
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (২০১৫)। ফ্লিকার থেকে নেওয়া ছবি নরেন্দ্র মোদী। সিসি বাই-২.০।
১৬ সেপ্টেম্বর তারিখে একটি বক্তব্যে ভারতীয় ফেসবুকের প্রধান ভারতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে একটি মঞ্চ প্রদানের মাধ্যমে মিডিয়া দৈত্যটির মুনাফা অর্জনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এই প্রযুক্তি দৈত্যটি তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের নীতি লঙ্ঘনের পরও ভারতের শাসকদল – ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সদস্যদের পোস্টগুলি নামিয়ে নিতে অস্বীকার করেছে বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল (ডাব্লুএসজে) অভিযোগ জানানোর সপ্তাহখানেক পরে এই ব্যাখ্যাটি এসেছে।
ডাব্লুএসজে জানিয়েছে যে ডানপন্থী বিজেপির সদস্যের একটি মুসলিম বিরোধী পোস্টকে নজরে এনে দেওয়ার পরেও এই সংস্থাটি সেটাকে অন্যভাবে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ভারতে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য উস্কে দেওয়ার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে ফেসবুক। ডাব্লুএসজের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষার জন্যেই এটি করা হয়েছিল।
প্রশ্নবিদ্ধ বিজেপি নেতাটি হলেন ভারতের তেলঙ্গানা রাজ্যের বিধায়ক টি রাজা সিং। ডব্লিউএসজের প্রতিবেদন মুসলমানদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ অভিহিত করা এবং ভারতে রোহিঙ্গা মুসলমান শরণার্থীদের ‘গুলি করা’ উচিত বলে মন্তব্য করা সিংয়ের পোস্টগুলিকে তুলে ধরেছে। একই সূত্র অনুসারে, ভারতীয় ফেসবুকের জননীতি বিষয়ক প্রধান আঁখি দাসের বিরোধিতার কারণে এই পোস্টগুলি সরানো হয়নি।
দাস অভিযুক্ত সিংকে ফেসবুকের জন্যে ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি’ মানতে নারাজ ছিলেন। তিনি যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দলের রাজনীতিবিদদের লঙ্ঘনগুলো চিহ্নিত হলে তা কোম্পানিটির দেশীয় ব্যবসায়িক স্বার্থকে ক্ষতি করতে পারে।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সংস্থাটি তাদের মঞ্চে সহিংসতা ও বিস্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারের মাধ্যমে শাসক দলের পক্ষে কথিত পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে ভারতীয় বিরোধী দলগুলির তীব্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশের পরে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে সিংকে নিষিদ্ধ করেছিল। রাজনীতিবিদটিকে তাদের মঞ্চে নিষিদ্ধ করতে দেরী করার কথা ব্যাখ্যা করে ফেসবুক সিএনএনকে বলেছে, ‘সম্ভাব্য লঙ্ঘনকারীকে মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটি ব্যাপক। আর এটিই আমাদেরকে তার অ্যাকাউন্ট অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়েছে।‘
তবে সিং দাবি করেছেন যে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে তার কোন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই এবং তাই তাকে নিষিদ্ধ করার কোন প্রশ্নই আসে না। সিং আরো জানিয়েছেন যে ৮ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে তার প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাচাইকৃত ফেসবুক পৃষ্ঠাটি হ্যাক হয়েছে জানিয়ে তিনি এই রাজ্যের সাইবার ক্রাইম বিভাগে একটি চিঠি লিখেছিলেন।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার কাছে একটি বিবৃতিতে ভারতীয় ফেসবুকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত মোহন বলেছেন কোন প্রকারের বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে সংস্থাটি মুনাফা অর্জন করে না। তিনি আরো যোগ করেন যে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য থেকে উপকৃত হওয়ার মতো কোন জায়গা নেই এবং ফেসবুক তার সম্প্রদায়গত মান প্রয়োগের জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করে। আঁখি দাসের ভূমিকার বিষয়ে মোহন একটি ব্যাখ্যা প্রদানেরও চেষ্টা করেন। তিনি বলেন যে দাস বিষয়বস্তুগত নীতি্র দল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং স্বতন্ত্র একটি সর্বজনীন নীতি দলকে নেতৃত্ব দেন। এর সাথে তিনি আরও বলেন যে এই নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ভারতের জননীতি দলটি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কেউ নয়।
২ সেপ্টেম্বর তারিখে মোহন “নাগরিকদের অধিকার সুরক্ষা” এবং “মঞ্চের অপব্যবহার” সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব প্রদানের জন্যে কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন ভারতের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনেও হাজির হন।
ফেসবুকও নয়াদিল্লির আইনসভার একটি তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে। সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চে বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ভূমিকা এবং দিল্লির দাঙ্গার সাথে এর যোগসূত্র অনুসন্ধানের জন্যে নয়াদিল্লির সরকা্রি কমিটিটি গঠিত হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দৈত্যটি অবশ্য ইতোমধ্যে দেশের সংসদীয় প্যানেলের সামনে উপস্থিত হয়েছে এবং প্রযুক্তি দৈত্যটির নিয়ন্ত্রণ কেবলমাত্র শুধু ‘ভারতীয় ইউনিয়নের একচেটিয়া কর্তৃত্ব’ এর অধীনে পড়ে এই অজুহাতে বিধানসভায় উপস্থিত হওয়ার হাত থেকে ছাড় পাওয়ার জন্যে ভারতীয় সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল।
এদিকে, প্রযুক্তি দৈত্যটির ভারতীয় নেতৃত্ব খতিয়ে দেখার দাবিটিও ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে মঞ্চ প্রদান করে এটি (ভারতীয় অংশটি) আসলেই লাভবান হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখার জন্যে ফেসবুক উচ্চ-স্তরের কোন তদন্ত স্থাপন করেছে কিনা তার কোন প্রমাণ জনসমক্ষে নেই।
1 টি মন্তব্য
আপনার লেখাটি আমার কাছে অতান্ত মূল্যবান।
অনেক সুন্দর ভাবে লিখছেন।
নিউজ সাইট নিয়ে বিস্তারিত A-Z জানতে এখানে দেখুন-
https://www.tunes71.com/2021/01/News%20portal%20site.html?m=1