
কোরি ডক্টরো’র ছবি। (সিসি বাই-এসএ ২.০)
অ্যাডভক্স নেট-নাগরিক প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট অধিকারগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা, সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং উদীয়মান প্রবণতাগুলির একটি আন্তর্জাতিক আলোকপাত উপস্থাপন করে।
সহিংসতা হুমকির তীব্রতা এবং অনলাইনে ঘৃণাত্মক বক্তব্যকে ঘিরে জনসাধারণের আতঙ্কের প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় কমিশন সদস্য রাষ্ট্রগুলি কীভাবে “অবৈধ অনলাইন বিষয়বস্তু” মোকাবেলা করবে সে বিষয়ে নতুন সুপারিশমালা তৈরি করছে।
আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করা না হলেও সুপারিশগুলির ফাঁস হয়ে যাওয়া একটি খসড়া ছড়িয়ে পড়েছে এবং এখন অনলাইনে বাক স্বাধীনতা ও গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্যে নিবেদিত সুশীল সমাজ এবং মানবাধিকার দলগুলির একটি জোট ইউরোপীয় ডিজিটাল অধিকার (ইডিআরআই)-এর ওয়েবসাইটে সেগুলি দেখতে পারা যাচ্ছে। খসড়াটি দেখা যাচ্ছে কমিশন নতুন কোন প্রবিধানের প্রস্তাব না করলেও ফেসবুক এবং গুগলের মতো বেসরকারি কোম্পানিগুলি স্বেচ্ছায় এসব বিষয়ে আরও বেশি দায়িত্ব গ্রহণ করবে বলে আশা করে।
প্রস্তাবনাগুলির একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণে ইডিআরআই-এর জো ম্যাকনামি লিখেছেন:
কোন নতুন বিশ্লেষণের ভিত্তি নয়, নয় কোন নতুন ডেটা এবং নতুন কোন সমস্যার সমাধানও নয়, ফাঁস হওয়া সুপারিশগুলিতে অনলাইনে কী গ্রহণযোগ্য আর কী নয় তা যাচাইয়ের কাজটি সম্পূর্ণরূপে বেসরকারীকরণ করা হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো ব্যবহারকারীদের অধিকার সুরক্ষার জন্যে কোম্পানিগুলি স্বেচ্ছায় কতগুলি “পর্যাপ্ত রক্ষাকবচ” এর ব্যবস্থা করবে এমন অপ্রয়োগযোগ্য একটি আশা রয়েছে। খসড়াটি সরবরাহকারীদের “চুক্তিভিত্তিক স্বাধীনতা” যার অর্থ হচ্ছে এরকম কোনো সুরক্ষা সম্পূর্ণরূপে ঐচ্ছিক বলে এর পাঠকদেরকে – দু’বার – স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
খসড়াটিতে একমাত্র নির্দিষ্ট ধরনের অনলাইন বিষয়বস্তু হিসেবে “সন্ত্রাসবাদী উপাদান” (কোনরকম সংজ্ঞা দেওয়া হয়নি) এবং কপিস্বত্ত্বের অধীনের বিষয়বস্তুর উল্লেখ করা হয়েছে। ম্যাকনামী যুক্তি দেখিয়েছেন যে “কপিস্বত্ত্ব এবং ‘বুদ্ধিজীবী সম্পত্তি অধিকার’ লঙ্ঘন মোকাবেলা করার প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলির পুনঃপুনঃ উল্লেখ এধরনের সুদূরপ্রসারী ব্যবস্থাগুলির পিছনের মূল চালিকা শক্তিটির একটি ইঙ্গিত প্রদান করে।”
বাংলাদেশে ইন্টারনেট বন্ধের পর আবার ফিরে এসেছে
ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট কয়েকটি সময়সীমার মধ্যে ইন্টারনেট বন্ধ করে রাখার জন্যে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের নির্দেশ প্রদান করেছিল। পরীক্ষাগুলির ফাঁস হয়ে যাওয়া উত্তরগুলির বিস্তার রোধ করা এই অস্থায়ী বন্ধগুলির উদ্দেশ্য ছিল। জনসাধারণের ব্যাপক সমালোচনার প্রেক্ষিতে আদেশটি দ্রুত পাল্টে যায়।
মালাবিতে পরবর্তী নোটিশের আগে বাধ্যতামূলক সিমকার্ড নিবন্ধন স্থগিত
২০১৬ সালের যোগাযোগ আইনের নিবন্ধনের বিধানগুলির উল্লেখ করে মালাবি যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অপারেটরদের কাছে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের সিম কার্ড নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হয়ে যাওয়ার কথা ২০১৭ সালের জুন মাসে ঘোষণা করেছিল। জানুয়ারির শেষের দিকে এই প্রতিশ্রুতিটির উপর কর্তৃপক্ষ আরো জোর দিয়ে ১ এপ্রিল, ২০১৮ থেকে অ-নিবন্ধিত কার্ডের সকল ফোনের পরিষেবা বন্ধের হুমকি দিয়ে সিম নিবন্ধনের জন্যে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়।
কিন্তু নিবন্ধন পদ্ধতি আবার আরম্ভ করার আগে “নাগরিক শিক্ষা” প্রচারাভিযানের প্রয়োজনীয়তার কথা উদ্ধৃত করে কর্তৃপক্ষ এই সপ্তাহে পদক্ষেপটি স্থগিত করেছে। আজানিয়া পোস্ট জানিয়েছে কর্মসূচীটিকে “জনগণের ফোনগুলিতে আঁড়ি পাতার সরকারি ফন্দি” আশংকা করে কিছু কিছু নাগরিক তাদের সিম কার্ড নিবন্ধনের ব্যাপারে শিথিলতা প্রদর্শন করেছে।
