- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

চীনা কুকুর নববর্ষ উদযাপনের বিজ্ঞাপনে মালয়েশীয় সরকারের মোরগ ডাকছে এমন ছবি ব্যবহার

বিষয়বস্তু: পূর্ব এশিয়া, মালয়েশিয়া, ধর্ম, নাগরিক মাধ্যম, রাজনীতি, শিল্প ও সংস্কৃতি
[1]

মালয়েশীয় সরকার চীনা কুকুর নববর্ষকে অভিবাদন জানিয়েছে মোরগ ডাকছে এমন ছবির বিজ্ঞাপন দিয়ে। মালয়েশিয়ার আভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, সমবায় এবং গ্রাহক সেবা মন্ত্রণালয়ের ফেসবুকের পাতা থেকে গ্রহণ করা ছবি নতুন আকারে প্রদান করা হয়েছে।

মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য, সমবায় এবং গ্রাহক সেবা বিভাগ (কেপিডিএনকেকে) কোঁ করো কোঁ বা ডাকতে থাকা মোরগের ছবি দিয়ে চীনা সমৃদ্ধ সারমেয় নববর্ষ আগমনকে স্বাগত জানানোর বিজ্ঞাপন প্রকাশের কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।

মালেয়েশিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান তবে দেশটি বিভিন্ন জাতি এবং ধর্মের মধ্যে সামাজিক ঐক্যমত্যের বিষয়টি তুলে ধরে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয়, রক্ষণশীল মুসলমানের আওয়াজ তুলছে যেন শাসন ব্যবস্থায় ইসলামিক শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে মোরগ ডাকছে এমন ছবি দিয়ে চীনা চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনের বিজ্ঞাপন দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল যেন কিছু মুসলমানকে আহত না করা, যারা মনে করে কুকুর একটা নোংরা প্রাণী। দেশটিতে একই বাস্তবতা কিছু মুসলমানকে আহত না করার জন্য কিছু কিছু দোকান চন্দ্র নববর্ষে না সাজানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এই বিজ্ঞাপনকে অনেকে রক্ষণশীল মুসলমান ও চীনা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মাঝে সংগঠিত সংস্কৃতিক সংঘাতের প্রতিফলন হিসেবে দেখছে। বিরোধী ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন পার্টি বিভাজনে ইন্ধন জোগানো এবং সমাজে বহুসংস্কৃতিবাদের বিষয়টিকে উপেক্ষা করার কারণে এই বিজ্ঞাপনের সমালোচনা [2] করেছেন।

মন্ত্রণালয় এক মিলিয়ন ক্ষমা [3] (চীনা এক প্রকাশভঙ্গি যার মানে গভীরভাবে ক্ষমা চাওয়া) জারি করে উল্লেখ করেছে যে এটি এক কৌশলগত ত্রুটি তবে এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় আরো কোন ব্যাখ্যা প্রদান করেনি। কিন্তু নেট নাগরিকদের বেশিরভাগই এই ব্যাখ্যা গ্রহণ করেনি। একটি মন্তব্যে বলা হয়েছে:

এই মন্ত্রনালয়ের আরো বেশী সংস্কৃতি মনা হওয়া প্রয়োজন অথবা অন্য সংস্কৃতির বিষয়টিকে আরো উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এটা সত্যিই অস্বস্তিকর এবং এতে আপনার মন্ত্রণালয়ের উপেক্ষার বিষয়টি প্রতিফলিত হয়। একটা কোঁ করোও কোঁ করা মোরগ? আদতে তাই? কেপিডিএনকেকে কোন গ্রহে বাস করে???

স্বাধীন সংবাদপত্র ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের একজন প্রাবন্ধিক মারিয়াম মোখতার অনেক পর্যবেক্ষকের আবেগের বিষয়টির প্রতিধ্বনি করেছে [4]:

আমাদের বাস্তবতা এখন হয় বেশ কিছু রক্ষণশীল ইসলামিক চেতনায় আবদ্ধ অথবা সেই সকল সুপারভাইজারদের দ্বারা পঙ্গু এবং তারা পুনরায় যাচাই এর প্রতি বিশ্বাস রাখে না।

এদিকে কিছু চীনা নেট নাগরিক বিশ্বাস করেন মোরগ হচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক উপহাস করা হয়েছে যার পরিহাসকৃত নাম “সেই মোরগটি” কারণ নাজিব এর উচ্চারণ এর সাথে চিনা পুটংগুহা ভাষায় এর কাছাকাছি উচ্চারণ “না জি”(那雞) যার অর্থ হচ্ছে ডাকতে থাকা মোরগ। একজন বিখ্যাত ভিডিও ব্লগার যে নিজেকে তাহলে,আমি হচ্ছি যেন (সো, আইএমযেন) নামে অভিহিত করে থাকেন, সেই ভদ্রমহিলা চীনা চন্দ্র নববর্ষকে তার স্বাগত জানানোর ক্ষেত্রে কোঁকরো কোঁ করা মোরগের প্রতীকবাদ নিয়ে কথা বলেছেন [5]

কুকুর কোন বিতর্ক মালয়েশিয়া এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে এক প্রেটজেল নামের চেইন স্টোরকে মালেয়েশিয়ার ইসলামিক কর্মকাণ্ড উন্নয়ন মন্ত্রণালয় (জেকিন) পরামর্শ প্রদান করে যেন প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক পণ্য প্রেটজল ডগ বা প্রেটজেল কুকুর পাল্টে প্রেটজেল সসেজ [6] রাখে। ২০১৪ সালে এক তরুণ মুসলমান একটিভিস্ট সৈয়দ আজমি আলহাবশি, “আমি কুকুরকে আদর করতে চাই” নামে এক কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করেন যার উদ্দেশ্য ছিল কুকুর নিয়ে মুসলমানদের যে অস্বস্তি সেটা দূর করা, আর এটি ভন্ডুল হয়ে যায় তার মৃত্যুর হুমকি লাভের কারণে [7], যার ফলে সে ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়।

মালয়েশিয়ার চীনারা দেশের জনসংখ্যার [8] চারভাগের এক ভাগ। যখন চীনা চন্দ্রবর্ষ যা এবার কুকুর নববর্ষ হিসেবে পরিচিত তার পরে শুকর বর্ষ এসে হাজির হবে, এতে মনে হচ্ছে আগামী বছরও চীনা চন্দ্র নববর্ষেও সংস্কৃতিক সংঘাত এড়ানো কঠিন হবে। তবে আশা করা যাচ্ছে যে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে বহুসংস্কৃতিবাদের মত ধারণা তুলে ধারার গুরুত্ব উপলব্ধির বিষয়ে শিক্ষা লাভ করতে সমর্থ হয়েছে।