- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চীনের রং-ভিত্তিক করোনা ট্র্যাকিং ব্যবস্থা হংকংয়ে আসতে যাচ্ছে?

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, চীন, হং কং (চীন), নাগরিক মাধ্যম, প্রযুক্তি, মানবাধিকার, রাজনীতি, স্বাস্থ্য, কোভিড ১৯, জিভি এডভোকেসী
[1]

স্ট্যান্ড নিউজ থেকে ছবি নেয়া হয়েছে। অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে।

২৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে পোস্টটি আপডেট করা হয়েছে

হংকংয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। আর তাই আগস্ট মাসের মধ্যে শহরের সব লোকের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বেইজিং অনুসারী রাজনীতিবিদরা পরীক্ষার ফলাফল তিন রংয়ের স্বাস্থ্য কোড ব্যবস্থা ব্যবহারের জন্য চাপ [2]দিচ্ছেন।

রং-ভিত্তিক করোনা ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চীনের মূল ভূখণ্ডের বিভিন্ন শহরে চালু রয়েছে। যেখানে করোনা পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে নাগরিকদেরকে কিউআর কোড দেয়া হয়। যেসব নাগরিকের করোনা পরীক্ষা ফলাফল নেগেটেভ এসেছে, তারা তাদের মোবাইল ফোনে সবুজ কোড পান। যা তাদের সামাজিক বিধিনিষেধগুলো বাইপাস করে রেস্তরার মতো জায়গায় যাওয়ার সুযোগ দেয়।

রং-ভিত্তিক ব্যবস্থার প্রস্তাবনায় হংকংয়ে গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে [3]। অনেকে আশংকা করছেন, সরকারি কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে ব্যক্তির গতিবিধি ট্র্যাক করে রাজনৈতিক কারণে তাদের চলাচল সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে।

তবে এটার বাস্তবায়ন নিয়ে হংকংয়ে বিতর্ক চললেও বেইজিংয়ের সহায়তায় সরকার ৭.৫ মিলিয়ন হংকংবাসীর সার্বজনীন পরীক্ষার কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীর পরীক্ষার কাজ চালানোর জন্য চীন ইতোমধ্যে ৬০ জনের চিকিৎসক দল [4] পাঠিয়েছে। আর এ কাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। সরকার আশা করছে, এ মাসের মধ্যে ৫ মিলিয়নের মতো মানুষ [5] স্বেচ্ছায় পরীক্ষা করবেন।

যদিও হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী দল জনগণকে এই পরীক্ষা বয়কট করার আহ্বান [6] জানিয়েছে।

মূল চীনের তিনটি গবেষণাগারে পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াধীন হওয়ার কারণে নজরদারির আশংকা আরো গভীর হয়েছে। কিছু কিছু অ্যাক্টিভিস্টের যুক্তি, চীন সরকার এই সুযোগে হংকংয়ের সকল নাগরিকের ডিএনএ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে পারে। এটি অনেকটা জিনজিয়াংয়ের মতো [7]পদক্ষেপ হবে।

অ্যাক্টিভিস্ট যশোয়া ওয়াং টুইটারে লিখেছেন:

চীনের তিনটি গবেষণাগার শহরজুড়ে করোনা পরীক্ষার কাজ করবে। এর একটি ইতোমধ্যে উইঘুরদের ডিএনএ কালেকশনের দায়ে অভিযুক্ত।

হংকংয়ের সরকার যথাযথ দরপত্র প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই শহরজুড়ে করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। ক্যারি লাম এই প্রজেক্টের জন্য সরাসরি ১৫০ মিলিয়ন হংকং ডলার পেয়েছেন।

আইনবিদ এডি চু লিখেছেন:

মহামারী বিরোধী স্বাস্থ্য কোডের নামে সিসিপি এই সময়ে হংকংয়ে হস্তক্ষেপমূলক সামাজিক নজরদারি ব্যবস্থা স্থাপনের সুযোগ নিচ্ছে। এটি সিসিপিকে কোনো ব্যক্তির অবস্থান সনাক্ত, চলাচলের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করা, সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম চালু এবং অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম করবে।

হংকং সরকার বলছে [4], মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যে ল্যাবগুলির প্রবেশাধিকার থাকবে না। তাছাড়া সার্বজনীন পরীক্ষার ফলাফল ভবিষ্যতের স্বাস্থ্য কোড ব্যবস্থার সাথে একীকরণের ইচ্ছে কর্তৃপক্ষের নেই [16] বলেও উল্লেখ করেছে।

