- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ককেশাসে সমকামীরা তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে

বিষয়বস্তু: মধ্য এশিয়া-ককেশাস, আজারবাইযান, আর্মেনিয়া, জর্জিয়া, নাগরিক মাধ্যম, সমকামী অধিকার

ছবি তুলেছেন ওসি মিডিয়ার জন্য আনা নিকোঘোসিয়ান। অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশিত।



প্রতিবেদনটি প্রথম প্রকাশিত হয় ওসি মিডিয়ায় [1]। এটি একটি সমন্বিত লেখা যার লেখকেরা হলেন আরমাইন আভেতিসিয়ান [2], নিকা মওসাভি [3] এবং দাতো পারুলাভা [4]

অনবরত নিপীড়ন, ভেদাভেদ ও সহিংসতা দক্ষিণ ককেশাসের সমকামীদের বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে।

আর্মেনিয়া থেকে মেলের বার্তা

“আমি তখনও কিন্ডারগার্টেনে পড়ি যখন আমি বুঝলাম যে আমি আসলে অন্যের শরীরে জন্ম নিয়েছি।”

‘স্কুলে সব সময় আমার খাতায় আমাকে ‘মেয়ে শিক্ষার্থি’ লিখতে বাধ্য করা হত। আমি যতবারই মেয়ে কথাটি কেটে দিতাম আমার শিক্ষকেরা আবার সেটা জুড়ে দিতেন। আমার বেড়ে ওঠা খুবই সরলরৈখিক ছিল, এমন কোন সময় ছিলনা যে আমি হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করলাম, আমি সবসময়ই নিজেকে একজন ছেলে মনে করেছি।’ – ত্রিশ বছর বয়সী গিউম্রির মেল দালুজিয়ান ওসি মিডিয়াকে জানান।

মেল দালুজিয়ান, বয়স ৩০, গিউম্রি, উত্তরপশ্চিম আর্মেনিয়া (ব্যক্তিগত সংগ্রহ)

মেলের সর্বোচ্চ চেষ্টার পরেও সমাজ তাকে একটি মেয়ে হিসেবেই দেখেছে এবং তাকে মেলাইনি নাম দিয়েছে। মেল ২০০২ সাল থেকেই ভার উত্তোলন করে আসছেন এবং আর্মেনিয়ান ওয়েটলিফটিং ফেডারশনের নারী জাতীয় দলের একজন সদস্য ছিলেন।

মেল বলেন, “আমার প্রশিক্ষক আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই বানিয়েছে যাতে আমি নারী হিসেবেই ভার উত্তোলন করি, আর কিছু সময়ের জন্য আমিও ভেবেছিলাম হয়ত এটাই ঠিক। তবে অনেক চেষ্টার পরে আমি বুঝতে পারলাম যে, আমারও একটি ব্যক্তিগত জীবন আছে, সুখি হওয়ার অধিকার আছে, আর তাছাড়া আমার জীবন বা জীবনযাপনের পদ্ধতিতো কারো কোন ক্ষতি করছেনা।”

মেলের মতে, ২০১৫ সালে সে পিংক আর্মেনিয়ার প্রথম এলজিবিটি ফোরামে যোগদান করে, তখন একটি দলীয় ছবি অনলাইনে প্রকাশিত হলে গণমাধ্যমগুলো তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখালেখি শুরু করে, এতে তার পেশাগত জীবনে হুমকি আসতে শুরু করে। দুবার ইউরোপিয়ান চাম্পিয়ন এবং দুবার পুরো পৃথিবীতে ব্রোঞ্জ মেডেল পাওয়া মেলকে দুবছর আগে গিউম্রি ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে হয়।

২০১৫ সালে আর্মেনিয়ায় প্রথম এলজিবিটি ফোরাম (পিংক আর্মেনিয়া)

