- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

‘প্রেস স্বাধীনতার ওপর একটি জঘন্য দমনাভিযান’: পাকিস্তানের একতরফা স্লেট ডটকম অবরোধ

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, পাকিস্তান, আইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, প্রতিবাদ, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সরকার, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী
CENSORED website. Illustration by the author. [1]

লেখকের অলংকরণ।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারীভাবে তাদের যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক চলমান ঘটনাবলী, রাজনীতি এবং সংস্কৃতি বিষয়ক ম্যাগাজিন স্লেট ডটকম অবরোধ অব্যহত রেখেছে। পাকিস্তানে ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার এবং ২০১৮ সালের পর থেকে তৃতীয়বারের মতো এই ওয়েবসাইটটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত অজানা কারণে ২০১৮ সালের জুলাই [2], মাসে স্লেটকে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি সার্ভারগুলিতে অবরুদ্ধ [3] হতে দেখা যায়। নেটওয়ার্ক বিঘ্নের মুক্ত পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (ওওএনআই) এর তথ্য [4] অনুসারে, পাকিস্তানে পশতুন সম্প্রদায়ের মানবাধিকার দাবি করা একটি সামাজিক আন্দোলন পশতুন সুরক্ষা আন্দোলন [5] (পিটিএম)-কে কভার করার জন্যে ২০১৯ সালের জুন মাসে ম্যাগাজিনটি আবার অবরোধ করা হয়েছিল। এদিকে নেটব্লকসের তথ্য অনুসারে কর্তৃপক্ষের কোন প্রকার প্রজ্ঞাপন বা বিবৃতি ছাড়াই সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞাটি ২ নভেম্বর, ২০১৯ থেকে কার্যকর করা হয়েছে।


নেটব্লকস তথ্য ২/১১/২০১৯ তারিখ থেকে পিটিসিএল নেটওয়ার্কে স্লেট ডটকম ট্রাফিকের স্পষ্ট হ্রাস প্রদর্শন করছে।

লেখকের সাথে ভাগাভাগি করা নেটব্লকসের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে স্থানীয় ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের (আইএসপি) নেটওয়ার্কগুলিতে অবরুদ্ধ স্লেট ডট কম বিভিন্ন আইএসপিতে বিভিন্ন দিন অবরুদ্ধ হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, নয়াটেল ৪ নভেম্বর তারিখে এটিকে অবরোধ করলেও অন্যান্যরা এর ওয়েবসাইটে প্রবেশাধিকার বন্ধ করেছিল নভেম্বর মাসের ২ তারিখে। উপরন্তু, স্লেট মাঝেমধ্যেই জং (সিএমপাক লিমিটেড) এর নেটওয়ার্কগুলিতে অবরুদ্ধ হতো। এই বিবৃতিটি লেখার সময় স্লেট.কম জং এর ডেটা সংযোগে প্রবেশযোগ্য ছিল।

স্লেটের মিডিয়া সম্পর্ক বিভাগের পরিচালক কেটি রেফোর্ড ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর থেকে তাদের ওয়েবসাইটে পাকিস্তান থেকে ট্রাফিকের পরিমাণ ৫০ শতাংশ কমে যাওয়ার বিষয়টি লেখককে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন:

এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় যে সাংবধানিকভাবে বাক-স্বাধীনতার নিশ্চয়তাযুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ পাকিস্তান আবারো সারা বিশ্বের পাঠক এবং শ্রোতাদের কাছে তথ্য এবং সত্য পৌঁছে দেওয়ার জন্যে উৎসর্গীকৃত একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে অবরোধ করতে শুরু করেছে। এটি আরও উদ্বেগজনক [যে] আমাদের – এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো এর নাগরিকদের আমাদের প্রতিবেদন সেন্সর করার কারণ সম্পর্কে অবহিত না করেই কর্মকর্তারা এটি করেছেন। আমরা পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা এবং প্রেসের স্বাধীনতার উপর জঘন্য দমনাভিযান প্রত্যাহারের দাবি করছি।

