
এক ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদির মুখোশ পরে গুজরাটের একটি নির্বাচনী র্যালীতে অংশ নিয়েছেন। ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স, সিসি বাই-এসএ ২.০
চলতি সপ্তাহের ১১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৯ মে পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পুরো ভারতের ২৯টি প্রদেশে এবং সাতটি ছোট ইউনিয়ন এলাকায় এবং নির্বাচনের মূল ফলাফল প্রকাশিত হবে ২৩ মে।
ভারত মূলত: ফেডারেল সরকার পদ্ধতিতে পরিচালিত হয় যেখানে ফেডারেল, প্রদেশ এবং স্থানীয় পর্যায় থেকে নির্বাচিত হন প্রতিনিধিরা।
সরকারের প্রধান হন প্রধানমন্ত্রী যিনি ভারতের নিম্নকক্ষ লোকসভা’র নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা নির্বাচিত হন।
আনুমানিক ৯০ কোটি, মানুষ যার মধ্যে আছেন ৪৩ কোটি ২ লাখ নারী ৫৪৩ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবেন যারা প্রত্যেকে এক একটি আসনের নির্বাচিত সদস্য হবেন। এবারের নির্বাচনে ৮,০০০ প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
সবমিলিয়ে নির্বাচনে কাজ করছেন ১ কোটি নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং পুরো নির্বাচনের খরচের পরিমান ৫০ হাজার কোটি ভারতীয় রূপি (৭২২ বিলিয়ন ডলার)।
মূল কলাকুশলীরা
চলতি বছর, নির্বাচনে মূল প্রতিদ্বন্ধী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনতা পার্টি’র (বিজেপি) নরেন্দ্র মোদী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়া বিজেপি এবারও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
তিনি রাহুল গান্ধী এবং তার দল ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সরকারে থাকা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসে’র মূল প্রতিদ্বন্ধী এবং এ দলটি বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল। রাহুলের দাদী ইন্দিরা গান্ধী দেশটির দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী এবং তার দাদা জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপি ২০টি দলের সমন্বয়ে তৈরি ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’কে (একটি নির্বাচন কেন্দ্রিক জোট) নেতৃত্ব দিচ্ছে যার মধ্যে রয়েছে শিব সেনা, এআইএডিএমকে, জনতা দল এবং শিরোমণি অকালী দল।
অন্যদিকে ২৫টি দলের সমন্বয়ে তৈরি ইউনাইডেট প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স’কে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রাহুল গান্ধী’র দল ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস যার মধ্যে রয়েছে ডিএমকে, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি এবং রাষ্ট্রিয় জনতা দল।
অন্যান্য আঞ্চলিক দলের মধ্যে উত্তর প্রদেশের সমাজবাদী পার্টি, দিল্লী’র আম আদমি পার্টি, পশ্চিম বঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস এবং বহুজন সমাজ পার্টি মিলে একটি ইউনাইটেড অপজিশন অ্যালায়েন্স করার চেষ্টা করছেন ভারতীয় জনতা পার্টি যাতে পুনরায় নির্বাচিত হতে না পারে।
সাম্প্রতিক নির্বাচন কেন্দ্রিক জরিপে মোদী’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স প্রতিদ্বন্ধীতায় অনেক এগিয়ে আছেন বলে জানা গেছে, যদিও নির্বাচনকালীন সময়ে অনেক কিছু’রই পরিবর্তন হয়ে যায়।
Election time in India. #IncredibleIndia #2019LokSabhaElections # pic.twitter.com/4SF91AI7jL
— Brij Singh (@brijmgmt01) April 6, 2019
নির্বাচনের সময়কালে ভারত।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচন যুদ্ধ:
২০১৪ সালের নির্বাচনে মোদী’র নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি’র নির্বাচনে জয়ের পথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। দুই বছর আগে মোদি ধারণা করেছিলেন ২০১৯ সালের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে মোবাইল ফোন।
চলতি বছর সে চিন্তা থেকেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং হ্যাশট্যাগ যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন প্রতিদ্বন্ধীদের সাথে।
পড়ুন: ভারতের ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগে চলছে হ্যাশট্যাগ যুদ্ধ।
স্ক্রল.ইন-র একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিজেপি নির্বাচনকে সামনে রেখে গুগল এবং ফেসবুকে বিজ্ঞাপনের পেছনে প্রচুর ব্যয় করছে। হাফিংটন পোস্টে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বিজেপি অলাভজনক নানা খবরের মাধ্যমে অসম্পূর্ণ তথ্য নির্বাচনের প্রচারনার অংশ হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছে যার মধ্যে বেশির ভাগই মিথ্যা তথ্য এবং যা ছড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং হোয়াটসঅ্যাপে।
Popular FB page, My First Vote For Modi recently offered NaMo merchandise in exchange for a vote for PM Modi. After HuffPost's story revealed this page is run by BJP's secretive consultancy firm, question is, who paid for these ads? @Maha_Shoonya asks. https://t.co/WI2bL9fFUT
— The Quint (@TheQuint) April 5, 2019
মাই ফার্স্ট ভোট ফর মোদি নামের জনপ্রিয় একটি ফেসবুক পেজ থেকে সম্প্রতি নামে মোদী ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রির একটি সেবা ঘোষণা করা হয় যেখানে মোদিকে ভোট দেওয়ার কথা হচ্ছে মূল প্রতিপাদ্য। হাফিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী এ পেজটি বিজেপি নিজেদের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিচালিত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ ধরনের বিজ্ঞাপনের জন্য অর্থ দিচ্ছে কে?
নরেন্দ্র মোদি’র বায়োপিক মুক্তি পাওয়ার তারিখ ঘোষণা পর নির্বাচনের শর্ত ভঙ্গের আশঙ্কা করা হয় এবং রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন হতে পারে এমন আশংকার কথাও শোনা যায়। এ বিষয়টি জানা যায় মিডিয়া সার্টিফিকেশন এবং মনিটরিং কমিটির তথ্য অনুযায়ী:
‘PM Narendra Modi’ Biopic Cleared For Release on India’s Election Day https://t.co/o7FVLqVZeO pic.twitter.com/MfT8UvdyN3
— sdwahine78 (@sdwahine78) April 7, 2019
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মজীবনীমূলক চলচ্চিত্রটি ভারতের নির্বাচনের দিন মুক্তি পাওয়ার অনুমোদন পেয়েছে।
এ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বিবেক ওবেরয় মোদি বায়োপিকের প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং বিজেপি’র পক্ষ থেকে এ সিনেমায় প্রযোজনার সাথে কোন ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকার বিষয়টি বলা হয়েছে।
একই ভাবে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের একটি প্রচারণামূলক গানের বিষয়েও নির্বাচন কমিশন দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
The #Congress had to remove one stanza from its campaign theme song, which was an apparent jibe at Prime Minister @narendramodi , after the Election Commission objected to it, sources said. #LokSabhaElections2019 #BJP
— Sachin Kumar (@SachinKrIndia) April 7, 2019
সূত্র জানিয়েছে, কংগ্রেস তাদের নির্বাচন প্রচারণায় যে গান তৈরি করেছে সেখানে বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী @narendramodi সংশ্লিষ্ট ভিন্ন কথা ছিল যা নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি গোচর হয়েছে এবং বিষয়টিতে নির্বাচন কমিশন আপত্তি জানিয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক গবেষক ও কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কঠোর এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের উপর জোর দেওয়ার কথা বলেছেন যাতে করে নির্বাচন প্রচারণার ক্ষেত্রে ভূল বা অন্যকে হেয় করা কোন তথ্য প্রচার না হয়।
সরকার ইতিমধ্যে এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ কয়েকটি উদ্যোগও নিয়েছে:
Election Commission of India: Do not politicize the Indian Army.
