কিও লেন সম্পাদিত এই নিবন্ধটি অলাভজনক গণযোগাযোগ মাধ্যম, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতি সংস্থা এনগেজমিডিয়া থেকে এসেছে। বিষয়বস্তু ভাগাভাগি করে নেওয়ার চুক্তির অংশ হিসেবে এই গল্পটি গ্লোবাল ভয়েসেসে পুনঃপ্রকাশ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজটি দেখুন।
বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারী সম্পর্কিত তথ্যের প্রাথমিক উৎস হলো ইন্টারনেট। তবে পশ্চিম মিয়ানমারে আরাকানে (আনুষ্ঠানিকভাবে রাখাইন রাজ্য নামে পরিচিত) এখন বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ ইন্টারনেট বন্ধ চলছে। আরাকান খুব দুর্বল স্বাস্থ্য অবকাঠামো বিশিষ্ট মিয়ানমারের দ্বিতীয় দরিদ্রতম অঞ্চল। ইন্টারনেট অবরোধটিও সেখানে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত তথ্য এবং জ্ঞানের অভাব ঘটিয়েছে।
উত্তর আরাকানের চারটি জনপদে ২০১৯ সালের ২১ জুন প্রথম ইন্টারনেট বন্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়। প্রতিবেশী চিন রাজ্যের একটিসহ আরো পাঁচটি জনপদে বন্ধ হয় ২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে। এর মানে হলো প্রথম চারটি অঞ্চল ৩৩০ দিন ধরে ইন্টারনেট নেই এবং পরবর্তী শহরতলীগুলিতে নেই প্রায় ১০০ দিন ধরে।
এই বন্ধের জন্যে সরকার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ এবং এলাকায় সংঘাতের কারণে অস্থিতিশীলতার মতো বিভিন্ন সব কারণ দেখিয়েছে। এগুলির কোনটিই যৌক্তিক নয়।
আরাকানের পরিস্থিতি
বিশ্ব এখন কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করলেও উত্তর আরাকানের এক কোটিরও বেশি মানুষ সরকারের অবহেলার শিকার। ১৯ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত মিয়ানমারে করোনা ভাইরাস জনিত ১০৭টি নিশ্চিত ঘটনা এবং পাঁচটি মৃত্যু নিবন্ধিত হয়েছে। মিয়ানমার সরকার আরাকানের কোন ঘটনার ঘোষণা দেয়নি। তবে জাতীয় এই পরিসংখ্যানটি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে আরাকানের সাথে বাংলাদেশের একটি সীমান্ত রয়েছে, যে দেশে একই তারিখের মধ্যে ৯১ জনের মৃত্যু এবং ২,৪৫৬টি নিশ্চিত ঘটনা রয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনা না করলে আরাকান সীমান্তবর্তী অঞ্চল স্থানীয়ভাবে সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সুপারিশকৃত একটি বৈশ্বিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পর সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সেনাবাহিনী এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও তাদের সাথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি সশস্ত্র সংঘাত অব্যাহত থাকায় আরাকানের পরিস্থিতিটি আলাদা রকমের। কিছু কিছু বিশ্লেষক আরাকানে সামরিক সুবিধা নেওয়ার উদ্দেশ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান পরিচালনা আরো বেশি নিরীহ বেসামরিক মৃত্যুর কারণ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে। ২০২০ সালের জানুয়ারির শুরু থেকে ১৫ এপ্রিল তারিখের মধ্যে আরাকান তথ্য কেন্দ্র ৩৭৭টি বেসামরিক মৃত্যু, আহত বা নিখোঁজ হওয়ার খবর দিয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ফলে এই অঞ্চলে প্রায় দুই লক্ষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি (আইডিপি) রয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ভালভাবে নির্মিত কোন আশ্রয় এবং সুব্যবস্থিত খাদ্য বণ্টন ছাড়াই আশ্রয় শিবিরে বসবাস করছে। আইডিপি শিবিরগুলিতে সামাজিক দূরত্ব, জলের সহজলভ্যতা এবং কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্যের অভাবের মতো কারণগুলি এই অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের একটি প্রাদুর্ভাব রোধ করা কঠিন করে তুলেছে।
দুর্ভাগ্যক্রমে এখানে কোভিড-১৯ এর চেয়েও বেসামরিক লক্ষ্যগুলিতে সামরিক আক্রমণ মানুষকে আরো বেশি ভীত-সন্ত্রস্ত করে তোলে। দেখে মনে হচ্ছে যে মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনী এই অঞ্চলে কোভিড-১৯ এর চেয়ে আরাকান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতেই বেশি আগ্রহী। তবে ইন্টারনেট বন্ধ, আইডিপি শিবিরগুলির দুর্দশা এবং একটি চলমান সশস্ত্র সংঘাত – এই তিন মাত্রার চ্যালেঞ্জ আরাকানের পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে, কোভিড-১৯ এখানে মারাত্মকভাবে আঘাত করতে পারে।
আমার বার্তা: “যুদ্ধ ও ইন্টারনেট বন্ধের অবসান করুন”
বিশ্ব জুড়ে মহামারী চলার সময় আরাকানে কোভিড-১৯ মোকাবেলার জন্যে আমাদের যুদ্ধ ও ইন্টারনেট বন্ধের অবসান করা দরকার।
পুলিশের অনুসন্ধান থেকে লুকিয়ে থাকলেও আমি বর্তমানে কণ্ঠ তোলা লোকদের একজন। ২০২০ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইয়াঙ্গুনে আরাকানের সংঘাত-আক্রান্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট বন্ধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে আমি শিক্ষার্থীদের ‘ইউনিয়নগুলি'কে নেতৃত্ব দিয়েছি। বিচারে দোষী সাব্যস্ত হলে আমার এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড হতে পারে।
তবে এটা শুধু আমার পরিস্থিতি। আরো গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টির দিকে মনোযোগ দিতে হবে সেটি হলো কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করা। আমরা যুদ্ধ এবং ইন্টারনেট বন্ধের অবসান না ঘটালে আরাকানের দশ লক্ষেরও বেশি মানুষ এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকিতে থাকবে।
সুতরাং আসুন আমরা বলি: আরাকানে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে যুদ্ধ ও ইন্টারনেট বন্ধের অবসান করুন। আপনার অংশগ্রহণ আমাদের শক্তি। আপনার মনোযোগ আমাদের সাহস। আপনাদের কণ্ঠস্বরই আমাদের প্রেরণা।