নেটনাগরিক প্রতিবেদন: কিভাবে হোয়াটসঅ্যাপ (এবং ৩০লক্ষ ডলার) ব্রাজিলের জাইর বলসোনারোকে জিতিয়েছে

অ্যাডভক্স নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং উদীয়মান প্রবণতাগুলির একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে।

অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখে লাতিন আমেরিকার বৃহত্তম গণতন্ত্র এমন একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে যার প্রচারণা সহিংসতা, জালিয়াতির জঘন্য গুজব এবং মিথ্যা প্রমাণিত অনলাইন সংবাদ ও তথ্যে জর্জরিত ছিল।

ব্রাজিলের নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারো – ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় কংগ্রেসে দায়িত্ব পালনকারী প্রাক্তন সেনা ক্যাপ্টেন – প্রকাশ্যে নারীবিদ্বেষী ^[1] এবং সমকামবিরোধী ^[2] মতামত প্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিনি “ব্রাজিলে সবধরনের সক্রিয়তার অবসান ঘটানোর ^[3]” অঙ্গীকার করেছেন।

চূড়ান্ত ভোটের মাত্র দশ দিন আগে বলসোনারোর প্রচারণাকে হোয়াটসঅ্যাপে খবর ছড়িয়ে দিতে ৩০ লক্ষ ডলার (প্রায় ২৫ কোটি বাংলাদেশী টাকা) ব্যয় করতে দেখা যায়। ব্রাজিলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম ফোলা ডি সাও পাওলো এই কাণ্ডটি উন্মোচন করে ^[4] নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ব্রাজিলের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এমন অনেক চাউর ও বিভক্ত বার্তা এবং মিথ্যা বিভিন্ন প্রতিবেদনের সম্ভাব্য শিকড়গুলি প্রদর্শন করেছে। একাধিক ঘটনা-পরীক্ষণ ^[5] গোষ্ঠীর প্রচেষ্টা এবং ফেসবুকের কিছু হস্তক্ষেপ ^[6] সত্ত্বেও মিথ্যা সংবাদগুলো বলসোনারোর প্রচারাভিযানে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে।

যারাই মিথ্যা সংবাদ প্রচেষ্টাগুলো উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করেছে তাদেরই এর জন্যে একটি মূল্য দিতে হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপকে ৩০ লক্ষ ডলার দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে লেখার পর থেকেই ফোলা দে সাও পাওলোর সাংবাদিক পেত্রিশিয়া ক্যাম্পোস মেলো হুমকি পেতে ^[7] শুরু করেছিলেন এবং তার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। আক্রমণকারীরা তার কয়েকটি কথোপকথন মুছে ফেলে তার পরিচিতিদের বলসোনারোপন্থী বার্তা প্রেরণ করে। ভিন্ন একটি সংবাদপত্র এস্তাদো দে সাও পাওলোর একজন প্রতিবেদক মেলোর কাহিনীটি অনুসরণ করে লেখার  করার পরে তার সম্পর্কেও খোঁজ-খবর নেয়া হয় ^[8]। ব্রাজিলের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার সমিতি (আব্রাজি) ^[9] জানিয়েছে ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হুমকি ও সহিংসতার ১৪১টি মামলা নিবন্ধিত হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপ কাণ্ডটি ব্রাজিলের নির্বাচন এবং তথ্য সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করে থাকতে পারার কারণে বলসোনারোর প্রচারণা ব্রাজিলের বিচার বিভাগের কঠিন প্রশ্নগুলির মুখোমুখি হতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডানপন্থী প্রার্থী গর্বিতভাবে বসে থেকে তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর সক্রিয়ভাবে হোয়াটসঅ্যাপে তার অনুসরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছেন।

অন্যান্য খবরে…

দুইজন ইন্দোনেশীয়কে”অনৈতিকতা সম্বলিত ইলেকট্রনিক তথ্য পাঠানো এবং বিস্তার” করার জন্যে গ্রেপ্তার ^[10] করা হয়েছে যা ইন্দোনেশিয়ার ইলেকট্রনিক আদান-প্রদান ও তথ্য আইন অনু্সারে একটি অপরাধ। তারা দুইজন ফেসবুকে একটি সমকামী যোগাযোগ এবং জুটি-তৈরির গ্রুপ চালাচ্ছিলেন। ১৮ অক্টোবর পুলিশ তাদের অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি মোবাইল ফোন এবং ২৫টি কনডম জব্দ করেছে।

মিয়ানমারে তিনজন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে ১১ অক্টোবর তারিখে। ইয়াঙ্গুন শহরের ট্রানজিট সিস্টেমে সরকারি ব্যয় নিয়ে এগারো সংবাদ মাধ্যমের ^[11] উপর করা একটি তদন্ত প্রকাশের পর তাদের বিরুদ্ধে “জনগণকে ভীতি প্রদর্শন অথবা সংকেত” ^[12] প্রদানের অভিযোগে আনা হয়েছে। বার্মার বাকস্বাধীনতা প্রচারণা গোষ্ঠী আথান ^[13] ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে মিয়ানমারের সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৪৩টি আইনি মামলা নথিবদ্ধ করেছে।