Also Election Commission of India: The powerful weapon is not only the gun we hold. It's also the button we press. pic.twitter.com/BoNKW7EDbx
— Manish Mohan (@manishmo) April 7, 2019
ভারতীয় নির্বাচন কমিশন: ভারতের সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক দলের করা যাবে না।
এবং ভারতীয় নির্বাচন কমিশন: শক্তিশালী অস্ত্র শুধু বন্দুক নয় যা আমরা ধরে বসে থাকি বরং সেটিও গুরুত্বপূর্ণ যা আমরা কিবোর্ডের বাটনের মাধ্যমে প্রেস করার জন্য ধরে রাখি।
নির্বাচন কমিশন অনেকগুলো মোবাইল অ্যাপসও ইতিমধ্যে চালু করেছে:
To facilitate voters and candidates in making the #Elections2019 a grand success, Election commission of India is enabling stakeholders with best technology.
✔For voters: Voter helpline,PwD & cVIGIL Apps
✔Candidates: Suvidha App
✔Officials: Sugam App#PollsWithAIR@ECISVEEP pic.twitter.com/ZxhH8KzRH5— All India Radio News (@airnewsalerts) March 31, 2019
ভোটার এবং প্রার্থীদের একসাথে করে সফল নির্বাচন করতে ভারতের নির্বাচন কমিশন সেরা প্রযুক্তি নিয়ে সহযোগীদের সাথে কাজ করছে।
✔ভোটারদের জন্য: ভোটার হেল্পলাইন, পিডব্লিউডি এবং সিভিআইজিআইএল অ্যাপস
✔প্রার্থী: সুবিধা অ্যাপ
✔নির্বাচনী কর্মকর্তা: সুগম অ্যাপ
ভুয়া সংবাদ বা ফেক নিউজের অবস্থান
বিবিসি সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে অসম্পূর্ণ ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হবে হোয়াটসঅ্যাপ। ভারতে ২৫ কোটি ব্যবহারকারী নিয়ে বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ হিসেবে সবচেয়ে জনপ্রিয় অবস্থানে আছে হোয়াটসঅ্যাপ।
পড়ুন: ভারতের নির্বাচন একেবারে কাছে চলে এসেছে — এবং মিথ্যা সংবাদ প্রচারের বিষয়টি থেমে নেই।
ভারতের সরকারের তুমুল চাপের মুখে, হোয়াটসঅ্যাপ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে করে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কারিগরি পরিবর্তনও আনা হয়েছে অ্যাপটিতে। যার মধ্যে রয়েছে, একটি নির্দিষ্ট বার্তা একই সাথে অনেককে পাঠানোর সুবিধা সীমিত করা। বিষয়টি ব্যবহারকারীদের জানানোর জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি কর্মশালার আয়োজনও করা হয়েছে।
ফেসবুকের ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ার পাবলিক পলিসি পরিচালক শিবনাথ থাকরাল জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানটিও বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচনকালীন সময়ের কথা বিবেচনায় রেখে।
ফেসবুক প্রায় ২০০ কোটি ফেক অ্যাকাউন্ট ইতিমধ্যে মুছে ফেলেছে এবং প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে ভারতে সবচেয়ে বড় ফ্যাক্ট চেকিং সহযোগী কার্যক্রমের ওপর বিশ্বাস রাখছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি নির্বাচনকালী সময়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ভারতের নিউ দিল্লীতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা যা ওয়ার রুম হিসেবে পরিচিত করা হয়েছে করেছে যেখানে প্রায় ৪০টি দল তথ্যের গতিবিধি এবং সঠিক তথ্য প্রচারের কাজে নজর রাখবে।
যাই হোক, সাধারণ মানুষ এখনও নির্বাচন নিয়ে বেশ আশাবাদী।
My SandArt for #voter awareness with message “Your vote, Your Voice & Vote for Better India” , at Puri beach in Odisha pic.twitter.com/JWsKBbibIV
— Sudarsan Pattnaik (@sudarsansand) April 7, 2019
উড়িষ্যার পুরি বিচে আমার বিশেষ বালু শিল্প যেখানে ভোটারদের জন্য বিশেষ বার্তা “আপনার ভোট, আপনার কন্ঠ শোনানো এবং সঠিক ভারত গড়তে আপনার ভোট”।