এই ছবি ভালবাসা ও ইচ্ছাশক্তির দৃঢ়তাকে তুলে ধরেছে।
মার্চের মাঝামাঝি সময়ে নীল ওড়নায় মাথা ঢাকা এক ছাত্রীকে আফগানিস্তানের এক প্রাদেশিক পরীক্ষা কেন্দ্রে শ্রেণীকক্ষের বাইরে তৈরী করা কেন্দ্রে সন্তান কোলে পরীক্ষা দিতে দেখা যায়।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছিল সে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়াহইয়া এরভান এই দৃশ্য ধারণ করেন এবং নিজের ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট করেন।
দ্রুত এই ছবি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে ২৫ বছর বয়স্ক এক মা ও ছাত্রী জাহানতাব আহামাদি দুই পায়ের মাঝে তার শিশু সন্তানকে রেখে মনোযোগ সহকারে পরীক্ষার খাতা দেখছে, আর সে সময় তার দুই মাসের এই সন্তান কানের ব্যাথায় তারস্বরে চেঁচাচ্ছিল।
তিন সন্তানের জননী জাহানতাব এসেছেন হসতো নামের এক দুর্গম এলাকা থেকে, যা আফগনিস্তানের ডাইকুন্ডি প্রদেশের মিরামার জেলায় অবস্থিত।
পরীক্ষা কেন্দ্রটি দেশটির এক প্রাদেশিক রাজধানী নিলিতে অবস্থিত, এই কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য জাহানতাবেকে প্রথমে পাহাড়ি পথে দুই ঘণ্টা হাঁটতে হয়, এরপর এক বেসরকারি সংস্থার বাসে চেপে নয় ঘণ্টার এক যাত্রায় ঝাঁকুনি খেতে খেতে সে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়।
এই ছবি দেশটির সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা বিষয়ে পরিণত হয়, বিশেষ করে যে দেশের সোশ্যাক মিডিয়ার টাইমলাইন প্রায়শ রক্তাক্ত হামলার ছবিতে ভরে থাকে।
Inspiring photo from social media: this mother is taking university entrance exam while taking care of her child, in Daikundi. Afghan women are unstoppable. pic.twitter.com/lus0eeuH48
— Shaharzad Akbar (@ShaharzadAkbar) March 19, 2018
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি এক দারুণ উৎসাহের সৃষ্টি করেছে। এই মা ডাইকুন্ডিতে, এই মা সন্তানের যত্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে, আফগান রমণীদের কেউ থামাতে পারবে না।
Twenty years from now, that child will see this photo in a better Afghanistan (…where the wars, the suffering will become history, photos like these a reminder of the strength of those who stood firm in the face of it all) #fb https://t.co/wuJ0v5f2Or
— Mujib Mashal (@MujMash) March 19, 2018
এখন থেকে ২০ বছর পরে এই শিশুটি এক সমৃদ্ধ আফগানিস্তানে বসে এই ছবিটি দেখবে (যেখানে যুদ্ধ,নরক যন্ত্রণা এই ধরণের সবকিছু ইতিহাস হয়ে রবে, যা তাদের স্মরণ করিয়ে দেবে সেই সকল মানুষদের শক্তিমত্তার কথা, যারা এর সকল কিছুর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে দাঁড়িয়ে ছিল। )
জাহানতাব এমনকি এক রক্ষণশীল সমাজ থেকে এসেছে, যেখানে সাধারণত পুরুষেরা মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের বিরোধিতা করে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে জাহানতাব সৌভাগ্যবতী যে সে তার পরিবারের সমর্থন এবং উৎসাহ লাভ করেছে।
তাঁর স্বামী মুসা মোহাম্মদি এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান, স্ত্রীর শিক্ষা গ্রহণের পেছনে সে এক গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন প্রদান করে যাচ্ছে।
এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার কিছুদিন পরেই, এই দম্পতির উদযাপন করার একটা কারণ জুটে যায়, কানকোর নামে পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় জাহানতাব উত্তীর্ণ হয়। এই পরীক্ষায় ৩৬০ নাম্বারের মধ্যে জাহানতাব ১৫২ নাম্বার অর্জন করেন।
গো ফান্ড মি নামের প্রচারণা
জাহানতাবের এই কাহিনী প্রকাশ হওয়ার পর দেশ ও বিদেশ থেকে তার জন্য আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাব আসতে শুরু করে।
আফগান ইয়োথ অ্যাসোশিয়েশন পরিচালিত যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান গোফান্ডমি নামের এক উদ্যোগ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার খরচ বহনে এগিয়ে এসেছে।
গো ফান্ড মি নামক প্রচারণা ইতোমধ্যে জাহানতাবের জন্য ১৪,০০০ ডলার সংগ্রহ করেছে-তার ফলে এমন এক দেশে সে নিজেকে সৌভাগ্যবতী বলে ভাবতে পারে যেখানে ৩৯ শতাংশ নাগরিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে।
এই প্রচারণা এবং অন্য সকল অর্থ সাহায্যের জন্য প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ যার কারণে জাহানতাব এখন কাবুলের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি স্নাতক সম্মান শ্রেনীতে ভর্তি হতে সক্ষম হয়েছে।
জাহানতাবের অর্থ সাহায্য লাভের পেছনে জাহারা ইগানা নামের এক আফগান সোশ্যাল একটিভিস্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং তরুণীর শিক্ষার্থীর শিক্ষায় এগিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত তাজা সংবাদ তিনি পোস্ট করেছেন।
নারী শিক্ষা বৃদ্ধির উদ্যোগে হোঁচট
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার প্রদান করা কোটি কোটি ডলার সত্ত্বেও তালেবান উত্তর যুগে আফগানিস্তানে শিক্ষার হার, বিশেষ করে নারী শিক্ষার হার একেবারে নিম্নস্তরে রয়ে গেছে।
২০১৭ সালে আফগান কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বিভাগ পরিচালিত এক জরিপে উন্মোচিত হয় যে আফগানিস্তানের ৮৪ শতাংশ নারী অশিক্ষিত এবং মাত্র ২ শতাংশ নারী উচ্চ শিক্ষা লাভ করেছে। যদি দেশটির প্রধান প্রধান শহরগুলোকে এই জরিপের আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়, তাহলে এই সংখ্যাটি শূন্যে পরিণত হবে।
২০১৭ সালে হিউম্যান রাইট ওয়াচ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশটিতে নারী শিক্ষার হার হ্রাস পাওয়ার একটা তালিকা প্রদর্শন করা হয়, এতে পরিসংখ্যানের মাধ্যমে উল্লেখ করা হয় যে আফগানিস্তানের দুই তৃতীয়াংশ মেয়ে স্কুলে যেতে পারে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একই সাথে আবিস্কার করেছে যে আফগান সরকার এবং তার আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উন্নয়ন কার্যক্রম “উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হোঁচট খেয়েছে”, বিশেষ করে যখন পশ্চিমের কাছে দেশটির কৌশলগত এবং সামরিক গুরুত্ব কমে এসেছে।