কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব সম্পর্কে গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজটি দেখুন।
ভারত দেশব্যাপী লকডাউন ছাড়াও তাদের কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করার মতো প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। ২ এপ্রিল সরকার তার কোভিড-১৯ মোবাইল অনুসরণকারী ব্যবহারিক সফটওয়্যার (অ্যাপ) আরোগ্য সেতু চালু করেছে। ব্যবহারকারীদেরকে ছয় ফুট দূরে থাকা করোনা ভাইরাস সংক্রমিত ব্যক্তি সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া অ্যাপটি সম্ভাব্য ডিজিটাল সুরক্ষার বিষয়ে বিশাল উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
Arogya Setu App – Stay informed with the latest updates on the fight against COVID-19.
The Government has launched a Bluetooth based ‘Aarogya Setu’ app to strengthen the fight against COVID-19.
— Gujarat Information (@InfoGujarat) April 4, 2020
আরোগ্য সেতু অ্যাপ – কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সর্বশেষ হালনাগাদ সম্পর্কে অবহিত থাকুন।
সরকার কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে ব্লুটুথ ভিত্তিক অ্যাপ ‘আরোগ্য সেতু’ চালু করেছে।
আরোগ্য সেতু ব্যবহারকারীরা তাদের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে সাইন আপ করে এতে অতীত ভ্রমণের ইতিহাসসহ ব্যক্তিগত বিবরণ যুক্ত করতে পারে। এর একটি বৈশিষ্ট্য নিজেদের ভাইরাস সংক্রমিত সন্দেহ করা ব্যবহারকারীদেরকে নিজেদের পরীক্ষা করার সুযোগ দেয়। এটি অনুসরণ করা কোন ব্যক্তির উচ্চ সংক্রমণের হার বা চিকিৎসা লক্ষণযুক্ত যে কোন দেশে সাম্প্রতিক ভ্রমণের মতো বিবরণকে সন্দেহ করে এবং সে সম্পর্কে সরকারি কর্তৃপক্ষকেও সতর্ক করে। অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের (মেইটওয়াই) অধীনে জাতীয় তথ্যবিজ্ঞান কেন্দ্র দাবি করেছে যে তাদের সংগৃহীত উপাত্ত শুধু সরকারি সংস্থাগুলির সাথে ভাগাভাগি করা হবে। গুগল প্লে স্টোর ইতোমধ্যে অ্যাপটির ১০ লক্ষেরও বেশি ইনস্টলেশন (চালুকরণ) নিবন্ধিত করেছে।
আরোগ্য সেতু প্রবর্তনের সময় জাতীয় তথ্যবিজ্ঞান কেন্দ্রের (এনআইসি) মহাপরিচালক নীতা ভার্মা বলেছেন:
[…] অ্যাপটি করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার ঝুঁকিগুলি [থেকে] নিজেকে সহায়তা করতে সক্ষম করে। সর্বাধুনিক ব্লুটুথ প্রযুক্তি, অ্যালগরিদম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ঝুঁকির মান গণনা করা হয়। নাগরিকের গোপনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে অ্যাপটির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সংগ্রহ করা ব্যক্তিগত উপাত্ত চিকিৎসা হস্তক্ষেপের প্রয়োজন না হওয়া পর্যন্ত ফোনে সুরক্ষিত থাকে।
টুইটের একটি ধারাবাহিকের মাধ্যমে ভারত সরকারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা কৃষ্ণস্বামী বিজয় রাঘবন বলেছেন, আকস্মিকভাবে আশেপাশের সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে অ্যাপটি নাগরিকদের জানিয়ে দেবে। টুইটগুলির একটির মধ্যে তিনি ব্যবহারকারীদের ফোনের ব্লুটুথ চালু রাখতে এবং তাদের অবস্থান জানানোটাকে “সর্বদা” করে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন:
How does it work? Install the App, switch on Bluetooth, set location sharing to “Always”. The App detects other devices with Aarogya Setu installed that have come in the Bluetooth / GPS proximity of your phone. Aarogya Setu is available on both iOS and Android.
— Principal Scientific Adviser, Govt. of India (@PrinSciAdvGoI) April 2, 2020
এটা কিভাবে কাজ করে? অ্যাপটি ইনস্টল করুন, ব্লুটুথ চালু করুন, অবস্থান ভাগাভাগি “সর্বদা” রাখুন। অ্যাপটি আপনার ফোনের ব্লুটুথ/ জিপিএসের কাছাকাছি আসা ঘনিষ্ঠতায় আরোগ্য সেতু ইনস্টল থাকা অন্যান্য যন্ত্রগুলিকে সনাক্ত করে। আরোগ্য সেতু আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড উভয় ক্ষেত্রেই পাওয়া যাচ্ছে।
রাঘবন সংগৃহীত তথ্যগুলি “অত্যাধুনিক” প্রযুক্তি দিয়ে সংকেতায়িত করার কথা জানালেও এখন পর্যন্ত অনুসরণ করা সংকেতায়নের মান সম্পর্কে বিশদ কিছু জানতে পারা যাচ্ছে না।
বিজয়িতা সিংয়ের মতো ব্যবহারকারীরা ব্লুটুথ চালু রাখার আবশ্যকতার কারণে (ফোনে) সারাক্ষণ “ঝাঁকুনি” অনূভব করছেন।
I downloaded the Arogya App yesterday, it informs about any COVID positive patient near you. But for that the bluetooth has to be kept on at all times. Jarring feature. pic.twitter.com/FfnLSg2xlE
— vijaita singh (@vijaita) April 3, 2020
আমি গতকাল আপনার কাছাকাছি যে কোন কোভিডযুক্ত রোগী সম্পর্কে জানাতে পারা আরোগ্য অ্যাপটি ডাউনলোড করেছি। তবে তার জন্যে সারাক্ষণ ব্লুটুথটি চালু রাখতে হয়। (এটা) ঝাকুনির বৈশিষ্ট্যসূচক।
ইন্টারনেট অধিকার সমস্যা সংক্রান্ত আইনজীবি ও লেখক প্রসন্ন এস অ্যাপটি এবং সার্ভারে সংগৃহীত ও সংরক্ষিত উপাত্ত সম্পর্কে পরিচ্ছন্নতার অভাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন:
[..] কোন তথ্য সংগ্রহ করা হবে, এটি কতক্ষণ সংরক্ষণ করা হবে এবং এটি কী কী কাজে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তথ্যগুলি ভারত সরকারের সাথে ভাগাভাগি করা হলে সরকার এটি কী কো কাজে ব্যবহার করতে পারে তা নির্দিষ্ট করা দরকার। অন্যথায় এটি হবে বিজ্ঞপ্তি এবং সম্মতির নীতিমালার লঙ্ঘন। [..]
