
পালাও নামক দ্বীপ রাষ্ট্রে আসা পর্যটকদের এখন বিমানে এক ভিডিও দেখানো হয়, যেখানে এক দানবের কথা বর্ণনা করা হয়, যাকে শিশুরা পরিবেশের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে শেখায়।
পরিবেশের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধিতে পালাও সরকার এখন সে দেশে আসা পর্যটকদের জন্য পরিবেশ বান্ধব এক অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করা বাধ্যতামূলক করেছে, সেদেশে আসার ভিসা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আগে পর্যটকদের এই অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করতে হবে । এই কর্মসূচির নাম “পালাও প্লেজ” বা পালাও অঙ্গীকার, এটা হচ্ছে বিশ্বে পর্যটন সংক্রান্ত প্রথম সংস্কার যার উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ।
কয়েকটি ক্ষুদ্র দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাঞ্চলে পালাও নামের রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে যার জনসংখ্যা ২০,০০০, কিন্তু বছরে প্রায় ১৬০,০০০ জন পর্যটক এই দ্বীপ রাষ্ট্র ভ্রমণ করতে আসে।
৬ ডিসেম্বর, ২০১৭-এ, পালাওয়ের রাষ্ট্রপতি টমী রেমেনগেসু এক আদেশ জারী করে অভিবাসন কর্মকর্তাদের নির্দেশ প্রদান করেন ভিসার সিল বা স্ট্যাম্পে পালাও প্লেজ বা পালাও-এর অঙ্গীকার নামা ব্যবহার করার জন্য। এই নির্দেশে উল্লেখ করা হয় দেশেটির পরিবেশের জন্য অপরিকল্পিত পর্যটন, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং অন্য সব আধুনিক হুমকির মত বিষয় সরকারকে বাধ্য করেছে এ ধরণের এক অঙ্গীকার চালু করতে যাতে পরিবেশ সচেতন পর্যটনের বিষয়টি তুলে ধরা যায়।
পাসপোর্টে এই অঙ্গীকার নামায় যা লেখা থাকে নীচে তা তুলে ধরা হল:
পালাওয়ের সন্তানেরা, আমি এই অঙ্গীকার করছি যে আপনার অতিথি হিসেবে আপনার এই সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময় দ্বীপের সৌন্দর্য্য এবং অনন্যতা সংরক্ষণ করব। আমি শপথ করছি যে আমি লঘু পায়ে চলব…উদার আচরণ করব এবং অন্তর দিয়ে সবকিছু অনুধাবন, যা প্রদান করা হবে না আমি তা গ্রহণ করব না। যা আমার ক্ষতি করে না আমি তার ক্ষতি করব না। আমি কেবল সেই পদচিহ্ন রেখে যাব, যা কেবল সমুদ্রের জলে ভেসে যাবে।
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে পালাওয়ের এই উদ্যোগ যারা সমর্থন প্রদান করেছে তাদের একজন হচ্ছে হলিউডেরও অভিনেতা লিওনার্দো ডেকাপ্রিওঃ
Proud to support the #PalauPledge, a new conservation initiative for visitors. Written with the help of Palau’s children, every visitor must pledge to heal & secure the natural environment for future generations. Learn more at https://t.co/UE96LkATZ6. pic.twitter.com/Gxjonhlkx8
— Leonardo DiCaprio (@LeoDiCaprio) December 9, 2017
#পালাওপ্লেজ সমর্থন করে গর্বিত, এক নতুন সংরক্ষণ উদ্যোগ যারা একটি দেশ ভ্রমণ করতে আসে, পালাও-এর শিশুদের সাহায্য লিখিত, প্রত্যেকটি পর্যটকের অবশ্যই অঙ্গীকার করা উচিত, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তারা প্রাকৃতিক পরিবেশকে ভাল ও নিরাপদ রাখার অঙ্গীকার করবে।পালাওপ্লেজ.কমে এ সম্বন্ধে আরো জানুন।
কেবল এক অঙ্গীকার নামায় সাক্ষাৎকার করা ছাড়াও পর্যটকদের পালাও বিমান যাত্রায় এক ভিডিও দেখানো হয় যেটিতে এক, বিবর্ণ, দায়িত্ব বোধহীন দৈত্যের কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে-যা গণ পর্যটনের সবচেয়ে খারাপ দশা বর্ণনা করে- যারা পালাওতে আসে, পরিবেশের বারোটা বাজিয়ে যায়। এই দৈত্যকে পালাও-এর শিশুরা শীঘ্রই প্ররোচিত করবে পরিবেশের বিষয়ে চিন্তা করতে। তাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে তার আচরণ সম্বন্ধে যাতে সে প্রবাল এলাকা ক্ষতি না করে, পানি দূষিত এবং স্থানীয় সংস্কৃতিকে অপমান না করে।
https://www.youtube.com/watch?v=KhuY8eNLzBM&feature=youtu.be
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এক উদ্ভাবনী কর্মসূচি পালাও প্লেজ-এর প্রশংসা করেছে। রাষ্ট্রপতি রেমেনগেসু আশা করেন যে অন্য রাষ্ট্রসমুহ একই ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। তিনি সাথে আরো উল্লেখ করেন এই বিষয়ে পর্যটকদের সাড়া ছিল ইতিবাচক:
আমরা বিমান বন্দর পর্যবেক্ষন করছি, তাদের কাছে থেকে পাওয়া মতামত জরিপ করেছি এবং সকলে বলছে আমরা জানতাম না এই সকল তথ্য আগে থেকে সেখানে ছিল ।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী চান যে এই কর্মসূচি অন্য কর্মকাণ্ডের মধ্যমে টিকে থাকুক যা এখানে এক বড় ধরণের প্রভাব তৈরি করবে:
This is amazing! Yes to the #PalauPledge. I wonder how it will be implemented on the ground though – a pledge is great but is there education alongside it?https://t.co/ZmGLKX0Hs7
— Cecily Spelling (@cecilyspelling) December 15, 2017
এটা অসাধারণ। আসুন “পালাও প্লেজ” কে হ্যাঁ বলি। তবে আমি বিস্মিত কী ভাবে এটা সেখানে বাস্তবায়ন করা হবে- পরিবেশ সংরক্ষণে একটা অঙ্গীকার অসাধারণ বিষয়, কিন্তু সেই সাথে এই বিষয়ে কী কী শিক্ষা প্রদান করা হচ্ছে?
এই বিষয়ে উদ্বেগ যৌক্তিক আর দেশটি শিক্ষার্থীদের মাঝে এক নতুন পাঠ্যসূচি গ্রহণ করেছে যা আগামীর নেতাদের ভবিষ্যতে পরিবেশ বিষয়ে সচেতন হয়ে গড়ে উঠতে এবং পর্যটন খাতে পরিবেশ সচেতন ব্যবসা নীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
পালাও–এর রয়েছে প্রায় ৫০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত এক সামুদ্রিক এলাকা যেখানে বাণিজ্যিক ভাবে মৎস্য শিকার এবং তেলের জন্য কূপ খনন নিষিদ্ধ।
পালাও প্লেজ, সেদেশে আসা কেবল পর্যটনে আসা পর্যটকদের জন্য নয়, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা এই কর্মসূচির ওয়েব সাইটে গিয়ে এই অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর করতে পারবে। এই প্রবন্ধটি লেখা পর্যন্ত ১৮,৫৯৮ জন নাগরিক এই অঙ্গীকার নামায় ভার্চুয়াল স্বাক্ষর প্রদান করে, যার মধ্যে এই প্রবন্ধের লেখকও রয়েছেন।