মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে লড়াই: সেনেগালে অনলাইন মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করছে

সেনেগালের উত্তর-পশ্চিম ডাকারের একটি জেলা ওয়াকামের দৃশ্য। ফ্লিকার সিসি বাই-এনসি-এনডি ২.০ এর মাধ্যমে গ্যাব্রিয়েল ডি কাস্টেলাজের তোলা ছবি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিশ্বে বিপ্লব ঘটিয়েছে এবং সমাজের সমস্ত ক্ষেত্রে দুর্দান্ত পরিবর্তন এনেছে। সবচেয়ে দর্শনীয় উত্থানগুলির মধ্যে একটি তথ্য উৎপাদন এবং প্রচারের সাথে সম্পর্কিত। একসময় মিডিয়া পেশাদারদের অহংকার হলেও তথ্য তৈরি এবং প্রচার এখন ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারযুক্ত যেকোন নাগরিকের হাতের মুঠোয়।

এই নতুন পরিস্থিতিটি তথাকথিত ” মিথ্যা সংবাদ” এর ঘটনাটিকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সত্য, মিথ্যা অথবা কেবল রসিকতা করে – যেভাবেই হোক, প্রতিটি ব্যক্তির জনসাধারণকে খবর দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সেনেগাল সরকারের এধরনের বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টা অধিকার এবং স্বাধীনতা – বিশেষত অনলাইন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন না করে কীভাবে মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।

সেনেগালে মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মূল ব্যবস্থাটি দণ্ডবিধির ২৫৫ নং অনুচ্ছেদের উপর ভিত্তি করে, যাতে বলা হয়েছে:

যেকোন উপায়ে তৃতীয় পক্ষের কাছে মিথ্যা সংবাদ, বানোয়াট, মিথ্যা বা মিথ্যাভাবে দায়ের করা, প্রকাশ, প্রচার, প্রকাশ পূণরুৎপাদন করা হলে এক থেকে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং এক থেকে ১৫ লক্ষ ফ্রাঙ্ক [প্রায় ১৫,৭০০ – ২ লক্ষ ৩৫ হাজার বাংলাদেশী টাকা] জরিমানার শাস্তিযোগ্য অপরাধ – তা সেটা খারাপ বিশ্বাসে তৈরি করা হোক বা না হোক এর প্রকাশ, প্রচার, সম্প্রচার, উন্মোচনের মানেই হলো দেশের আইন অমান্য বা জনগণের মনোবলকে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠান বা তাদের কর্মকাণ্ডের সুনাম হানি করা।

এই আইনটিতে ” মিথ্যা সংবাদ” এর কোন সংজ্ঞা নেই বলে কর্তৃপক্ষ এটির অপব্যবহার করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, করোনভাইরাস মহামারী চলাকালীন বেশ কয়েকটি নাগরিককে তাদের সামাজিক গণযোগাযোগের মঞ্চে কোভিড-১৯ এর অস্তিত্ব অস্বীকার করার বা ভিডিওগুলিতে এর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার জন্যে পুলিশের কাছে তলব করা হয়েছিল

মহামারী ব্যবস্থাপনার জাতীয় কমিটির করা অভিযোগের ভিত্তিতে অনলাইনে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত ভিত্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক দাবি প্রচার করার জন্যে প্রখ্যাত ঐতিহ্যবাদী আবদুলে এমবায়ে পেখ এবং ভবিষ্যদ্বক্তা সেলবা নডমকে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে জাতীয় পুলিশ ডেকেছিল।

সেনেগালের ডাকারে সরকারি অভিসংশকের দপ্তরে যাওয়া এড়াতে পুলিশ কঠোরভাবে পেখ এবং নডমকে কথা শুনিয়ে তাদের ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে সেনেগালের নাগরিকরা করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সরকারি বিবরণী বিরোধী কোন মতামত জানাতে পারবে না এবং এটা করলে তাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।

এটা মিথ্যা হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না, আবার এর সত্যাসত্যও যাচাই করা যায় না – এবং সরবরাহকৃত তথ্য সত্য বা মিথ্যা কী না – তার মধ্যে সীমারেখা চিহ্নিত করা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করে।

এই আইনটি গ্রহণের জন্যে মিথ্যা সংবাদের একটি স্পষ্ট সংজ্ঞা প্রয়োজন, যাতে করে নাগরিকরা কীভাবে লঙ্ঘন হয় সে সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে অনলাইনের বহির্জগতে আসলেই মিথ্যা সংবাদের একটা সাংঘাতিক অনুরণন রয়েছে।

