নেটনাগরিক প্রতিবেদন: পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ার অনলাইনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে সক্রিয় কর্মীদের আক্রমণ

নারীদের মিছিলের পর বিক্ষোভকারীদের বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন, বোস্টন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জানুয়ারি, ২০১৭। এলিরি বিডলের ছবি, অনুমতি নিয়ে ব্যবহৃত।

অ্যাডভক্স নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং উদীয়মান প্রবণতাগুলির একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনটিতে ২০১৯ সালের মার্চ মাসের ২২ থেকে ২৮ তারিখের বিভিন্ন সংবাদ এবং ঘটনা কাভার করা হয়েছে।

মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানের নারীবাদী কর্মীরা ৮ মার্চ তারিখে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাদের প্রকাশ্য অংশগ্রহণের ফলে সৃষ্ট তীব্র অনলাইন আক্রমণ মোকাবেলা করছে।

বিশ্ব জুড়ে নারী সংগঠনগুলো জাতিসংঘ স্বীকৃত উপলক্ষ্যটিতে প্রকাশ্য সমাবেশ, মিছিল এবং শিক্ষা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এধরনের জনসমাগমগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, শ্রম অধিকার এবং রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের মতো বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি যৌন সহিংসতা এবং নারী ও এলজিবিটিকিউআই (ভিন্নধর্মী যৌনাচারী) জনগণের প্রতি হয়রানির বিরুদ্ধে নিন্দা করে দেয়া জোরালো বিভিন্ন বার্তা তুলে ধরা হয়।

অন্য কিছুর তুলনায় সর্বশেষ বার্তাগুলোই অনলাইনে বিপরীত প্রতিক্রিয়া বেশি উস্কে দিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পাকিস্তানে  ডিজিটাল অধিকার ফাউন্ডেশনের অনলাইন হয়রানি হেল্পলাইনটি মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে বিশাল সংখ্যক ফোন পেয়েছে যারা যৌন সহিংসতা, মৃত্যু এবং অ্যাসিড আক্রমণের হুমকি পেয়েছে।

নারী সাংবাদিক লেখক বিনা শাহ টুইটারে হুমকিগুলো সম্পর্কে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি এটাও উল্লেখ করেছেন যে এই হুমকিগুলো সামাজিক মিডিয়াটির মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্যে নারীদের অনুরোধগুলির প্রতি সাড়া না দিতে পেরে টুইটার নিজেই ব্যর্থ হয়েছে:

@আওরত_মার্চ এর প্রতিক্রিয়ায় কয়েক ডজন ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে মিছিলকারী নারীদের প্রতি সহিংস হুমকি এবং নির্দিষ্ট করে নিপীড়নের অভিযোগ করেছে একাধিক ব্যবহারকারী। কিন্তু @টুইটার_সাপোর্ট বলেছে যে এসব হুমকি সম্প্রদায়ের মানদণ্ড লঙ্ঘন করেনি।

মালয়েশিয়ায় নারী দিবসের মিছিলের বিভিন্ন ছবি এবং প্রোফাইলগুলো  বিভিন্ন চ্যাট গ্রুপ এবং  সামাজিক মিডিয়ার পাতাগুলোতে ব্যাপকভাবে ভাগাভাগি করা হয়েছে যেন এদের অপব্যবহারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা যেতে পারে। কাউকে কাউকে, এমনকি তাদের পরিবারের সদস্য এবং নিয়োগকর্তাদেরকেও বেনামে হুমকি-ধামকি দেয়া হয়েছে।

দেশটির ভারপ্রাপ্ত ধর্মমন্ত্রী দাতুক সেরি মুজাহিদ ইউসুফ রাওয়া নারী দিবসের মিছিলটিকে “ইসলাম ধর্মের নিষিদ্ধ কোন কিছুকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যে গণতন্ত্রকে অপব্যবহার” করার দায়ে অভিযুক্ত করে অনলাইন উষ্মাটিকে আরো উস্কে দিয়েছেন