ভিয়েতনামের সাংবাদিক ডু কং ডুয়াংকে “গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার অপব্যবহার” করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ১২ অক্টোবর তারিখে ফেসবুক এবং ইউটিউবে দুর্নীতি, ভূমি অপব্যবহার এবং জোরপূর্বক নির্বাসন সম্পর্কে প্রতিবেদন করার প্রচেষ্টার জন্যে তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ^[14] প্রদান করা হয়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে “জনশৃঙ্খলা ভঙ্গ” করার জন্যে তাকে আলাদাভাবে দণ্ড প্রদান করা হয়েছিল।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা ২০১৮ সালে এপর্যন্ত ২০৯জনকে ^[15] গ্রেপ্তার করেছে সেদেশের ইলেকট্রনিক অপরাধ প্রতিরোধ আইনের আওতায়। ২০১৬ সালে পাস করা এই আইনটি অনলাইনে হয়রানির (“অশ্লীল” যোগাযোগ হিসাবে সংজ্ঞায়িত) কিছু রূপকে অপরাধে পরিগণিত করা ছাড়াও ইসলামের গৌরব অথবা পাকিস্তানের অখণ্ডতা, নিরাপত্তা বা প্রতিরক্ষা”র স্বার্থে প্রয়োজনীয় বলে বিবেচিত হলে পাকিস্তান টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষকে ইন্টারনেট থেকে বক্তব্য মুছে ফেলার মতো যথেষ্ট ক্ষমতা প্রদান করেছে।

নাইজেরিয়ার সাংবাদিক জাফর জাফর আত্মগোপনে চলে গিয়েছেন। বেসরকারি ঠিকাদারদের কাছ থেকে একজন স্থানীয় গভর্নরের ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার (প্রায় ৪১ কোটি ৭৬ লক্ষ বাংলাদেশী টাকা) গ্রহণের ভিডিও প্রমাণ প্রকাশের পর মধ্য-অক্টোবরে তিনি একাধিক মৃত্যুহুমকি ^[16] লাভ করেছেন।

২ অক্টোবর থেকে সৌদি আরবের সাংবাদিক জামাল খাশোগি অনুপস্থিত। খাশোগি বিয়ের জন্যে কাগজপত্র সংগ্রহের জন্যে ইস্তানবুলের সৌদি দূতাবাসে প্রবেশ করে আর ফিরে আসেননি। ইস্তাম্বুলের প্রধান প্রসিকিউটর ৩১ অক্টোবর তারিখে একটি সরকারি বিবৃতি ^[17] জারি করে জানিয়েছেন যে দূতাবাসে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই খাশোগিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করার পর সৌদি সরকারের সেসব লোকেরাই তার মৃতদেহটি টুকরো টুকরো করেছিল। ওয়াশিংটন পোস্টের উপ-সম্পাদকীয় কলাম লেখক জামাল খাশোগি ^[18] এর আগে সৌদি আরবের সবচেয়ে বেশি সংস্কারপন্থী গণমাধ্যম সংস্থাগুলোর অন্যতম আল ওয়াতান (মাতৃভূমি) ^[19]-এর সম্পাদক হিসেবে কাজ করতেন।

মাল্টার সাংবাদিক ড্যাফনে কারুয়ানা গ্যালিযিয়া ^[20] হত্যার এক বছর পার হয়েছে। ‘চলমান ধারাভাষ্য’ নামে স্বাধীন সংবাদ ব্লগের জন্যে বিখ্যাত কারুয়ানা গ্যালিজিয়া ২০১৬ সালের এপ্রিলে পানামা পেপার্সে মাল্টার রাজনীতিবিদদের জড়িত থাকার সংবাদটি প্রথম প্রকাশ করেন ^[21]। ২০১৭ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখে কারুয়ানা গালিজিয়া একটি গাড়ি বোমায় নিহত হন। তার সমর্থকরা বলেছে ^[21] তার খুনের তদন্ত “স্বাধীন বা নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা হয়নি” এবং তারা তার মামলার ন্যায়বিচারের জন্যে আহ্বান জানাতেই থাকবে।

নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্যামেরুনের আইএসপিগুলি মোবাইল বার্তা পরিষেবা এবং সামাজিক গণমাধ্যমগুলোর গতি কমিয়ে দিয়েছে ^[22]। ক্যামেরুনের জন্যে এটা নতুন কিছু নয়। সেদেশের ইংরেজি ভাষায় কথাবলা অঞ্চলের ইন্টারনেট ২০১৬ সাল থেকে ২৩০ দিনেরও বেশি বন্ধ ছিল ^[23]।

ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার খুবই ব্যয়বহুল। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ফাউন্ডেশনের সর্বশেষ লভ্যতা প্রতিবেদন ^[24] অনুসারে ৬০% দেশে ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকার সহজলভ্য নয়। এই নভেম্বরে ওয়েব ফাউন্ডেশন প্রকাশিতব্য নতুন একটি প্রতিবেদন ^[25]  দেখাবে যে ইন্টারনেট গ্রহণের (যেমন প্রথমবারের মতো অনলাইনে আসা) বিশ্বব্যাপী হার দ্রুত – ২০০৭ সালের ১৯% থেকে ২০১৭ সালে মাত্র ৬% – কমে যাচ্ছে।

নতুন গবেষণা

• The Kingdom Came to Canada: How Saudi-Linked Digital Espionage Reached Canadian Soil ^[26] (সেই রাজ্য কানাডায় এসেছিল: কিভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্ত ডিজিটাল গোয়েন্দাবৃত্তি কানাডার মাটিতে পৌঁছেছিল) – নাগরিক গবেষণাগার
• How Disinformation Harmed the Referendum in Macedonia ^[27] (কিভাবে মিথ্যা সংবাদ মেসিডোনিয়ার গণভোটের ক্ষতি করেছে) – আসিয়া মেটোডিভিয়া / মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জার্মান মার্শাল তহবিল

নেট-নাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন ^[28]