“এক বছর নিজ ক্ষেত্রে কাজ পাবার ব্যর্থ চেষ্টা করে ২০১৬ সালে আমি আর্মেনিয়া ত্যাগ করি। আমার প্রতি এত বেশী বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে যে আমি কোন জিমে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ পাইনি। এখন আমি নেদাল্যান্ডসএ থাকি, এখানে আমি কোন ভেদাভেদের সম্মুখীন হইনি, বরং সবাই অকাতরে সমর্থন দিয়েছে। এখন আর আমি আর্মেনিয়ায় ফিরে যাবার কথা ভাবতেও পারিনা।”

মেল বলেন আপনি যদি একটু ভিন্ন হন তাহলে গিউম্রিতে বসবাস করা খুব কঠিন, আর যদি আপনি পরিচিত মুখ হন তাহলে তো কথাই নেই।

“গিউম্রি আর্মেনিয়ার সবচেয়ে রক্ষণশীল শহর। এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল পরচর্চা। যেটা মানুষ বোঝেনা সেটা নিয়ে একটা গল্প ফেদে অন্যকে বলা এখানকার মানুষ তাদের পবিত্র দায়িত্ব মনে করে, আর মিডিয়াও তাদেরকে এইসব গুজব ছড়ানোতে সাহায্য করে। অবশ্যই নতুন পরিবেশে এসে আমার কিছু সমস্যা হয়েছে, কারণ এখানে আমাকে আবার সব নতুন করে শুরু করতে হয়েছে, তবে আমি এখানে নিজেকে আমি যা সেভাবেই উপস্থাপন করতে পেরেছি। এখানে আমার বন্ধুরা আমাকে মেলাইনি নামে ডাকেনা বা কাউকে ডাকতেও দেয়না।”

মেল বলেন, তার বাবা মায়ের এতে কোন সমস্যা হত না যদি সমাজ এভাবে হস্তক্ষেপ না করত।

“এলজিবিটি মানুষেরা আর্মেনিয়ায় সব ধরণের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অবশ্যই যদি আপনার গোপন কোন বিষয় থাকে, তবে আপানি তা লুকিয়ে, স্বাভাবিক ভাবে বিয়ে করে একটি নিরিবিলি জীবন যাপন করতে পারবেন। তবে একটু ভেবে দেখুন কেমন হবে সেই নিরিবিলি জীবন। আমার এমন কোন বন্ধু নেই যারা নিজেদের লুকিয়ে না রেখে নিরাপদ জীবন যাপন করছে।”

২০০৩ সাল থেকে আর্মেনিয়ায় সমকামী সম্পর্ক বৈধতা পেয়েছে, তবে এখানে সমকামীদের অধিকার সংরক্ষিত হয়নি। ২০১৭ সালে সমকামী সংস্থা পিংক আর্মেনিয়ার করা একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিভিন্ন গণমাধ্যম, নাগরিক অধিকার সংস্থা এবং সমকামীদের নিজের প্রচারণার পরেও আর্মেনিয়ার সাধারণ মানুষ সমকামীদের প্রতি বিরুপ মনোভাব পোষন করে।

২০১৬ সালে পিংক আর্মেনিয়া এবং থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক (ককেশাস গবেষণা সংস্থা) এর গবেষণায় দেখা যায় যে, ৮৯% আর্মেনিয়ার জনগণ বাচ্চাদের সমকামীদের সাথে মেলামেশা করতে দেয়না।

গবেষণায় দেখা যায় যে যারা সমকামীদের সাথে মেলামেশা করে তাদের থেকে যারা মেলামেশা করেনা তারা সমকামীদের প্রতি বেশী বিরুপ।

সমকামী অধিকার কর্মীদের মতে, যদিও সঠিক সংখ্যা জানা যায় না তবে প্রতি বছরই বহুসংখ্যক সমকামী, সমকামী বিদ্বেষের শিকার হয়ে আর্মেনিয়া ত্যাগ করছে।

জর্জিয়া থেকে তাজো

বাইশ বছর বয়সী তাজো সোজাসভিলি পুর্ব জর্জিয়ার কাখাতি এলাকায় জন্ম গ্রহণ করেন, তিনি আর সেখানে গিয়ে তার পরিবারের সাথে দেখা করতে পারেননা। তিনি ভয় পান যে সেখানে গেলে হয়ত তাকে হয়রানী করা হবে তার যৌন বৈশিষ্টের কারনে। এবং এমন কিছু হলে তার পরিবারকে কি ধরণের সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হবে তা ভেবে তিনি উদ্বিগ্ন থাকেন।

পুর্ব জর্জিয়ার কাখেটি থেকে তাজো সোজাসভিলি, বয়স ২২ (দাতো পারুলাভা/ওসি মিডিয়া)

তাজো সমকামীদের অধিকারের জন্য কাজ করা একটি সংস্থা “ইকুয়ালিটি মুভমেন্টের” সদস্য। ২০১৮ সালে জর্জিয়ার সংসদের সামনে দেয়া তার আবেগঘন বক্তব্যের কারনে তিনি খবরের শীর্ষে আসেন।

“আমি গ্রামে আমার মা বাবা, দাদা, দাদীকে দেখতে যেতে পারিনা। ১২ বছর বয়সে স্কুলে আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি এখনও স্কুল কে ঘৃণা করি কারণ প্রতিটি দিন সেখানে ছিল নরকযন্ত্রণা, প্রতিদিন যেন মৃত্যর পরোয়ানা। আর এখন আমি আমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করতে পানিনা, কারণ এটা অত্যন্ত বিপদজনক। তোমাদের আর আমার মধ্যে এটাই পার্থক্য। তোমরা জানো না যে এখানে দাড়িয়ে এই কথা গুলো বলার জন্য আমাকে কতবড় বিপদে পরতে হবে। তোমরা কোন দিনও বুঝবেনা কারণ তোমরা বিষমকামী সুবিধাভোগী মানুষ। আমি তোমাদের ঘৃণা করি।” তাজো এই বক্তব্য দেন ১ মে, সংসদের মানবাধিকার কমিটির সামনে যেদিন তারা ১ মে কে সমাকামীদের ঘৃণা না করার জন্য আন্তর্জাতিক দিবস ঘোষণা করতে চেয়েছিল কিন্তু করেনি।

২০১৭ সালে প্রসিকিউটরের দপ্তর থেকে ৮৬ টি ঘৃণার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধ পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে, তার মধ্যে ১২টি ছিল যৌন অভিযোজন এবং ৩৭টি লিঙ্গ বৈষম্য মুলক।

সরকারী উকিলদের প্রতিবেদন অনুযায়ী সমকামীরা নিজের বাড়িতে এবং বাইরে যেভাবে সহিংসতার শিকার হচ্ছে তা খুবই ভয়ানক এবং সরকার এই সমস্যাটি সমাধানের কোন চেষ্টাই করছেনা।

তাজোর বক্তব্যটি পুর্বপরিকল্পিত ছিলনা। যখন সে বুঝল যে হঠাৎ করে তাকে টিভিতে দেখে তার পরিবার কি ভাববে তাই সে তার বাসায় ফোন করে এবং তার মায়ের সাথে কথা হয়।

“তিনি কাঁদছিলেন আর বলছিলেন কেন আমি এমন করলাম? মানুষ এখন কি বলবে? তিনি আমাকে তিরস্কার করছিলেন কিন্তু আমি জানি এটা তার রাগ ছিলনা এটা ছিল তার অনুশোচনা।” – তাজো বলেন।

তার ফোন ক্ষুদে বার্তা আর কলে ভরে যাচ্ছিল। অনেকেই তাকে সাধুবাদ জানান আবার অনেকেই তার কথা বুঝতে পারেনি।

এই বক্তব্যের পর তাজো আর তার বাবার সাথে কথা বলেনি।

তাজো বলেন, “আমার আত্মীয় স্বজনেরা এবং বন্ধুরা আমার বাবাকে ফোন করতে থাকে। তিনি তার ফোন ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিলেন। অনেকেই বাবাকে সমবেদনা জানায় তবে এই রকম আগেও হয়েছে যখন অন্য পরিবারকে গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে।”

সমকামী অধিকার কর্মিরা ১ মে জর্জিয়ার সংসদের সামনে সভা করছে। (দাতো পারুলাভা/ওসি মিডিয়া)

তার এই বক্তব্যের পর গ্রামের অনেকেই তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে।

“প্রায় ১০ জন গ্রামের মানুষ আমাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বন্ধুত্বের অনুরোধ জানায়, তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে কেন আমি মনে করি যে তারা সমকামী ঘৃণা করে। তারা আমাকে সাহায্য করতে চায় এবং বলে যে আমার ভালো থাকাই তাদের একমাত্র কামনা।”

কিন্তু অন্যেরা এতটা সহজ ভাবে নেয়নি। তারা তাকে বহু বছর থেকেই হুমকি দিয়ে আসছে।

তাজো জানান, “আমি জানি আরো বহুদিন আমি বাড়ি ফিরতে পারবোনা। তারা অনেক দিন থেকেই আমাকে হুমকি দিয়ে আসছে। যখন এই মানুষগুলো একত্র হয় তখন তারা খুবই ভয়ংকর অথচ যখন একা তাদের সাথে কথা হয় তখন তারা বলে তারা আমার ব্যাপারটা বোঝে।”

বক্তব্য দেয়ার পর প্রথম কয়েকদিন তাজো জনসম্মুখে আসতে ভয় পাচ্ছিল। সে সাধারণ যানবাহন এড়িয়ে চলছিল, কারণ তার ভয় ছিল কেউ যদি তাকে চিনে ফেলে! তবে এখন ধীরে ধীরে সব সাভাবিক হয়ে আসছে।

তিনি বলেন, “আমার পরিচিত অনেকেই বলেছে যে আমি বদলে গেছি। তারা আমার জন্য কিছু করতে পারে কিনা তা জানতে চেয়েছে কারণ তারা তাদের সন্তানকে এই রকম একটি পরিবেশে বড় করতে চায়না।”

কিন্তু আইন প্রণেতারা এমন নয়, তাজো জানান। তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক এই বিষয়টির গুরুত্ব বোঝেন আর কিছু সংখ্যক বুঝেও কিছুই করেন না।

তাজো তার মত তথাকথিত অদৃশ্য মানুষদের জন্যে কথা বলে গর্ব বোধ করেন।

“এটা শুধু আমার গল্প না। এটা সেই সব হাজারো মানুষের কথা এবং যন্ত্রণা যারা পারিবারিক নিগৃহের স্বীকার, যাদেরকে নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হতে হয়, তাদের বাবা মা তাদের ছেড়ে দেয়, যারা স্কুলে হাস্যরসের বস্তু হয়, যারা কর্মক্ষেত্রে ভেদাভেদের স্বীকার হয় শুধু মাত্র তাদের যৌন অভিযোজনের কারনে।”

সব শেষে তাজো বলেন, “একটা সময় আপনি আর নিতে পারবেননা। এক সময় অবশ্যই আরো অনেকে আমার মতই তাদের কথা বলবে এবং সেদিন আমরা সবাই সমবেত হয়ে আমাদের অধিকার আদায় করে নেব এবং সেদিন সেই নেতাদের তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

আজারবাইজান থেকে এলভিরা এবং আমিনা

এলভিরা ও আমিনা দম্পতি বাকুতে বসবাস করত। ২০১৭ সালে ওসি মিডিয়ার সাথে কথা [5] হবার পর তাদের জীবনে অনেক কিছুই বদলে গেছে।

দু'জন নারীর সম্পর্ক খুব দ্রুত এগোয় এবং দেখা হবার ছমাসের মধ্যেই তারা একসাথে থাকতে শুরু করে। এর কিছুদিন পরেই তারা ইউরোপের একটি দেশ যেখানে সমলিঙ্গিক বিবাহ বৈধ সেখানে গিয়ে বিয়ে করে।

এই দম্পতি জানায় যে তাদের ছোট্ট একটি সংসার এবং বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয়রা তাদের খুব স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিয়েছে। এলভিরা ও আমিনার বাবা মা যদিও কিছুটা সঙ্কোচ করেছেন তবে কিছু দিনেই তারা বুঝতে পারলেন যে তাদের কারোই জামাই নেই আছে শুধু বৌ। তারপরেও এই দম্পতি আজারবাইজানে ঠিক নিরাপদ বোধ করছেনা, তারা অন্য কোথাও যেতে চায়।

আজাবাইজানের সমাকামী অধিকার দল এর অফিস। (ভাফা জেনালোভা/ওসি মিডিয়া)

“প্রথমত আমারা এই লুকোচুরি করতে করতে ক্লান্ত,” আমিনা বলছিলেন। “দ্বিতীয়ত, আমাদের বিয়ের সার্টিফিকেট ইউরোপের যার এখানে কোন মুল্য নেই, এখানকার আইন অনুযায়ী আমরা এখনও দুজন অপরিচিত মানুষ। এলভিরার ছেলে আমাদের সাথে থাকে আর এটা তাকে বোঝানো খুবই কঠিন যে আমাদের পরিবার সম্পর্কে সে যেন কাউকে কিছু না বলে। ও কিন্ডারগার্টেনে পড়ে, কি হবে যদি ওর সহপাঠীরা বা তাদের বাবা মা জানতে পারে আমাদের পরিবার সম্পর্কে?”

দুর্ভাগ্যবশত তাদের ছেলে সরাসরি না হলেও একটি অপরাধের সাথে জড়িয়ে পরায় তাদেরকে আজারবাইজান ছাড়তে হয়েছে।

“আমার গহনার বাক্স থেকে খুব দামী কিছু গহনা চুরি যায়। আমার ছেলের দেখাশুনা করার মহিলাটি ছাড়া আর কেউ সেটা নিতে পারেনা কারণ একমাত্র সেই বাসায় একা থাকে,” এলভিরা জানান।

যখন পুলিশ আসলো তখন সেই মহিলা স্বীকারও করেনি আবার অস্বীকারও করেনি। বরং সে তার গৃহকর্ত্রির সাংসারিক জীবন সম্পর্কে পুলিশকে কিছু তথ্য দেয়, তাদের ব্যক্তিগত ছবি ও ভিডিও দেখায়।

এলভিরা আরো বলেন, “ক্ষতির শিকার হয়েও আমরা সন্দেহভাজন হয়ে গেলাম। পুলিশ এমন ভাবে আমাদের সাথে ব্যবহার করছিল যেন আমরাই কোন অপরাধ করেছি”।

এইসব ছবি ও ভিডিও পাওয়ার পর পুলিশ এলভিরাকে তার অভিযোগ তুলে নিতে পরামর্শ দেয়, এজন্য নয় যে সেই গৃহকর্মী সেসব আলামত অনলাইনে ছেড়ে দেবে বরং এই জন্যে যে যদি তদন্ত শুরু হয় তাহলে তাদের পারিবারিক সম্পর্ক ও দাম্পত্য জীবন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে (যদিও এই চুরির সাথে সেটার কোন সম্পর্ক নেই) এবং তাদের বাবা মাকেও জেরা করা হতে পারে। তাদের সন্তানকে আইনের হেফাজতে নেয়াও হতে পারে। তদন্ত কর্মকর্তা এটাও বললেন, এলভিরার উচিৎ খতিয়ে দেখা যে আমিনা কাজটি করেছে কিনা।

