- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

নেটনাগরিক প্রতিবেদন: সিপিজে’র মিডিয়া প্রচারকদের লক্ষ্য করে তানজানিয়ায় বাকস্বাধীনতা বিরোধী অভিযান

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, তান্জানিয়া, নাগরিক মাধ্যম, মানবাধিকার, জিভি এডভোকেসী

সংবাদপত্রের স্ট্যান্ডে একটি স্বাধীন সংবাদপত্র দি সিটিজেন (নাগরিক) এর একটি বিজ্ঞাপন, দার এস সালাম, তানজানিয়া। উইকিমিডিয়া সাধারণের মাধ্যমে অ্যাডাম জোন্সের তোলা ছবি (সিসি বাই-এসএ ৩.০)

অ্যাডভক্স নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং উদীয়মান প্রবণতাগুলির একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে। এই প্রতিবেদনটিতে ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসের প্রথম ১৫ দিনের ঘটনাগুলো কাভার করা হয়েছে।

তানজানিয়ায় সাদা পোশাকের কর্মকর্তারা সত্যান্বেষী মিশনের অংশ হিসাবে সেই দেশ সফররত সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে) [1] এর দুইজন গণমাধ্যম স্বাধীনতা প্রচারককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

সিপিজে কর্মী আঞ্জেলা কুইন্টাল এবং মুথোকি মুমোকে তাদের হোটেল থেকে জোর করে বের করে নিয়ে একটি ব্যক্তিগত বাড়িতে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। এছাড়াও কর্মকর্তারা তাদের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিগুলো জব্দ করে এবং সেগুলো আরও অনুসন্ধানের চেষ্টা করে।

দক্ষিণ আফ্রিকার দৈনিক ম্যভারিকের জন্যে একটি লিখিত বিবরণে [2] কুইন্টাল কর্মকর্তারা তার এবং কেনীয় নাগরিক মুমোর প্রতি কেমন আচরণ করেছিল সেটা বর্ণনা করেছেন।

আমরা খুবই অভদ্র এবং আক্রমণাত্মক পুরুষদের একটি দলের মুখে অসহায় অবস্থায় পড়েছিলাম … গোয়েন্দা এজেন্টদের একজন মুথোকির প্রতি বিশেষভাবে অভদ্র আচরণ করছিলো। এমনকি সে তাকে থাপ্পড় এবং ধাক্কা দিচ্ছিলো। আমি হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলে আমাকে নিরস্ত করা হয়। আমি ভয় পেয়েছিলাম যে মুথোকি যৌন নির্যাতনের শিকার হলে আমি তাদের থামাতে ব্যর্থ হবো।

তানজানিয়ার সাংবাদিক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমর্থকদের সাথে দেখা করতে এসে কুইন্টাল এবং মুমো প্রেসিডেন্ট জন ম্যাগুফুলির শাসনামলে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গণমাধ্যম কর্মীদের দমন বৃদ্ধি [3] প্রত্যক্ষ করে গেলেন।

মিডিয়া কর্মীদের প্রতি বাহ্যিক হুমকির পাশাপাশি দেশের সাইবার অপরাধ আইন ২০১৬ [4] এবং “ব্লগার কর” [5] ২০১৮ লাইসেন্স পরিকল্পনার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষগুলোকে বাকস্বাধীনতাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত এবং তাদের সমালোচকদের নীরব করার নতুন উপায় তৈরি করে দিয়েছে। ফেসবুকে এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিতে প্রকাশিত অহিংস রাজনৈতিক মতামতের জন্যে বহু ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার [6]  করার জন্যে সাইবার অপরাধ আইনটি ব্যবহার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষগুলি “তানজানীয় রেডডিট” এবং “সোয়াহিলি উইকিলিকস” হিসেবে অভিহিত [7] জামি ফোরামের বিশিষ্ট প্রতিষ্ঠাতা এবং মালিক ম্যাক্সেন্স মেলোর বিরুদ্ধে তাদের মামলায়ও এটি ব্যবহার করেছে। ব্যবহারকারীদের তথ্য রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকাশ করতে অস্বীকার করার পর মেলোর বিরুদ্ধে মামলা করা হয় [8]

কারানির্যাতনে সৌদি মানবাধিকার কর্মীর মৃত্যু!

মানবাধিকার রক্ষাকর্মী তুর্কী বিন আবদুল আজিজ আল-জাসের একসময় সৌদি আরবের বিশিষ্ট কণ্ঠ ছিলেন। একটি বেনামী টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তিনি রাজ্যটির মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রিপোর্ট এবং স্থানীয় গুটিকয়েক মানবাধিকার গোষ্ঠীর অন্যতম এলকিউএসটি (সৌদি আরবে মানবাধিকারের পক্ষে মতামত)-কে সাহায্য করতেন। কিন্তু বেনামী টুইটার অ্যাকাউন্টটির মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ আল-জাসেরকে খুঁজে বের করে অপহরণ করার পর ২০১৮ সালের মার্চে এই ঘটনার অবসান ঘটে। এই সপ্তাহে সৌদি কারাগারে নির্যাতনের পর মৃত্যু ঘটে [9] আল-জাসেরের।

দি নিউইয়র্ক টাইমস [10]সহ একাধিক গণমাধ্যমের উৎস [11] অনুমান করেছে যে সৌদি সরকারের গোয়েন্দারা এই তথ্যটি টুইটারের ভেতর থেকেই পেয়েছিল, কোম্পানিটির সংযুক্ত আরব আমিরাতে সৌদি ব্যবহারকারীদের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি পরিচালনাকারী অফিসে নিযুক্ত একটি সূত্রের মাধ্যমে। তবে এটা নিশ্চিত করা হয়নি। সুনির্দিষ্টভাবে আল-জাসেরের পরিচয় নির্ধারণের বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে গেলেও তার কিছু কিছু সমর্থক [12] এর জন্যে টুইটারকেই দায়ী করছে।