পাকিস্তানে স্লেট অনেকটা দেশের অন্যান্য ইন্টারনেট সেন্সরের মতো বারবার নির্বিচারে সংযোগহীনতার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েবসাইট এবং এর ব্যবহারকারীদেরকে এই অবরোধের ব্যাপারে অবহিত করেনি। ২০১৬ সালের ইলেকট্রনিক অপরাধ প্রতিরোধ আইন (পিইসিএ) এর ৩৭ ধারা [6]র অধীনে পাকিস্তান টেলিযোগযোগ কর্তৃপক্ষকে (পিটিএ) অনলাইন বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণ, অবরোধ এবং নামিয়ে আনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তবে পিটিএর পূর্ববর্তী নোটিশ জারি না করে বিষয়বস্তু অবরুদ্ধ করার ক্ষমতাকে ইসলামাবাদ উচ্চ আদালতে (আইএইচসি) চ্যালেঞ্জ করা হলে আদালত আইনটিতে নির্দেশিত বিধানাবলী তৈরি না হওয়া পর্যন্ত অনলাইনে বিষয়বস্তু অবরোধ করা আইনত অবৈধ বলে রায় দিয়েছিল [7]। পিটিএ এখন পর্যন্ত উল্লিখিত বিধিগুলির খসড়া তৈরি এবং প্রকাশ করতে পারেনি।

পাকিস্তানি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দেশে কর্তৃপক্ষের ভিন্নমত নিয়ন্ত্রণ ও দমনের বৃহত্তর প্রচেষ্টার একটি অংশ হিসেবেই অনলাইনে সেন্সর বেড়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। পুরো ওয়েবসাইট অবরোধ করা হয়েছে অথবা কোন ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পৃষ্ঠা বা অংশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে প্রকাশ্য অনলাইন সেন্সরশিপের একাধিক ঘটনা [8]র অভিযোগ পাওয়া গেছে। পশতুন সুরক্ষা আন্দোলন কভারেজের [9] মতো নির্দিষ্ট বিষয় বা ঘটনাবলীর কভারেজ সম্পর্কিত সম্পূর্ণ সরকারী নিষেধাজ্ঞার নথিবদ্ধ উদাহরণও রয়েছে। রাষ্ট্রীয় নীতিমালার সমালোচনা করার জন্যে টিভি অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া [10] এবং বিরোধী দলের সদস্যদের সাক্ষাৎকার প্রদানে বাধা দেওয়া [11] হয়েছে।

এছাড়াও গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে চলমান দমনাভিযান পাকিস্তানের সাংবাদিকতা এবং তথ্য স্বাধীনতার জন্যে সামগ্রিক প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। অস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত জাতীয় সুরক্ষার অজুহাতে সেন্সরকে বৈধতা দেওয়া ইলেকট্রনিক অপরাধ প্রতিরোধ আইনের মতো আইন পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ যথাক্রমে ১৯ এবং ১৯ক এর অধীনে সুরক্ষিত জনগণের মৌলিক বাকস্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকারকে লঙ্ঘন করে।

নেটে স্বাধীনতা [12]প্রেস স্বাধীনতা [13]র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে প্রতিটি বছর পার হওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেট এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা স্বাধীনতা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হ্রাস পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশে প্রেসের স্বাধীনতা নিয়ে কর্মকর্তাদের গর্ব করা [14] পাকিস্তানের মতো গণতান্ত্রিক দেশে অযৌক্তিক ও অঘোষিত সেন্সরের মাধ্যমে ভিন্নমত দমন এবং তথ্যে প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা দেশটির গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ার কপটতাকে প্রতিফলিত করে।

মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং তথ্যে প্রবেশাধিকার যে কোন গণতান্ত্রিক সমাজের মৌলিক মূল্যবোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং পাকিস্তানকে সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের মূল্যবোধের প্রতি সম্মান জানাতে হলে, রাষ্ট্রীয় নীতিমালা এবং সংস্থাগুলোর সমালোচনার মানেই রাষ্ট্রবিরোধী বক্তৃতা নয়, এটি জাতীয় সুরক্ষার বিষয়বস্তু নয় এবং এটি কোন বিদেশী এজেন্ডাও নয় – কর্তৃপক্ষগুলোকে এসব কথা মেনে নিতে হবে। সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বরের বিরুদ্ধে দমনাভিযানের মতো যে কোন কিছু একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের বৈশিষ্ট্য এবং এধরনের প্রশাসন পাকিস্তান যেসব ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত তার সমস্ত কিছুর সাথে বিরোধাত্মক।