
সাজিদ হুসেইন (৩৯) বেলুচিস্তানের বাসিন্দা একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ছিলেন। বেলুচিস্তান টাইমসের ইউটিউব থেকে নেয়া স্ক্রিনশট।
২৩ এপ্রিল তারিখে উপসালা শহরের বাইরের একটি নদীতে তার লাশ পাওয়া যাওয়ার পরে বালুচ সাংবাদিক সাজিদ হুসেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়। পুলিশ জানিয়েছে যে তাদের প্রাথমিক তদন্তে ‘অপরাধমূলক বা মারাত্মক কোন কিছু’ পাওয়া না গেলেও তারা তদন্ত চালিয়ে যাবে এবং ময়না তদন্তের আরো ফলাফল আশা করছে। তবে বালুচ এবং পাকিস্তানি রাজনৈতিক কর্মীরা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দিকে আঙুল তুলছে।
‘দুঃসংবাদ’
সুইডেনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ৩৯ বছর বয়সী হুসেইন ২ মার্চ তারিখে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে সুইডেনের পুলিশ তাকে মৃত ঘোষণা করে। ২৩ এপ্রিল তারিখে পুলিশ তার মৃতদেহটি খুঁজে পাওয়ার পর সম্প্রতি তার আঙ্গুলের ছাপগুলি মেলাতে পেরে ১ মে, ২০২০, শুক্রবার তার পরিবার ও সহকর্মীদের কাছে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।
Thread:
Hussain, aged 39, was pronounced dead by the Swedish Police after he went missing on March 2nd from Sweden where he was living in self-imposed-exile. The police found his dead body on April 23 and were recently able to match his finger prints, confirming his death to his family and colleagues on Friday, May 1, 2020. 1— Zia Ur Rehman (@zalmayzia) May 1, 2020
আলোচনা সূত্র:
আমাদের ভার্সিটির বন্ধু এবং সহযোদ্ধা সাংবাদিক #সাজিদহুসেইন এর মৃতদেহটি আজ সুইডেনে পাওয়া গেছে। দ্য নিউজ-এ প্রকাশিত #বেলুচিস্তান সম্পর্কে প্রকাশিত তার (অনেকগুলির মধ্যে) কয়েকটি বিস্ফোরক সাংবাদিকতামূলক কাজ ভাগাভাগি করছে যা তাকে সমস্যায় ফেলেছে।
মৃত্যুর আগে হুসেইন পাকিস্তানে বর্তমানে অবরুদ্ধ একটি সংবাদ ওয়েবসাইট দি বেলুচিস্তান টাইমস এর সম্পাদক ছিলেন। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির মতে, পাকিস্তান সরকার বেলুচিস্তানের ওয়েবসাইট এবং তথ্যগুলিকে নিয়মিতভাবে অবরুদ্ধ করে।
বেলুচিস্তান টাইমস তার সম্পাদকের মৃত্যুর উপর তার গল্পের স্ক্রিনশট টুইট করেছে:
Screenshots of the sad news for those who can’t access our website from Pakistan
Sajid Hussain found dead pic.twitter.com/Fyb5Igp1hq
— Balochistan Times (@BaluchistanTime) May 1, 2020
যারা পাকিস্তান থেকে আমাদের ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারছেন না তাদের জন্যে দুঃখজনক সংবাদটির স্ক্রিনশট
সাজিদ হুসেইনকে মৃত পাওয়া গেছে
সাজিদের সাথে এর আগে কাজ করা রয়টার্স পাকিস্তানের ব্যুরো প্রধান জিবরান পেশইমাম বেলুচিস্তানে সাজিদের বিয়ের একটি পুরানো ছবি টুইট করেছেন।
Sajid. My friend.
Not like this… https://t.co/le5dFowgeC— Gibran Peshimam (@gibranp) May 1, 2020
সাজিদ। আমার বন্ধু।
এরকম (চলে যাওয়া) নয়…
বেলুচিস্তানের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ২০১৪ সালে এই অঞ্চলে বলপূর্বক নিখোঁজের বিরুদ্ধে কোয়েটা থেকে রাজধানী ইসলামাবাদ পর্যন্ত ২০০০+ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া মামা কাদির টুইট করেছেন:
It is a sad news for us, renowned Journalist Sajid Hussain, the chief editor of @BaluchistanTime is no more among us.
His dead body was discovered from a river in Uppsala, Sweden.
