দীর্ঘ মানবাধিকার আন্দোলনের পর ইরান মাদক পাচার সংক্রান্ত হাজার খানেক মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করেছে

ইরানে এক প্রকাশ্যে প্রদান করা এক ফাঁসির অনুষ্ঠানে এক ফাঁসির রশির সামনে দাঁড়িয়ে প্রহরী।

নীচে লেখা প্রবন্ধটি এক সংক্ষেপিত সংস্করণ যা ইরানের সেন্টার ফর হিউম্যান রাইট বা মানবাধিকার কেন্দ্রের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়।

মাদক সংক্রান্ত অপরাধে ইরানে প্রায় ৪০০০ বন্দী মৃত্যুদণ্ডের মত শাস্তির মুখোমুখি, ইরানের বিচার বিভাগের এক বিচার বিভাগের এক আদেশের ভিত্তিতে এখন তাদের এই শাস্তি হয়ত রদ হয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে সম্প্রতি দেশটির মাদক পাচার সংক্রান্ত এক আইন সংশোধনের পর

৯জুন, ২০১৮ তারিখে প্রধান বিচারপতি সাদেঘ লারিজানির জারি করা এক আদেশ অনুসারে মাদক পাচার সংক্রান্ত অপরাধের কারণে যাদের মৃত্যুদণ্ড পুনঃবিবেচনার করা হচ্ছে এবং ফাঁসির আদেশ বাতিল করার জন্য বিচারকের প্রয়োজন বিশেষ করে যে সমস্ত অপরাধ সর্বোচ্চ শাস্তির ক্ষেত্রে নতুন শর্তসমূহ পূরণ করতে পারে না, যে সকল নতুন শর্ত সংসদ মৃত্যুদণ্ড প্রদানের জন্য নির্ধারণ করেছে, এই সকল অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছে।

ইরানের গার্ডিয়ান কাউন্সিল নামের যে প্রতিষ্ঠানটি ইসলামের নীতি আদর্শের সাথে আইন অনুসারে আইনের প্রচলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে সে প্রতিষ্ঠানটি ১৪ অক্টোবর, ২০১৭ –এ মাদক পাচার সংক্রান্ত এক আইন সংশোধনের অনুমোদন প্রদান করে, এরপরে সেটা সংসদে পাশ হয়, যদিও নিরাপত্তা বাহিনী এই খসড়া আইন স্থগিত করার চেষ্টা করেছিল

মাদক সংক্রান্ত অপরাধ সংশোধনী আইন পাশের সময়ে ইরানে প্রায় ৫০০০ অপরাধী কারাগারে ফাঁসির দিন গুনছে। বছরের পর বছর ধরে আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রচারণার পর এই আইন চালু হল। বিশ্বে জনসংখ্যা অনুপাতে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড প্রদানের ঘটনা ঘটে ইরানে, এদের বেশির ভাগ প্রথম বার এই ধরণের অপরাধের শিকার হয়, আর এদের বেশির ভাগের বয়স ৩০-এর নীচে। ২০১৭ সালে ইরানে প্রায় ৫০০ জনকে ফাঁসী দেওয়া হয়, যাদের বেশীর ভাগ সামান্য অপরাধে দায়ে এই শাস্তি পায়, যার মধ্যে রয়েছে খুব অল্প পরিমাণ মাদক পাচার।

তেহরানে অবস্থিত ইরানের সংসদের এক প্রাক্তন সদস্য আলি আকবর মোসাফি খয়েনি ইরানের মানবাধিকার সংস্থাকে বলেন যে দু বছর আগে জেনেভায় তিনি জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এবং ইরানের মাদক প্রতিরোধের কর্মকর্তাদের মাঝে এক আলোচনার ব্যবস্থা করেন:

আমি এটাকে একটা শুভ উদ্দেশ্য হিসেবে দেখছি। এটি অর্জনে খানিকটা বিলম্ব হল, কিন্তু তারপরে এই আইন অনেক মানবের জীবন রক্ষা করবে। আমি আনন্দিত যে এই প্রচেষ্টা এক গঠন মূলক সিদ্ধান্তের দিকে এগিয়ে গেছে যা গ্রহণ করেছে সংসদ এবং বিচার বিভাগ, যারা এক উদ্যোগ গ্রহণ করে মাদক পাচারের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রদ করেছে। আমি আশা করছি যে আইনের এই সংশোধন ভবিষ্যৎ-এ ইরানের বিচার বিভাগের সংস্কার, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়ন-এর ক্ষেত্রে এক মাইলফলক হয়ে থাকবে।

পরিবর্তিত এই আইনের অধীনে কেবল মাত্র প্রমাণ সাপেক্ষে নিম্নলিখিত মাদক সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে শাসি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের কথা বিবেচনা করা যেতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • সশস্ত্র মাদক পাচার;
  • মাদক পাচারে দলকে সংগঠিত করা এবং অর্থ বিনিয়োগ করা যার সাথে শিশু পাচারের মত বিষয় যুক্ত;
  • এই ধরণের অপরাধের পূর্বে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন অথবা ১৫ বছরে শাস্তি পেয়েছে এমন ব্যক্তি;
  • এবং ৫০ কিলোগ্রামের বেশী আফিম অথবা অন্য “প্রচলিত মাদক”, দুই কিলোগ্রাম বা তার বেশী হিরোইন, অথবা তিন কিলো বা তার বেশী মেটামফেটামাইন সাথে রাখলে কিংবা বহন করলে;

ইরানের আইন ও বিচার বিষয়ক সংসদীয় কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া কামালিপু, ৩০ অক্টোবর, ২০১৭ তারিখে বলেন:

আমাদের হিসেব অনুসারে ৪০০০ থেকে ৫০০০০ কারাবন্দী মাদক পাচারের অভিযোগ অভিযুক্ত, যারা হয়ত ফাঁসির দড়ি থেকে রক্ষা পাবে। ২০ বছর ধরে একজন বিচারক ও আইনজীবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি, তাই আমি ভাল করে জানি যে এই সকল কারাবন্দী ও তাদের পরিবার কোন ধরণের পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

মাদক পাচারের কারণে ফাঁসির হুকুম হয়েছে এমন অভিযুক্তদের নব্বই শতাংশ হচ্ছে সেই সমস্ত দুর্ভাগা যারা তাদের মেয়ের যৌতুক অথবা মায়ের অপারেশনের খরচ জোটানোর জন্য এই কাজ করে থাকে।

 

আলোচনা শুরু করুন

লেখকেরা, অনুগ্রহ করে লগ ইন »

নীতিমালা

  • অনুগ্রহ করে অপরের মন্তব্যকে শ্রদ্ধা করুন. যেসব মন্তব্যে গালাগালি, ঘৃণা, অবিবেচনা প্রসূত ব্যক্তিগত আক্রমণ থাকবে সেগুলো প্রকাশের অনুমতি দেয়া হবে না .