
বাংলাদেশের গোপালপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন পরবর্তী কার্যক্রম চলছে। ইউএন উইমেন এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক-এর ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে। সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহার করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রান্নায় পেঁয়াজ গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এর দাম তাই সবসময়ই স্পর্শকাতর বিষয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের মতো দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি হলে ব্যাপক হইচই শুরু হয়ে যায়। তৈরি হয় রাজনৈতিক চাপ। প্রচলিত পদ্ধতিতে আমদানি করতে বিলম্ব হওয়ায় নভেম্বর মাসে এসে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ছয়গুণ বৃদ্ধি পায়। সংকট মেটাতে সরকার উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেয়।
This woman with her 45 days old child expressed happiness after buying 1 kg onion in low price from government distribution point in #Bangladesh. This days onion price increased. 1 kg onion is being sold on more than 3 us dollar, generally price is half of 1 dollar. pic.twitter.com/ww9hTj1HsK
— Ershad Khan (@ershadkhandu) November 17, 2019
পেঁয়াজ কিনতে ৪৫ দিন বয়সী সন্তানকে কোলে নিয়ে সরকারি বিতরণ পয়েন্টে এসেছিলেন এই মহিলা। ৪৫ টাকায় ১ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পেরে তিনি খুশি। দেশে পেঁয়াজের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ১ কেজি পেঁয়াজ ৩ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে যা অর্ধেক ডলারে পাওয়া যায়।
এ অবস্থা কীভাবে হলো?
২০১৮-২০১৯ সালে বাংলাদেশ ২.৩৩ মিলিয়ন মেট্রিক টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন করে। যদিও দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন। ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সাধারণতঃ প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকে। উল্লেখ্য, ভারত পৃথিবীর এক-চর্তুথাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন করে।
অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। যদিও বিশেষজ্ঞরা ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে করেন। এই সিদ্ধান্ত কৃষকের সমস্যার সমাধান করবে না। বরং তাদের আরো ক্ষতি করবে।
এ বছর বাংলাদেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ভালো হয়নি। এর উপর ভারত থেকে আমদানি বন্ধ। পেঁয়াজ সংকট তাই আরো খারাপ হয়ে দেখা দেয়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশ বাইরের অন্য দেশগুলোর প্রতি মুখাপেক্ষি হয়। এদিকে ভারত খুব শিগগিরই রপ্তানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিবে, এটা মনে করে আমদানিকারকরা শুরুতে খুব বেশি পরিমাণে আমদানি করেনি। আবার কিছু অসৎ ব্যবসায়ী অবস্থার সুযোগ নিয়ে পেঁয়াজ মজুদ করে কৃত্রিম সংকটও তৈরি করে।

ঢাকার সদরঘাটে একজন পেঁয়াজ বিক্রেতা। গ্যারি পপলসনের ফ্লিকার অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি নেয়া হয়েছে। সিসি বিওয়াই-এনসি-এনডি লাইসেন্সের আওতায় ব্যবহার করা হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রতি কেজি ৪৫-৫০ টাকা। অক্টোবরে এসে দাম বেড়ে সেটা দাঁড়ায় ১১০-১২০ টাকায়। আর নভেম্বরে এসে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০ টাকা।
At the capital’s Karwan Bazar wholesale market, traders were selling a sack of five kg local onion for Tk950 to Tk1,000. On the other hand, five kg imported onion were selling between Tk800 and Tk900 and five kg onion from Turkey were selling at Tk750 to Tk800.#Bangladesh pic.twitter.com/jULau4l9D7
— sourav saha (@souravs95685663) November 16, 2019
রাজধানীর কাওরান বাজারে পাইকারিতে বিক্রেতারা ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৯৫০-১০০০ টাকা। অন্যদিকে আমদানি করা ৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৮০০-৯০০ টাকা। আর তুরস্ক থেকে আমদানি করা ৫ কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৭৫০-৮০০ টাকা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ভারত সফর করেন। তখন মজা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করায় তিনি রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করছেন না, সেটা জানান। বাংলাদেশ বার বার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালেও ভারত প্রত্যাহার করেনি। বরং এই নিষেধাজ্ঞা আরো কয়েক মাস থাকবে এমনই ইঙ্গিত দিয়েছে।
পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় দূর দেশ থেকে আমদানি করতে গেলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। বাংলাদেশি আমদানিকারকদের কাছে প্রতিবেশী দেশ ভারত সবচেয়ে কার্যকর বিকল্প। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বাংলাদেশ বাধ্য হয়ে চীন ও মিশর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করছে। সংকট দ্রুত সামাল দিতে মিশর, তুরস্ক এবং পাকিস্তান থেকে উড়োজাহাজে করে পেঁয়াজ আমদানি করছে।
Onion diplomacy??
■India bans onion exports as floods affect crops in #Maharashtra #Karnataka #Telangana & push prices over Rs 100/kg.
■Neighbouring countries like #Bangladesh face the crunch.
■ #Pakistan steps in. To export 300 tons of onions to BD after 15 years of hiatus.— Rajeev Sharma (@kishkindha) November 16, 2019
পেঁয়াজের কুটনীতি।
মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানায় বন্যায় পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দাম বেড়ে ১০০ রুপির বেশি হয়েছে। তাই পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ।
এতে করে প্রতিবেশি দেশ বাংলাদেশ পেঁয়াজ সংকটের মুখে পড়েছে।
পাকিস্তান সুযোগটি নিয়েছে। ১৫ বছর পরে তারা বাংলাদেশে ৩০০ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করেছে।
কৃত্রিম সংকট
প্রত্যেক বাংলাদেশি পরিবারের মাসিক ব্যয়ের সামান্য অংশই পেঁয়াজের পেছনে খরচ হয়। তবে, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গরীব মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার ভর্তুকি দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। যেসব স্থানে সরকার পেঁয়াজ বিক্রি করছে, সেখানে প্রচুর মানুষ ভিড় করে পেঁয়াজ কিনছেন।
People gather to buy onion as subsidize price in Dhaka, Bangladesh.
The price of onion has hit a record high with USD $3 per Kilogram, ten times higher than its price seven months ago.#onion #pricehike #bangladesh?? #agriculture #confrontation #gathering #economy pic.twitter.com/tj8Jq8H5LK— zakir hossain chowdhury (@auni_auniket) November 17, 2019
সরকার যেসব জায়গায় ভর্তুকি দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, সেখানে মানুষজন গিয়ে ভিড় করছেন। পেঁয়াজের দাম নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। প্রতি কেজি ৩ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। যা সাত মাস আগের দামের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।
অনেকে অভিযোগ করছেন বিক্রেতারা মজুদ করে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মজুদ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানোর অভিযোগে গত দুই মাসে ২ হাজারের বেশি বিক্রেতাকে জেল-জরিমানা করেছে।
খাতুনগঞ্জে আড়ত থেকে বের হচ্ছে পঁচা পেঁয়াজ!
দাম আরও বাড়বে সে আশায় নিজেদের গুদামে মজুদ করে রাখা পেঁয়াজে পচন ধরেছে!!
কথায় আছে না, অতি লোভে তাঁতি নষ্ট! pic.twitter.com/KuQkryvIOR
— sadia sultana (@sultana8800) November 16, 2019
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে মজুতদারির প্রতিবাদে অনেকেই রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
পেঁয়াজ না খেলে কি আপনি মরে যাবেন?
যদি তাই না হয়, আসুন একযোগে পেঁয়াজ বর্জন করে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিষদাঁত ভেঙে দেই! pic.twitter.com/FrGhmehW6u
— S.H. SagoR (@Shahada12873780) November 17, 2019
পেঁয়াজ সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে আপনিই যথেষ্টঃ
১৷ আগামী ১৯/১১/২০১৯ থেকে ২৯/১১/২০১৯ এই ১০ দিন কেউ পেঁয়াজ কিনব না।
২। আশ-পাশের পরিবার প্রতিবেশীকে এই তথ্যটা জানিয়ে পেঁয়াজ না কেনার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন।
৩। ১০দিন পেঁয়াজ কেনা বন্ধ, দৃঢ় মনোবলে অঙ্গিকারাবদ্ধ হোন। pic.twitter.com/JEYHNmS7kh
— BURHAN UDDIN (@BURHANU96887202) November 16, 2019
এদিকে পেঁয়াজ সংকট মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেঁয়াজ ছাড়াই তার রান্না হচ্ছে বলে মিডিয়াকে জানিয়েছেন। পেঁয়াজ ছাড়া রান্না মজাদারও বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। অনেকেই পেঁয়াজ ছাড়া নিয়মিত খাবার রান্নার রেসিপিও অনলাইনে শেয়ার করেছেন।
পেঁয়াজ ছাড়া রান্না / cooking without onion / peyaj sara ranna / how to cook without onion https://t.co/zeiHKwA07i pic.twitter.com/J1Apn6Dp0q
— refreshrecipes (@refreshrecipes) November 19, 2019
আইরিন সুলতানা ফেইসবুকে লিখেছেন:
পেঁয়াজ বস্ত্রের মত আবশ্যক না। মৌলিক অধিকার না। [..] বাঙালির বহু ব্যঞ্জন এমনিতেই পেঁয়াজ ছাড়া হয়। আর যেসবে লাগে তা পরিমাণে কম দিয়েও রাঁধা যায়। অথবা পেঁয়াজ না দিয়েও উপাদেয় করা যায়।
আপনার যদি আজকাল ৫ কেজির জায়গায় আড়াই কেজিতে চলে যায় তো বুঝবেন এটাই আসল পরিমাণ। এতদিন আপনি পেঁয়াজ বিলাসি ছিলেন।
পেঁয়াজ সংকটের প্রতিক্রিয়ায় নেটিজেনরা এরকম সৃজনশীল ও মজার মজার মিমও শেয়ার করেছেন :

পেঁয়াজের দাম বাড়ায় ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টা পেঁয়াজ খাওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভাগ্য ভালো যে কাপড়ের দাম বাড়ে নাই। ফেইসবুকের গুজব পেইজের এই মিম সবাই ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছেন।
পেঁয়াজ নিয়ে মজার মজার কৌতুক সত্ত্বেও বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলো পেঁয়াজ ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবাদ করেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল বিএনপি পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারকে দায়ী করেছে। এর প্রতিবাদে তারা দেশজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। এটা নিয়ে তারা সংসদে বিতর্কও করেছে।