The unfortunate death of Sajid left a vacuum in Baloch Society which will take years to be filled. pic.twitter.com/PkCcL9fTCJ— Mama Qadeer Baloch (@QadeerMama) May 1, 2020
আমাদের জন্যে দুঃখজনক একটি সংবাদ হলো @বেলুচিস্তান টাইমস এর প্রধান সম্পাদক প্রখ্যাত সাংবাদিক সাজিদ হুসেইন আমাদের মধ্যে আর নেই।
সুইডেনের উপসালার একটি নদী থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
সাজিদের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুতে বালুচ সমাজে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণ হতে কয়েক বছর সময় লাগবে।
হুসেইনের কি হয়েছিল?
হুসেইন ১৯৪৭ সাল থেকে ৬টিরও বেশি গণঅভ্যুত্থান দেখা পাকিস্তানের একটি সংঘাতময় অঞ্চল বেলুচিস্তানের একজন তরুন ও উজ্জ্বল সাংবাদিক। দশকের পর দশক ধরে বালুচ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন “সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে একটি স্বাধীন বেলুচিস্তান রাষ্ট্র গঠন”সহ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসনের জন্যে লড়াই করে আসছে। এই অঞ্চলের ভিন্নমতাবলম্বী কণ্ঠস্বর এবং তরুণ বুদ্ধিজীবীরা বলপূর্বক অন্তর্ধান, নির্যাতন এমনকি হত্যার শিকার পর্যন্ত হচ্ছে। অন্যান্যরাও নির্বাসনে যেতে বাধ্য হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকে বেলুচিস্তানের শত শত “নিখোঁজ জনগণের” মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে, জানিয়েছে পাকিস্তানের মানবাধিকার কমিশন (এইচআরসিপি)। শুধু ২০১৩ সালেই প্রদেশটি জুড়ে পাওয়া ১১৬টি মরদেহের মধ্যে পরিবারগুলির চিহ্নিত করা ৮৭টির ক্ষেত্রে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীগুলিকে তাদের প্রিয়জনদের অপহরণের জন্যে অভিযোগ করা হয়েছে।
গুপ্তচর সংস্থাগুলির মতো করে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তার ল্যাপটপ এবং নোটগুলি চুরি করার পরে ২০১২ সালে পাকিস্তান ত্যাগ করেছিলেন হুসেইন। তারপরে তিনি ২০১৩ সালে সুইডেনে শরণার্থী মর্যাদার জন্যে আবেদন করার আগে তার নিরাপত্তার জন্যে ওমান, সেখান থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে উগান্ডায় চলে যান। তার স্ত্রী এবং দুই বাচ্চা এই গ্রীষ্মে তার সাথে যোগ দিয়ে পুনরায় একত্রিত হওয়ার কথা ছিল।
তিনি তার জীবনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে স্টকহোম থেকে উপসালায় চলে গিয়েছিলেন। ২ মার্চ তারিখে স্টকহোম থেকে উপসালার ট্রেনে চড়ার সময় তাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল।
সাংবাদিক নিখোঁজ হওয়ার পরে সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক (আরএসএফ) তার নিখোঁজের জন্যে দেশের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের দিকে আঙুল তুলেছিল। আরএসএফের সুইডিশ বিভাগের সভাপতি এরিক হালকজার ৩০ মার্চ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইউরোপে অন্যান্য পাকিস্তানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক হামলা ও হয়রানির কথা বিবেচনা করে তার নিখোঁজের কারণই যে তার কাজ আমরা এই সম্ভাবনার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারি না।”
“তিনি বিদেশে চলে যাওয়ার পর আমরা স্বস্তি পেয়েছিলাম যে অন্তত তিনি নিরাপদে থাকবেন,” তার সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে তার ভাই ওয়াসিফ খলিল বলেছেন। কিন্তু বাস্তবতাটি তা ছিল না।
নির্বাসিত ভিন্নমতাবলম্বীরা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত
হুসেইনের কী ঘটেছিল তা নিয়ে একটি রহস্য থেকে গেলেও বালুচ এবং পাকিস্তানি রাজনৈতিক কর্মীরা এর আগেও বিদেশে বসবাসকারী ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার দায়ে অভিযুক্ত সামরিক বাহিনীর দিকেই আঙুল তুলছেন।
নির্বাসনে থাকা পাকিস্তানি সাংবাদিক নিরাপদ_সংবাদ_কক্ষ.অর্গ এর প্রতিষ্ঠাতা তাহা সিদ্দিকী বলেছেন:
অতীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বিদেশে নির্বাসিত লোকদের হত্যার যে ধারণা দিয়েছিল তারা এখন সেই পরিকল্পনা কার্যকর করছে বলে মনে হচ্ছে। এরা সৌদি, চীনা, তুর্কি এবং রুশদের পদ্ধতি অনুসরণ করছে। তারা তাদের ভিন্নমতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে পশ্চিমে বসেই এসব করে চলেছে। আমি আশা করি সুইডিশ পুলিশ এটা সমাধান করতে পারবে। তবে আগ্রাসী গোয়েন্দা সংস্থাগুলি সাধারণত কোন চিহ্ন ছাড়াই কাজ করে। নির্বাসিত সাংবাদিক হওয়ায় পশ্চিমা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি আমাকেও ফ্রান্সে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে।
সিদ্দিকী খুব অল্পের জন্যেই ২০১৮ সালে অপহরণ থেকে বেঁচে গেছেন এবং এই অপহরণ প্রচেষ্টাটির জন্যে পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা (আইএসআই) কে দোষারোপ করেছেন। সেই আক্রমণের অব্যবহিত পরই তিনি দেশ ত্যাগ করেন। ফ্রান্সে তার জীবনের বিরুদ্ধে মারাত্মক হুমকির কথা ফরাসী পুলিশ তাকে জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি রাজনৈতিক কর্মী এবং ইউরোপে বসবাসকারী ব্লগাররাও দাবি করেছে যে পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি আরএসএফ প্রতিবেদনে তিন বছর আগে পাকিস্তানে অবস্থানকালে অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার রটারডামভিত্তিক পাকিস্তানি ব্লগার ওয়াক্কাস গোরায়াকে দুইজন সম্ভাব্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মীর আক্রমণ ও হুমকি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নির্বাসনে থাকা ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যার কথা উল্লেখ করা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জেনারেল পারভেজ মোশাররফের একটি পুরানো সাক্ষাৎকার টুইটারে আবার প্রকাশ পেয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে মোশাররফ ‘চিকিৎসার জন্যে‘ বসবাস করা অবস্থায় ২০১৭ সালে দুবাইতে এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়েছিল, যেখানে চিকিৎসা করার জন্যে ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রথম কোন জেনারেল হিসেবে মোশাররফ মৃত্যুদণ্ডে দন্ডিত হয়েছিলেন। একটি বিশেষ আদালত ২০০৭ সালের নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সংবিধান স্থগিত করার জন্যে বিশ্বাসঘাতক ঘোষণা করে তাকে এই শস্তি দেয়। কিন্তু তারপরেও তিনি বর্তমান পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে সমর্থন ধরে রেখেছেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে লাহোরের উচ্চ আদালত তার সাজা বাতিল করে দেয়।
বালুচ শিক্ষার্থী সংস্থার সভাপতি ড. আল্লাহ নজর বালুচ সাক্ষাৎকারটির সূত্র এবং ভিডিওটি দিয়েছেন:
The death of Sajid Hussain is a huge loss for Baloch nation and journalism. Swedish authorities must trace all the links behind his two month’s disappearance that lead to his untimely death. Musharraf's words should be included & analyzed in the investigation. @SweMFA pic.twitter.com/LaHvZ5g5YI
— Dr Allah Nizar Baloch (@AllahNizarNizar) May 1, 2020
সাজিদ হুসেনের মৃত্যু বালুচ জাতি এবং সাংবাদিকতার জন্যে একটি বিশাল ক্ষতি। সুইডিশ কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অকাল মৃত্যু ডেকে আনা তার এই দুইমাস অন্তর্ধানের পিছনে থাকা সব সংযোগ সন্ধান করতে হবে। তদন্তে মোশাররফের কথা অন্তর্ভুক্ত করে বিশ্লেষণ করা উচিৎ @সুইএমএফএ
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া বেলুচিস্তানের সাংবাদিক মালিক সিরাজ আকবর একটি মর্মস্পর্শী শ্রদ্ধাঞ্জলি লিখে শরণার্থীদের দুর্দশা তুলে ধরেছেন:
সাজিদের ঘটনাটি শরণার্থীদের নিজ দেশের সাথে সম্পর্কের মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। লোকজন রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্যে আবেদন করার মানে এই নয় যে তারা তাদের দেশকে ঘৃণা করে বা সেখানে কোন অপরাধ করে এসেছে। তাদের সরকার তাদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেই তারা চলে এসেছে। তাদের জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে তারা নির্যাতনের সম্মুখীন
আরএসএফের ২০২০ সালের বিশ্ব প্রেস স্বাধীনতা সূচকের ১৮০ টি দেশের মধ্যে পাকিস্তান তিন ধাপ নেমে ১৪৫তম অবস্থানে এসেছে। আরএসএফের মতে গণমাধ্যম এখন “সামরিক স্থাপনার বুড়ো আঙ্গুলের নীচে।“ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বাক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর সামরিক বাহিনীর প্রভাব নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।