- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

রয়টার্স এর দুই সাংবাদিককে মায়ানমারের আদালত সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেছে

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মায়ানমার (বার্মা), নাগরিক মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম ও সাংবাদিকতা, মানবাধিকার, যুদ্ধ এবং সংঘর্ষ, শরণার্থী, সেন্সরশিপ, জিভি এডভোকেসী

মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত সাংবাদিকদের মুক্তির দাবীতে অনলাইনে অজস্র যে আন্দোলন, এটি তার একটি।

গত বছর মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা হত্যার সংবাদ প্রচার করা মায়ানমারের দুই সাংবাদিককে নয় মাস ব্যাপি এক মামলার শুনানী শেষে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ এ আদালত দেশটির ১৯২৩ সালের চালু হওয়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা আইন ভঙ্গের অভিযোগে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করে।

ডিসেম্বর ২০১৭ [1] সালে গ্রেফতার হওয়ার সময় ৩২ বছর বয়স্ক ওয়া লোন এবং ২৮ বছর বয়স্ক কাওয়া সোয়ে বার্তা সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের হয়ে কাজ করছিলেন। এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাখাইন প্রদেশের সামরিক অভিযান সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় গোপন নথি হস্তগত [2] করার অভিযোগ আনা হয়, যে অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ বছরের শুরুতে মামলার শুনানী চলাকালীন সময়ে একজন পুলিশ কর্মকর্তা সাক্ষ্য প্রদান করে যে গ্রেফতার করার কিছুক্ষণ আগে কোন ব্যাখ্যা ছাড়াই সাংবাদিকদ্বয় এর হাতে এ সংক্রান্ত নথি তুলে দেওয়া হয়।

এই দুই সাংবাদিক রাখাইন প্রদেশের দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থিত ইন ডিন গ্রামে ১০ জন রোহিঙ্গা গ্রামবাসীর খুনের ঘটনা নিয়ে তদন্ত [3] করছিল যা টা মা টাও নামে পরিচিতি দেশটির সেনাবাহিনী দ্বারা সংঘটিত হয়, মূলত সেনাবাহিনী এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির ( আরসার) মাঝে শুরু হওয়া সংঘর্ষের ঠিক পরে এই গ্রামবাসীদের খুনের ঘটনা ঘটে। আরসা এবং সেনাবাহিনীর মাঝে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর বাস্ত্যচুত্য [4] হওয়া দেশটির ৭ লাখ রোহিঙ্গা [5] নাগরিক রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

মায়ানমার সরকার দেশটির রোহিঙ্গা নাগরিকদের স্বীকৃতি প্রদান করে না যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে মুসলামান, সরকার তাদেরকে নাগরিক হিসেবে কিংবা দেশটিতে বাস করা বিশেষ জাতি গোষ্ঠীর মর্যাদা প্রদান করে না। সরকার আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

এপ্রিল ২০১৮ এ পুলিশ কর্মকর্তা মোয়ে ইয়ান নায়িং আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করে [6] যে এই দুই সাংবাদিককে ফাঁদে ফেলার জন্য তাকে এবং তার এক সহকর্মীকে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদালতে এই সাক্ষ্য প্রদানের ফলে মোয়েকে পুলিশ শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে এক বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। এই সাজা প্রাপ্তির পর তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন “ আমাকে কারাগারের পাঠানোর মানে হচ্ছে অন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের সত্য বলা থেকে বিরত রাখা।”

আদালতের এই রায়ের খানিক বাদেই স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ফ্রি অফ এক্সপ্রেশন (এফইএম) [7] নামের সংগঠন সাংবাদিকদের রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় রাষ্ট্রের সমালোচনা করে এক বিবৃতি প্রকাশ করে।

সাত বছরের কারাদণ্ড প্রদানের এই রায় প্রদর্শন করছে মায়ানমার রাষ্ট্রটি তার অপকর্ম ঢাকতে ইচ্ছুক। অতীতে দেশটি কেবল স্থানীয় সাংবাদিকদের আক্রমণ করেছে এবং তাদের কারাগারে প্রেরণ করেছে, কিন্তু এই প্রথম বিশ্বের অন্যতম সুপরিচিত সংবাদ সংস্থার দুজন সাংবাদিককে শাস্তি প্রদানের জন্য তারা বেছে নিলো।

স্থানীয়রা ন্যায়বিচারের দাবী জানাচ্ছে

এই মামলা কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নয়, মায়ানমারের নাগরিকদেরও ক্ষুব্ধ করেছে [2]

গত বছর সাংবাদিকদের গ্রেফতার করার এই ঘটনায় সুশীল সমাজ এবং অজস্র একটিভিস্ট সহ দেশটির অনেক নাগরিক ক্ষুব্ধ, যারা সাংবাদিকদের এই গ্রেফতারের ঘটনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছিলে [7]

গত মাসে মায়ানমারের অনলাইন এ চরিত্র হনন আইন [8] নামে এক কুখ্যাত আইন বিলুপ্তির দাবীতে আন্দোলনরত এ-থান [9] (আওয়াজ) নামে স্থানীয় সুশীল নাগরিক সমাজের এক সংগঠন সোশাল মিডিয়ায় এক ভিডিও আন্দোলনের সূত্রপাত করে, যে ভিডিওতে মায়ানমারের বেশ কয়েকজন একটিভিস্টকে তুলে ধরা হয়, যারা ভিডিওতে এই দুই সাংবাদিকের মুক্তির দাবি জানায়। এই বিবৃতিতে [10] উল্লেখ করা হয়েছে :

ရိုက်တာသတင်းထောက်နှစ်ဦးဖြစ်တဲ့ ကိုဝလုံးနဲ့ကိုကျော်စိုးဦးတို့ဟာ အင်းဒင်ရွာမှာ တပ်မတော်က ကျုးလွန်ခဲ့တဲ့ လူသတ်မှုအကြောင်းကို စုံစမ်းဖော်ထုတ်သတင်းရေးသားနေဆဲအချိန်မှာ ဖမ်းဆီးထိန်းသိမ်းခံခဲ့ရတာဖြစ်ပါတယ်။ အင်းဒင်ရွာမှာ ကျူးလွန်ခဲ့မှုတွေကို တပ်မတော်ကလည်းဝန်ခံခဲ့ပြီး တာဝန်ရှိတဲ့ တပ်မတော်သား(၇)ဦးကို စစ်ခုံရုံးကနေပြီး ပြစ်ဒဏ်အသီးသီး ချမှတ်ခဲ့ပြီးဖြစ်ပါတယ်။ ကိုဝလုံးနဲ့ကိုကျော်စိုးဦးတို့ဟာ ပြည်သူတွေ သတင်းအမှန်သိရဖို့ သတင်းသမားကျင့်ဝတ်နဲ့အညီ သတင်းရယူခဲ့တာဖြစ်ပါတယ်။ သူတို့ လိုက်နေတဲ့သတင်းကြောင့် ရဲတွေက ထောင်ခြောက်ဆင်ပြီး ဖမ်းဆီးခံခဲ့တာဖြစ်တယ်လို ဒုရဲမှူးမိုးရန်နိုင်က ထွက်ဆိုထားပါတယ်။

রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কাওয়া সোয়ে ওউকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কারাগারে আটকে রাখা সেই সময়, যখন তারা ইন ডিন গ্রামে সামরিক বাহিনী (টা মা টাও) দ্বারা সংগঠিত হত্যাকাণ্ড বিষয়ে এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করছিলেন। টা মা টাও স্বীকার করেছিল যে তারা ইন ডিন গ্রামে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছি এবং ইতোমধ্যে সামরিক আদালতে এই বাহিনীর সাতজন সদস্য হত্যার দায়ে অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। জনতা যাতে সঠিক তথ্য পায় তার জন্য ওয়া লোন এবং কাওয়া সোয়ে ওউ নৈতিক অবস্থান থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ক্যাপ্টেন মোয়ে ইয়ান নাইনা নামের পুলিশের এক কর্মকর্তা ইতোমধ্যে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন যে ওই দুই সাংবাদিককে যে সংবাদ প্রদান করছিল তার কারণে পুলিশের এক সাজানো মামলায় আদের গ্রেফতার করা হয়।

৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এই মামলার রায়ের কয়েকদিন আগে মায়ানমারের অর্থনৈতিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনে গ্রেপ্তারকৃত এই দুই সাংবাদিকের মুক্তির দাবিতে অনেকে পদযাত্রার আয়োজন করেছিল।

অনেকের কাছে এই মামলার রায় ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সরকারের প্রতি অনাস্থার বিষয়টি আরো বাড়িয়ে তুলেছে, যে সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অং সান সুচি। শান্তির জন্য কাজ করেন এমন একটিভিস্ট মোয়ে থাওয়ে [11] এই দুই সাংবাদিককে রক্ষায় কোন বক্তব্য না প্রদান করায় সূকির প্রতি তার হতাশা ব্যক্ত করেছেন।

ဝလုံးတို့မတရားထောင်ချခံရတာ
တရားရေးတခုတည်းရဲ့အပြစ်မဟုတ်ဘူး…

ဒီလိုဖမ်းဆီးတာကိုထောက်ခံခဲ့တဲ့
ဝလုံးတို့ဟာပြစ်မှုကျူးလွန်ခဲ့တာလို့ပြောခဲ့တဲ့
ဒေါ်အောင်ဆန်းစုကြည်နဲ့
သူ့အစိုးရမှာပါတာဝန်ရှိတယ်…

ဒေါ်အောင်ဆန်းစုကြည်ဟာ
အာဏာရှင်စရိုက်ကို
ထင်ထင်ရှားရှားပြလာပြီ…

ঘটনা হচ্ছে ওয়া লোন এবং কাওয়া সোয়ে ওউ কেবল দেশটির আদালত একা শাস্তি দেয়নি।

দাও আন সান সুকি এবং এবং তার সরকার তাদের গ্রেফতারের অনুমতি এবং তারা যে অপরাধী এই কথাটি বলার জন্য সমানভাবে দায়ী।

দাও অং সান সুচি স্বৈরশাসক হিসেবে তার চরিত্র পরিষ্কার ভাবে উন্মোচন করেছেন।

এ থান সংগঠিত এবং স্থানীয় ৬৩টি এনজিও স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে [পিডিএফ কপি] [12] এই বিচারের নিন্দা জানানো হয়েছে, তাতে এর সমর্থকেরা লিখেছে:

আমরা বিশ্বাস করি এই মামলার যে রায় প্রদান করা হয়েছে তা অযৌক্তিক এবং দুই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে ধারা প্রদান করা হয়েছিল তা কেবল তাদের গ্রেফতার ও কারাদণ্ড প্রদানের বিষয়টিকে যৌক্তিক করার জন্য…এটাকে আমরা তথ্য পাওয়ার অধিকার এবং সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে এক আক্রমণ হিসেবে গ্রহণ করেছি, আর যাকে আমরা মায়ানমারের সকল সচেতন নাগরিকের বিরুদ্ধে এক আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রদর্শন হিসেবে গ্রহন করেছি যারা আইনের শাসন, জবাবদিহিতা, স্বাধীনতা, এবং ন্যায়বিচার দ্বারা পরিচালিত হতে আগ্রহী।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় [13] আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করেছে যার মধ্যে রয়ছে মায়ানমারে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস [14] এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন [15] এর মত সংগঠন।