- Global Voices বাংলা ভার্সন - https://bn.globalvoices.org -

৮ই আগস্ট কেনিয়ার নির্বাচন সম্পর্কে যা জানা দরকার

বিষয়বস্তু: সাব সাহারান আফ্রিকা, কেনিয়া, নাগরিক মাধ্যম, নির্বাচন, ব্যবসা ও অর্থনীতি, রাজনীতি, সরকার, দ্যা ব্রিজ (সেতুবন্ধন)
[1]

অরেঞ্জ ডেমোক্র্যাটিক মুভমেন্ট এর সমর্থকরা তাদের দলের প্রার্থী রাইলা ওদিঙ্গার পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে (২০০৭ সালে)। ওদিঙ্গা ২০১৭ সালে তৃতীয়বারের মত প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হচ্ছেন। ছবি ডেমোস এর সৌজন্যে (ক্রিয়েটিভে কমন্স লাইসেন্স এর আওতায় প্রকাশিত)

আগস্টের ৮ তারিখে কেনিয়ার ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সব থেকে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে ভোট দেয়ার কথা লাখ লাখ কেনিয়ানদের। এই দিন সংসদের ২৯০ জন সদস্য, ৪৭জন মহিলা প্রতিনিধি [2], ৪৭ জন সিনেটর এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট নেয়া হবে।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে যেন ২০১৩ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি [3], যাতে ক্ষমতাসীন উহুরু কেনিয়াটা তার পূর্বের প্রতিদ্বন্দ্বী, ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী রায়লা ওদিঙ্গার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। যে কোন বিবেচনায় এই পর্যন্ত কেনিয়াটা আর ওদিঙ্গার মধ্যে এটা সবথেকে কাছাকাছি লড়াই হিসাবে দেখা হচ্ছে, যার ফলে দেশটির বিভিন্ন রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে।

গোটা পূর্ব আফ্রিকার জন্য ৮ই আগস্টের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এই এলাকায় কেনিয়াকে নিঃসন্দেহে মূল অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এই উপমহাদেশে কেনিয়া এখনো সব থেকে বড় আর কর্মমুখর অর্থনীতি হিসাবে বিবেচিত আর এদেশের যে কোন ধরনের রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সঙ্কট সীমান্তের বাইরেও অনুভূত হবে। পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে নির্বাচনোত্তর অস্থিতিশীলতার ভীতি দেশের অর্থনীতির উপরে প্রভাব ফেলে।

কে জিতল সেটা ব্যাপার না, ধারনা করা হচ্ছে যে আফ্রিকার সব থেকে ব্যয়বহুল এই নির্বাচনের [4] ফল হেরে যাওয়া প্রার্থীরা চ্যালেঞ্জ করবে। দুশ্চিন্তার বিষয় যে এই ধরনের চ্যালেঞ্জ জনগনের আস্থা খর্ব করে স্বাধীন নির্বাচন আর সীমান্ত কমিশন আর বিচার বিভাগ (আইইবিসি) এর উপর – যে দুটি সংস্থা নির্বাচনের স্বাধীনতা রক্ষা করে। এই দুই সংস্থার উপরে জনগনের আস্থা ২০০৭ সালে কমে গিয়েছিল, আর সেই বছরের রক্তাক্ত অধ্যায় [5] মনে করিয়ে দেয় যে এই সংস্থাগুলোর উপরে জনগনের আস্থা কমে যাওয়ার ফল কি হতে পারে।

২০১৩ এর নির্বাচনে [6] যখন কেনিয়া পূর্বের নির্বাচনের সহিংসতা এড়িয়ে অনেকটা শান্তিপূর্ন নির্বাচন করেছে, পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো সম্মিলিতভাবে স্বস্তির একটা নিশ্বাস ছেড়েছিল [7] যা পুরো মহাদেশে আর বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অনুভব করা গেছে। এর জন্যে দায়ী কিছুটা তখনকার নির্বাচন পরিস্থিতি। সাধারণত রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে যখন ক্ষমতাসীন প্রার্থী তার আসন সংরক্ষণের জন্য লড়ে। ২০১৩ সালে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মোয়াই কিবাকি [8] দুই মেয়াদ ক্ষমতায় থাকার ফলে পুনরায় নির্বাচনের যোগ্য ছিলেন না। এই সময়ে আইইবিসি আর বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা পূর্বের নির্বাচনের তুলনায় বেড়েছে।

এই বার, অবশ্য সুষ্ঠু নির্বাচনের বিপক্ষেই হাওয়া বইতে দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, কেনিয়াটা পুন:নির্বাচিত হতে চাচ্ছেন, যার জন্য তিনি তার হাতের নাগালে থাকা সকল ক্ষমতা ব্যবহার করতে চাইবেন। আরো গুরুত্বপূর্ণ হল নির্বাচন কমিশন আর বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগনের আস্থা আবার কমে গেছে, প্রায় ২০০৭ সালের কাছাকাছি। এই দুই সংস্থাই সমালোচনার সম্মুখিন হয়েছে [9] বিরোধী দলের এবং সরকারের কাছ থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রেসিডেন্ট কেনিয়াটার কাছ থেকে সরাসরি এসেছে বিচার বিভাগের সমালোচনা করে। এই সকল বিষয় নির্বাচনের ফলের উপরে আসন্ন চ্যালেঞ্জ হিসাবে কাজ করবে।

