অবরুদ্ধ ওয়েবসাইট, ইন্টারনেট বন্ধ ও গণমাধ্যমে গ্রেপ্তার মিয়ানমারে বাক স্বাধীনতাকে হ্রাস করছে

নারিনজারা সংবাদের ওয়েবপৃষ্ঠার স্ক্রিনশট। টেলিনর থেকে পাওয়া।

কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজটি দেখুন।

মিয়ানমারের পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় চারটি বড় টেলিযোগাযোগ সেবা সরবরাহকারীকে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারি প্রচারণার মধ্যে ভ্রান্ত তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে বলে কথিত ওয়েবসাইটগুলিকে অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। ৩০ মার্চ, ২০২০ তারিখে টেলিযোগাযোগ সংস্থা টেলিনর নিশ্চিত করেছে যে এটি মোট ২২১টি ওয়েবসাইট অবরোধ করার মাধ্যমে এই আদেশের সাথে সঙ্গতি বিধান করেছে।

কোন কোন ওয়েবসাইট এই আদেশের অন্তর্ভুক্ত সেটা প্রকাশ করা না হলেও অনেক গোষ্ঠী উল্লেখ করেছে যে অবরুদ্ধ ওয়েবসাইটের তালিকায় প্রাপ্তবয়স্ক বিনোদনের বিভিন্ন পৃষ্ঠা, অনির্দিষ্টভাবে কথিত বিভিন্ন “ভূয়া সংবাদ” সাইট ছাড়াও নিবন্ধিত জাতিগত গণমাধ্যম সংস্থার বিভিন্ন ওয়েবসাইটও রয়েছে।

মিয়ানমারের ২৫০টি নাগরিক সমাজ সংগঠনের একটি জোট একটি বক্তব্য প্রকাশের মাধ্যমে সরকারের কর্মকাণ্ডগুলিকে বেআইনী এবং বাক স্বাধীনতা রক্ষার আন্তর্জাতিক মানের পরিপন্থী বলে ঘোষণা করেছে। আন্তর্জাতিক জাতিগত গণমাধ্যম গ্রুপগুলির একটি জোট বার্মা আন্তর্জাতিক সংবাদও ক্ষমতাসীন জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগকে অবিলম্বে আইনত নিবন্ধিত জাতিগত গণমাধ্যম ওয়েবসাইটগুলিকে অবরোধমুক্ত করতে বলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এছাড়াও গণমাধ্যম গোষ্ঠীগুলি আরও উল্লেখ করেছে যে সরকার শক্ত হাতে বাক-স্বাধীনতা দমনের জন্যে ধারাবাহিকভাবে কুখ্যাত টেলিযোগাযোগ আইনকে ব্যবহার করে আসছে।

ইন্টারনেট বন্ধ এবং বাকস্বাধীনতা ওপর আক্রমণ

অবরুদ্ধ হওয়া অনেকের মধ্যে থাকা ইতোমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও রাখাইন জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সেনাবাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত চলতে থাকা রাখাইন রাজ্য-ভিত্তিক দুটি উল্লেখযোগ্য সংবাদ মাধ্যম নারিনজারা এবং উন্নয়ন গণমাধ্যম গোষ্ঠী (ডিএমজি) রয়েছে যেখানে গত নয় মাস ধরে ইন্টারনেট নিষিদ্ধ রয়েছে।

বেশ কয়েকটি নাগরিক সমাজ গোষ্ঠীর জারি করা একটি বিবৃতিতে এই অঞ্চলে অব্যাহত সংবাদ ওয়েবসাইট অবরোধ এবং ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞাকে একটি নিপীড়নমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়েছে এটি জনগণকে তথ্যে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে:

আমরা উদ্বেগসহ আরো উল্লেখ করছি যে রাখাইন ও চিন রাজ্যের ৯টি জনপদকে প্রভাবিত করে ৯ মাসব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধের পাশাপাশি  রাখাইন রাজ্যের স্বাধীন গণমাধ্যম ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবরোধ এই অঞ্চলে জনগণের তথ্য এবং বাক স্বাধীনতার অধিকারের উপর বিধিনিষেধগুলিকে জটিলতর করে তুলছে। […] এই অঞ্চলগুলিতে কর্মরত সংবাদসংস্থাগুলির ওয়েবসাইট অবরোধ করা কর্তৃত্ববাদীদের মতো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক রূপান্তর এবং অঞ্চলগুলির উন্নয়নের মৌলিক অধিকার – তথ্যে প্রবেশাধিকার লঙ্ঘন।

সক্রিয়কর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি বলেছে  যে রাখাইন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সংঘটিত  নৃশংসতা আড়াল করতে সরকার করোনভাইরাস সংকট ব্যবহার করছে। তারা কোভিড-১৯ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নামে বাক স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করা নিয়েও উদ্বিগ্ন:

আমরা কোভিড-১৯ মহামারীর সুযোগ নিয়ে সরকারের বৈধ তথ্য সেন্সর এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা হ্রাস করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।

ফেসবুকে রাখাইনের একজন শিল্পী নি খাইন থুয়ি কোভিড -১৯ সংকটের মধ্যে রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘন চিত্রিত করে এই কার্টুনগুলি প্রকাশ করেছেন:

শিল্পী নি খাইন থুয়ির কার্টুন। উৎস: শিল্পীর ফেসবুক পৃষ্ঠা, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

শিল্পী নি খাইন থুয়ির কার্টুন। উৎস: শিল্পীর ফেসবুক পৃষ্ঠা, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

৩ এপ্রিল, ২০২০ তারিখ পর্যন্ত দেশে মোট ২০ জন কোভিড-১৯ রোগী রয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়

বিদ্রোহীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্যে সম্পাদক অভিযুক্ত

৩০ মার্চ তারিখে মিয়ানমারের কণ্ঠস্বর ওয়েবসাইটের সম্পাদক নে মায়ো লিনকে কিছুদিন আগে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষিত আরাকান সেনাবাহিনীর একজন প্রতিনিধির সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্যে গ্রেপ্তার এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে

সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক (আরএসএফ) কর্তৃপক্ষকে মামলাটি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে:

আমরা এই সাংবাদিক আটকের নির্দেশ প্রদানকারী বিচারক কিউ সোয়া লিনকে এই সম্পূর্ণ অবাস্তব এবং অস্বচ্ছ সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ার জন্যে অনুরোধ করছি। নে মায়ো লিন পুরোপুরি সাংবাদিকতার নৈতিকতা মেনেই রাখাইনে রাজ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের অবসানকল্পে প্রয়োজনীয় আলোচনা পুনরায় চালু করতে সহায়তা করার জনস্বার্থে এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছিলেন।

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .