- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে জম্মু ও কাশ্মীরের ইন্টারনেট নিষিদ্ধ অসাংবিধানিক

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, ভারত, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, জিভি এডভোকেসী
[1]

গত ৮ বছরে ভারতে ইন্টারনেট বন্ধের প্রকৃতি। ইন্টারনেটবন্ধ.আইএন এর মাধ্যমে প্রাপ্ত চার্ট সিসি বাই-এনসি-এসএ ৪.০

২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত [2] ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে জম্মু ও কাশ্মীরে [3] ইন্টারনেট পরিষেবাদি স্থগিতাদেশ পুণর্বিবেচনা করার অনুরোধ করেছে [4]। রায়টিতে এই অঞ্চলে ভারত সরকারের চাপিয়ে দেওয়া পাঁচ মাস দীর্ঘ যোগাযোগ অবরোধকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে এটির অব্যাহত ব্যবহারকে যুক্তিসঙ্গতভাবে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্যে প্রশাসনকে সাত দিন সময় বেঁধে দিয়েছে।

Read our Special Coverage: Inside Kashmir's crisis [5] (আমাদের বিশেষ কভারেজ পড়ুন: কাশ্মীর সঙ্কটের অভ্যন্তরে)

২০১৯ সালের আগস্ট মাসের ৫ তারিখে জম্মু ও কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল [6] করার পর থেকে মোবাইল, ল্যান্ডলাইন এবং ইন্টারনেট নেটওয়ার্কগুলিতে প্রবেশাধিকার স্থগিত [7] করা হয়েছে। সরকার নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসাবে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষার [8] কথা উল্লেখ করেছে। ২০১৯ সালের অক্টোবরে কিছু পরিষেবা আংশিকভাবে চালু করা [9] হলেও কাশ্মীরের বেশিরভাগ অংশই ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন [10] রয়েছে, যা নিজেকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র’ [11] হিসেবে দাবি করা দেশটির বৃহত্তম নেটওয়ার্ক নিষেধাজ্ঞা [12]য় পর্যবসিত হয়েছ।

৫ আগস্ট ২০১৯ – ৫ জানুয়ারি ২০২০।

আজ কাশ্মীরে ইন্টারনেট অবরোধের ৫ মাস পূর্ণ হলো – সম্ভবত বিশ্বের দীর্ঘতম।

আমরা সান্ধ্য আইন, আটক ইত্যাদি সম্পর্কে জানি – তবে এগুলিই কী সব?

এখানে গত ৫ মাসে কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া কম পরিচিত জিনিসগুলি সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত থ্রেড দেওয়া হলো।

২০১৯ সালের নভেম্বরে একই ধরনের আবেদন সর্বোচ্চ আদালতে মুলতুবি রয়েছে বলে জম্মু ও কাশ্মীর উচ্চ আদালত কাশ্মীরে প্রিপেইড মোবাইল ফোন সংযোগ এবং ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধারের একটি আবেদনের নিষ্পত্তি করেছিল।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত কাশ্মীর টাইমসের [14] কাশ্মীর টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক শ্রী অনুরাধা ভাসিনের আবেদনের [15] জবাবে এই রায় দিয়ে আবেদনকারী এবং জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণকে আশার আলো দেখিয়েছে। ভাসিন এধরনের মোটাদাগের নিষেধাজ্ঞাগুলি মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারকে লঙ্ঘন করে এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা ও সন্ত্রাসবাদের উত্থানের মধ্যে প্রমাণিত কোন যোগাযোগ নেই যুক্তি দিয়ে একে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন [16]

জম্মু ও কাশ্মীরে মৌলিক অধিকারের উপর বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকলেও সর্বোচ্চ আদালতের রায়টিকে [17] স্বাগত পদক্ষেপ হিসাবে দেখা হচ্ছে।

হতাশার শীতকলে এটা হলো আশার বসন্ত: কাশ্মীর প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতের রায় #কাশ্মীর #কাশ্মীর_বন্ধ #সর্বোচ্চ­_আদালত এর রায়ের ব্যাখ্যা

আজকের ডিজিটাল যুগে বেশিরভাগের কাছে স্বাভাবিক স্বীকার্য ইন্টারনেট ব্যবহারের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা এই অবরোধটি জম্মু ও কাশ্মীরের কয়েক কোটি মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করেছে। এই পরিস্থিতিটি অর্থনীতির চূড়ান্ত ক্ষতি সাধন করছে [23]

উপত্যকাটিতে কোন ইন্টারনেট নেই, সারাদেশের @জম্মু_কাশ্মীর_শিক্ষার্থী_সমিতির স্বেচ্ছাসেবীরা কাশ্মীরী শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল দেখে দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি। #কাশ্মীর_বন্ধ

এই অঞ্চলের দীর্ঘতম ইন্টারনেট অন্ধকার অব্যাহত থাকায় ইন্টারনেটে প্রবেশের পথ খুঁজে পেতে কাশ্মীরের জনগণের প্রতিদিনই কষ্টকর যাত্রা করতে হচ্ছে।

ভারতের সর্বোচ্চ আদালত নিষেধাজ্ঞাটিকে পর্যালোচনা করার জন্যে সরকারকে এক সপ্তাহের সময় দিয়েছে। আদালত কাশ্মীর উপত্যকায় চলাচল প্রতিরোধকারী ফৌজদারী কার্যবিধির ১৪৪ ধারা [29] (বেআইনী সমাবেশ) আরোপের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছে যে এই আইনটি দীর্ঘকাল ধরে বারবার ব্যবহার করা যাবে না এবং (নির্দিষ্ট সময় পরপর) এর যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করতে হবে। আদালত নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার প্রদানকারী ভারতীয় সংবিধানের উপর ভিত্তি করেই তার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।

তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চের নেতৃত্ব প্রদানকারী বিচারপতি এন ভি রমনা এই রায় প্রদান করার সময় বলেন [30]:

আমরা ঘোষণা করছি যে বাক এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে যে কোন পেশার অনুশীলন বা কোন ব্যবসা-বাণিজ্য বা বৃত্তিমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার স্বাধীনতা সংবিধানের ১৯(১)(ক) এবং ১৯(১)(ছ) অনুচ্ছেদের অধীনে সুরক্ষিত।

সর্বোচ্চ আদালতের সংবিধানের ১৯(১)(ছ) অনুচ্ছেদের এর সাথে ইন্টারনেটকে সংযুক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি যেকোন বৃত্তিমূলক কাজ, ব্যবসা বা বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার অধিকার দেয়। এটি কাশ্মীরের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ কারণ, ইন্টারনেট ব্যবহার করে করা বিশেষত পর্যটন, স্বাস্থ্য, অর্থ ও অন্যান্য পরিষেবাদির ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।

বেঞ্চটি আরো বলেছে:

পছন্দটি আপাতদৃষ্টিতে চ্যালেঞ্জিং মনে হলেও আমাদেরকে অন্তসারশুন্য বক্তৃতা দেওয়ার কল্পনা থেকে নিজেদের মুক্ত করতে হবে আর প্রতিটি নাগরিকের পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও যথেষ্ট স্বাধীনতা বজায় রেখে একটি অর্থবহ জবাব দিতে হবে।

রায়টিতে কী কী রয়েছে?

এই রায়টিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে নির্দিষ্ট করে বিধিনিষেধের কারণ ও সময়কাল উল্লেখ না করে বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো মৌলিক অধিকার হরণ করা যাবে না।

এখন অবধি এই নিষেধাজ্ঞাগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতালগুলিতে ইন্টারনেটের ক্ষেত্রেও রয়েছে। নির্দিষ্ট শর্তে ২০১৯ সালের অক্টোবরের পর থেকে কিছু হোটেল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী অফিসগুলিতে তাদের ইন্টারনেট পুনরুদ্ধার [32] করিয়ে নিয়েছে। ১০ জানুয়ারি তারিখের রায়টিতে সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবার জন্যে ইন্টারনেট সংযোগ পুনরুদ্ধারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞার পিছনে প্রাণহানির আশঙ্কার পাশাপাশি সরকার নিরাপত্তা উদ্বেগেরউল্লেখ করে চলছে [8]। তবে সর্বোচ্চ আদালতের নতুন রায় সরকারের পাস হওয়া আদেশগুলি প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করার সাথে সাথে জম্মু ও কাশ্মীরের বন্ধ রাখাকে চ্যালেঞ্জ জানানো নতুন আবেদনগুলিও উঠে আসবে।

ইন্টারনেট স্বাধীনতা ফাউন্ডেশন (ভারত) রায়টি নিয়ে একটি বিবৃতিতে [33] বলেছে:

অনুরাধা ভাসিন বনাম ভারতের ইউনিয়নের রায়টিতে ভবিষ্যতের যোগাযোগ বন্ধগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানানোর একটি পরিষ্কার আইনী ভিত্তি প্রদান করা হলেও বিগত ১৫৮ দিনে (প্রতিবেদনের তারিখ পর্যন্ত) কাশ্মীরিদের ইতিমধ্যে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা মোকাবেলা নিয়ে তেমন কিছুই বলা হয়নি। আদেশের গোপনীয়তা এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ঘিরে  সরকারের দেওয়া বিভিন্ন চূড়ান্ত যুক্তিকে আদালত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এই মামলায় প্রতিষ্ঠিত নীতিগত ও সুরক্ষার ব্যবস্থাগুলি ভারতে টেলিকম নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়া সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ। এই রায়টি অনেক উপায়ে কর্মের আহ্বান এবং এটি দীর্ঘ উজান যাত্রার সূচনা করেছে। সরকার যেন সত্যিকারভাবে কাশ্মীর ও অন্যান্য রাজ্যে এটি বাস্তবায়ন করে সেটা নিশ্চিত করার জন্যে সুশৃঙ্খলা এবং কৌশলগত ধারাবাহিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।