[..] তথ্য ধরে রাখার কথা বলতে গেলে, অ্যাপটির গোপনীয়তা নীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে নিবন্ধনের সময় প্রদত্ত সমস্ত তথ্য যতক্ষণ ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টটির অস্তিত্ব থাকবে ততক্ষণ “এবং তারপরে প্রয়োজনীয় উদ্দেশ্যে তথ্যটি আইনত ব্যবহার করতে পারার মতো প্রয়োজনীয় সময়সীমা পর্যন্ত ধরে রাখা হবে। [..]
উপাত্ত বিচ্যুতি নিয়ে উদ্বেগগুলি ভিত্তিহীন নয় কারণ ভারত তার বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ আধার-এ পাওয়া ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে অক্ষম বলে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত। আরোগ্য সেতু হলো কোভিড-১৯ মোকাবেলা করতে শুরু করা কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকারগুলোর ভালু করা ১১টি সরকারি অ্যাপের একটি। করোনা কাভাচ নামের আরেকটি অ্যাপও গোপনীয়তার বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচিত। হিন্দু পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে সাংবাদিক সুহাসিনী হায়দার লিখেছেন:
শুক্রবার “করোনা ভাইরাস প্রভাবিত দেশগুলি” থেকে ফিরে আসা শত শত যাত্রীর ডাটাবেজ অনলাইনে ফাঁস এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গোষ্ঠীগুলির মাধ্যমে ভাগাভাগি হওয়ার পরে নোভেল করোনা ভাইরাসের জন্যে কোয়ারন্টাইন বা পৃথকীকরণের পরামর্শ পাওয়া ব্যক্তিবর্গকে সরকারের নজরদারিতে আনার সরকারি প্রচেষ্টাগুলির গোপনীয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। উপরন্তু, সরকার খুব কাছাকাছি থাকা নিশ্চিত করোনা ভাইরাস রোগীদের উপাত্ত ব্যবহার করে গ্রাহকদের সতর্ক করা “করোনা কাভাচ” নামের নতুন চালু হওয়া পরীক্ষামূলক বা বেটা সংস্করণের একটি মোবাইল ফোন অ্যাপের পক্ষাবলম্বন করেছে।
হায়দার আরও উল্লেখ করেছেন যে হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক গ্রুপগুলি ৯ মার্চ এবং ২০ মার্চ নয়াদিল্লিতে আসা ৭২২ জন যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, বিমানযাত্রার বিস্তারিত, মোবাইল ফোন নম্বর এবং ঠিকানা অন্তর্ভুক্ত এমন তথ্য ভাগাভাগি করতে পেরেছিল।
ভারতে সরকারের অনেকগুলি সাম্প্রতিক দৃষ্টিভঙ্গি কোভিড-১৯ নিয়ে লড়াই করার বৈজ্ঞানিক পন্থা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা অধিকারের সীমানাকে অস্পষ্ট করে তোলার পর তাড়াহুড়ো করে নেয়া প্রযুক্তির ব্যবহার আরো সমস্যা তৈরি করেছে। গোপনীয়তা বিশেষজ্ঞ অপার গুপ্ত ইন্ডিয়া টুডেকে বলেছেন:
আগে থেকেই ভারতের কোন তথ্য সুরক্ষা আইন এবং বিধিবদ্ধ সুরক্ষা না থাকায় আরো বেশি সমস্যা হলো প্লে স্টোরের এই নির্দিষ্ট অ্যাপ্লিকেশনগুলি নিজে থেকেই প্রযোজ্য কোন গোপনীয়তার নীতিমালার সাথে সংযুক্ত নয়।
ভারত ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করার জন্যে প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। গোপনীয়তার অধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত জোসেফ কানাতাসি মহামারী চলাকালে দেশগুলির ব্যক্তিগত স্বাধীনতার জন্যে বিপদজনক কঠোর নজরদারি এবং অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বিশ্বজুড়ে অবস্থান-ভিত্তিক নজরদারি প্রযুক্তির সমর্থনকারী “তল্লাশী চালানো” সরকারগুলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহামারীটির বিরুদ্ধে লড়াই করার উল্লেখযোগ্য কোন দক্ষতা দেখাতে পারেনি – এই কথা উল্লেখ করার ক্ষেত্রে ডিজিটাল অধিকার গোষ্ঠী ইলেক্ট্রনিক সীমান্ত ফাউন্ডেশন অন্যতম।