এদিকে নজরদারি উদ্বেগের পাশাপাশি স্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ভাইরাসের বিস্তার রোধে অন-অফ ইউনিভার্সাল টেস্টের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন [2]গবেষণায় দেখা গেছে [17], কোনো ব্যক্তির যদি সংক্রমণের সাথে সাথেই পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা করা হয়, তাহলে নেগেটিভ ফলাফল আসতে পারে।

দ্য স্ট্যান্ডার্ডের সাথে এক সাক্ষাৎকারে মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ হো পাক লেউং জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য কোড ব্যবস্থা কার্যকর করার জন্য সার্বজনীন পরীক্ষা প্রতি সপ্তাহে করাতে হবে। যেটা আসলে খুবই ব্যয়বহুল।

রং-ভিত্তিক ব্যবস্থা

হংকং গ্লোবাল কানেক্ট নামের একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ চীনের মূল ভূখণ্ডে স্বাস্থ্য কোড ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে, এক দীর্ঘ টুইটার বার্তায় [18] তুলে ধরেছে।

কোনো নির্দিষ্ট এলাকার সব নাগরিকের করোনা পরীক্ষার পর প্রতিটি ব্যক্তির মোবাইল ফোনে একটি কিউআর কোড দেয়া হয়। কিউআর কোডে সবুজ, হলুদ, লাল এই তিনটি রংয়ের যেকোনো একটি রং থাকে [19]

যেসব নাগরিক হলুদ কিংবা লাল রং পেয়েছেন, তারা জনসমাগম আছে এমন জায়গায় যেতে পারেন না, সরকারি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন না। খাবারের দোকান, শপিং মলে ঢুকতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কিউআর কোড স্ক্র্যান করে ঢুকতে হয়।

রং দেয়ার যে মানদণ্ড তা সাধারণ অনেক মানুষের কাছে পরিষ্কার নয়। ব্যাখ্যা ছাড়াই লাল এবং হলুদ কোড দেয়া হয়েছে, এমন রিপোর্টও পাওয়া গেছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণে [19]দেখা গেছে, মোবাইল অ্যাপটি ব্যক্তির চলাচল এবং অবস্থান পুলিশের সাথে শেয়ার করেছে।

চীনে স্বাস্থ্য কোড ব্যবস্থা একটি এপিআইয়ের মাধ্যমে আলিপে অ্যাপে হোস্ট করা হয়েছে। ঝিমা ক্রেডিট যা সিসেমি ক্রেডিট নামেই বেশি পরিচিত তার পিছনেও আলিপে রয়েছে। উল্লেখ্য, সিসেমি ক্রেডিট হলো একটি প্রাইভেট ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্ট টুল। এটিকে চীনের সোশ্যাল ক্রেডিট ব্যবস্থার [20] অ্যালগরিদমের অংশ বলে মনে করা হয়। এর মাধ্যমে ‘খারাপ’ নাগরিকদের শাস্তি এবং ‘ভালো’ নাগরিকদের পুরস্কৃত করা হয়।

সোশ্যাল ক্রেডিট অ্যালগরিদমে ব্যবহৃত তথ্য আসে নাগরিকদের আর্থিক ও অপরাধমূলক রেকর্ড থেকে। পাশাপাশি রাস্তা পারাপার, যেখানে সেখানে প্রস্রাবের (এমনকি অনলাইনে আচরণ) মতো ছোটখাট অপরাধগুলোও থেকে আসে। ২০১৫ সালে পিপলস ব্যাংক অব চায়না আটটি সংস্থাকে সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম চালু করার জন্য নিবন্ধন [21] দেয়। এর মধ্যে আলিপেও ছিল। উল্লেখ্য, আলিপে’র মালিক চীনের টেক জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত আলিবাবার সহযোগী সংস্থা অ্যান্ট ফিন্যান্স।

সংশোধন: এই নিবন্ধের পূর্ববর্তী সংস্করণে ভুলভাবে আলিপে চীনের মূল ভূখণ্ডে স্বাস্থ্য কোড ব্যবস্থা চালায় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এছাড়াও পূর্ববর্তী সংস্করণে ভুলভাবে সিসেমি ক্রেডিট চীনের সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম-এর উপাদান বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি প্রাইভেট ক্রেডিট অ্যাসেসমেন্ট ব্যবস্থা, যা কেবলমাত্র সরকারি কর্তৃপক্ষই ব্যবহার করতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। ২৩ আগস্ট ২০২০ তারিখে নিবন্ধটি সংশোধন করা হয়েছে।.