চীনে ভূয়া সংবাদ, গুজব এবং ‘অনুপযুক্ত শব্দ’ এর জন্যে টহল

হংকং-এর মুক্ত প্রেসের একটি অনুসন্ধানে [13] দেখা গিয়েছে যে কিছু কিছু  চীনা রাষ্ট্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কর্মীদের নাম “অনুপযুক্ত শব্দ” বিবেচনা করে আইপ্যাড, আইপড টাচ এবং অ্যাপল পেনসিলের জন্যে প্রস্তাবিত ডিভাইস-খোদাই পরিষেবার সর্বশেষ সংস্করণগুলি থেকে সেন্সর করা হয়েছে। কোন গ্রাহক চীনা হরফে “জিই জিনপিং” (চীনের রাষ্ট্রপতির নাম) টাইপ করলে নিম্নোক্ত সতর্কতা প্রদর্শিত হয়: “অনুপযুক্ত শব্দগুলি অনুমোদিত নয়।” রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী, হংকং ও তাইওয়ানের স্বাধীনতা সম্পর্কিত তথ্য এবং ফালুন গং এর উল্লেখে একই ধরনের ফলাফল তৈরি করে।

চীনের সামাজিক গণমাধ্যমের মঞ্চ ওয়েইবো (টুইটারের মতো কিন্তু বৃহত্তর) অনলাইনে ভূয়া সংবাদ সনাক্ত করার প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে চীনা সরকারের অধিকর্তাদের এবং নির্দিষ্ট কতগুলি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ওয়েইবো পোস্টকে “গুজব” হিসেবে চিহ্নিত [14] করার ক্ষমতা দিতে যাচ্ছে। চীনে সরকারি বিবরণী এবং দলীয় রাজনীতির সাথে সাংঘর্ষিক যে কোন তথ্য গুজব হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।

ফেসবুকে রাষ্ট্রপতির মাতাকে অপমান করার অভিযোগে উগান্ডার পণ্ডিত গ্রেপ্তার

পণ্ডিত ও নারীবাদী কর্মী স্টেলা ন্যানজি [15]কে ২ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মেকেরেরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে [16]  গ্রেপ্তার করে “বৈধ যোগাযোগের উদ্দেশ্যে ছাড়া কোন ব্যক্তির শান্তি, নীরবতা বা গোপনীয়তার অধিকারকে ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ” ব্যবহারের দায়ে ২০১১ সালের কম্পিউটার অপব্যবহার আইনে অভিযুক্ত করা হয়। রাষ্ট্রপতি মুসভেনিকে তার ফেসবুক পাতায় “নিতম্বের জোড়া” বলে তুলনা করার পর ২০১৭ সালেও একইধরনের অভিযোগে [17] ন্যানজিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

মানহানির জন্যে আলজেরিয়ার সাংবাদিক গ্রেপ্তার

আলজেরি পার্ট [18]-এর প্রধান সম্পাদক আব্দু সেমার [19] এবং তার সহকর্মী গ্লোবাল ভয়েসেস এর সাবেক প্রদায়ক সাংবাদিক মেরুয়ান বুদিয়াবকে ৮ নভেম্বর তারিখে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় আটক রাখার পর মুক্তি প্রদান করা হয় [20]। ব্যক্তিমালিকানাধীন এন্নাহার টিভির পরিচালক আনিস রহমান এবং আলজিয়ার্সের গভর্নর আবদেলকাদের জুখের দায়ের করা মানহানির অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আলজেরি পার্ট জুখ [21]-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপক কাভারেজ দেয়। এন্নাহার টিভিটি মিথ্যা ও গুজব ছড়াচ্ছে বলে তারা রাহমানি এবং তার মিডিয়া গোষ্ঠীর সমালোচনা [22] করেছে। বাদীদের কেউই আলজেরি পার্টের প্রতিবেদনে মানহানিকর কী পেয়েছে তা প্রকাশ্যে বলেনি। সাংবাদিক এখন বিচারের অপেক্ষায় আছেন।

৪৫ দিন অনশনের পরও পশ্চিম সাহারার গণমাধ্যম কর্মী এখনো জীবিত

২০১০ সাল থেকে জেলখানায় থাকা পশ্চিমা সাহারার ৩২ বছর বয়সী গণমাধ্যমকর্মী বশির খাদ্দা তার পরিবারের সদস্যদের অনুরোধে ৪৫দিনের একটি অনশন ভঙ্গ করেছেন [23]। ২০১০ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে  ইক্যুইপে মেডিয়া (গণমাধ্যম দল) [24]-তে বিতর্কিত উত্তর আফ্রিকায় মানবাধিকারের অপব্যবহার এবং প্রতিবাদ-বিক্ষোভ নথিবদ্ধকরণের কাজ করতেন এবং ২০১৩ সালে চোখ বাঁধা অবস্থায় আগে থেকেই লিখে রাখা একটি স্বীকারোক্তিতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হওয়ার [25] পর নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার সঙ্গ প্রদান” এর দায়ে অভিযুক্ত [25]

চিকিৎসাগতভাবে তিনি এখন নাজুক অবস্থায় রয়েছেন। তিনি এখন হাঁটতে বা কথা বলতে পারছেন না। মরোক্কোর ট্যালিফট কারাগারে তিনি নির্জন কারাবাসে রয়েছেন।

নতুন গবেষণা

নেট-নাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন [30]