তবে কিছু কিছু বিশ্লেষক বলেছেন এই ঝুঁকিগুলি অনলাইনে বা অফলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার কারণ হওয়ার কথা নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক সমাজের একটি মৌলিক স্তম্ভ। সেনেগালের সংবিধানের ১০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে:

প্রত্যেকেরই কথা, কলম, চিত্র এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের মাধ্যমে নির্দ্বিধায় নিজের মতামত প্রকাশ ও প্রচার করার অধিকার রয়েছে, তবে এই অধিকারের প্রয়োগ যেন অন্যের সম্মান, বিবেচনা বা জনশৃঙ্খলা লঙ্ঘন না করে।

আপত্তিজনক বা মাত্রাতিরিক্ত বিবেচনায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কেবলমাত্র বিচার বিভাগ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতে পারে। কোন নির্দিষ্ট তথ্য বা সংবাদকে মিথ্যা বা সত্য হিসাবে চিহ্নিত করার ক্ষমতা কেবল একজন বিচারকেরই থাকা উচিত। তবে, প্রকাশনা বিধির ১৯২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: “ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে, যথাযোগ্য প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ … রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা আঞ্চলিক অখণ্ডতার উপর আক্রমণ অথবা ঘৃণা বা হত্যার প্রতি উস্কানি প্রতিরোধ বা থামাতে আদেশ দিতে পারেন:

  • কোন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রচার মাধ্যম জব্দ করার;
  • কোন কর্মসূচী সম্প্রচারের স্থগিতাদেশ বা বন্ধ করার;
  • প্রকাশনার কোন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করার।”

আবার, “ব্যতিক্রমী পরিস্থিতির ক্ষেত্রগুলি” আইনে পরিষ্কারভাবে সংজ্ঞায়িত হয় নি। এর মানে হলো প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কোন অনলাইন মত প্রকাশকে মিথ্যা বিবেচনা করার সময় তারা বিচারকের হস্তক্ষেপ ছাড়াই অনলাইন মিডিয়া সংস্থাটি থেকে এটি প্রচার করা মিডিয়াটি জব্দ করার আদেশ দিতে পারে। এর ফলে এটি অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করা একটি স্বাধীনতা হত্যাকারী আইনের জন্ম দেয়।

বিশেষ করে সবার জন্যে একটি স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং বোধগম্য আইনী ভিত্তি সংজ্ঞায়িত না করেই কর্তৃপক্ষকে ইন্টারনেটে মত প্রকাশ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিজিটাল অধিকার লঙ্ঘন করার সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।

সেনেগালের একটি ডিজিটাল অধিকার প্রচারণা গোষ্ঠী জংশন মিথ্যা সংবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যে ব্যবহৃত কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার আইনী পর্যালোচনা করার পরামর্শ দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক হাতিয়ারগুলির সাথে বিশেষত মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কিত জাতীয় কথামালাকে একত্রিত করার জন্যে এই আইনী সংস্কারটি প্রয়োজন। এই পুনর্বিবেচনাটি সমস্ত অংশীজনদের সাথে পরামর্শ করেই করা উচিত, যা সবধরনের অভিব্যক্তিকে সক্ষম করে তোলা ভার্চুয়াল স্থানগুলির সমস্ত নির্দিষ্ট প্রয়োজনকে বিবেচনা করে।

আফ্রিকার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নীতিমালার ঘোষণার দ্বিতীয় দফায় যেমন বলা হয়েছে:

কোন ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে নির্বিচারে হস্তক্ষেপ করা যাবে না। মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর যেকোন বিধিনিষেধ অবশ্যই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে, একটি বৈধ উদ্দেশ্য পূরণ করার উদ্দেশ্যে এবং গণতান্ত্রিক সমাজের জন্যে প্রয়োজনীয় হতে হবে।

1 টি মন্তব্য

  • Tamim Ahmed

    মিথ্যা নিউজ এর বিরুদ্ধে কঠুর হওয়ার এখনি সময় নইলে পরে আরে এদের কন্ট্রল করা যাবে না । সরকারের আরো কঠুর শাস্তি দেয়া এদের । ধন্যবাদ গ্লোবাল ভয়েজ ।

এই জবাবটি দিতে চাই না

আলোচনায় যোগ দিন -> Tamim Ahmed

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .