- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

ইউটিউবে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ভিডিওতে মিলছে যাত্রী সুবিধার সব তথ্য

বিষয়বস্তু: দক্ষিণ এশিয়া, বাংলাদেশ, অ্যাক্টিভিজম, আইন, ছবি তোলা, ডিজিটাল অ্যাক্টিভিজম, দেশান্তর ও অভিবাসন, নতুন চিন্তা, নাগরিক মাধ্যম, শ্রম
[1]

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান বিমানবন্দর। ছবি তুলেছেন নাহিদ সুলতান। উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া।

আপনি যদি কয়েক বছর পর বিদেশে থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ফেরেন, তাহলে দেখবেন যে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো আর আপনার মালামালের ব্যাগ খোয়া যায় [2] নি, কেউ ব্যাগ কাটেনি, কিংবা উড়োজাহাজের সাথে ব্যাগ না এলেও বিমান কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে একটি চিরকুটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নম্বর ধরিয়ে দিয়ে রেহাই পায়নি। তারা নিজ দায়িত্বে আপনার বাড়িতে ব্যাগ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার [3] করছে। এর জন্যে সাধুবাদ দেয়া যায় বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ এবং তার দলকে যারা ইউটিউব ভিডিও এবং ফেসবুক ব্যবহার করে বিমানবন্দরের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপরাধ কমিয়ে যাত্রীদের সাহায্য করে যাচ্ছেন।

২০১৪ সালে হজরত শাহজালাল এয়ারপোর্টের ব্যবস্থাপনা এবং সুযোগ সুবিধা এতো নিচে নেমে গিয়েছিল যে এটি এশিয়ার সবচেয়ে খারাপ এয়ারপোর্টের তালিকায় উঠে গিয়েছিল [4]। এরপরেই বিমানবন্দরের সবকটি ডিপার্টমেন্ট এবং বিশেষ করে ঢাকা এয়ারপোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দুই তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ এবং শরিফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেইন অবস্থার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নেন।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তারা ম্যাজিস্ট্রেটস, অল এয়ারপোর্টস অফ বাংলাদেশ [5] নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলেন যাতে বিমানবন্দরে কেউ কোন সমস্যায় পরলে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুক বা প্রদত্ত হেল্পলাইনের মাধ্যমে। এভাবে প্রাপ্ত অভিযোগের ভিত্তিতে ম্যাজিস্ট্রেটরা দ্রুত অ্যাকশনে যান – যেমন যদি কোন এয়ারলাইন্স ওভারবুকিং করে [6] চেক ইন এবং ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা যাত্রীদের উঠতে দেয়না তাদের বিরুদ্ধে ফাইনের ব্যবস্থা করেন। যেসব বিমানবন্দরের কর্মচারী যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার, ব্যাগ কাটা, ব্যাগ চুরি করা এবং অন্যান্য অপরাধ ও অনিয়মে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তারা মোবাইল কোর্ট করে শাস্তি দেন। বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী [7] ঢাকা বিমানবন্দরে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যাত্রীদের হয়রানি, অনিয়ম এবং অপরাধ অনেকাংশেই কমে গেছে।

শরিফ মোহাম্মদ ফরহাদ হোসেইন বদলি হয়ে যাবার পর মোহাম্মদ ইউসুফ [8] একাই ডিপার্টমেন্টের হাল ধরেন। তিনি নানা উদ্ভাবনামূলক প্রজেক্ট চালু করে চলেছেন যাত্রী সুবিধা বাড়ানো এবং অপরাধ দমনের জন্যে। তার একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হচ্ছে “ময়লা দাও, টাকা নাও [9]” যাতে যাত্রীরা ময়লা জেকানে সেখানে না ফেলে সঠিক স্থানে ফেলতে উদ্ভুদ্ধ হচ্ছে। তার আরেকটি সাম্প্রতিক উদ্যোগ হচ্ছে বিমানবন্দরে একটি লাইব্রেরি করা [10] এবং বিমানবন্দরের কোনো কর্মী যদি টুকিটাকি অপরাধ করে, তাহলে তাদের হাতে একটা বই ধরিয়ে দেয়া হয়। একসপ্তাহ পর বই জমা দিয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। মজার একটা নামও দেয়া হয়েছে এই অভিযানের- ‘প্রজেক্ট টুকিটাকি [11]’ যা এই ভিডিওতে বর্ণিত হয়েছেঃ

মুহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন যে এটি কিভাবে অপরাধ কমাতে সাহায্য করে [10]:

লুকিয়ে বইপড়া অনেকের কাছে বাড়তি একটা চাপ। হঠাৎ হাতে বই দেখলে কলিগরা বুঝে ফেলছে, বাসার লোকজন বুঝে ফেলছে, সে কোন একটা অন্যায় করে ধরা পড়েছে।

ভিডিওর মাধ্যমে যাত্রীদের সাহায্য করা

ইউসুফ সাহেবের সাম্প্রতিক উদ্যোগ হচ্ছে বিদেশ যাত্রার বিভিন্ন নিয়ম, কাস্টমস এর নির্দেশনা এবং বিভিন্ন সহায়ক তথ্য যাত্রীদেরকে একটি ইউটিউব চ্যানেলে [12] ভিডিওর মাধ্যমে জানানো। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হন প্রবাসী শ্রমিকরা [13]। এদের বেশিরভাগই আবার তেমন পড়াশোনা জানেন না। বিমানবন্দরের নিয়মকানুন সম্পর্কেও খুব একটা অবগত নন। দেশে ফেরার সময় কী কী আনা যাবে, কী কী আনা যাবে না; বিদেশ যেতে কাদের ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স কার্ড লাগবে, কাদের লাগবে না; ফ্লাইট মিস হলে কী করতে হবে; বিদেশ যেতে আসতে কী পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা আনা-নেয়া যাবে ইত্যাদি সম্পর্কে জানেন না।

উড়োজাহাজের যাত্রীদের এসব বিষয়ে ধারনা দিতেই মোহাম্মদ ইউসুফ ইউটিউব চ্যানেল [12] বাংলা ভাষায় বিভিন্ন ভিডিও আপলোড করে যাচ্ছেন। এছাড়াও এসব ভিডিওর মাধ্যমে তিনি তার নিজের ফেইসবুক প্রোফাইল [8] এবং এয়ারপোর্ট ম্যাজিটেস্ট [5]-এর অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে যেসব প্রশ্ন আসে সেগুলোর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেন।

বিমান ছাড়ার কতক্ষণ আগে বিমানবন্দরে পৌঁছতে হবে, কতক্ষণ আগে চেক-ইন কাউন্টারে রিপোর্ট করতে হবে, ইমিগ্রেশনে ঢুকতে হবে এবং বোর্ডিং করতে হবে ইত্যাদি সহজভাবে তিনি তুলে ধরেছেন নিচের ভিডিওতে:

আপনি নির্ধারিত সময়ে বোর্ডিং কাউন্টারে গিয়ে শুনলেন বিমানে সিট নাই, তখন কী করবেন? বিমান কর্তৃপক্ষ কি পরের ফ্লাইটে পাঠাবে? না, জরিমানা হিসেবে টাকা দিবে? ওভারবুকিং ছাড়াও ডিনাইড বোর্ডিং (ডিএনবি) ডিনাইউ বোর্ডিং কম্পেনসেশন (ডিবিসি), রি-ইস্যুয়েবল টিকেট, ওয়ান-টাইম টিকেট, লো-কস্ট/বাজেট ক্যারিয়ার, ফ্লাইট মিস, নো-শো… ইত্যাদি বিষয়ে যাত্রীর সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে তিনি এই ভিডিওতে আলোচনা করেছেন:

জাতিসংঘের ‘ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০১৭’ অনুসারে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা ৭০ লাখের মতো [14]। এই প্রবাসীদের থেকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্স পেয়ে থাকে। যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তবে, অনেকেই বিএমইটি [15] থেকে ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স না নিয়েই বিদেশে যান। পরে তারা বিপদে পড়েন। তাই, চাকরি নিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময়ে কাদের ম্যানপাওয়ার কার্ড লাগবে, সেটা নিয়ে তিনি দুই এপিসোডের দু’টি ভিডিও আপলোড করেছেন – এখানে দেয়া হল একটি:

মোহাম্মদ ইউসুফ দুই মাস হলো তার ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ৩০টির বেশী ভিডিও আপলোড করেছেন। ইউটিউব চ্যানেল চালু করার পরপরই ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন কারণ এতে বাংলাভাষায় সহজে বিভিন্ন উপকারী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ইতিমধ্যে ৫৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।