১৪ মার্চ তারিখে পুলিশ ঘোষণা করেছে যে নারী দিবসের সংগঠকদের সাতজনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের আইন লঙ্ঘনের জন্যে তদন্ত করা হচ্ছে।

শুভ পাকিস্তান দিবস: আপনার জন্যে কোন মোবাইল পরিষেবা নেই

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের বসবাসকারীরা কয়েক ঘন্টা ধরে মোবাইল ফোন পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেনি। ঘটনাক্রমে সেদিন ২৩ মার্চ তারিখে পাকিস্তান দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে একটি সামরিক প্যারেডের জন্যে নেটওয়ার্ক বন্ধ ছিল। তারিখটি ছিল ব্রিটেন থেকে পাকিস্তানের স্বাধীনতার ভিত্তি হয়ে ওঠা ১৯৪০ সালের সিদ্ধান্তের বার্ষিকী।

২০১৮ সালে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট ইচ্ছাকৃত নেটওয়ার্ক বন্ধ অবৈধ ঘোষণা করলেও আপিল আদালত এই সিদ্ধান্তের একটি স্থগিতাদেশ প্রদান করেছে। তারপর থেকে কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার প্রবেশাধিকার বন্ধের জন্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ ব্যক্ত করেছে।

ইইউ সংসদের কপিস্বত্ত্ব নির্দেশনা অনুমোদন, অঞ্চলজুড়ে হতাশা প্রকাশ

আবেদন এবং প্রকাশ্য মিছিলের মাধ্যমে ইউরোপের অর্ধকোটিরও বেশি জনগণের আবেদন সত্ত্বেও ইউরোপীয় সংসদ ২৬ মার্চ তারিখে ভীষণ কলুষিত ইইউ কপিস্বত্ত্ব নির্দেশনা অনুমোদন করেছে।

নির্দেশনাটি সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে প্রধান প্রধান ইন্টারনেট এবং সামাজিক মিডিয়ার মঞ্চগুলোতে কার্যকরভাবে “প্রাক-সেন্সর” ব্যবস্থা প্রয়োগ করার মাধ্যমে ইউটিউবের মতো ইন্টারনেট মঞ্চগুলোকে কপিস্বত্ত্ব-সুরক্ষিত বিষয়বস্তু আপলোড অবরোধের বিভিন্ন আইন চালু করতে বাধ্য করে। নির্দেশনাটি অন্য উৎস থেকে কয়েকটি শব্দের বেশি উদ্ধৃত করতে চাওয়া লাভজনক মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসগুলোর লেখক বা “স্বত্ত্বাধিকারীদের” ফি প্রদানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে।

ইউরোপীয় ডিজিটাল অধিকার (এডরি) জোটের একজন জ্যেষ্ঠ নীতি উপদেষ্টা দিয়েগো নারানজো বলেছেন যে নির্দেশনাটি, বিশেষ করে এর ১৩ ধারাটি “ইইউ এবং বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট ফিল্টার ও স্বয়ংক্রিয় সেন্সর প্রক্রিয়ার একটি বিপজ্জনক উদাহরণ সৃষ্টি করে।”

বিনা অভিযোগে মোজাম্বিকের সাংবাদিকের ৭০ দিনের হাজতবাস

মোজাম্বিকের কাবো দেলাগো প্রদেশে ছোট ছোট গ্রামগুলিতে সহিংস হামলার প্রবণতা সম্পর্কে প্রতিবেদন করার সময় গ্রেপ্তারকৃত মোজাম্বিকের সাংবাদিক বিনা বিচারে ৭০ দিনেরও বেশি কারাবাস করেছেন। কর্তৃপক্ষ আমাদে আবু বকরকে “জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘন” এবং “কম্পিউটার চালিত যন্ত্রের মাধ্যমে অবাধ্যতার উস্কানি প্রদানের” দায়ে অভিযুক্ত করলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন অভিযোগ দাখিল করেনি।

