১৬ মে ২০১৯ তারিখে মায়ানমারের রাজধানী ইয়ানগন এ একদল বৌদ্ধ সন্ন্যাসী সাদা গোলাপ্ নামের এক প্রচারণা শুরু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল রমযান মাসে যে সমস্ত মুসলমান রোজা রেখেছে তাদের একটি করে সাদা গোলাপ উপহার দেওয়া। মূলত রমযান মাসে নামাজ পড়ার জন্য মুসলমানদের অস্থায়ী ভাবে নির্মিত মসজিদের পাশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী একদল জনতা সমবেত হয়ে নামাজ পড়া বন্ধের দাবী জানানোর পর মুসলমানদের প্রতি একাত্মতা প্রদর্শনের জন্য এই আন্দোলন শুরু হয়।
১৪ ও ১৫ মে তারিখে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ১০০ জনের একদল উগ্রবাদী জনতা মুসলমানদের নামায পড়তে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তাদের দাবি ইয়ানগন এর দক্ষিণ ডাগন এলাকায় যে তিনটি অস্থায়ী মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।
এই উগ্রবাদ এর জবাবে, বান্দাত্তা সেইদাত্তা নামের এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী যিনি এশিয়া লাইট সায়ারদাওয়া নামের এক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা তিনি সাদা গোলাপ নামের এই আন্দোলন শুরু করে। ধর্ম পালনে মুসলমান নাগরিকদের উৎসাহ ও সমর্থন প্রদান করার জন্য বান্দাত্তা সেইদাত্তা সাউথ ডাগন এর মুসলমান নাগরিকদের সাদা গোলাপ প্রদানের জন্য সেখানে গিয়ে হাজির হন। আন্তধর্ম বিশ্বাসী একটিভিস্টরা এই আন্দোলনে যোগ দেয় আর এক সপ্তাহের মধ্যে মায়ানমারের অন্যান্য শহরেও এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে ছিল মান্দালয়, সাগাইং, মাওলামইন এর মত শহর। এমনকি এই আন্দোলন মালয়েশিয়া বসবাসরত মায়ানমার এর নাগরিকদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলন মায়ানমারের নাগরিকদের এই আহ্বান জানাতে থাকে যে তাদের বন্ধুরা যেই জাতি বা ধর্মের হোক না কেন তাদেরকে যেন একটা সাদা গোলাপ উপহার দেয়।
একই সাথে এই অন্দোলন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের আহ্বান জানায় যেন তারা #হোয়াইটরোজফরপিস নামের হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে নাগরিকরদের মুসলমানদের সাদা গোলাপ উপহার দেওয়ার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।
এই আন্দোলনের নিজস্ব ফেসবুক পাতার বিবৃতি প্রদান করা হয়েছে তা হচ্ছে:
[…] ငြိမ်းချမ်းရေးအတွက် နှင်းဆီဖြူလှုပ်ရှားမှုသည် မြန်မာနိုင်ငံအတွင်း ဖြစ်ပွားနေသည့် ဘာသာရေး ၊ လူမျိုးရေး မတည်ငြိမ်စေရန် ၊ အမုန်းပွားစေရန် တမင်ကြံစည်လုပ်ဆောင်မှုများကို ပြည်သူလူထုက ကြံကြံ့ခံ၍ ငြိမ်းချမ်းရေး၊ လူမှု သဟဇာတ ဖြစ်ရေးနှင့် တန်းတူညီမျှရေးကို တန်ဖိုးထားသော ငြိမ်းချမ်းရေးကို ချစ်မြတ်နိုးသူ မြန်မာပြည်သူ၊ ပြည်သားများ၏ လှုပ်ရှားမှု ဖြစ်ပါသည်။ […]
শান্তির জন্য সাদা গোলাপ মায়ানমারের নাগরিকদের এক আন্দোলন, যারা শান্তিকে ভালবাসে এবং সমতা ও সামাজিক ঐক্যের জন্য মূল্য প্রদান করে, যারা সমাজে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঘৃণা ছড়ায় এবং জাতিগত ও ধর্মীয় অস্থিরতা সৃষ্টি করে যা এখন এই সমাজকে উসকাচ্ছে, মায়ানমারে এই ধরনের আন্দোলন এসবের প্রতিরোধ গড়ে।
এদিকে কয়েকজন নেট নাগরিক ইয়ানগন ইয়ুথ নেটওয়ার্কের প্রোফাইল পিকচার নিজেদের প্রোফাইল পিকচার হিসেবে আপলোড করে, মুসলমানরা যে দেশটিতে নানান ভাবে যে হয়রানির শিকার করা হচ্ছে তার প্রতিবাদে এই প্রোফাইল পিকচার আপলোড করা:
ဘာသာရေးအစွန်းရောက်များအတွက် ငါတို့နိုင်ငံမှာ နေရာမရှိ
আমাদের দেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের কোন স্থান নেই।
মায়ানমারের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। ২০১৪ সালে এমএসএ নামের এক উগ্রপন্থী বৌদ্ধ ধর্মীয় দল এক উগ্র ধর্মীয় আন্দোলন শুরু করে। যদিও মাবাথা নামের এই আন্দোলনকে রাষ্ট্র অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে, তবে ৯৬৯ নামের এই আন্দোলনের উদ্যোক্তা সংগঠন ও তাদের নেতা উইরাথু দেশ জুড়ে সংখ্যালঘু মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আন্দোলন ও অনলাইনে ব্যাপকভাবে ঘৃণা মূলক বাক্য ছড়ানোয় উৎসাহ যুগিয়ে গেছে। ২০১২ সাল থেকে মায়ানমার জুড়ে বেশ কিছু তৎক্ষণাৎ ধর্মীয় সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে, যার মধ্যে ছিল রাখাইন প্রদেশে অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গা মুসলমান ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের মাঝে বিশাল আকারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা।
মায়ানমারে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের সহাবস্থানের বিষয়টি পুনরায় গড়ে তোলার প্রচেষ্টায় যুক্ত সুশীল সমাজের নেতা থাট সউই উইন বিশ্বাস করেন যে দেশটির সামাজিক ঐক্যের জন্য সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। ইররাওয়াদ্দি নিউজ এজেন্সিকে দেওয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন :
রাজনৈতিক নেতাদের নৈতিক নেতৃত্বকে আমি অনেক বেশী গুরুত্ব প্রদান করি। যদি মন খুলে বলি আমাদের নেতারা সেই নৈতিক নেতৃত্ব প্রদানে নিদারুণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং অজস্র নাগরিক নিহত হয়েছে […] অন্তত মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে এই স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে যে তারা এই দেশেরই বাসিন্দা। এদেশে মুসলমানেরা যন্ত্রণা ভোগ করেছে, তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করার কারণে তারা এখন বিপদে পড়েছে। মুসলমানেরা অনেক যন্ত্রণা ভোগ করেছে, এখন আরাকান এর বাসিন্দারা অনেক যন্ত্রণা ভোগ করছে, একই ভাবে কাচিন ও শানের জনগণও। কেবল যখন একজন নেতা সমাজের প্রথা ও মূল্যবোধ নির্ধারন করে তখন কি নাগরিকেরা সেটা অনুসরণ করতে সমর্থ হয়[…] এমন একদিন আসবে যখন আমাদের নেতারা সাহসের সঙ্গে উচ্চারণ করবে এই দেশে এই ধরনের অনৈতিক আচরণের কোন জায়গা নাই এবং সমাজে নৈতিক আদর্শ কি ধরনের হবে সেটার এক সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে, তারপর হয়ত আশা করা যায় আমাদের সমাজে কিছু পরিবর্তন ঘটবে।