“ন্যক্কারজনক একটা ব্যাপার। আমি বুঝতে পারলাম যে এই মহিলা আমাদের উপর গোপনে চোখ রাখছিল। তদন্ত কর্মকর্তা যেভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছিল আর অভিযোগ তুলে নেয়ার কথায় আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে শুরু করলাম। তখনই আমরা এই দেশ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম।”

২০১৮ সালের মার্চে এই পরিবার আমেরিকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।

(ভাফা জেনালোভা/ওসি মিডিয়া)

২০০০ সালের আগে সমলিঙ্গিক সম্পর্ক আজারবাইজানে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ ছিল, আর শাস্তি হিসেবে কয়েক বছরের জেল। ২০০০ সাল থেকে ১৬ বছরের উপরে সমলিঙ্গিক সম্পর্ক আইনি বৈধতা পায়। তবে এই বৈধতা শুধু মাত্র পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। সমকামী নারীদের বিষয়ে এই আইনে কিছুই বলা নেই।

যৌন অভিযোজনের ভিত্তিতে যে ভেদাভেদ হয় তা প্রতিহত করার কোন পদক্ষেপ আজারবাইজানে নেয়া হয়না। বিভিন্ন রকম হুমকি, কর্মক্ষেত্রে অপদস্থ করা এবং এরকম আরো বিভিন্ন নির্যাতনের শিকার হলে কেউ শুধু মাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘন আইনে একটি সাধারণ অভিযোগ করতে পারে।

২০১৪ সালে নেফেস এলজিবিটি আজারবাইজান আলাইয়্যান্স এর মাধ্যমে সমকামী ব্যক্তিদের প্রতি সমাজের প্রতিক্রিয়া কেমন তার একটি জরিপ হয়। এতে দেখা যায় যে ৫৬% মনে করেন যে সমকামীরা কোন জটিল রোগে ভুগছে, ৬০% তাদের সাথে খারাপ আচরন করেন এবং ৬৪% তাদের সাথে কাজ করতে চাননা। যারা এই মতামত দিয়েছেন তাদের বেশির ভাগই উচ্চ শিক্ষিত তরুণ পুরুষ।

কিছু সমকামী ব্যক্তি ওসি মিডিয়াকে জানান যে সমকামী মহিলাদের থেকে পুরুষদের বেশী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মানবাধিকার কর্মী এল্ডার জেনালভ বলেন, আজারবাইজানে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা হবার কারণে এখানে পুরুষের পৌরষত্বকে অত্যন্ত উচু স্থান দেয়া হয়, আর এ জন্যই সমকামী পুরুষদের বেশী সমস্যা।

জেনালব ব্যাখ্যা করেন, “এখানে একজন পুরুষ সমকামী হওয়া মানে হল সে নিজেকে নারীদের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। এতে সে নিজেকে তো অপমান করেইছে তার সাথে সে তাদের সংস্কৃতি ও সামাজিক বুনিয়াদে আঘাত হেনেছে।”

তার মতে, আজারবাইজানে সমকামী হয়েও টিকে থাকার একটাই পথ আছে, আর তা হল – অর্থ, ক্ষমতা বা দুটোই।

“অর্থ ও ক্ষমতা আজারবাইজানে যৌন অভিযোজনের থেকেও বেশী শক্তিশালী ও পৌরষদিপ্ত। একজন ধনী ও ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি যদি সমলিঙ্গিক কারো সাথে সম্পর্ক রাখে তাহলে তা এখানে ক্ষমা যোগ্য।” – জেনালব যোগ করেন।

আমিনা ও এলভিরা তাদের ছেলেকে নিয়ে এখন আমেরিকায় বাস করে। তারা সেখানে স্থায়ী হওয়ার চেষ্টা করছে। কাজ খুজছে, নতুন বাসায় উঠেছে আর চেষ্টা করছে অভ্যস্থ হতে যে এখানে কেউ তাদের সত্য জানলে কোন ভয় নেই।