গবেষণায় ইউরোপীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানিগুলোকে আফ্রিকার তুলনায় নিজ দেশে ভাল আচরণ করতে দেখা গিয়েছে
ফরাসী বেসরকারি সংস্থা সীমান্তবিহীন ইন্টারনেট এর একটি নতুন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলে ইউরোপীয় বড় বড় টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারীরা আফ্রিকার গ্রাহকদের কাছে ইউরোপীয় বাজারে তাদের প্রদত্ত পরিষেবার স্তরের সমপরিমাণ স্বচ্ছতা ও ভোক্তা সুরক্ষা প্রস্তাব করে না। এই সমীক্ষাটিতে সেনেগালে অরেঞ্জ এবং কেনিয়াতে (ভোডাফোনের মালিকানাধীন) সাফারিকমের চর্চা ও নীতিমালার তুলনা করা হয়েছে।
ব্রাজিলের বৃহত্তম সংবাদপত্রের ফেসবুক ত্যাগ
ফোলা দে সাও পাওলো ঘোষণা করেছে যে এটি তার ফেসবুক পাতায় সংবাদ নিবন্ধ প্রকাশ অথবা এর হালনাগাদ করবে না। ফেসবুকে এর প্রায় ৬০ লক্ষ অনুসারী রয়েছে। সম্পাদকীয়র মতো একটি নিবন্ধে কোম্পানিটি বলেছে ফেসবুক পাতাগুলিতে ফেসবুকের নিউজফিড বা সংবাদের যোগানের বিষয়বস্তু কমিয়ে তার পরিবর্তে বন্ধু এবং পরিবারের পোস্ট বাড়ানোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত থেকেই মূলতঃ এই সিদ্ধান্তটি এসেছে। ফোলার কার্যনির্বাহী সম্পাদক ফেসবুককে “…পাতাগুলো থেকে পেশাদারী সাংবাদিকতাকে নির্বাসিত করে সেখানে “মিথ্যা সংবাদ” বিস্তারের জন্যে ব্যক্তিগত বিষয়বস্তুকে জায়গা করে দেয়া”র দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
‘জলকাদা’ আখ্যা দিয়ে বড় বড় বিজ্ঞাপনদাতাদের ফেসবুক ত্যাগের হুমকি
লিপ্টন চা এবং ডাভ সাবানসহ প্রধান খাদ্য এবং টয়লেট ব্র্যান্ডের মালিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহদাকার কোম্পানি ইউনিলিভার ফেসবুক থেকে এর বিজ্ঞাপন প্রত্যাহারের হুমকি দিচ্ছে। ইউনিলিভারের বিপণন কার্যনির্বাহী কিথ উইডের একটি বক্তৃতার প্রাক-মুক্তিপ্রাপ্ত কপি সিএনএন প্রকাশ করেছে যাতে তিনি বলেছেন যে কোম্পানি “স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে …কখনো কখনো জলকাদার চেয়ে সামান্য ভাল একটি ডিজিটাল সরবরাহ শৃঙ্খল অব্যাহত রাখতে পারে না।” সিএনএন জানিয়েছে উইড পদক্ষেপটিকে সামাজিক গণমাধ্যমে “আপত্তিকর বিষয়বস্তুর বিস্তার” এবং শিশুদের জন্যে সুরক্ষার অভাবের কথা উল্লেখ করে বলেছেন সামাজিক বিশ্বাস ক্ষুন্ন, ব্যবহারকারীদের ক্ষতি এবং গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করছে।
ফেসবুক জার্মানির ভোক্তা আইন লঙ্ঘন করছে
বার্লিনের একটি আদালতের রায়ে (জানুয়ারিতে করা হলেও প্রকাশ করা হয়েছে মধ্য ফেব্রুয়ারিতে) দেখা গিয়েছে গোপনীয়তা এবং সংশ্লিষ্ট নীতিমালাগুলির জন্যে ফেসবুকের পূর্বনির্ধারিত স্থিরকরণ (ডিফল্ট সেটিংস) জার্মানীর ভোক্তা সুরক্ষা আইনগুলির ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় মৌলিক মান পূরণ করে না। জার্মানির ভোক্তা সংস্থার ফেডারেশন, ভিজেডবিভি এর দায়ের করা একটি মামলার রায় এটি। কোম্পানিটি ইইউ প্রকাশিত সাধারণ ডেটা সুরক্ষা প্রবিধানের সঙ্গে মিল রেখে তার গোপনীয়তা পদ্ধতির পুনর্বিন্যাসের অঙ্গীকার করেছে।
নতুন গবেষণা
- Digital Rights in Sub-Saharan Africa: Analyzing the Practices of Orange in Senegal and Safaricom in Kenya (সাব-সাহারা আফ্রিকাতে ডিজিটাল অধিকার: সেনেগালে অরেঞ্জ এবং কেনিয়াতে সাফারিকমের চর্চা বিশ্লেষণ) – ইন্টারনেটবিহীন সীমান্ত (ফরাসি ভাষায় লেখা)
- Approaching Access: A look at consumer personal data requests in Canada (প্রবেশাধিকারের কাছাকাছি: কানাডায় গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য অনুরোধগুলিতে এক নজর) – নাগরিক গবেষণাগার
নেট-নাগরিক প্রতিবেদনের গ্রাহক হোন
আফেফ আব্রুজি, এলেরি রবার্টস বিডল, রেজওয়ান, ক্যারোল র্যাবারিসন, এলিজাবেথ রিভেরা, তাইসাস গ্যাঞ্জারলা এবং সারাহ মায়ার্স ওয়েস্ট এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।