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

এসব গ্রুপের [18] বেশিরভাগ বিষয়বস্তুই নারীকে “উন্মোচন করা” ছবি যাতে প্রকাশিত ব্যক্তিগত তথ্য জড়ো [19] করার মাধ্যমে পাওয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্টগুলি থেকে নেওয়া অবকাশ যাপনের সময় প্রাক্তন সঙ্গীদের সাথে অন্তরঙ্গ ছবিসহ তাদের ফোন নম্বর ও অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য ছিল। প্রাথমিক এই গ্রুপটিতে ৭,৪০০ এর বেশি সদস্য থাকলেও এই কেলেঙ্কারি  প্রকাশিত হওয়ার কয়েকদিন পর গঠিত “হুম….” নামের এরকম আরেকটি গ্রুপে ছিল ৩,৭৭৯ জন সদস্য।

এক বছর পর দেখে মনে হয় পাবলিক রুম গ্রুপের প্রথম সংস্করণটি পরিচালনা করা ব্যক্তিরাই নতুন সংস্করণে স্থানান্তরিত হয়ে এমনকি সেই পুরানো নামটিই ব্যবহার করে যাচ্ছে। উত্তর মেসেডোনিয়ার স্থানীয় শিকারদের প্রকাশ্য ব্যক্তিগত তথ্য জড়ো করা ছাড়াও এই গ্রুপগুলি প্রতিবেশী সার্বিয়ার যৌন শিকারী [20]দের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে উভয় দেশের নারীদের আপোষমূলক বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে চলছে।

দ্বিতীয়বারের মতো এই কেলেঙ্কারীটি প্রকাশিত হলে পুলিশ টেলিগ্রামকে এই গ্রুপটি বন্ধ করার অনুরোধ করে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী হুমকি [21] দেন যে টেলিগ্রাম এটা মেনে চলতে অস্বীকার করলে সরকার পুরো দেশে অ্যাপটিতে প্রবেশাধিকার আটকে দেবে, যা হবে উত্তর মেসেডোনিয়ার ইতিহাসে সরকারিভাবে ইন্টারনেট অবরুদ্ধের প্রথম ঘটনা।

February 3, 2021 protest in Skopje, North Macedonia. Photo by Vančo Džambaski, CC BY-NC-SA. [22]

উত্তর মেসেডোনিয়ার স্কোপিয়েতে ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তারিখের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। ভাঙ্কো জ্যাম্বাস্কির তোলা ছবি [23], সিসি বাই-এনসি-এসএ।

২৮ জানুয়ারি তারিখে টেলিগ্রাম প্রকাশ্য_স্থান গ্রুপটি বন্ধ [24] করে দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, “অশ্লীল সামগ্রী ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যে ব্যবহৃত হওয়ার কারণে এই গ্রুপটি আর প্রদর্শিত হবে না।”

টেলিগ্রামের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অলিভার স্প্যাসোভস্কি সতর্ক [18] করে দিয়েছেন যে এরকমই আরেকটি গ্রুপ যারা এখনো মঞ্চটিতে কাজ করছে, পুলিশ সেটির সদস্যদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে।

আনা কোলেভার সাহসী কাজটি কর্তৃপক্ষসহ মূলধারার গণমাধ্যমের মনোযোগ কেঁড়েছে [25]।  বিচারমন্ত্রী তার সাথে বৈঠক করে ঘোষণা করেছেন [26] যে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে আঁড়িপাতাকে অপরাধমূলক হিসেবে গণ্য করা হবে।

[27]

উত্তর মেসেডোনিয়ার স্কোপিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের সামনে দায়মুক্তি অবসানের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা। ভাঙ্কো জ্যাম্বাস্কির তোলা ছবি [28], সিসি বাই-এনসি-এসএ।