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য না হলেও এই ৩২ বছর বয়সীকে সামরিক ঘাটিতে সাময়িকভাবে আটক রাখা হয়েছিল। পরে তিনি মোজাম্বিকের আইন সমিতির কাছে তাকে অত্যাচার করা এবং খেতে না দেওয়া কথা জানিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করতে অথবা তার সাময়িক মুক্তির জন্যে তার আইনজীবিদের দ্বিতীয় অনুরোধ রক্ষা  করতে অস্বীকার করেছে।

সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করায় ভিয়েতনামী রাজনৈতিক কর্মী কারাগারে

ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে দেশের ভিতরে তাদের তথ্য সঞ্চয় করতে এবং রাষ্ট্রের আদেশ অনুসারে বিষয়বস্তু সরাতে বাধ্য করা ভিয়েতনামের অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক সাইবার নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করে ফেসবুকে  বিভিন্ন পোস্টের জন্যে স্থানীয় একজন রাজনৈতিক কর্মীকে দুই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। লে মিন থে গণতন্ত্রপন্থী হিয়েন ফ্যাপ গোষ্ঠীর একজন সদস্য এবং মুক্ত অভিব্যক্তির একজন কট্টর প্রচারক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে তিনি সরকারের প্রতি শান্তিপূর্ণ বিরোধিতা চালিয়ে আসা ছয়জন রাজনৈতিক কর্মী ও ব্লগারদের অন্যতম যাদের বর্তমানে বিচার করা হচ্ছে

সিঙ্গাপুরের কর্মকর্তাদের দিকে ডিম ছুঁড়তে চান? ফেসবুকে এটা বলার দরকার নেই।

আইন  ও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী কে শানমুগামকে একটি ডিম নিক্ষেপ করতে চান এমন একটি মন্তব্য পোস্ট করে সিঙ্গাপুরের ফেসবুক ব্যবহারকারী এডমান্ড ঝং পুলিশী তদন্তের আওতায় রয়েছেন। জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ২০ বছর বয়সী এই কর্মী একজন রক্ষণশীল সিনেটরকে ডিম নিক্ষেপ করা এক অস্ট্রেলীয় কিশোরকে নিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার একটি ফেসবুক  পোস্টে এই মন্তব্যটি করেছিলেন: “আমি কে শানমুগামকে এটা করতে চাই। আমি শপথ করে বলছি।”

তিনদিন পর ঝং একটি পুলিশি নোটিশ পেয়েছিলেন যাতে বলা হয়েছিল যে ফৌজদারী আইনের ২৬৭-গ ধারার আওতায় “একটি ইলেকট্রনিক নথির মাধ্যমে যোগাযোগ করে সহিংসতার উস্কানি” প্রদানের অপরাধে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে। দোষী সাব্যস্ত হলে ঝংয়ের জরিমানা  এবং/ অথবা পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।

সামরিক জালিয়াতি উন্মোচন করায় বাংলাদেশে আল জাজিরার ইংরেজি সংবাদ সাইট বন্ধ

বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান একটি ব্যবসায়িক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সদস্যদের তিনজনকে অপহরণ করার নির্দেশ দিয়েছিল বলে অভিযোগ করে একটি সংবাদ প্রকাশ করার পর কর্তৃপক্ষ আল জাজিরার ইংরেজি ওয়েবসাইট অবরোধ করেছে। উল্লিখিত উন্মোচনের একটি বাংলা সারাংশ পোস্ট করায় স্থানীয় সংবাদ সাইট “জবান”ও অবরুদ্ধ দেখাচ্ছে।

সরকারের সমালোচনামূলক তথ্য প্রকাশকারী বিভিন্ন সংবাদ সাইট ব্লক করার একটি দীর্ঘ ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে। যাইহোক, সম্প্রতি প্লাগটি টেনে আনার প্রক্রিয়া আরও সহজতর করার জন্যে সুসংহত করা হয়েছে: এখন নিরাপত্তা সংস্থাগুলি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই কেন্দ্রীয়ভাবে ওয়েবসাইটগুলিকে অবরোধ করতে পারবে।

 

নেট-নাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .