রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের দাবিতে আলজেরিয়ার দেশব্যপী বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হওয়ার এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সরকার সমালোচক ও বিক্ষোভ কাভার করা সাংবাদিকদের নীরব করার জন্যে দমনমূলক কৌশল অবলম্বন করে চলেছে।
১৫ মার্চ তারিখে রাজধানী আলজিয়ার্সের একটি আদালত সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে আটক থাকা সাংবাদিক সোফিয়ান মেরাকচিকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মেরাকচি একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক যিনি বৈরুত-ভিত্তিক আল মায়াদীন টিভি চ্যানেল এবং কাতারের রাষ্ট্রীয় অর্থায়িত সম্প্রচারক আল জাজিরাসহ বিভিন্ন বিদেশী সংবাদ সংস্থার জন্যে কাজ করে থাকেন। তিনি “সম্প্রচারের সরঞ্জাম আমদানি করার সময় শুল্ক কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে যাওয়ার” মাধ্যমে শুল্কবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত।
সাংবাদিকদের সুরক্ষা কমিটির মতে তিনি দুই থেকে সাত বছরের জেল এবং সরঞ্জামের মূল্যের সমপরিমাণ জরিমানার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
সীমান্তবিহীন প্রতিবেদক (আরএসএফ) এর মতে:
আলজেরিয়ার প্রাক্তন সরকারি রেডিও সাংবাদিক মেরাকচির কাছে আল জাজিরার জন্যে চিত্রায়িত বিক্ষোভের একটি ফিল্ম রয়েছে বলে সুরক্ষা বাহিনীগুলো সন্দেহ করছে। বিগত কয়েক মাস ধরে আল জাজিরার এই বিক্ষোভের প্রচার কর্তৃপক্ষের কাছে বারবার সমালোচিত। তাকে অভিশংসকদের সামনে হাজির করার কথা ছিল।
৫ মার্চ প্রকাশিত একটি বিবৃতিতে সম্মিলিত আলজেরীয় সাংবাদিকদের সম্মিলন (জেআই) মেরাকচির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটিকে ‘‘তাকে চুপ করিয়ে’’ দেওয়ার ‘‘অজুহাত’’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন:
Son arrestation, survenue dans un contexte de mise au pas totale des médias audiovisuels publics et privés, ciblait de manière précise son libre exercice du métier de journaliste. L’accusation d’infraction au code des douanes et d’utilisation d’un appareil de diffusion en direct – que toutes les chaînes TV utilisent en Algérie – dont il fait l’objet n’est qu’un prétexte pour punir le journaliste et le faire taire.
সরকারি ও বেসরকারি সম্প্রচারকারীদের বাধ্যানুগত করার সময়ে তাকে গ্রেপ্তার বিশেষভাবে সাংবাদিক হিসাবে তার পেশা ব্যবহারের স্বাধীনতাকে লক্ষ্য করেই ঘটেছে। তার বিরুদ্ধে শুল্ক আইন লঙ্ঘন এবং আলজেরিয়ার আর দশটি টিভি চ্যানেলের মতো একটি সরাসরি সম্প্রচারকারী যন্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ আসলে তার মতো সাংবাদিককে শাস্তি দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়ার অজুহাত মাত্র।
২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে ব্লগার ও মুক্ত প্রতিবেদক আব্দেল্মুন্দজি খেলাদি কারাগারে রয়েছেন। বেসামরিক পোশাক পরিহিত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে বিক্ষোভের সময় কনস্ট্যান্টাইন শহর থেকে গ্রেপ্তার করেছিল। তার বিরুদ্ধে “জাতীয় স্বার্থ ও ঐক্য ব্যহত করার” অভিযোগ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের আগে খেলাদি তার ব্লগ এবং ইউটিউব ও ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে আলজেরিয়ার রাজনীতি, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি এবং বিক্ষোভ-প্রতিবাদের বিষয়ে প্রতিবেদন ও মন্তব্য করতেন। ১ এপ্রিল তারিখে প্রত্যাশিত রায়ে তার দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
বিক্ষোভ শুরুর পর থেকেই আলজেরীয় কর্তৃপক্ষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটের স্বাধীনতার ওপর তাদের দমনাভিযান বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার নেটওয়ার্ক এবং সামাজিক মাধ্যমের মঞ্চে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করা, সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার এবং বিক্ষোভের মিডিয়া কভারেজের উপর বিধিনিষেধ আরোপের আশ্রয় গ্রহণ করেছে।
তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আবদেলাজিজ বুতেফ্লিকার পঞ্চম মেয়াদে অফিসে থাকার ঘোষণা দেওয়ার পর ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ থেকে শুরু হওয়া প্রতিবাদ আন্দোলনটি ৩ এপ্রিল, ২০১৯ তারিখে তার পদত্যাগের পরও অব্যাহত রয়েছে।
তবে আলজেরীয়রা পুরানো শাসকগোষ্ঠীকে ক্ষমতায় রাখার প্রচেষ্টা হিসাবে বিবেচনা করা ১২ ডিসেম্বর তারিখের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পরেও দুর্নীতি, বেকারত্ব এবং দেশের রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করতে রাস্তায় নামা অব্যহত রেখেছে।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং বুতেফ্লিকার সহযোগী আবদেলমাজিদ তেবুনে নির্বাচনে জয়লাভ করে ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ তারিখে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। ৫ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মন্ত্রিপরিষদের প্রথম বৈঠকে তেবুনে সরকারকে প্রেসের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তা সত্ত্বেও লঙ্ঘন অব্যহত রয়েছে।
৭ মার্চ তারিখে আলজিয়ার্সে বিক্ষোভের সময় সাংবাদিক খালেদ দ্রারেনিকে গ্রেপ্তার করা হয়। “অনুমতি ছাড়া সমাবেশ” করার জন্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপরে ১০ মার্চ মুক্তি দেওয়ার আগে তাকে ‘‘ জাতীয় ঐক্যের বিনষ্ট’’ করার অভিযোগে আদালতের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। দেশ ছাড়তে নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিচারে তার দশ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে।
দ্রারেনি অনলাইন সংবাদ সাইট কাসবাহ ট্রিবিউনের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়াও তিনি টিভি৫ মনডে এবং আরএসএফের সংবাদদাতা। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভগুলো ব্যাপকভাবে কাভার করেছেন। তিনি তার কাজের জন্যে বারবার কর্তৃপক্ষসমূহের কাছ থেকে হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন।
“সাংবাদিকতা কোনও অপরাধ নয়” তাই মুক্তির একদিন পর তিনি তার কাজ চালিয়ে যাওয়ার শপথ নিয়েছেন। ২৫ শে মার্চ তারিখে আলজিয়ার্সের একটি আদালত তাকে “উস্কানি প্রদর্শন” এবং “জাতীয় ঐক্যকে আক্রমণ করার” কারণে জেল দণ্ড দিয়েছে। তার ভাই সিপিজেকে বলেছেন বিচারক (শাস্তির) কোন মেয়াদ নির্দিষ্ট করেননি। ২৭ মার্চ তারিখে সাংবাদিককে আবারো আটক করা হয়েছে।
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখ থেকে আলজেরীয়রা প্রতি শুক্রবার সারা দেশে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীর প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নেমে আসে। ২০ মার্চ তারিখে প্রতিবাদকারীরা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাড়িতে অবস্থান করার কারণে এটা ঘটেনি।
তবে আলজেরীয় নেতাকর্মী এবং বিক্ষোভকারীরা অবশ্য জোর দিয়ে বলেছে যে তাদের প্রতিবাদ আন্দোলন শেষ হইয়ে যায় নি, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে স্থগিত রয়েছে। এসবের মাঝেও আলজেরীয় সরকার তার দমনাভিযান শিথিল করার কোন লক্ষণ প্রদর্শন করছে না।
২৪ মার্চ বিরোধী দলীয় নেতা করিম তাবুকে তার দলের ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে রাজনীতিতে আলজেরীয় সেনাবাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করার জন্যে এক বছরের জেল এবং ৫০,০০০ আলজেরীয় দিনার (প্রায় ৩৪,৫০০ বাংলাদেশী টাকা) জরিমানা করা হয়েছে, জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।