লক্ষ্য রাখার মূল বিষয়গুলো

নির্বাচন কমিশনঃ: এ বছরের শুরু থেকেই আইইবিসি আইনি নিয়ম ভঙ্গ, কর্মীদের যোগ্যতার অভাব, আর সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতার জন্য অভিযুক্ত হচ্ছে। নির্বাচনের দিনে বড় কোন সমস্যা ছাড়া আইইবিসির নির্বাচন পরিচালনা নিয়েও দুশ্চিন্তা আছে। সাধারণ পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট, গর্ভনর, সিনেটর আর এলাকার প্রতিনিধিদের জন্য নির্বাচন তদারক করা একটা চ্যালেঞ্জ, কিন্তু এর নেতৃস্থানীয় পদে নিয়োগে দেরি আর দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা আর সুনামের উপরে খারাপ প্রভাব নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করেছে।

এলাকাভিত্তিক আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা বিষয়টাকে আরো জটিল করেছে। সম্ভাবনা আছে যে ওদিঙ্গা বা কেনিয়াটা কেউ প্রযোজনীয় ৫০%+১ টা ভোট পাবেন না, যার ফলে দ্বিতীয় দফা ভোট হতে পারে। এটা আগে হয়নি আর এমন একটা সময়ে হবে যখন সামাজিক আর রাজনৈতিক চাপ বেশি, যার ফলে আইইবিসির উপরে অপ্রয়োজনীয় চাপ ও বাড়বে।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বাদ দিয়ে, এটাও সম্ভব যে কতিপয় স্থানীয় নির্বাচনের কাছাকাছি ফলাফলও সুস্পষ্ট বিজেতা নির্বাচন করবে না। আইইবিসি কি তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?

অর্থনীতিঃ যদিও কেনিয়ার নির্বাচনে জাতিগত বিভাজন একটা মূল বিষয়, এই বছর অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ মূলে চলে এসেছে। মুল্যস্ফীতি বাড়ছে যার সাথে যুক্ত হয়েছে গত এপ্রিলে খাদ্য মুল্যস্ফীতির হার এ কালের সর্বোচ্চ ২১% এ পৌছানো। এর ফলে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে মূল মুল্যস্ফীতি পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পৌছে [10] ১১.৫% এ যেখানে মার্চ মাসে ছিল ১০.৩ %। খাদ্য মূল্য বৃদ্ধির পিছনে দেশের কয়েক জায়গায় খরা দায়ী যার ফলে প্রধান খাদ্য যেমন ভুট্টা, চিনি আর সবজির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে আর বাজারে এদের অভাবও সৃষ্টি করেছে। সরকারের এই পরিস্থিতি সামাল দেয়া নিয়ে ব্যপক সমালোচনা সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ভোটের সৃষ্টি করতে পারে।

নিরাপত্তাঃ ২০১৭ আর ২০১৩ সালের নির্বাচনের মধ্যে একটা মিল হল সন্ত্রাসবাদ আর জঙ্গী দল আল-শাবাব এর অনুপস্থিতি আর নির্বাচন প্রচারনার বিষয় হিসাবে কেনিয়ার সাথে সোমালিয়ার যুদ্ধের বিষয়। ২০১৩ সালের নির্বাচনের পরে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আল-শাবাব তাদের উপস্থিতির জানান দেয় ওয়াস্টগেট বিক্রয়কেন্দ্রের জঘন্য সন্ত্রাসী ঘটনার [11] মাধ্যমে যেখানে ৬৭ জন নিহত হয়। কিন্তু কেনিয়াতে সন্ত্রাসবাদ আর নিরাপত্তাহীনতা একটি লাগাতার ভীতির কারন, আর আল- শাবাব আর অন্যরা আগস্ট ৮ এর পরের সপ্তাহগুলোতে বা আরো পরে নির্বাচনের ফলকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে।

নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি অনিশ্চিত

নির্বাচনের পরে সব কিছু যদি ঠিক থাকেও, প্রেসিডেন্ট হিসাবে কেনিয়াটা বা ওডিঙ্গা থাকুন, আরো সমস্যা আছে- বিশেষ করে অর্থনীতির ক্ষেত্রেঃ কেনিয়ার বাড়তে থাকা দেনা [12] আছে। এই বছরের শেষ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত, অর্থনৈতিক সম্পদের উপরে চাপ পড়বে বাইরের ঋণ শোধ করতে গিয়ে। উদাহরণস্বরূপ আগামী ডিসেম্বরে গত ২০১৫ সালের [13] অক্টোবরে নেয়া ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের বানিজ্যিক ঋণ ফেরত দেয়ার সময় হবে। এর সাথে যোগ হবে ২০১৮ সালের জুন মাসে প্রদেয় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ [14] ফেরত, যা আর্থিকভাবে অসচ্ছল কেনিয়া এয়ারওয়েজকে চালু রাখার জন্য আফ্রিকান এক্সপোর্ট- ইম্পোর্ট ব্যাঙ্ক থেকে পূর্বে নেয়া হয়েছিল।

এ ছাড়া, ২০১৯ সালে ফেরত দেয়ার সময় হবে পাঁচ বছর মেয়াদী ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের ইউরো বন্ড (২০১৪ সালে ইস্যু করা) আর ৮০০ মিলিয়ন ডলারের [15] সিন্ডিকেট ঋণের একটি অংশ যা সিটিগ্রুপ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড আর র‍্যান্ড মার্চেন্ট ব্যাঙ্ক অনুমোদন করেছিল। এই সকল ঋণ শোধের ফলে ঋণ ফেরতের হার ২৪২% বৃদ্ধি পাবে ২০১৭-১৮ বাজেটে অর্থাৎ ৪২৪ মিলিয়ন ডলার থেকে ১.৪ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে। এই সকল মূল্য শোধ হবে সবল ইউএস ডলারের তুলনায় দূর্বল কেনিয়ান শিলিং দিয়ে যা কেনিয়ার বেশিরভাগ বাইরের ঋণকে প্রভাবিত করে। বলাই বাহুল্য যে নতুন প্রেসিডেন্টের জেতার খুশি বেশিদিন উপভোগের সময় নেই।