- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

কলম্বিয়ার লকডাউন গর্ভপাতের অধিকারকে প্রভাবিত করবে: মানবাধিকার আইনজীবী

বিষয়বস্তু: ল্যাটিন আমেরিকা, কলম্বিয়া, দেশান্তর ও অভিবাসন, নাগরিক মাধ্যম, মানবতামূলক কার্যক্রম, লিঙ্গ ও নারী, স্বাস্থ্য
[1]

পিক্সাবে লাইসেন্সের আওতায় আলভারো বেজারানোর তোলা ছবি।

গ্লোবাল ভয়েসেসের বিশেষ কভারেজ লাতিন আমেরিকাতে নারীরা কীভাবে লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে [2] এবং কোভিড-১৯ এর বৈশ্বিক প্রভাব [3] দেখুন।

নাগরিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় হলেও জাতীয় লকডাউন এবং সীমান্ত বন্ধসহ কোভিড -১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে  [4]রাখার জন্যে কলম্বীয় সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলি যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্যে অপরিহার্য পরিষেবাগুলি পেতে কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলার নারীদের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

বোগোটায় বিশ্বব্যাপী নারীদের সংযোগ সংগঠনের আইনজীবী সেলিন সোটো গ্লোবাল ভয়েসেসকে বলেছেন, “মহামারীর সময়ে নারীদের নিরাপদ গর্ভপাত, জরুরি গর্ভনিরোধ এবং যৌন সহিংসতা ও নির্যাতন থেকে সুরক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলির প্রয়োজন হবে।“

কলম্বিয়াতে তিনটি কারণে গর্ভপাত আইনসম্মত: ভ্রূণের গুরুতর বিকৃতি, মায়ের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্যে ঝুঁকি এবং ধর্ষণ। আদালতের বিগত রুল [5] এই অধিকার বহাল রাখা সত্ত্বেও বিশেষভাবে দরিদ্র ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিলা ও বালিকাদের নিরাপদে তাদের গর্ভনিরোধ করতে না দেয়া সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বাধাসহ এখনো তথ্যে প্রবেশাধিকারের অভাব রয়েছে।

এই তিনটি ব্যতিক্রমের বাইরে গর্ভপাত ঘটলে সেটা অবৈধ এবং এক থেকে তিন বছরের [6] কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধ। লকডাউনের কারণে হয়তো অনেক নারীবিশেষত দরিদ্রতম এবং গ্রামাঞ্চলের [7] নারীরা তাদের গর্ভাবস্থার বিষয়ে আইনী ও স্বাস্থ্যসেবার নির্দেশনা গ্রহণ না করে অকারণে বাড়িতে অনিরাপদ গর্ভপাত করাতে যায়।

সোটোর মতে “জরুরি স্বাস্থ্য নীতিমালা এবং ফরমানগুলি মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে বা লিঙ্গ দৃষ্টিকোণ থেকে পরিকল্পণা করা না হলে অনেক নারী ঝুঁকিপূর্ণ এবং অরক্ষিত থাকবেন।”

কলম্বিয়া ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় লকডাউনে [8] রয়েছে যা হয়তো বাড়ানো হতে পারে। এই কাহিনীটি লেখার সময় সেখানে কোভিড-১৯ এর ৭৯৮টি নিশ্চিত ঘটনা [9] রয়েছে এবং সংখ্যাটি বাড়ছে। সরকার কেবলমাত্র খাদ্য সঞ্চয় ও স্বাস্থ্য স্থাপনায় যাওয়ার জন্যেসহ শুধু ব্যাতিক্রমী পরিস্থিতিতে [10] জনগণকে চলাচলের অনুমতি দিচ্ছে কিন্তু এক্ষেত্রে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যের অধিকারের কথা উল্লেখ নেই।

যারা এই বাধ্যতামূলক লকডাউন বিচ্ছিন্নতার ব্যবস্থা মেনে চলতে ব্যর্থ, তাদের জরিমানা অথবা ৮ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

“যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যে প্রবেশাধিকার বজায় রাখা এবং নিশ্চয়তা প্রদান করার জন্যে এই ব্যতিক্রমগুলিতে অবশ্যই স্পষ্টভাবে পরিষেবাগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে,” সেলিন সোটো বলেছেন। “এবং  শুধু গর্ভপাতে প্রবেশাধিকার নয়, থাকতে হবে জরুরি গর্ভনিরোধ এবং যৌন সহিংসতার শিকার নারীদের স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশাধিকারের কথাও।”

উদাহরণ হিসেবে সোটো বলেছেন যে কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন নারীর গর্ভপাতের প্রয়োজনের সময় তাকে অন্য কোন শহরের স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রে স্থানান্তরের প্রয়োজন হলে এক্ষেত্রে যেসব প্রশাসনিক পদ্ধতি এবং নিরাপদ স্থানান্তরের অনুমতির প্রয়োজন হয় সময়মতো তার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় না। এরকম পরিস্থিতিগুলি সময়মতো অযাচিত গর্ভধারণ বন্ধ করার সম্ভাবনার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে এবং নারীদের অনিরাপদ গর্ভপাতের পথ বেছে নিতে বাধ্য করতে পারে। এসব তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটায়।

পরিসংখ্যানগুলিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা না হলেও অনুমান করা যায় যে প্রতি বছর কলম্বিয়াতে গড়ে ৪ লক্ষ নারীর [11] অনিরাপদ গর্ভপাত হয় এবং এই পদ্ধতিগুলির কারণে ৭০ জন নারী [12] মৃত্যুবরণ করে।

“এই মানবিক জরুরি পরিস্থিতিতে [তিনটি শর্তে গর্ভপাতের অধিকার] এর ধারাবাহিকতা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে”, সোটো বলেছেন।

ভেনিজুয়েলার অভিবাসীরাও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে

সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও ভেনিজুয়েলার অভিবাসীরা চরম দারিদ্র্য এবং তাদের দেশে জনস্বাস্থ্য ধ্বসে পড়ার কারণে হতাশ হয়ে এখনো অবৈধভাবে রাস্তা ও পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করছে [13]। এই পরিস্থিতি নাকাল কর্তৃপক্ষ অভিবাসী নারী ও বালিকাদের [14] আরো বেশি করে মানব পাচার ও যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে।

“আরো বেশি দুর্বলতা, সংক্রমণের আরো বেশি ঝুঁকি এবং স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া সীমান্ত পরিস্থিতিতে [অভিবাসী] নারীরা আরো বেশি ঝুঁকির মুখোমুখি হবেন এবং স্বাস্থ্যসেবায় প্রবেশ করতে তাদের আরো বেশি অসুবিধা হবে”, সোটো বলেছেন। এই ঝুঁকির মধ্যে গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো নারীরা অন্তর্ভুক্ত।

এই মহামারীটির আগে থেকেই কলম্বিয়াতে প্রায় ২০ লক্ষ অভিবাসী উপস্থিত থাকায় অভিবাসী নারীদের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ইতিতোধ্যে যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা [15] দেখা গেছে। তাদের অনেকেই তাদের অধিকার এবং আইনী সুরক্ষা সম্পর্কে জানে না বলে কখনো কখনো তারা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের কাছ থেকে বাধা ও দুর্ব্যবহারের [16] সম্মুখীন হয়।